somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্তান

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই শিশুর কান্নার আওয়াজে মুখরিত আশপাশ, এই যেন জয়োল্লাস। কেইবা জানে এই কান্না তাকে সারাজীবন আবদ্ধ করে রাখবে, নাকি অধিক সুখে মত্ত থাকবে, যতদিন বেঁচে থাকে দুঃখ কষ্ট একদমই আচ করবে না।

হউক ধনী, মধ্যবিত্ত অথবা গরিব, বাস্তবতা চিরন্তন সত্য, এটাই সত্যি কেউ কখনও তার জীবনে শুধু সুখে মোড়ানো জীবন অথবা শুধু দুঃখ ভারাক্রান্ত জীবন কাটায় না। সুখ এবং দুঃখ এই দুই মিলেই আমাদের জীবন।

সময়ের স্রোতে থেমে নেই তার বেড়ে উঠা, হাসি কান্না লেগেই আছে প্রতিনিয়ত। সবে মাত্র আব্বু আম্মু বলতে শিখেছে, আদর মাখা কণ্ঠে দু একটি শব্দ শুনতে কতই না ভালো লাগে। তার থেকে দূরে থাকলে ব্যাকুল হয়ে পড়ে মন, কবে শুনতে পাবো ছোট্ট সোনামণির আদর মাখা কণ্ঠে সেই কথা গুলো! এই আদর মায়া মমতা ভালোবাসা ধনী গরিব অথবা মধ্যবিত্ত সকলেই অনুভব করে।

একটা সময় পুরোপুরি কথা বলতে শিখে, নিজের পায়ে হাটতে শিখে, খেলাধুলা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এরপরই সে অতিক্রম করে নতুন আরেক অধ্যায়ে।
মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে অনবরত কান্নায় আশপাশ মুখোরিত করা সেই শিশুটি আদর যত্নে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। কিন্তু সবাই কি আদর যত্নে বড়ে হয়ে উঠে? সকল শিশু আদর পেলেও কিন্তু ভাগ্যে যত্ন থেকে বঞ্চিত হয় অনেক শিশু।

অনেক পরিবার রয়েছে যারা আর্থিকভাবে সচল নয়। একেক পরিবারে একেক রকম সমস্যা রয়েছে। আদর ভালোবাসায় কমতি না থাকলেও, কমতি রয়েছে ভালো খাবার, পোশাক ও পড়াশোনার। অভাব অনটনের কারনে অনেক শিশু সঠিক যত্ন থেকে বঞ্চিত, পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত। তাদের দুইবেলা দুমুঠো খেতে কষ্ট হয়ে পড়ে, কি করে আলাদাভাবে শিশুর যত্ন নিবে! কি করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবে! শুধু মাত্র পরিবেশ থেকে পাওয়া কিছু পরিমান পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করেই অনেকে বেড়ে উঠে।

সন্তান খাবার আর কাপড়ে কষ্টে থাকলে মা সহজে মেনে নিতে পারে না,সন্তানের জন্য মায়ের কলিজা ফেটে দ্বিখণ্ডিত হয়। মায়ের অনুভূতি সহজে বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়, শুধু মাত্র মা জাতি অনুভব করতে পারে সন্তানের জন্য সকল অনুভূতি।

অনেক সময় এমন হয় যে, সন্তান যখন একটু বুঝতে শিখে তখন মা তাকে কোন ধনী ব্যক্তির বাড়িতে কাজে নিযুক্ত করে দেয়।

স্বাভাবিক ভাবে আমরা সবাই বলি, এ কেমন মা, ফুলের মত ছোট্ট সন্তানকে কাজে লাগিয়ে দিল! তার মনে কি একটুও দয়া মায়া নেই! এই কথা গুলো বলা দোষের কিছু নয়, আমরা মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে কথা গুলো বলে থাকি। কিন্তু এর পিছনের কারণ গুলো খুঁজে বের করি না, এবং এর সমাধান দিতেও নারাজ ।

কিছু সংখ্যক পরিবার ব্যতিত অনেক বাবা মা আছে যারা নিজেদের সন্তানের জন্য দয়ামায়া ভালোবাসা আছে বলেই তাকে অন্যের বাড়িতে কাজে নিযুক্ত করে। হয়তো চিন্তা ভাবনা এটাই ছিল, আমাদের সন্তানকে কখনও ভালো খাবার খাওয়াতে পারিনি, কখনও সুন্দর পোশাক কিনে দিতে পারিনি, ধনী লোকের বাড়িতে কাজ করলে সে দুবেলা দু মুঠো ভালোভাবে খেতে পারবে, সেখানে গেলে নতুন পোশাক পরতে পারব, খুব ভালো ভাবে থাকবে । এসব কিছু ভেবেই হয়তো সন্তানকে ধনীব্যক্তির ঘরে কাজে দেয়।

