somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"সত্য অন্বেষক- রাঙাদা " গল্প ১ 'অসুর বধ'

১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৮ম শ্রেণীতে উঠেছে রক্তিম। তার পরিপক্কতা যেন তার বয়সের তূলনায় কিঞ্চিত অধিক। তবে, সেটা চিন্তাশক্তিতে। বই পড়া রাকিবের অভ্যাস বটে। এক্ষেত্রে, যেসব বইপুস্তক তার থেকে বয়সে অনেক বড় ব্যাক্তিদের অধ্যায়নের নিমিত্তে লেখা সেসব বইয়ের প্রতি তার অধিক নেশা। বিদেশী লেখকদের বইই তার পছন্দের তালিকায় প্রথম সারিতে অবস্থান করে। ডেল কার্নেগী, শিব খেরা, মাইকেল এইচ হার্ট প্রমুখ খ্যাতিমান লেখকদের বই রক্তিমের বুকশেলফে সাজানো থাকে। কিন্তু, রক্তিমের পিতার ইচ্ছা সম্পূর্ণ বিপরীত। রক্তিম গণিতশাস্ত্রে অধিক সময় ব্যায় করে তার পাঠ্যবইয়ের সমস্ত গাণিতিক সমস্যা বছরের অর্ধেক সময়ে গলাধঃকরণ করে বছরের বাকি অর্ধেক সময়ে সপ্তম শ্রেণীর গাণিতিক সমস্যা গলাধঃকরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করুক, রক্তিমের পিতার ইচ্ছা এরূপ। গণিতের প্রতি যে রক্তিমের একেবারেই বিতৃষ্ণা এরকমটি আবার বলা যায় না। কিন্তু পিতার অধিকতর আশা তার ভালো লাগতো না। এদিকে পিতার আশা আশঙ্কায় পরিণত হলো যখন রক্তিম তার ষান্মাসিক পরিক্ষায় গণিতে মাত্র চল্লিশ নম্বর পায়। এরূপ নম্বরের পর পিতা পুত্রকে জেরা করা শুরু করলেন।

- তা গণিত কি এরকম কঠিন বিষয়, যে এই ৪০ নম্বর ৮০ তে রূপান্তরিত হয় না?

- বাবা; এবার ৪০ পেয়েছি, বার্ষিক পরিক্ষায় এটা ইংরেজীতে দেখতে পাবে।

- চুপ করো। লজ্জা করে না। একে তো ফেল করেছো, তারপর আবার মুখফুটে কথাও বলছো। সারাদিন খালি বই আর বই। বই কি তোমাকে ভাত দিবে?

- বাবা, জ্ঞানের ক্ষুধা পেটের ক্ষুধার চেয়েও ভয়ংকর। Do not understemate the power of knowledge hunger!

- আমায় জ্ঞান দিতে এসো না। তোমার এই জ্ঞান দিয়ে ভবিষ্যতে কি করবে যদি তোমার জ্ঞানের কোনো স্বীকৃতিই না থাকে। এইযে সারাদিন পড়াশোনা বাদ দিয়ে বই পড়ো, এই বই দিয়ে কি ভবিষ্যতে বউকে খাওয়াতে পারবে?

- আমার বউ যদি লাইব্রেরিয়ান হয় তাহলে?

এরূপ উক্তি যেকোনো ব্যাক্তিরই তাৎক্ষণিক হাসির উদ্রেক করবে এটাই স্বাভাবিক। আরিফুল সাহেবের ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম হলো না। কিন্তু; তিনি প্রাণপণে হাসি চেপে একটা হুংকার ছাড়লেন।

- এই; এখানে কি নাট্যমঞ্চ বসেছে নাকি? দাঁত খুলে ফেলবো একেবারে। দেখো রক্তিম; বই পড়া খারাপ নয়। এটা অবশ্যই মানব চরিত্রের একটা ভালো দিক। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটাও জরুরি। আর কতই বা বয়স হয়েছে তোমার? জীবনের চার আনাও এখনো অতিক্রম করোনি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আগে শেষ করো। পরে দেখবে বই টই পড়ার অনেক সময় পাবে।

