somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম, কোরআন ও মাহফিল ব্যাবসা

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছুদিন আগে এক ছোট ভাই পোস্ট করেছে, নানান আলেম নানান মত আমরা যাব কোন পথ
তাকে বললাম, স্রষ্টা কুরআন দিয়েছে ( অনুবাদ এবং তাফসীর) পড়ো এবং মেধা দিয়েছে ব্যাবহার করো মডেল হিসেবে রসূল দিয়েছে তাকে ফলো করো। বিভ্রান্তকারির কাছে যাওয়ার দরকার কি!

হ্যা, সবার সব কথাই হয়ত মনগড়া কথা নয়। ভালো ভালো কথাও বলা হয়। কিন্তু ইসলামে এক পার্সেন্টও মনগড়া কথা বলার সুযোগ নেই।
প্রথমত, ওয়াজ মাহফিলে একেক জনের একেক ধরনের বক্তব্যে মানুষ যে বিভ্রান্ত হচ্ছে এ নিয়ে নিশ্চই বিতর্কের প্রয়জন নাই? তাহলে যা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তার দরকার কি!
দ্বিতীয়ত, মাফিলের জন্য টাকা দিলেও নেয় না বরং নিজ খরচে এসে মাফিল করে এমন বক্তা আছে নাকি? যদি থেকে থাকে এবং সত্য কথা বলে, তবে তার প্রতি শতভাগ সমর্থন। কিন্তু না, এমনটা দেখছি না।
আসলে এখন মাহফিল হচ্ছে ইসলাম প্রচারের নামে মেধাকে পুঁজি করে এক ধরনের ব্যাবসা। বর্তমানে দেশে যার বিশাল এক মার্কেট সৃষ্টি হয়েছে। এই মার্কেট দখলকে কেন্দ্র করে এক বক্তা আরেক বক্তাকে ডুবাইতে ব্যাস্ত। এজন্য একেক জন একেক ধরনের ফতোয়া দিচ্ছে। এতে করে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয় এ কারনে আজ দেশের মুসলমানরা বিভিন্ন মোল্লার অনুসারীতেও বিভক্ত হচ্ছে।
অথচ হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এবং পরবর্তীকালের খলিফারা, ভারতীয় উপমহাদেশে দেওবন্দের ইমামরা, হযরত শাহ্ জালাল, শাহ্ পরান, খানজাহান আলী সহ যত অলি আউলিয়া এদেশে ইসলাম প্রচার করেছে তারা কেউই এভাবে ইসলাম প্রচার করেনি! তারা ইসলাম প্রচারকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম বানায় নি। বরং তারা এবং তাদের অনুসারীরা ইসলাম প্রচারে নিজেদের সম্পদ ব্যায় করেছে। তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে মানুষকে ইসলাম এবং সত্যের দাওয়াত দিয়েছে। আর এখন বিশাল সাজসজ্জা করে আলেমদের ভাড়া করে আনা হয়। মূলত এই ভাড়ার চক্রে অন্যকে পেছনে ফেলে নিজে চাহিদা বৃদ্ধির জন্যই এত পেছনে লাগালাগি। চাহিদা বাড়াতে কারো কারো অবস্থা এমন হইছে, যে এক বছর আগে শিডিউল নিয়ে রাখতে হয়!
এখনকার আলেমদেরকে মানুষের কাছে যেতে হয়না, মানুষই আলেমদের কাছে যায়। আলহামদুলিল্লাহ! তার মানে বোঝাই যাচ্ছে, বর্তমানে মানুষের ইসলামের প্রতি কত আগ্রহ, কত ভালোবাসা! আহ্হারে!
কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয় হলো, তবুও আজ দেশে ইসলাম নেই! প্রশ্ন হতে পারে ৯০ পার্সেন্ট মুসলমানের দেশে ইসলাম নেই, এ আবার কেমন কথা! হ্যা এটাই কথা। কারন ইসলাম মানে শান্তি। তাই ইসলাম থাকলে দেশে শান্তি থাকতো। কিন্তু কই দেশে তো শান্তি নেই! ইসলাম থাকলে, পোষাকই ধর্ষনের জন্য দায়ী না বলে স্রষ্টার ভয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রনের উপর বেশি গুরুত্ব দিতো। কারন কোরআন কোথাও খারাপ পোষাকের জন্য ধর্ষনের অনুমতি প্রদান করেনি। বরং সূরা ইউসুফের ৫৩ নং আয়াতে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার কথা বলা হয়েছে।
ইসলাম থাকলে খুন, চুরি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, সুদ, ঘুষ, দূর্বলের প্রতি অন্যায়, ক্ষমতার বাড়াবাড়ি, জমি দখল, খাদ্যে ভেজাল, ওজনে কম দেয়া,..... এসব কিছুই হওয়ার কথা নয়।
আমরা পৈতৃক সূত্রে ইসলাম পেয়েছি, জন্ম সূত্রে মুসলমান হয়েছি। কেউ কেউ আবার নামাজ পড়া মুসলমান।
ইসলামের পাঁচটি পিলারের একটি হচ্ছে নামাজ। সুতরাং যারা নামাজ পড়েনা তাদের নামাজের দাওয়াত দেওয়া নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ন কাজ। তবে কেবল মাত্র পিলাকেই পূর্নাঙ্গ অবকাঠামো বলা যায় না। আবার যে পিলার পূর্নাঙ্গ অবকাঠামো ধরে রাখতে পারে না, সে পিলার রাখার চেয়ে ভেঙ্গে ফেলাই উত্তম।
সুতরাং, মানুষকে যেমন নামাজ পড়ার কথা বলা দরকার। একই ভবে কিছু নামাজি ব্যাক্তিকে নামাজ না পড়ার জন্যও বলা দরকার। আসুন দেখি তারা কারা, যাদের নামাজ না পড়ার কথা বলা দরকার!
তারা সেই নামাজি, যারা ঘুষ খাচ্ছে এবং নামাজ পড়ছে, মানুষের সম্পদ দখল করছে এবং নামাজ পড়ছে, মানুষের টাকা মেরে দিচ্ছে এবং নামাজ পড়ছে। কিন্তু লাভ কি এই নামাজের!
তারচেয়ে বরং কার নিকট হতে কত ঘুষ খাওয়া হইছে, কার টাকা মেরে দেওয়া হইছে, কার সম্পদ দখল করা হয়েছে, সেসব ফেরৎ দিয়ে তারপর মসজিদে আসেন।
কয়েকটা ফতোয়া দেই, খোঁজ নিয়ে দেইখেন কোন মোল্লা ভুল বলে কিনা।

