somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রিকি
ছোটো প্রাণ,ছোটো ব্যথা >ছোটো ছোটো দুঃখকথা >নিতান্তই সহজ সরল >সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি>তারি দু-চারিটি অশ্রুজল>নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা> নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ> অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে>শেষ হয়ে হইল না শেষ

বইয়ের কথা..... মনের কথা (প্রথম পর্ব) B-) B-)

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






" A mind needs books as a sword needs a whetstone, if it is to keep its edge.”

বইয়ের ব্যাপারে আর আর মার্টিনের কথা দিয়েই শুরু করলাম। পেটের ক্ষুধা যেমন খাদ্য নিবৃত্ত করে, ঠিক তেমনভাবে মস্তিস্কের ক্ষুধা নিবৃত্ত করে বই।আজকের ব্লগ বই সংশ্লিষ্ট রিভিউ নিয়ে। কী অবাক লাগছে তো। সিনেমা থেকে বইতে ট্রান্সফর্মেশন হলো কেন!! আমার বই পড়ার অভ্যাস অনেক আগে থেকে শুরু হলেও, বইয়ের রিভিউ লেখার অভ্যাস একেবারে নতুন। বিশ্বসাহিত্যের আলোর পাঠশালা কার্যক্রমে হাতে খড়ি হলেও পুর্ণতা কিছুটা পায় গত বছর। একটা কনটেস্টে তিনটা রিভিউ পাঠিয়েছিলাম....সেই থেকে শুরু। আগ্রহটা থেমে থাকেনি। বিভিন্ন সুযোগে তাই রিভিউ লেখার চেষ্টা করি...চেষ্টা কতটুকু সফল হয় বলতে পারব না! যে বই আমার খুব খুব ভালো লাগে... সেই বই বাদে রিভিউটা সব বইয়ের ক্ষেত্রে আসে না!! আর আমার কাছে রিভিউ মানে বইয়ের সমালোচনা না.....বইয়ের প্রতি নিজের ভালোলাগা প্রকাশ। সমালোচনা জিনিসটা আমার দ্বারা হয় না, হবেও না। বই/ সিনেমা বাজে লাগলে এককথায় বাজে বলে দেই। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দোষ বের করি না... চন্দ্রবিন্দু নেই, হসন্তের জায়গায় হলন্ত হবে, বাক্যে গুরুচন্ডালি দোষ আছে...এগুলোর ফর্দ আমার দ্বারা হয়ে উঠে না! আমার ভালোলাগার কাজ যেমন বই অনুবাদ করা...ঠিক তেমনভাবে রিভিউটাও আমি নিজের মতো করে উপস্থাপন করি। ফরম্যাট নিজের মতো বানাই...চিরাচরিত নিয়ম কখনই মানি না। বই যেমন মনের প্রতিফলন হয়...বইয়ের রিভিউ তেমন মনের বলা অব্যক্ত কথা হয়। তো আজকের ব্লগ আমার এই বইয়ের কথা...মনের কথার প্রথম পর্ব নিয়ে। দুটো বই নিয়ে নিজের পাঠানুভুতি দেবো আজ। অনুবাদের কাজ থ্রিলারের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা হলেও...রিভিউ লিখি খিচুড়ি...মানে বইয়ের ভেদাভেদ নাই। মোস্ট বোরিং বইও আমার মাঝে মাঝে ভালো লেগে যায়...রিভিউ দেখে তাই অবাক হলে আমার করার কিছু নেই!! :P

প্রথম বই:




বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখনী মূলত আবর্তিত হয় কিছু চরিত্রের সমন্বয়ে সামাজিক অথবা ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে। যেমন দুর্গেশনন্দিনীতে তিনি ঐতিহাসিক একটি প্রেক্ষাপট, কপালকুন্ডলাতে সামাজিক কিছু ভয়াবহ কুসংস্কারের প্রভাব তুলে ধরেছিলেন, ঠিক তেমনই বিষবৃক্ষতে সামাজিক কিছু প্রথার কিছু দিকের প্রতি তিনি তার নিজস্ব ভঙ্গিমাতে আলোকপাত করেছেন। বিধবা বিবাহ এবং বিধবা মেয়েটির উপর পারিপার্শ্বিকতা ও তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় বহুবিবাহের প্রভাব এই উপন্যাসটির মূখ্য আলোচ্য বিষয়। সাধারণত কোন উপন্যাসের সার্থকতা পরিগণিত হয় তার বিষয় এবং বৈচিত্র্যের আলোকে। বিষবৃক্ষ আপাতদৃষ্টিতে কয়েকটা চরিত্রের সমন্বয়ে তাদের জীবনগাঁথা শুধু নয়; এটা যেন আপনার আমার, আমাদের সকলের অভ্যন্তরের কিছু টানাপোড়েনের গল্পও। বিষবৃক্ষ বঙ্কিমচন্দ্রের চতুর্থ উপন্যাস এবং তারই সম্পাদিত বঙ্গদর্শন পত্রিকাতে এটি বারোটি কিস্তিতে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। গ্রন্থাকারে এটি প্রথম প্রকাশ হয়েছিল ১৮৭৩ সালে। পরবর্তীতে উপন্যাসটি অন্যান্য অনেক ভাষাতে অনূদিত হয় বিভিন্ন দেশে। ১৮৮৪ সালে মিরিয়াম এস. নাইট The Poison Tree নামে এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেছিলেন। বিষবৃক্ষ উপন্যাসের মূল চরিত্রগুলো হচ্ছে নগেন্দ্র দত্ত, সূর্যমুখী, কুন্দনন্দিনী, কমলমণি, হীরা ,দেবেন্দ্র প্রভৃতি। ঐশ্বর্য, প্রতিপত্তি, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে নগেন্দ্র একজন আদর্শ মানুষের উদাহরণ, অপরদিকে তার ভার্যা সূর্যমুখী পতিব্রতা, অমায়িক চরিত্রের মানুষ। কাজের প্রয়োজনে নগেন্দ্র গোবিন্দপুর তথা হরিপুর থেকে নৌকা করে রওয়ানা হলে প্রবল ঝড়, বৃষ্টির কারণে এক অচেনা গ্রামে নোঙ্গর করাতে বাধ্য হয়, যেখানে তার সাথে পরিচয় হয় একাকীনি, সদ্য অভিভাবকহীন কুন্দনন্দিনীর। হ্যা এই সেই কুন্দনন্দিনী...