- হ্যাঁ বাবা, আমি বুঝতে পেরেছি। এখন থেকে বই পড়া একটু কমিয়ে পড়াশোনায় বেশী মনোযোগী হবো।

প্রতিটি সন্তানই তার পিতা মাতার দুর্বলতা জানে। রক্তিমও জানতো। নিজের দোষ স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করে ক্ষমাপ্রার্থনা করলে রক্তিমের পিতা এতোটা প্রসন্ন হতেন যে, তার দপ্তরের কোনো সহকারী কর্মচারীর তোষামোদেও বোধ করি এতোটা প্রসন্ন হতেন না। খোশমেজাজেই বলে উঠলেন,

- কম টম হবেনা। একেবারে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। যাই হোক, আমি ঠিক করেছি এখন থেকে তুমি আর শান্তা একসাথে পড়তে বসবে। ও অঙ্কে ৯৭ পেয়েছে। তোমাকে কিভাবে বাগে আনতে হয়, সেটা ওর থেকে ভালো আর কেউ জানেনা। ওর উপর তোমার মাস্তানিও খাটবে না।

- ওর মতো ছাগিনীর কাছে আমি পড়তে বসবো না। আমি ওর থেকে ভালো অঙ্ক পারি।

- আজকে রাত্রে পড়তে বোস না, স্পষ্ট বুঝতে পারবি কে ছাগিনী, আর কে বাঘিনী। আর ছাগিনী বলে কোনো শব্দ নেই। শব্দটা হবে ছাগী।

যার পরনিন্দা করছিল রক্তিম, সেই এসে রক্তিমের সব কথা শুনে ফেলে। এ কারণে রক্তিম মনে মনে নিজেকে ধিক্কার জানায় এই ভেবে যে, পরনিন্দা করার পূর্বে তার চোখ কান খোলা রাখা উচিত ছিলো পাছে নিন্দাকৃত ব্যাক্তি পিছন থেকে শুনে ফেলে। এদিকে আরিফুল সাহেব শান্তার আকস্মাত আগমনকে স্বাগত জানালেন।

- আরে শান্তা! এসো এসো। তুমিই এবার গর্দভটাকে সামলাও।

সমর্থন পেয়ে শান্তা রক্তিমকে শাসানো শুরু করে।

- আজকে সাতটার মধ্যে টেবিলে থাকবি। আমিও আসবো। যদি এর বিপরীত কিছু হয়, তাহলে কপালে শনি আছে। আমিও দেখবো আজকে, অঙ্গ কতটুকু ভালো পারিস।

বাঘিনী গর্দভকে শাসিয়ে দিয়ে নিজের বাসায় চলে যায়। বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খাওয়ার কথা সবারই কমবেশি জানা আছে তবে বাঘিনী আর গর্দভ পাশাপাশি থাকে একথা হয়তো কেউ কস্মিনকালেও শোনেনি। রক্তিমদের তিনতলা বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় থাকে রক্তিম, তৃতীয় তলায় শান্তা। স্বভাবে রক্তিমও ব্যাঘ্র অপেক্ষা কোনো অংশে কম নয়। পাড়ার ছেলেরা খুবই ভয় পায় রক্তিমকে। কিন্তু শান্তার সামনে রক্তিম যেন একেবারে গর্দভচর্মাবৃত ব্যাঘ্র হয়ে যায়। শান্তা শাসিয়ে দিয়ে গেলে শান্তার পিছনে দাড়িয়ে এমন ভাব করে রক্তিম যেন সে অজগর হলে বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে শান্তাকে তৎক্ষণাৎ গলাধঃকরণ করে ফেলতো।

