somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাইফ নাদির
এক খণ্ড সাদা পাতায় পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম ধরেছি। এক খণ্ড কাঁদা মাটিতে পুরো সবুজ ফলাবো বলে হাল বেয়েছি। এক খণ্ড রঙিন কাগজে পুরো বিশ্ব আঁকবো বলে রং তুলি এনেছি। এক খণ্ড হৃদয়ে পুরো দুনিয়া পুষবো বলে দৃঢ়প্রত্যয়ি হয়েছি।

মহীয়সী নারী ০৩

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ কেউ একজন জেনিকে উদ্দেশ্য করে ‘‘এই যে ম্যাডাম শুনছেন’’ বলে ডাকলো। পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। হাল্কা ফর্সা গড়নের একটি লম্বা ছেলে হাতে দু’টি হিল নিয়ে জেনির কাছে আসছে। জেনি অবাক হয়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে রইলো। ছেলেটি কাছে এসে মুচকি হেঁসে হিল দু’টি এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘‘এই যে নিন আপনার হিল’’। হিল দু’টি দিতে পেরে মনে হলো যেন, সে দায়িত্ব আদায় করতে পেরেছে। দীর্ঘ নিঃশ্বাসের একটি হাফ ছেড়ে জেনির সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু জেনি তখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে-ই রইলো। কী বলবে বা কী করবে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না! বাসে উঠতে গিয়ে একটি হিল হারিয়ে ফেলেছে, আরেকটা নিজেই ময়লারডিপোতে ফেলে দিয়েছে। সারাটা দিন খালি পায়ে হেঁটেছে, ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে এখন পথের পাশে ছোট্ট একটি বেঞ্চে বসে আছে। আর হিল দু’টোই বা কোথায় পেলো ছেলেটি! কুড়িয়ে এনেছে! এসব ভাবতে ভাবতে কিছু সময়ের জন্য সে ভাবনার কোলে হারিয়ে গেলো। ছেলেটির তুড়ির আওয়াজে সম্বিত ফিরে পেলো। তখনো সে রাস্তার পাশে বেঞ্চটির উপরে বসে আছে। ছেলেটি নিচু হয়ে জেনির পায়ে হিল দু’টো পরিয়ে দিয়ে এক চিলতে মিষ্টি হেঁসে দাঁড়িয়ে পড়লো। জেনি দাঁড়িয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সামান্য চেষ্টা করলো। পাশে রাখা প্রিয় ফুলগাছের টপটি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো ‘‘এটা আপনার জন্য’’।

এদিকে মেঘ খণ্ডের ভার বইতে না পেরে আকাশ মৃত্তিকার সাথে মিতালী পাতালো। হুট করে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। ছেলেটি ব্যাগ থেকে ঘষ করে একটি ছাতা বের করে জেনির মাথার উপরে মেলে ধরলো। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো মুহূর্তের মধ্যে ছেলেটির শরীর ভিজিয়ে দিলো। জেনি নিজের মাথার উপর থেকে ছাতাটা সরিয়ে, যেই ছেলেটির মাথার উপরে ধরতে যাবে, ওমনি ছেলেটি জেনির হাতে ছাতাটি ধরিয়ে দিয়ে ফুলগাছটি হাতে নিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জেনি, ছেলেটি বৃষ্টির শুভ্র আভায় মিশে গেলো। হারিয়ে গেলো।

নিজেকে এখনো বিশ্বাস করাতে পারছে না জেনি। ‘‘ছেলেটি কি মানুষ ছিলো নাকি অন্যকিছু? অন্য কিছু হলে কী দেখতে পেতাম! না, পেতাম না তো। কিন্তু আমি ওকে স্পষ্ট দেখেছি, হাল্কা ফর্সা গড়নের লম্বা একটি ছেলে।’’ সাত-পাঁচ মিলাতে মিলাতে আরো অনেক কিছু ভাবতে থাকে জেনি। এই মুহূর্তে ওর কাছে মনে হচ্ছিলো পৃথিবীতে হাসি মুখে মানুষের উপকার করা মানুষগুলো এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এখনো তারা বেঁচে আছে। মানুষের সুখের উল্লাসে ওরা মেতে উঠে, কাউকে আবার দুঃখের নদী পার করিয়ে দিতে আসে। পড়ে থাকা হিল দু’টো কুড়ে এনে অসহায় মেয়েটির মুখে হাসি ফুটিয়ে সেটাই প্রমাণ করে দিলো ছেলেটি। এঁরা আছে বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর।

ছাতা মাথায় কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে হাতে নিলো। কন্টাক লিস্টে ‘জায়ান’ এর নামটা সার্চ করলো। একটা সময় যেই নামটা ডায়াল লিস্টে সবার উপরে শো করতো সেই নামটা আজ সার্চ করে বের করতে হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে কতকিছুই না পরিবর্তন হয়ে যায়! কতকিছুই না হারাতে হয়! কখনো কখনো মনের অনিচ্ছাটাকে ইচ্ছায় রুপান্তর করে নিতে হয়। এটাই জীবন, এটাই নিয়ম। বিয়ের পর জেনি সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জায়ানের সাথে তেমন কোন যোগাযোগ হয় না। জায়ানও জেনিকে সুখী দেখে দূরে চলে যায়। দূর থেকে জেনির জন্য শুভকামনা করেই সুখের অনুভূতি পায়। কল না করে ফোনটা ব্যাগেই রেখে দেয় জেনি। জায়ানকে সে ভালো করেই জানে। খুব অভিমানী, এতদিন পর ফোন করলে রিসিভ করবে না। আবার কাছে গেলে ফিরিয়েও দিতে পারবে না। তাই সরাসরি জায়ানের বাসায় যাবে, ভাবে জেনি। জায়ানের বাসাটা বেশি দূরে নয়, এখান থেকে পায়ে হেঁটে পাঁচ মিনিটের পথ। বাসাটির সাথে মিশে আছে কত স্মৃতি তার কোন হিসেব নেই! বয়সে ছোট বলে জায়ানকে ছোট ‘ভাইয়ের’ চোখেই দেখতো জেনি। এখনো হয়ত তাই-ই দেখি। জায়ানও জেনিকে বড় বোনের জায়গায় রাখতো। কিন্তু কখন যে জেনির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো, তা সে নিজেও জানতো না। জেনিকে সেই কথা কখনো বলতেও পারেনি। যে-দিন জেনির বিয়ে হয় সে-দিন বলার খুব চেষ্টা করেছিলো, তবে বলতে পারেনি। চোখের সামনে প্রিয় মানুষটিকে অন্যের হতে দেখেছে জায়ান। বুকে বোবা কষ্ট চেপে জেনিকে বিদায় জানিয়েছিলো সেদিন।

পর্ব নং ০৩
..........................................
মহীয়সী নারী / সাইফ
২৭-১১-২০১৯ ইং
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:১৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×