'স্টকহোম সিনড্রোম' সম্পর্কে হয়তো জানেন তবুও ছোট করে বলি, স্টকহোম সিনড্রোম হচ্ছে এমন একটা মানষিক অবস্থা বা এমন কিছু আচরণ যখন ভুক্তভোগী অপরাধীর প্রতি আনুগত্য, আবেগপ্রবণ টান, দয়া,ভালোবাসা অনুভব করে।এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে অপহরণকারী'র পক্ষে অপহৃত ব্যাক্তি কোর্টে সাফাই গেয়েছে,নির্যাতনকারীর পক্ষে নির্যাতিত সাফাই গেয়েছে এবং আপাতদৃষ্টিতে সেটা সচেতনভাবেই গেয়েছে৷ তো এটাকে স্টকহোম সিনড্রোম বলে।
আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামে আরো বিশেষ করে বললে নিম্নবিত্ত পরিবারে বউ পেটানোর একটা রেওয়াজ আছে (সব পরিবারে নয়)।শহরে আর উচ্চবিত্ত পরিবারে যে বউ পেটায়না তা কিন্তু নয় তবে সেখানে যে পুনর্নিবেশ আমরা দেখি তা গ্রামের নিম্নবিত্তের তুলনায় ভিন্ন।তো নিজে গ্রামে বড় হওয়ার দরুন এরকম অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার দূর্ভাগ্য হয়েছে। দেখেছি যে সকালে স্বামী বউকে পেঠালো দুপুরে আবার সেই বউ স্বামীর প্লেটে ভাত তরকারি বেড়ে দিচ্ছে, এখানে অনেকেই স্বামীর প্রতি প্রেম/আনুগত্য খুজে পাবেন,কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়।
স্বামী কতৃক নির্যাতিত হয়ে বউ বাপের বাড়ি চলে গেছে, বাপের বাড়ির লোকজন বলছে "জামাইরে তালাক দিয়া দে", কিন্তু বউ বলে "না, উনি মারলেও আমার স্বামী কাটলেও আমার স্বামী"।এমন ঘটনা হয়তো আমার মতো অনেকেই দেখেছেন বা শুনেছেন, অনেক বাংলা সিনেমায়ও দেখবেন শাবানা মৌসুমিরা মাতাল জুয়ারি স্বামীর হাতে নির্যাতিত হয়েও স্বামীর প্রতি তাদের মায়া কমে না, প্রেম কমেনা।নিজেকে আদর্শ পতিব্রতা স্ত্রী হিসেবে প্রমাণ করতে নির্যাতনের ক্ষতের পরিমাণ যেন উনাদের কাছে মাপকাঠি। "অমুকের বউ জামাইর প্রতি অনেক প্রেম এতো মারে তবুও যায়না" শুনেছেন?। "স্বামী সেবা কর স্বর্গে যাবি" এই বচন মাথায় রেখে আদিকাল থেকে এ ভূখণ্ডের হাজার হাজার স্ত্রী শত নির্যাতন সহ্য করে আসছেন৷ এটাকে কি প্রেম বলবেন?দায়িত্ববোধ?মায়া?ভালোবাসা?পুণ্য? উত্তর হচ্ছে না।
নির্যাতিত অনেক নারীই স্টকহোম সিনড্রোমে ভোগেন, নিজের অজান্তেই। আমরা ভাবি মেয়েটা পতিপরায়ণা, কিন্তু আসলে তা না,মেয়েটা মানষিক ভাবে সুস্থ নয়। স্বামীর অব্যাহত নির্যাতন মেয়েটাকে যখন মানষিক ভাবে অসুস্থ করে ফেলে তখন স্বামী হাজার নির্যাতনের পরেও যে দুমুঠো ভাত যোগান দেয়,কাপড় দেয়, তার সন্তানের দায়িত্ব নেয় তখন সেই নির্যাতনকারী স্বামীকেই তার অনেক বড় দয়াল হাতিম তাই মনে হয়। খুব নগন্য পরিমান আনুকূল্যও স্ত্রী'র কাছে অনেক মনে হয়।
শুধুমাত্র নারী নির্যাতন না,আমাদের সমাজে চলমান অনেক বিষয়েই আমরা ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখতে পাবো যে অনেক নির্যাতিত নির্যাতনকারীর প্রতি অনুরক্ত। বড় নির্যাতনকে তারা খুব সাধারণ করুণা পেলে ভুলে যায়।
তো লেখা শেষ করবো আদর্শ রচনা লেখার মতো কিছু প্রতিকার/প্রতিষেধক দিয়ে,অনেকগুলো আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন,যেখানে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। আদর্শ গৃহিণী হওয়ার পাশাপাশি নারীরা নিজের পছন্দ আর যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি/ব্যাবসা করলে নারী নির্যাতন কম হয়/হবে, আর নির্যাতিত হলে তা মুখ বোজে সহ্য না করে "স্টকহোম সিনড্রোমে" না ভোগে প্রতিবাদ করতে শিখবে। গ্রামের সাথে শহরের তুলনা করলে কিংবা বাংলাদেশের সাথে ইউরোপের তুলনা করলে আমরা এর প্রয়োজনীয়তা দেখতে/বুঝতে পারবো।
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে নেওয়া
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:১৯