somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্থলোভী প্রশাসনের উদ্দেশ্যে দু চারটি কথা

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটি সত্য ঘটনা দিয়েই শুরু করছি। ঘটনাটা আমার বিশ্ববিদ্যলয়ের। বাংলাদেশের কৃষি শিক্ষার শ্রেষ্ট বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছরের ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অদ্ভুত একটা নিয়ম আছে। অদ্ভুত না বলে কদর্য বলাটাই বোধ হয় শ্রেয় হবে। স্নাতক প্রথম বর্ষে যারা এখানে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে না তাদের কাছ থেকেও কোটি কোটি টাকা আদায় করে বাণিজ্য করা হয়। এই বাণিজ্য সকল অনৈতিকতাকে ছাপিয়ে যায়। প্রত্যেক বছর এখানে নির্ধারিত একটা পয়েন্টের ভেতর আবেদন করতে বলা হয়। তারপর আবেদনকারীদের থেকে নির্ধারিত আসনের দশগুলো বাদে বাকী সব আবেদনকারীকে পরীক্ষা হলেই বসার সুযোগ দেয়া হয় না। অথচ তাদের সবার কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়। ঠিক যে টাকাটি ভর্তি পরীক্ষার জন্য যোগ্য প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীই দেয় সে পরিমাণ। অর্থাৎ বর্তমানে যেটি ৭০০ টাকা আছে। পরীক্ষা দিতে না পারা শিক্ষার্থীদেও কাছ থেকে এভাবে আদায় করা টাকার পরিমাণও অনেক। প্রত্যেক বছর এভাবে কয়েক কোটি টাকা এখানকার প্রশাসনের পকেটস্থ হয়। আর পরীক্ষার জন্য যোগ্য ১২০০০ এর কাছ থেকে আয় তো আছেই। এই কদর্য কাজটি বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ চলে আসছিলো। ১২০০০ বাদে যারা পরীক্ষা দিতে পারে নি সেই সকল শিক্ষার্থীর প্রত্যেকেই নিশ্চয়ই একটা করে হলেও ধিক্কার জানিয়েছে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের ধিক্কার কারো কানে পৌঁছত না। এটাই ছিলো সমস্যা। এই অনৈতিক নিয়মের বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টেঁর একটি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা হয়। ক্যাম্পাসে বেশ মিছিল হয়। অবস্থান ধর্মঘটের মত কর্মসূচিও পালন করা হয়। এক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও বড় একটা অংশ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের আন্দোলনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ করেন এবং কথা দেন আগামী বছর থেকে এ নিয়ম আর থাকবে না। কেবল পরীক্ষার যোগ্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই নির্ধারিত ৭০০ টাকা নেয়া হবে। কিন্তু বছর ঘুরতেই ভাইস চ্যান্সেলরের সেই কথা দেয়া কোথায় যেন উবে গেল। সেদিন সার্কুলারে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন দেখলাম না। হুবুহু আগের নিয়মই অক্ষত রয়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের এরকম আচরণকে কি বলা যায়? অন্তত চক্ষুলজ্জা সম্পন্ন মানুষ হিসেবে হলেও তো উনার বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবা উচিত ছিলো যে, আমি আমার ছাত্রদের কথা দিয়েছিলাম! এখন আবার এমনটি করলে স্রেফ বেইমানী ছাড়া আর কিছু হবে না। কিন্তু ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয় সেটি ভাবলেন না। নিজেকে জেতালেন। তবে জেতানোর থেকে হারলেন অনেক বেশি। এ হার পুরো দেশের ছাত্র সমাজের কাছে।
সবচেয়ে অবাক হয়ে যাওয়ার মত বিষয় হলো ভর্তি প্রক্রিয়ায় আয়কৃত এই কোটি কোটি টাকার একটি পয়সাও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফান্ডে জমা হয় না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন না, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও না। এর বড় একটি অংশ বিভিন্ন মহলের পকেটস্থ হয়। তারা জনগণের ঘামে টপটপ করা শ্রমের টাকায় বিলাসিতার পাহাড় গড়ে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সজ্ঞানে সেই লুটপাটকারী মহলের সাথে হাত মিলিয়েছেন। সেই সাথে একজন শিক্ষক হিসেবে সেদিন আন্দোলনে নামতে ইচ্ছুক সাধারণ শিক্ষার্থীদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সৎ সাহসটিও হারালেন। ঘটনাটা এখানেই শেষ।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে এটা কি কেবলই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে? না। বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এটি কম বেশি হয়। ভিসিরা এখন আর কথা দিয়ে কথা রাখেন না। কারণ সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে যোজন যোজন দূরে তাদের বাস। তারা কথা রাখার নামে ছলনা করেন, পলিটিক্স করেন। তাদের কাছে ছাত্রদের থেকেও ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী শিক্ষক, লুটপাটকারী মহল, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