১। জমিন হতে আসমান সমান পাপ থাকলেও স্রষ্টা চাইলে ক্ষমা করেও দিতে পারে। কিন্তু যদি এমন কোন পাপ করা হয় যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তির নিকট দায় থেকে যায়। সে সকল ক্ষেত্রে ক্ষমা করার এখতিয়ার স্রষ্টা নিজের হাতে রাখে নি। এক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি ক্ষমা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত স্রষ্টাও ক্ষমা করতে পারবে না।
ধরুন, কেউ ক্ষমতার বলে অন্যায় ভাবে কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে একটা থাপ্পর দিলো , এক্ষেত্রে যাকে চর মারা হল তার কাছেই আগে ক্ষমা চাইতে হবে। যাকে চর মারা হলো সে ক্ষমা না করলে সারা জীবনের সহি ইবাদতের বিনিময়েও স্রষ্টা ক্ষমা করতে পারবে না।
২। ঘুষ নিয়ে থাকলে আগে তা ফেরৎ দিতে হবে তারপর তওবা করে ক্ষমা চাইতে হবে।
৩।কারো সম্পদ দখল করলে আগে তা ফেরৎ দিতে হবে তারপর তওবা করে ক্ষমা চাইতে হবে।
৫। কারো টাকা মেরে দেওয়া হলে আগে তা ফেরৎ দিতে হবে তারপর তওবা করে ক্ষমা চাইতে হবে।
৬। ওজনে কম দিয়ে ঠকিয়ে থাকলে আগে তা পরিমান মতো বুঝিয়ে দিতে হবে তারপর তওবা করে ক্ষমা চাইতে হবে।
সবাই প্রতিনিয়ত কমবেশি পাপ করে। তিনি দয়ালু, ক্ষমা চাইলে হয়ত ক্ষমা করে দিবেন । কিন্তু এ ব্যাপারে সর্বদা সাবধান থাকা জরুরী, লোভে পরে এমন কোন পাপ যেন না করা হয় যার ক্ষমা করার এখতিয়ার স্রষ্টা নিজের কাছে রাখেনি! তাহলে সারা জীবনের ইবাদতও এক পয়সার কাজে আসবে না।

নাহ্, এই ধরনের ওয়াজ মোল্লা মশাইরা করবে না। এগুলো বললে মানুষ জড়ো হবেনা, মার্কেট ডাউন হয়ে যাবে। অথচ এগুলো ঠিক করতে পারলে দেশের সকল সমস্যা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৩৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×