যাকে সাহিত্যসম্রাট আখ্যায়িত করেছেন ‘অনিন্দিতগৌরকান্তি স্নিগ্ধজ্যোতির্ম্ময়রূপিণী’ হিসেবে। ধারণা করা হয়, তিনি বিষবৃক্ষের অন্যতম প্রধান এই চরিত্রটিকে তার কনিষ্ঠ কন্যা ছায়ার অনুরূপে রচনা করেছিলেন। নগেন্দ্র দত্ত অনাথা এই বালিকার নিঃস্বার্থ অভিভাবকত্বের দায়ভার নেয়, নিজের আপনজনের মত। নগেন্দ্র, তার ছোট বোন কমলমণি এবং সূর্যমুখী তাদের স্নেহের কুন্দকে বিবাহ দেয় সূর্যমুখীর পোষ্য ভাই তারাচরণের সাথে। এই ঘটনাকে বঙ্কিমবাবু তার উপন্যাসে উল্লেখ করেছেন ‘তিনজনে মিলিয়া বিষবীজ রোপণ করিলেন’। এরপরের ঘটনাগুলো বিষবীজ হতে বৃক্ষ পরিস্ফুটনের। সাহিত্যসম্রাটের লেখনী পড়লেই একমাত্র বোঝা সম্ভব, কেন এবং কি কারণে তাকে এই উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। তার লেখনীর সব থেকে উল্লেখযোগ্য দিক ভাষার আভিজাত্য এবং চরিত্রের অলঙ্করণ। চরিত্রকে তিনি তার বলিষ্ঠ ভাষাগত দিক দিয়ে যেভাবে তুলে ধরেছেন তার প্রত্যেক সৃষ্টিতে, পড়ার সময় এবং তার পরবর্তীতে সেই চরিত্রের বৈশিষ্ট্যে শুধু মুগ্ধ হয়ে থাকতে হয়। রোহিণী থেকে কুন্দনন্দিনী, রজনী থেকে দেবী চৌধুরাণী...কেউ কারও সাথে মেলে না, কিন্তু তারা নিজস্ব ধারায়, নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে তার লেখনীতে অনন্যা- কখনও ভাল চরিত্রে, আবার কখনও সমালোচিতভাবে। তিনি সবসময় চরিত্রকে ভিন্ন ধারায় তুলে ধরতে পছন্দ করতেন। যদি নারীসত্ত্বাকে বৃক্ষের শ্রেণীতে ভাগ করতে হয় তাহলে বিষবৃক্ষের সূর্যমুখী হবে এক দৃঢ় চরিত্রের বটবৃক্ষ স্বরূপ যে নিজের উপর প্রকৃতির হাজার অনাচার সহ্য করার পরেও তার আশ্রয়ে থাকা কাউকে সেটার প্রভাব পর্যন্ত বুঝতে দেয়না। তেমনভাবে কুন্দনন্দিনী কোমলমতি, একাকিনী লতানো গাছের মত, যে কাউকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়, কাউকে অবলম্বন করে নিজের লতা বিস্মৃত করতে চায়। ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রের বিশেষত্ব হয়ত এটাই। সবশেষে, বিষবৃক্ষ নামকরণের কথা বলব। ‘বিষবৃক্ষ’ এই উপন্যাসে কি কোন গাছ না রূপক ধরণের কিছু? বঙ্কিমচন্দ্র এই জিনিসটিরও অতি সাবলীল ব্যাখ্যা উপন্যাসটির ঊনত্রিংশ পরিচ্ছেদে দিয়ে দিয়েছেন। ‘এই বৃক্ষ মহাতেজস্বী; একবার ইহার পুষ্টি হইলে, আর নাশ নাই। এবং ইহার শোভা অতিশয় নয়নপ্রীতিকর; দূর হইতে ইহার বিবিধবর্ণ পল্লব ও সমুৎফল্ল মুকুলদাম দেখিতে অত্যন্ত রমণীয়। কিন্তু ইহার ফল বিষময়; যে খাই, সেই মরে।’ আমার অন্যতম পছন্দের একটি বই।