প্রত্যেক বছরই স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময় আসলে আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনগুলো কেমন যেন কান্ড জ্ঞানহীন হয়ে যায়। ভর্তি ফরমের মূল্য নিয়ে তারা বিশাল পরিমাণ বাণিজ্যেও নীল নকশা আঁকে। এই বাণিজ্য দিনকে দিন বেড়েই চলছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এখানে বাণিজ্যের সমান্তরালে চলে লুটপাট। এই লুটপাটে শেয়ার থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্রশাসন, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন, ভর্তি কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঘা বাঘা ক্ষমতাসীন শিক্ষক। এই অযথা বাড়তি বাড়তি ফি নেয়ার বিরুদ্ধে প্রায়শই এখানে সেখানে আন্দোলন হতে দেখা যায়। কিন্তু এই অশুভ চক্রের হাতে গিয়ে সব আন্দোলন মার খায়। তারা নিষ্ঠুর ভাবে এসব আন্দোলন দমন করে। নিজেদের পকেট ভারি করার ধান্দায় তারা ফি কমানো তো দূরের কথা প্রতি বছর নানান অযৌক্তিক অজুহাতে এ ফি বাড়িয়েই চলছে। এটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক অশনি সংকেত।

প্রশ্ন হচ্ছে একটি ভর্তি পরীক্ষা নিতে একটা বিশ্ববিদ্যালযের কত খরচ হতে পারে? এখন তো সব ইন্টারনেটের মাধ্যমেই হয়। নতুবা মোবাইলে। এখানে স্টুডেন্ট প্রতি পাঁচ টাকাও খরচ হওয়ার কথা না। আর বাকি যে খরচ থাকে তা হলো পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপানো, পরীক্ষা আয়োজন, দায়িত্বরত শিক্ষকদের সম্মানী, ফলাফল প্রকাশের অল্প কিছু খরচ এই তা। যদি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০-৪০ হাজার স্টুডেন্ট পরীক্ষা দেয় তাহলে কত লাগতে পারে খরচ? হিসেব করে দেখুন ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মধ্যে এ হিসেব চুকে যায়। খুব ভালো ভাবেই চুকে যায়। কিন্তু এই ছোট্ট কাজের জন্য পাঁচশো, সাতশো, এক হাজার, দু হাজার এত টাকা নেয়ার মানে কি? এটি ভর্তি ইচ্ছুদের সাথে স্রেফ প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি এক কথায় তাদের দুর্বলতার সুযোগ নেয়া! প্রশাসনের হর্তাকর্তারা ভালো করেই জানেন কষ্ট করে হলেও এসময় অনেক গরিব পরিবারের সন্তানটিও ফরম তুলে। ঋণ করে হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পরীক্ষা দিয়ে যায়। তাই তাদের পকেটে ভাগ বসানোর এটাই উত্তম সময়। এই সময়টি বেছে নেয়ার জন্য আপনাদের সবার উদ্দেশ্যে একরাশ ধিক্কার জানাই!

পরিশেষে, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনের এরকম বেপরোয়া দৌরাত্ম রুখে দেয়া এখন সময়ের দাবি। এটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যতকে খুব খারাপ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তারা যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে শুধু ভর্তি ফরম নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি, ভর্তি ফি বাড়াচ্ছে তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানও অনেক কমিয়ে দিচ্ছে। সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েরা এখানে পড়তে হিমশিম খেয়ে যায়। অনেকের টিউশনি করতে করতে ঘাম ছুটে যায়। দিনকে দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার খরচ খেটে খাওয়া মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এদেশের বারোটা বাজাতে আর কিছু লাগবে না। যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক থাকে না সে দেশ কখনো শক্ত মেরুদন্ড নিয়ে দাঁড়াতে পারে না। এই সত্যটা না বুঝলে আমাদের কপালে অনেক দুঃখ আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এই লাগামহীন দুর্নীতি আর ভর্তি বাণিজ্যের হাত থেকে রক্ষার জন্য দেশের ছাত্র সমাজের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাই।

সৌরভ দাস
সভাপতি
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট
বাকৃবি শাখা।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×