somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চালকের মৃত্যুদন্ডের দাবি সড়ক নৈরাজ্যের সমাধান নয়, একটি বাস কোম্পানি করা দরকার

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পটা সাবেক সচিব আসাফ উদ দৌলার কাছ থেকে শোনা। তিনি তখন সাংবাদিকতা করেন। সেটা ষাটের দশক। একদিন বিকালে খবর পেলেন, পুরানো ঢাকার নয়া বাজার বা বংশাল এলাকায় একটা রিকশা অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। এতে একজন লোক আহত হয়েছেন। তিনি খবরটা শুনেই দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলেন। ঢাকায় তখন গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করা, তাও দুইটা রিকশা মুখোমুখি সংঘর্ষে, এটা অনেক বড় সংবাদ। গিয়ে দেখেন আরো সাংবাদিক হাজির। তারাও ঘটনা কাভার করতে গিয়েছেন। তারা প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে শুনতে পেলেন দুর্ঘটনায় একজন সামান্য আহত হয়েছেন। তাকে সলিমুল্লাহ মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। গল্পটা শায়েস্তা খার আমলের বলে মনে হয়েছে। ঢাকায় একসময় রিকশায় একজন আহত হওয়ার বিষয়টিও সংবাদ ছিলো। এখন এটি বড়সড় একটি কৌতুক বটে।

এবার নিজের কথা বলি। আমি ঢাকায় এসেছি ১৯৯৯ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কারণেই ঢাকায় পাকাপাকিভাবে পদার্পণ। এরপরই সংবাদপত্রে লেখালেখি। পরে ২০০৪ সালের দিকে পত্রিকায় সংবাদ কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করি। তারপর থেকে ঢাকার ঘটনা প্রবাহ আমার মুখস্থ। পত্রিকা অফিসে দেখতাম, মফস্বল সম্পাদক একটা সড়ক দুর্ঘটনার খবর আলাদা বাক্সে রেখে দেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুই চারটা মৃত্যুর সংবাদ এলে তা যোগ করে ভেতরে সিঙ্গেল কলামে কয়েকটা লাইন। ঢাকায় দু একজন মারা গেলেও তা ভেতরের পাতার সংবাদ। একমাত্র শিক্ষার্থী মারা গেলেই তা প্রথম পাতায় স্থান করে নিতো। তবে ভিক্টিম ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী হলে, আর তা নিয়ে মিছিল অথবা রাস্তা অবরোধ হলেই হেড লাইন। এর ব্যত্যয় ছিলনা। অন্য কলেজ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হলে প্রথম পাতায়। দুই কলামে। তবে ব্যত্যয় দেখেছি গত সড়ক আন্দোলেনে। এখন ঢাকায় কোন শিক্ষার্থী বাস চাপায় মারা গেলে অথবা বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলার কারণে মৃত্যু হলে প্রথম পাতায় হেড লাইনে স্থান পাচ্ছে।

