somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলালিংকের আজাইড়া অ্যাড, আমাদের বকবক প্রবনতা আর হারিয়ে যাওয়া সেই আবেগগুলো... X(

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টিভি তো দেখা হয়ই প্রতিদিন, প্রচুর... তবে ঘুরে ফিরে ঐ মুভি চ্যানেলগুলোতেই... আর বিয়ের পরে ঘরের টিভিতে সিরিয়ালের আধিপত্য তো সর্বজনবিদিত.... গুটি কয়েক নাটক দেখা হতো আগে, আজকাল তাও দেখা হয় না আর... কিভাবে কিভাবে জানি গতকাল হটাৎই একসাথে অনেকক্ষন টিভি দেখা হলো। ক্যাবল অপারেটরের আর আমার বাসার প্যারালাল লাইনের কল্যানে সবগুলো মুভি চ্যানেল ঝাপসা, ঘুরে ফিরে দেশী চ্যানেল গুলোতেই ভরসা রাখলাম (সামনে নাকি আরও দশটা চ্যানেল আসতাছে, আমরা কোনটা রাইখা কোনটা দেখুম কে যানে :-*)

বাংলালিংকের সম্প্রতি তিনটা অ্যাড এসেছে, কাল টানা তিনটা দেখলাম একের পর এক.... প্রথম অ্যাডে এক ছেলে বন্ধুকে টিউন শুনাতে ফোন করছে রাত বারোটায়, বন্ধু জানতে চাইছে গরুর রচনা (আমারা অবশ্য জানা ছিলো এখনকার পোলাপাইন আনসিন এসে রাইটিং এর যুগে আছে, এখনও ট্রাডিশনাল গরু একটি গৃহপালিত প্রাণী টাইপ মুখস্ত রচনার যুগ আছে জানতাম না)। পরের সিনে দেখা গেলো গরু তো গরু ছাগলের রচনাও ফোনে বলে দিচ্ছে কারণ বাংলালিংকে এখন আধ ঘন্টা মাত্র সাড়ে সাত টাকা :| পরের অ্যাডে আরও মজা... মহিলা মা কে ফোন করেছে মুড়িঘন্টের রেসিপি চেয়ে, মুড়ি ঘন্টে যে মুড়ি লাগে না সেইটা অবশ্য মেয়ের জানা নেই :D যাই হোক ঘন্টাখানেক প্যাচালের পরে মেয়ের মনে পড়লো চুলাই তো জ্বালানো হয় নাই /:) অতএব আবার প্রথম থেকে শুরু, ভয় নেই সাড়ে সাত টাকার প্যাকেজ আছে কি না.... :| সবশেষেরটা সবচেয়ে জঘন্য, খুব সম্ভবত একজন সরকারী কর্মচারী ( বেসরকারী হলে পরের আধঘন্টায় চাকরী চলে যাবার কথা;) ) খেয়েদেয়ে বউ এর সাথে গল্প করছে অফিস ডেস্কে বসে, আজাইড়া প্যাচাল... পাশের বাড়ির বিড়াল মাছ খাওয়া ছেড়ে দিছে এই ইনফরমেশন নিশ্চিত করতে বিড়ালের সাথে কথপকথন... বিল নিয়ে টেনশন??? সাড়ে সাত টাকার প্যাকেজ আছে কিসের জন্য.... :|

ছোটবেলার কথা মনে পড়লো... বাবার সরকারী চাকরি, বাসার ফোনের বিল আনলিমিটেড, বন্ধুরা সহজে নিজেরা ফোন করতো না, আমাকেই সবাইকে ফোন করতে হতো... পরে যখন টিএন্ডটি টাইম লিমিটেড বিল শুরু করলো তখন তো বাসার ফোনের মারাত্মক ডিমানড... ফোনে কথা বলতে কিপটামির শুরু ২০০১ এ যখন প্রথম গ্রামীন ব্যবহার করি... দশ টাকা, সাত টাকা এমন বিলিং ছিলো অনেকদিন, প্রতিবার কল শেষে সাথে সাথে বিল চেক, কলটাইম চেক আরও কত কি... মিসকল কালচার কি জনপ্রিয়ই না ছিলো তখন :D আহারে সেই দিন আর এই দিন....

মানুষ তো কথা বলবেই, কেনো বলবে না... কথা নিয়ে ব্যবসাও হবে.. তবে ব্যবসা যখন ক্ষতির কারণ হয় তখন লাগাম টানাই উচিত। একজন সরকারী কর্মচারী অফিসে বসে ভরদুপুরে ঘন্টার পর ঘন্টা আজাইড়া প্যাঁচাল পাড়বে আবার সেইটাকে বিজ্ঞাপণের বিষয় করে আরও আজাইড়া প্যাঁচালের আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে -- এটা কেমন কথা। পড়াশোনার কথা বলা হয়, মা এর উৎকন্ঠা, পিতা হবার খুশি -- এসব হাইলাইট করা হয়, কিন্তু রাত বারোটায় কম কলরেটে কথা বলার সুযোগ আমাদের সমাজ কিভাবে নিচ্ছে এটা বোধহয় সবারই জানা... নিয়ন্ত্রনের কেউ নেই, বাঙালীর কথা বলার আগ্রহকে কত ভাবে বাড়িয়ে নিয়ে কত ব্যবসা চারপাশে....

