somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বরফ এবং হ্রদের দেশ “সুইজারল্যান্ড” সম্পর্কে।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




জ্ঞান অর্জনের অন্যতম একটা মাধ্যম হচ্ছে ভ্রমণ। ভ্রমণের শখ অনেকেরই আছে, আমিও সেই অনেকের মধ্যে একজন। স্রষ্টার প্রতিটা সৃষ্টিকে ঘুরে দেখতে চাই আমি । আলহামদুলিল্লাহ্, ইতিমধ্যে দেশের ৬০ টা জেলা ভ্রমণ সম্পন্ন করেছি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঘুরার পালা শেষ করেছি বললেই চলে। তবে স্রষ্টার সৃষ্টি অসীম, শুধুমাত্র ভ্রমণ করেই তার সকল সৃষ্টি ঘুরে দেখা অসম্ভব। তবে পরাশুনা করেও তার সৃষ্টি সম্পর্কে কিছুটা জানা যায়। আমি পড়ি স্রষ্টার সৃষ্টি সম্পর্কে। লাইফে সব যায়গা হয়তো যেতে পারবো না। অনেকে হয়তো শুনে হাসতে পারেন বা আমাকে পাগলও ভাবতে পারেন , আমি মাঝেমধ্যে গুগোলের ষ্ট্রীট ভিউতে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার ফিজিক্যাল সিনগুলো দেখি, ভালো লাগে। বিভিন্ন যায়গা সম্পর্কে পড়ি, ভালো লাগে। গত দুদিন ধরে সুইজারল্যান্ড সম্পর্কে পড়ছিলাম , তার কিছু তথ্য এখানে শেয়ার করতে চাই।

“সুইজারল্যান্ড” পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এবং শীতল একটি দেশ। আল্পসের শুভ্র পর্বতমালা ও প্রশস্ত নীল হ্রদ সমূহ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় এখানে । এর জিপিএস কোয়ার্ডিনেটস্ (46°48' 47" N 8°13'16" E) ৪৬ ডিগ্রী ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড উত্তর এবং ৮ ডিগ্রী ১৩ মিনিট ১৬ সেকেন্ড পূর্ব । অবশ্য 46°N এবং 8° E এ সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে।

ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত হলেও এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়। যতদূর জানাযায়, ১২৯১ সালের দিকে কয়েকটি “ট্রিবুনের” বুদ্ধীজিবীরা মিলে জার্মান সরকার থেকে কিছু অংশ, ফ্রান্স সরকার থেকে কিছু অংশ এবং ইটালী সরকার থেকে কিছু অংশ ভাড়া নেয় এবং সেই সব এলাকার “ট্রিবুন” গুলি একত্র করে “প্যাক্ট ফেডারেল” গঠনের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ড নামে একটা দেশ প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে ১৮৪৮ সালে কনষ্টিটিউশন তৈরীর মাধ্যমে “সুইজারল্যান্ড” একটা ফেডারেল রাষ্ট্র হিসাবে আন্তর্জাতীক অঙ্গনে নিজের পরিচিতি তুলে ধরে।

বর্তমানে এর জনসংখ্যা প্রায় ৮.৫ মিলিয়ন। আয়তনে দেশটি বাংলাদেশের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ, দেশটির আয়তন ৪১,২৮৫ বর্গকিলোমিটার। সুইজারল্যান্ডের রাজধানীর নাম বের্ন, তবে এখানকার অন্যতম শহর জেনেভা এবং জুরিখ। সুইজারল্যান্ডের মুদ্রার নাম সুইস ফ্রাংক। এটি পৃথিবীর অন্যতম একটি ধনী রাষ্ট্র । দেশটির মানুষের বর্তমান মাথাপিছু আয় প্রায় ৮৫ হাজার ডলার ( কল্পনা করা যায়!)। সরকারী হিসেব মতে আমাদের বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলারের কিছু কম ( যাস্ট ডিফারেন্টটা বুঝানোর জন্য বলা) । গোপনীয়তা রক্ষার সুবিধা থাকায় সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক গুলোতে বিভিন্ন দেশে উপার্জিত কালো টাকা জমা রাখার ব্যাপারটা সবা্রই মোটামুটি জানা। জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইটালিয়ান এবং রোমান্স এই চারটি ভাষাই সুইজারল্যান্ডের সরকারী ভাষা। সুইজারল্যান্ড সরকারের অন্যতম একটা রীতি হচ্ছে, প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারী সুইস রাষ্ট্রপতি পরিবর্তিত হয়। ছয় বৎসরের জন্য গঠিত মন্ত্রীপরিষদের একেক জন মন্ত্রী পালাক্রমে এক বৎসরের জন্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।