আমার মনে আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সাথে দর্শনে একটা মেয়ে পড়তো। সে মাসুদের বন্ধু ছিল। মাসুদ এখন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। মেয়েটা বাসচাপায় মারা গেলো পলাশিতে। আমার সেটাই ঢাকার কোন সড়ক দুর্ঘটনা ছিল, যা কাছ থেকে দেখেছিলাম। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় থাকাকালে শাহবাগে কয়েকজন মারা গেলো। আন্দোলন হলো। কতজনে কত কি বলেছে। আন্ডার পাস হবে। উড়াল সড়ক হবে। শেষমেষ আন্দোলনের প্রাপ্তি একটা ওভার ব্রিজ। তবে পলাশিতে এখন বাস চলাচল বন্ধ। বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফল। অভিজ্ঞতা বলছি একারণে যে, প্রতিটি দুর্ঘটনার পর শোরগোল হতে দেখেছি। এখন যুক্ত হয়েছে টক শো। আগে এটা ছিলনা। সংবাদপত্রে বিদগ্ধজনেরা লিখতেন। নিজেদের মতামত প্রকাশ করতেন। সংবাদের পাবলিক রিঅ্যাকশনও যেতো। স্যাটেলাইট টেলিভিশন হওয়ার পর পাবলিক রিঅ্যাকশন সরাসরি দেখা যায়। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবাই সমাধান বলতেন। এত বছরের অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি, সবার দেয়া সমাধান ছিল কাছাকাছি।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কি ছিল সেই সমাধান! যা নিয়ে গত এক যুগ ধরে আলোচনা হয়েছে। আপনি আমি সবাই জানি। অনেক চর্বিত বিষয় এটি। সমাধান খুবই সহজ। প্রতিটি রুটে একটি করে বাস কোম্পানি। একেক রুটে যত ধরণের বাস আছে সবাই মিলে একটি কোম্পানি গঠন করবেন। বাস অনুযায়ী লাভ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবেন। অথবা পুরো ঢাকায় যাদের বাস আছে তারা সাবই মিলে একটি কোম্পানি গঠন করবেন। আয় প্রাপ্যতা অনুযায়ী ভাগ করে নেবেন। এতে কী হবে! কোন রুটে আর পাল্লাপাল্লি হবেনা। কেউ কারো আগে যেতে চাইবেনা। কারো মৃত্যু হবেনা।

এখানে আমার লেখা যারা পড়ছেন তারা কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না, রাজধানীতে বাসে চড়েছেন আর দুটি বা ততোধিক বাসের তুমুল প্রতিযোগিতায় পড়েননি। আসলে আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। দুর্ঘটনা হলেই সবাই চালকের মৃত্যু চান। এটা এখন পপুলার দাবি। আমার কাছে মনে হয়, চালকের মৃত্যু সমাধান নয়। মৃত্যুদন্ড কখেনো অপরাধ ঠেকিয়ে রাখতে পারে নাই। আর একটি বিষয় হলো- ক্ষেত্র বিশেষ ছাড়া চালক যে ইচ্ছা করে গাড়ি চাপা দিয়েছে এটা আদালতে প্রমাণ করা যাবেনা। কারণ নিহতের সাথে তার শত্রুতা, যোগাযোগ, পরিচিতি কোনটাই ছিলনা। ঢাকায় দুর্ঘটনার কারণ একটাই। সেটা হলো, যাত্রী ধরতে তুমুল প্রতিযোগিতা। কে কার আগে যাবে। এই বিষয়টাকেই সমাধান করা দরকার। আন্দোলনে অনেক ভালো ভালো শ্লোগানসমৃদ্ধ পোস্টার দেখা যায়। প্লাকার্ড দেখা যায়। এগুলো ইনোভেটিভ। কিন্তু তাতে সমাধান নেই। এতগুলো তরুন একসাথে জড়ো হয়। তাদের কাছ থেকে ইনোভেটিভ আইডিয়া পাওয়া যায়না। কথা বা শ্লোগান আর সমাধান এক নয়। সড়কের নৈরাজ্য দূর করতে ইনোভেটিভ সমাধান খুঁজতে হবে। আমার মতে, যেটা করতে হবে, তাদের সিস্টেমে ফেলতে হবে। ফেরআউনের দরবারে মাথা নত করে ঢুকতে হতো। মৃত্যুর পরেও যাতে তাদের কাছে মানুষ মাথা নত করে ঢুকে সেজন্য তারা পিরামিডের দড়জা নিচু করে বানিয়েছেন। এটাকে বলে সিস্টেম। বাসকে সিস্টেমে না ফেললে কখেনো দুর্ঘটনা রোধ করা যাবেনা। যারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছে, তাদের এ দাবিটি সর্বাগ্রে রাখা দরকার। ঢাকায় একটি বাস কোম্পানি চাই। আমরা মাসের জন্য একটি টিকেট কিনতে চাই। দিনের জন্য একটি টিকেট কিনতে চাই। শুধু নগদ টাকা নয়, কার্ডের মাধ্যেমে ভাড়া পরিশোধ করতে চাই। পৃথিবী কোথায় গেছে, আমরা কেন সেদিকে যাবোনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:৩৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×