আজকাল ভেবে অবাক লাগে.... এই আমরাই মাত্র কবছর আগেও চিঠি লিখতাম, পোষ্টকার্ডে যোগাযোগ করতাম, ট্রাং কল করে অপারেটরের বদন্যতার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতাম.... এখন হার্ডকপির দিন শেষ, ঈদের দিনে এসএমএসের বন্যায় ভেসে গেছে দুটো ফোন, এসএমএস আসে আর মুছি, মেমোরীতে জায়গা নেই যে... জন্মদিনে ফেসবুকের ওয়াল ভরে যায় হ্যাপি বার্থডে মেসেজে... ভার্চুয়ালিটির জয়জয়কার, আমরা এখন অনেক আধুনিক, প্রযুক্তি আমাদের দূরত্বের সীমানা ঘুচিয়েছে অনেক আগেই.... এসব কথা মাঝে মাঝে অনেক কঠিন লাগে, পুরানো ফাইল খুঁজে বের করি সেই ছোট্টবেলার বন্ধুর দেয়া তিনটাকা দামের ঈদ কার্ড.... পুরানো কাগজের গন্ধ ফাইলটায়, হাজারো স্মৃতি, কাজিনদের পাঠানো চিঠি, ছোট্ট ছোট্ট সব কার্ড। ঈদের সময় নিজের হাতে কাগজ কেঁটে কত রং বেরং এর কার্ড বানানোর কথা মনে পড়ে... সেই সময়কার সেই শুভেচ্ছাটাকে আবারও পাওয়া হয়... বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ --- ছোট্টবেলায় কত সত্যি একটা কথা পড়েছিলাম, তাই না?????

ছোট্টবেলার সেই বন্ধু তিন টাকার কার্ড কিন্তু কখনো মিস হয় নাই, বড় কালে এসেও হ্যাপি বার্থডে বলায় দেরী হয় নাই.... আজ তিনটাকায় তিন মিনিট কথা বলা যায়, তিন টাকায় ছয়টা এসএমএস পাঠানো যায় -- তবুও আজকাল সেই শুভেচ্ছা পাওয়া হয় না। অনলাইনে হটাৎ দেখা হয়ে যায় কোনো মেইল আইডিতে, দোস্ত সরি আসলে এতো বিজি থাকি আজকাল আর কিছুই মনে থাকে না ঠিকমতো.... কড়া কিছু বলতে গিয়েও থেমে যাই, আমিও তো সেদিনই একই কথা বললাম এক বন্ধুকে, ঝাড়িও দিলাম ফেসবুকে বার্থডে দেয় নাই সেজন্য... গতকাল খুব কাছের এক কলিগ কাম বন্ধুর জন্মদিন গেলো... অনেক বার ঠিক করে রাখার পরেও লেট উইশ আজ সকালে... ছোট্ট একটা এসএমএস -- স্যরি ফর লেট উইশ, হ্যাপ্পি বার্থডে....

ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসি বলার কি প্রানান্ত চেষ্টা, প্রথমবার ভালোবাসি বলে ফেলার পরের সেই আনন্দ উল্লাসের সাথে আজকাল কার লাভ ইউ মেসেজ মেলাতে কষ্ট হয়... জানি এর মাঝেও অনেক আবেগের লুকোচুরী তবুও যখন মেসেজের টেম্প্লেটে ইন এ মিটিং এর পাশাপাশি লাভ ইউ লেখা মেসেজটাও দেখি আজকাল কেমন জানি লাগে... প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানানোর কাজটাতেও আঙ্গুল চালাতে কত কষ্ট, টেম্প্লেট থেকে কপি করা মেসেজ পাঠিয়েই কাজ চলে যায়....

আজাইড়া প্যাচালে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলি, বিড়ালের সাথে মাছের গল্প থেকে শুরু করে রাতের বেলার রগরগে আলাপ.... পাশের রুমে থাকা বৃদ্ধ বাবা - মা এর সাথে একটা ঘন্টা কাটানো হয় না কোনোদিনই, অফিস শেষে, আড্ডা মেরে বাসায় তো ঘুমাতে যাওয়া.... কিংবা অনেক অপেক্ষা করে থাকা কোন বন্ধু কিংবা প্রিয়জন, অনেক আগের হারিয়ে যাওয়া কোনো কাছের মানুষ.... জানিনা কার জন্য আমাদের এতো সময় আর কার জন্য নয়...................................................................................


(( ছবি কৃতজ্ঞতা: কাজী তাহসিন আগাজ অপুর্ব ))
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ২:০৭
৪০টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×