২০ শে জানুয়ারী ১৯৯৭ ইং
স্থানঃ মুনশিগঞ্জ সদর।
সময়ঃ সুবহে সাদিক
রোজঃ সোমবার
গল্পটা ছেলেটা তার মার কাছ থেকে শুনেছে।
তখন রমজান মাস শেষের দিকের নাজাতের কোন একটা রাত। জানুয়ারী মাসের শীতের আবহাওয়া। নানা বাড়িতে মা আর বাবা তখন চাকরির কর্মস্থল চট্রগ্রাম সাতকানিয়ায়।
নানা অনেক পরহেজগার মানুষ। ছেলেটির বাবার মতে যিনি হচ্ছেন একজন " পিছনে গাট্টি লইয়া ঘুরইন্না মুসল্লি"। নানার কাজ হচ্ছে বছরে ৩ চিল্লা দেয়া। আর বাকি মাস মসজিদে পইরা থাকা। আর নানিও পরহেজগার ৫ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমত আদায় করেন।
ওইদিন ফজরের আজান তখনও হয়েছিল কিনা ঠিক মনে নেই। কিন্তু সেই ঊষালগ্নেই ছেলেটির জন্ম।জন্মের সময় বাবা কাছে ছিল না। ছেলেটির জন্মলগ্নে বাবা কাছে থাকবে না সেইটা হয়ত মাকে কিছু বিচলিত করছিল।জন্মের পরপরই নবজাতকের কানে আজানের প্রথম ধ্বনি বাবার মুখ থেকেই নাকি শুনতে হয়।সেইটা কে ছেলেটির কানে শুনিয়েছিল তা মায়ের মুখ থেকে শুনলেও ছেলেটির আর মনে নেই। কিন্তু
এইটা ভূমিষ্ঠ নবজাতকের চিরন্তন অভ্যাস গগনবিদারী চিৎকারের মাধ্যমে তার আগমন জানান দেয়া। এই নবজাতক কোন রকম কান্নাকাটি করা ছাড়াই ভূমিষ্ঠ হল। কিছুক্ষণ পর সবাই বুঝতে পারল শিশুটি মৃত। নাতির মুখ দেখতে পাশের গ্রাম থেকে দাদি চলে এসেছে। এসে দেখে উনার পুত্রবধূ একটি মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছে। তখন চিকিৎসা এত সহজলভ্য ছিল না। দাই যিনি ছিলেন উনিও অনেক্ষন চেষ্টা করেও ছেলেটাকে কাঁদাতে পারলেন না। কি অদ্ভুত! একটি শিশুর কান্নাই তখন আশেপাশটাকে অনেক হাসিমুখর করে তুলতে পারে। সেই চেষ্টাই চলছে।
কিছুতেই যখন কিছু হচ্ছে তখন দাদি বলল সন্তানটাকে কবর দিতে আর মা বললেন একবার সদর হাসপাতালে নিলে কেমন হয়। ডাক্তার একবার শেষ চেষ্টা করে দেখুক। দাদি হয়ত বলেছিল মৃত সন্তান জন্ম দেও আবার কথা বল। কিন্তু মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য হলেও শিশুটিকে সদর হাসপাতাল নেয়া হল। ডাক্তারের প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর শিশুটিকে পৃথিবীকে তার অস্তিত্তের কথা জানান দিল কান্নার মাধ্যমে।
সেই যে শুরু আজ অবধি চলছে। মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করে সেদিন মরে গেলে কি হত??? কেমন হত সেদিন থেকে ২০ বছর পর আজকের ২০শে জানুয়ারী???