এইতো গেলো সুইজারল্যান্ডের রাজনৈতিক বিষয়, এবার আসি আমার ব্যক্তিগত আগ্রহের জায়গাতে, অর্থাৎ সেখানকার প্রাকৃতিক আশীর্বাদ ও অন্যান্ন বিষয়ে।

তুষার মুকুট পরিহিত আল্পসের চূড়া সমূহ এবং প্রায় ১৫০০ বেশি হ্রদ সুইজারল্যান্ডের প্রকৃতিকে অনন্য এক সৌন্দর্যে শোভিত করেছে। উপগ্রহের ছবিতে বিস্তীর্ণ সবুজ আর সাদা তুষারের পর্বতমালা এবং নীল জলরাশির হ্রদ সমুহ একেবারে স্পষ্টই দেখা যায়। থুন হ্রদ আর পূর্বে ব্রিয়েঞ্জ হ্রদের কোলে অবস্থিত সুইজারল্যান্ডের অন্যতম ভ্রমনাকর্ষণের স্থান হচ্ছে, “ইন্টারলেকেন”। তাছাড়াও সুইজারল্যান্ডে দ্যাখার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। আল্পসের সবচাইতে উঁচু চূড়া গুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ডের “মেটারহর্ন” একটি, যার উচ্চতা ৪৪৭৮ মিটার। ১৮৬৫ সালে এই শৃঙ্গ জয় করতে গিয়ে ৪জন আরোহী মৃত্যুবরণ করে। বর্তমানে গরমকালে প্রচুর পর্বতারোহী এর চূড়ায় ওঠে। বাংলাদেশের সামর্থ্যবান পর্যটকদের জন্য সুইজারল্যান্ড বিশেষ আকর্ষণীয় একটি দেশ। আপাতত সেভাবে সামর্থ্য না থাকলেও ভবিষ্যতে এ দেশটি ভ্রমনের ইচ্ছা আমারও রয়েছে। সুইজারল্যান্ডে অবশ্য বেকার মানুষদেরও চিত্তবিনোদনের জন্য ঘুরতে যাওয়ার ভাতা দেওয়া হয়।

একদিকে পাহাড়ি অঞ্চল অন্যদিকে এতো বেশী হ্রদ থাকায় সুইজারল্যান্ডের অর্ধেকেরও বেশী (প্রায় ৬০ ভাগ) বিদ্যুতের চাহিদা হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার অর্থাৎ জলবিদ্যুৎ থেকে পূরণ করা হয়। সুইজারল্যান্ডের চকলেট বেশ বিখ্যাত। এদেশটি চকলেট রপ্তানির দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ দেশেরগুলির মধ্যে একটি।

দেশটির কয়েকটি বিচিত্র বিষয় রয়েছে। যেমন ধরেন, সিনেমার মতো জাস্ট সুইচ টিপে গোটা সুইজারল্যান্ডকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব! এজন্য দেশটির প্রতিটি প্রবেশ দ্বারে সড়ক ও টানেলের মুখে স্টিলের টিউব দেওয়া রয়েছে, যেগুলো সুইচ টিপলেই বন্ধ হয়ে যাবে।
সুইচ টিপেই রাস্তার দিক নির্দেশকারী চিহ্ন সংবলিত সাইনবোর্ড সমূহ খুলে ফেলা যাবে। ব্রিজ গুলোতে রয়েছে বোমার বক্স। যুদ্ধের কথা বিবেচনা করেই এ ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাছাড়াও ভবিষ্যতে যদি কখনো পারমাণবিক যুদ্ধ হয়, তাহলে দেশটির সকল মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের কথা ভেবে সেখানে পর্যাপ্ত বাঙ্কার তৈরি করে রাখা হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডে তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম টানেল, যা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এক মাস্টারপিস। টানেলটি আল্পসের প্রায় ২.৩ কিঃ মিঃ নিচে এবং এর লেন্থ ৫৭ কিঃ মিঃ।

মোটামুটি ভাবে বলতে গেলে এগুলোই হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের ইতিহাস, রাজনৈতিক এবং প্রাকৃতিক বিষয়াদির সারাংশ।

ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৩৮
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×