somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

আব্বা

২১ শে জুন, ২০২২ সকাল ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমরা আমাদের আব্বাকে এতোটাই ভয় পেতাম যে আমাদের সম্পর্ক ছিল চিল আর মুরগির ছানার মতো।

মুরগির ছানারা যেমন চিলের আনাগোনা পেলে দৌড়ে গিয়ে মায়ের ডানার নিচে লুকায় আমরাও তেমন বাবার সাড়াশব্দ পেলে দৌড়ে গিয়ে মায়ের আঁচলের নিচে লুকাতাম বা বাসার এমন কোনো জায়গায় গিয়ে চুপ করে থাকতাম যেখানে আব্বা খুব একটা যেতেন না।

এই ভয়ের কারণেই আব্বার সাথে আমাদের দূরত্ব ছিল অনেক।আমাদের কাছে আমাদের আব্বার উপস্থিতি আনন্দের চেয়ে ভয়েরই ছিল বেশি।আব্বা তার ব্যবসার কাজ ছাড়া যতোটা সময় বাসায় থাকতেন এই পুরোটা সময় আমাদের শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হয়ে থাকত। ভয়ে আমরা পড়ার টেবিলে বা অন্য কোনো জায়গায় জড়সড় হয়ে বসে থাকতাম।

লেখাপড়ার প্রথম টিচার আব্বাই ছিলেন। আমাদের অক্ষর চিনানো হাতে ধরে লিখা শিখানো সব আব্বার কাছ থেকেই হয়েছে। অবশ্য আব্বার কাছে পড়তে বসলে যতোটা না আমরা পড়তাম তার চেয়ে বেশি ভয়ে কাঁপতাম। একটু এদিক রেখে ওদিক হলেই ঠাস ঠাস পড়তো গালে। পড়ালেখার বাইরে কোনো অপরাধ করলে তার শাস্তি আরও ভয়ংকর ছিল। আমরা তখন মায়ের ডানার নিচে লুকাতাম। মা আমাদের বুক দিয়ে আগলে রাখতেন আর সমস্ত ঝড় তার উপর দিয়ে যেতো। ঝড় শেষে প্রকৃতি শান্ত হয়ে গেলে আমারা ডানার নিচ থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক চলে যেতাম।

আব্বার কথা ছিল একটাই। খাওয়া ঘুম আর পড়া। এর বাইরে কিছুই করা যাবেনা। আমার আব্বার ভয়ে মহল্লার ছেলেপুলেরাও আমাদের সাথে মিশত না খুব একটা। আব্বা যখন আব্বার ব্যবসার কাজে কিছুদিনের জন্য দূরে কোথাও যেতেন আমরা তখন আমাদের নিজস্ব রাজ্যের রাজা বাদশা হয়ে যেতাম। সারাক্ষণ খেলাধুলা আর লাফালাফি তে ব্যস্ত থাকতাম পুরোটা সময়। তিনি বাসায় ফিরে এলে সব আবার আগের মতো।

আব্বার একটা নীল রঙের সুজুকি বাইক ছিল। এর শব্দটা ছিল অন্য সব বাইকের চেয়ে আলাদা। আব্বা যখন বাইক নিয়ে বাসায় আসত আমরা বাইকের শব্দ শুনে সুবোধ ছেলের মতো শান্ত হয়ে পড়ার টেবিলে বসে থাকতাম। কিন্তু আমরা ডালে ডালে চললে আব্বা চলতেন পাতায় পাতায়। মাঝেমাঝে আমাদের পরীক্ষা করার জন্য অফিসে বাইক রেখে বাসায় আসতেন আর এসেই যদি আমাদের এলোমেলো দেখতেন শুরু হয়ে যেতো ধুমধাম। অবশ্য অন্য ভাইয়েদের চেয়ে আমি ভাগে কম পেতাম কারণ আব্বা বলতেন আমার চোখের দিকে তাকালে নাকি তার মায়া হয় খুব এ জন্যই আমি বরাবর বেঁচে যেতাম। যদিও আমি আমার কোটেরে ঢোকা ডার্ক সার্কেল পরা চোখে মায়ার ছিটেফোঁটাও খুঁজে পাইনা।

আব্বা আসলে এসব করতেন কারণ তার বাচ্চারা যেনো অন্য বাচ্চাদের চেয়ে আলাদা হয়। তার বাচ্চারা যেনো সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ পায়। আমাদের জন্যই তিনি দিনরাত খাটতেন। কিন্তু ছোটবেলায় বাবা কে ভয় পাবার কারণে আমাদের মাথায় তাকে অন্যভাবে দেখা ছাড়া আর কিছু কাজ করত না।

যেদিন সকালবেলা আব্বা মারা গেলেন মা আমাদের জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। আমরাও মা'র সাথে হাউমাউ করে কাঁদছিলাম। যাকে আমরা সবমসময় চাইতাম দূরে থাক সেই মানুষটাই যখন চিরতরে দূরে চলে গেল তখন তাকে ছাড়া কিভাবে বেঁচে থাকব এই ভেবেই হাউমাউ করে কাঁদছিলাম। এতোগুলো বছর পরেও কাঁদি।

বাবারা আসলে এমনই হয় তারা খুব একটা ভালোবাসা প্রকাশ করেনা। তারা বুকে ভালোবাসা জমিয়ে রেখে সন্তানের জন্য ভবিষ্যৎ গড়ায় ব্যস্ত থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২২ সকাল ৯:৩৩
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×