কিন্তু মায়ের সেই আশা কি সত্যি পূরণ হয়? সত্যি কি তার সন্তান সেই বাড়িতে পুষ্টিকর ভালো খাবার খাচ্ছে? নতুন পোশাক পরিধান করছে? তারা কী নিজেদের সন্তানের মত করে ভালোবাসে? নাকি সেই ধনীর ঘরে অত্যাচারিত, অবহেলিত ভাবে কোন রকম খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে!

শত ভাগের মধ্যে কয়জনইবা নিজের সন্তানের চোখে দেখে এদের। শতের মধ্যে দু চারজন পেতে কষ্ট হবে। এদের মধ্যে কেউ হয়তো অত্যাচার নির্যাতন করে, আবার কেউ নির্যাতিত করে না কিন্তু নিজের সন্তানের মতও দেখে না, শুধু অবহেলায় রেখে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে।

একজন মা বাবা হয়ে আরেক মা বাবার সন্তানকে কষ্ট অবহেলায় কখনও রাখতে পারে না। কাজের জন্য আসা অন্যের সন্তানকে যোগ্য মা বাবারা সব সময় নিজের সন্তানের মতই ভালোবাসে। বুঝতেই দেয় না যে এটা এটা অন্য কারো সন্তান। নিজের সন্তানকে যেমন খাবার জামা কাপড় দেয়, ঠিক তেমনি ভাবে কাজ করতে আসা সেই শিশুকে ভালো খাবার জামা কাপড় দেয়। কেউ কেউ কাজের পাশাপাশি পড়াশোনারও সুযোগ করে দেয়।

তারা বুঝে সন্তানের জন্য কতটা ভালোবাসা রয়েছে, সন্তানের কষ্টে নিজেদের মনে কতটা আঘাত লাগে, সন্তানের জন্য কতটা অনুভুতি। তাই অন্যদের সন্তানদেরও কষ্ট অবহেলা না করে নিজের সন্তানের মত ভালোবাসে।

এমন মা বাবার আশ্রয়ে যখন অন্যের সন্তানরা আশ্রয় পায় তখন সেই সন্তানরাও তাদেরকে নিজের বাবা মায়ের মত মনে করে ভালোবাসে এবং সব সময় তাদের পাশে থাকতে চায়। যখন নিজের বাবা মায়ের কাছে যায় তখন দ্বিতীয় বাবা মা দের কথা মনে পড়ে যায়, ভীষন অনুভব করে তাদের। ফিরে যাওয়ার জন্য অস্থিরতা কাজ করে তাদের মাঝে।

আর যাদের বাসায় গিয়ে শিশুরা অবহেলা ও নির্যাতনের মধ্যে থাকে, তাদের কাছে ফিরে যেতে চায় না এবং সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকে।

অবহেলা নির্যাতনে থাকা এসকল শিশুরা হাসি আনন্দ ভুলে যায়। তাদের মন ভেঙ্গে যায় অল্প বয়সে। শিশু থেকে বেড়ে উঠার সময় এমন অবহেলা আর নির্যাতনের কারনে শারিরিক ও মানসিক ভাবে অনেক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি রয়েছে।

শিশুর মন নিষ্পাপ মন, ফুলের মত সৌরভ ছড়ায় তাদের মুখের হাসিতে। কোমল কন্ঠ কোমল মন, যেদিকে মায়া মমতা ও ভালোবাসা সেদিকে ছুটে সব সময়। আর যেখানে নির্যাতন অবহেলা সেখানে কোমলমতি শিশুর ফুলের মত জীবন সৌরভ ছড়ায় না, সৌরভ ছড়ানোর আগেই ঝরে পরে ভবিষ্যতের সেই ফুল।

কাজের জন্য আসা শিশুদের অবহেলা আর নির্যাতন না করে নিজের সন্তানের মত মায়া মমতা ও ভালোবাসা দেয়া উচিৎ এবং তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও করে দেয়া উচিৎ, যাতে তারা জাতির কাছে বোজা হয়ে না থাকে।

"যে ব্যক্তি একজনকে শিক্ষিত হতে সহযোগিতা করে, সে যেন গোটা জাতিকে সহযোগীতা করলো।"
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:০২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×