বইয়ের নাম: বিষবৃক্ষ
লেখক: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়




দ্বিতীয় বই:



আধুনিক যুগে বাংলা চিরায়ত সামাজিক উপন্যাস অঙ্গনে প্রফুল্ল রায় লুব্ধক নক্ষত্রের সাহিত্যিক নামান্তর...একই সাথে উজ্জ্বল এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ । তাঁর উপন্যাসগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য, তিনি বাস্তবতাকে লেখনীর রঙ-তুলিতে এবং কিছু চরিত্রের সমন্বয়ে অত্যন্ত সুচারুরূপে উপস্থাপন করেন। তাঁর প্রত্যেক বই পড়ার শেষে মনে হয়, এটা হয়ত আমার জীবনেরই গল্প, চরিত্রটা আমি। আমিই ‘আমার নাম বকুল’ এর বকুল, আমিই ‘স্বপ্নের সীমা’ র টিয়া, আমিই ‘মোহানার দিকে’ র দিবাকর, আমিই ‘মহাযুদ্ধের ঘোড়া’ র রেখা আবার আমিই হয়ত ‘আলোয় ফেরা’ র রাজা। তাহলে ঔপন্যাসিক প্রফুল্ল ‘আমার/আমাদের’ জীবনের ঘটনা এভাবে লিখলো কেমন করে! হ্যা, এটাই তাঁর বিশেষত্ব। তাঁর প্রত্যেক গল্পের প্রেক্ষাপট আলাদা। কখনও তিনি নিম্নশ্রেণীর মানুষের হাসিকান্নার জীবন নিয়ে লিখেছেন, কখনও নিষিদ্ধ শ্রেণীর ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্নগুলোকে তুলে ধরেছেন, আবার কখনও সমাজের বেকারগোষ্ঠীর জীবনের হতাশাগুলোকে চিত্রিত করেছেন। মহাযুদ্ধের ঘোড়া সেই বেকারগোষ্ঠীর একজনের এবং তার জীবন রাতারাতি আমূল পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার গল্প। উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র অশোক, রেখা, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, হরনাথ, মালতী,ভূপাল, পারমিতা, লীনা, চন্দ্রনাথ,প্রমথেশ । অশোক ব্যানার্জি সমাজের ছিন্নমূল গোষ্ঠী থেকে আগত এমন একজন মানুষ যে ব্যক্তিগতভাবে সমাজের সকল ভালো কিছুর প্রতি বিরূপ মনোভাব সম্পন্ন, তার মতে ‘সকল ভালো কিছু উচ্চবিত্তের জন্য, নিম্নবিত্তের জন্য শুধু রেশনের কাঁকড়যুক্ত আতপ চালের ভাত বণ্টন হয়ে রয়েছে সামাজিক সমবণ্টনের সূত্রানুসারে’! কঠোর তাঁর চরিত্র এবং তীক্ষ্ণ তার দৃষ্টিভঙ্গি। স্পষ্টভাষী অশোক ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে নিজের অন্য এক ব্যাক্তিসত্ত্বাকে উন্মোচন করে। তার মত অসংখ্য বেকার মানুষের প্রতিভূ যেন সেই বিকেলে সে-ই হয়, ‘সার্টিফিকেট নয়, চাকরি চাই’। যে কথা মানুষ বলতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ে এবং নিজের জীবনের যে অমূল্য সম্পদ হারাতে গিয়ে মানুষ একশোবার চিন্তা করে, হতদরিদ্র পরিবার থেকে আসা এই ছেলেটি সেই কাজটিই রাগের মাথায় করে বসে। নিজের সার্টিফিকেটটি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয় সে সবার সামনেই। কিন্তু এই ঘটনার মাধ্যমেই সমাবর্তনে উপস্থিত বিশেষ অতিথি, বিশিষ্ট ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দৃষ্টিগোচরে আসে সে। হায়ার সেকেন্ড ক্লাস নিয়ে অর্থনীতিতে পাশ করা এই ছেলেটি, তাঁর অন্বেষণের মূল বস্তু হয় এবং সে ইউনিভার্সিটিতে নিজের পরিচিত মারফত তার ঠিকানা খুঁজে বের করে ফেলে এক নতুন পরীক্ষা চালানোর অভিপ্রায়ে। অপরদিকে, দশ বছর বয়সে ফুড পয়জনিং এ বাবা-মা হারানোর পর অশোক মানুষ হতে থাকে ফ্যাক্টরি শ্রমিক হরনাথ এবং মালতির স্নেহের আবেশে। অভাবের সংসারে, অশোক যেন তাদের বড় ছেলে এবং নান্টু ঝিন্টুর বড়ভাই। টালিগঞ্জের ব্যারাকে হরনাথের সাথে বাড়ি ভাগাভাগি করে থাকে ভূপাল বোসের পরিবারও। সেই সূত্রে ছেলেবেলা থেকেই অশোক এবং রেখার সখ্যতা গড়ে উঠে এবং গ্রাজুয়েশনের পর তারই জোরাজুরিতে অশোক মাস্টার্স পাশ করে। রেখা তাঁর টিউশনির আয়ের সামান্য কয়েকটি টাকা থেকে অশোকের পড়ার খরচ, পরীক্ষার ফিস দিনের পর দিন চালাতে থাকে ঠিক আপনজনের মত। অশোকের বাড়ি ফিরে আসার পর যখন সবাই তাঁর দিকে চেয়ে থাকে কোন ভালো খবর শোনার আশায়, সে দ্বিধাহীনভাবে মানুষগুলোকে এক অন্য চিন্তার রাজ্যে ঠেলে দেয়... ‘ভবিষ্যতে কি করবে অশোক’? কিন্তু কারও কারও ভবিষ্যৎ হয়ত চিন্তার থেকেও অনেকটাই আলাদা হয়, অশোকের ক্ষেত্রেও যা ঘটে। পরেরদিন সকালে, বস্তিবাড়ির বাইরে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পাঠানো লিমুজিন আসে তাকে এক অজানা লক্ষ্য এবং গন্তব্যের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য । সোমনাথের কাছে গেলে সে সমাজের নিম্নশ্রেণীর মানুষের জীবনের কাঠামো পরিবর্তনের আবাহন এবং ক্ষমতা নামের যাদুকাঠির ছোঁয়াতে তাদের জীবনযাত্রা উন্নয়নের দায়ভার পায়। অশোক সেই চ্যালেঞ্জ মেনে নেয় এবং নেমে পড়ে এক অন্য ধরণের ঘোড়দৌড়ের খেলায়। সে কি পারে তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে? নাকি নিম্নশ্রেণীর এই প্রতিনিধি প্রতিপত্তির ছোঁয়াতে নিজেকে সারাজীবনের মত হারিয়ে ফেলে? কি হয় তার কাছের মানুষদের সাথে যারা একসময় অনাথ এই ছেলেটিকে বুকে টেনে নিয়ে সমাজে নতুন পরিচয় দিয়েছিল? কি-ই বা হয় সেই রেখার সাথে নিঃস্বার্থ অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের? বইটি দুই খণ্ডে রচিত, প্রথম খণ্ডে অশোকের এক জীবন থেকে অন্য জীবনে পদার্পণের বর্ণনা আছে এবং অপরখণ্ডে আছে অমূল্য কিছু জিনিসের পরিসমাপ্তি। অনেক আগে পড়েছিলাম, সাধারণত কোন উপন্যাসের নামকরণ করা হয়, তাঁর নায়ক, নায়িকা অথবা উপন্যাসটির বিষয়গত তাৎপর্য মাথায় রেখে। এই বইটির নামটাও আলাদা তাৎপর্যপূর্ণ। এটা জীবনযুদ্ধের ঘোড়া, ঠিক আমাদের সবার মতই। কোন ঘোড়াকে মাঠে খেলানোর জন্য অনেক আগে থেকেই ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হয় তাকে, তার খেয়াল রাখতে হয়, সর্বোপরি তাকে প্রশিক্ষণ দিতে হয়, কোনভাবে খেলাতে নিজের লক্ষ্য থেকে যাতে সেটি বিচ্যুত না হয়ে পড়ে। দৌড়ানোটা হয় তার উদ্দেশ্য, সবাইকে হারিয়ে গন্তব্যে সর্বপ্রথম পৌঁছানো তার লক্ষ্য। কিন্তু অনেক ঘোড়া আছে যারা ঘোড়দৌড়ে নিজস্ব কারণে পিছনেই থেকে যায়, হয় অসুস্থতার কারণে নতুবা পারিপার্শ্বিক কারণে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে। ঘোড়াটা এখানে রূপক, আমাদের অনেকের জীবনেও কিন্তু এই ধরণের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি, অস্তিত্ব নিয়ে টানাপোড়েনের ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে। হঠাৎ অনেক কৃত্রিম বিলাসিতা পেলে কখনও কখনও মানুষ স্নেহের বিশুদ্ধ মাধুর্যটুকু ভুলে যায়। মহাযুদ্ধের ঘোড়া এরকম মানুষের জীবনের চিত্র এবং তার অস্তিত্ব টানাপোড়েনের গল্প। প্রথমবার যখন পড়েছিলাম, মাথায় অনেকদিন পর্যন্ত শুধু ‘মহাযুদ্ধের ঘোড়া’ নামের রেশটাই ছিল। অদ্ভুত এর উপস্থাপনশৈলী, সাবলীল এর প্রকাশভঙ্গি। প্রফুল্ল রায়ের বেশ কিছু বই তারপরেই পড়ে ফেলেছিলাম। প্রত্যেকটা একে অপরের থেকে পুরোপুরি আলাদা এবং ঘটনাগুলো মন ছুঁয়ে যাওয়ার বৈশিষ্ট্য রাখে। একটু অন্য ধরণের জীবনের ছবি পড়তে চাইলে এই বইয়ের বিকল্প নেই। চিরাচরিত চিরায়ত উপন্যাসের থেকে অনেকাংশেই ভিন্ন এটি। এক কথায় অসাধারণ একটি বই।

বইয়ের নাম: মহাযুদ্ধের ঘোড়া (১ম এবং ২য় খণ্ড)
লেখক: প্রফুল্ল রায়



**** এই লেখা সম্পূর্ণ রূপে আমার… পূর্বের কোন লেখার সাথে মিলে গেলে তা একান্তই co-incidence….no resemblance. আশা করি পোস্টটি ভালো লাগবে !!!! =p~ =p~=p~=p~



সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২১
২৪টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×