পরেরদিন রক্তিমদের স্কুলে একটা প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ছিলো। অষ্টম বালিকা বনাম সপ্তম বালিকা। অষ্টম বালিকা শ্রেণীর দলকে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়ে ৩-০ গোলের অবিশ্বাস্য জয় এনে দেয় দলের অধিনায়ক নীলা সূর্যবংশী। খেলায় মাইশা এবং রক্তিম নীলাকে চিয়ার করে। রক্তিমের সাথে নীলার বেশ ভাব রয়েছে। নীলা বলতে গেলে এক প্রকার সব্যসাচী মেয়ে। পড়াশোনা, খেলাধূলা সব কিছুতেই দক্ষ। মার্শাল আর্টও জানে। ছোটবেলা অ্যাক্সিডেন্টে নীলার বাবা মা দুজনই মারা যান। মৃত্যুকালে নীলার বাবা মা কিছু সম্পত্তি রেখে গিয়েছিলেন। তা দিয়েই চলে যাচ্ছে নীলার। এখানে নীলা একাই থাকে। সঙ্গে খালি একটা চাকর। আপনজনের মধ্যে নীলার কাকা আর কাকী অজিত এবং রচনা সূর্যবংশী। তারা আমেরিকান প্রবাসী। স্কুলে রক্তিম আর মাইশা নীলার কাছের বন্ধু। রক্তিম এবং নীলা উভয়েই অসম্ভব রকম ক্রীড়াপ্রেমী এবং একে অপরের কঠোর সমর্থক। নীলা তার স্কুলের বালিকা ফুটবল দলের অধিনায়ক এবং রক্তিম স্কুলের বালক ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। প্রায়ই ক্রিকেট, ফুটবল, বেসবলসহ বিশ্বক্রীড়ার আদ্যোপান্ত নিয়ে এই দুই মহান ক্রীড়ারথী বিতর্কে বসে যায়। এইতো ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেও তাদের দুজনের মধ্যে বিতর্ক হয়েছিল।

- রক্তিম, শামীমতো গতকাল সেঞ্চুরী করলো।

- তো!

- তো মানে কি আবার? এরকম একটা ওয়ার্ল্ড ক্লাস খেলোয়াড় সেঞ্চুরী করলো। আর তুই তোতাপাখির মতো তো তো শুরু করেছিস? জানিস," ম্যান অফ দ্যা" ম্যাচও হয়েছিল।

- গতকাল বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে শুধুমাত্র নাজমুলের ব্যাটে। ওর অপরাজিত ৭৮ রানের মারকুটে ইনিংসটির জন্যই বাংলাদেশ জিতেছে। আর, শামীম তো গতকালের সেঞ্চুরিতে ৭০+ ডটই খাইছে। স্ট্রাইক রোট করতে পারেনাই মোটেও। দশ বছর জাতীয় দলে খেলার পরও যদি একটা খেলোয়াড় একটা সেঞ্চুরী করতে ৭০+ ডট খায়, তাহলে তারে আমি অন্তত ভালো খেলোয়াড় বলতে পারি না।

বোধ করি এই উক্তিটির পর রাত বারোটায় টেলিভিশনে অনুষ্ঠিত 'তৃতীয় মাত্রা' এর একটি স্বরুপ দেখা যেতো যদি না খেলা শুরু হয়ে যেতো এবং নীলার ডাক পড়তো।

খেলা শেষে নীলাকে অভিনন্দন জানাতে চায় রক্তিম আর মাইশা। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পর বেশ কিছুক্ষন ধরেই নীলার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রক্তিম দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দের জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে যে, খেলা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নীলা ওয়াশরুমে গেছে। নীলার জন্য রক্তিম এবং মাইশা বেশ কিছুক্ষণ ধরেই অপেক্ষা করতে থাকে। স্কুল প্রাঙ্গণ বিজয়ী দলের এবং দর্শকদের কলরবে মুখরিত ছিলো। হঠাৎ এক চিৎকার মুহুর্তের মধ্যেই সব কিছু নিস্তব্ধ করে দিলো।

গগণবিদারী সেই চিৎকারের পর স্কুলে অনেক বিশৃঙ্খল ব্যাপার ঘটে গেলো। এই ঘটনাগুলো পাঠকদের সামনে গুছিয়ে আনলে এর সারমর্ম দাড়ায় এরূপ;

রক্তিম আর মাইশা নীলার জন্য অপেক্ষা করছে। চিৎকার শোনার পর রক্তিম দৌড়ে গিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যায়। গিয়ে দেখে যে পঞ্চম শ্রেণীর একটি ছাত্রী ভয়ে থরথর করে কাপছে। রক্তিম দেখলো ওয়াশরুমে নীলার মৃতদেহ পড়ে আছে। রক্তে গোটা ওয়াশরুম ভেসে গেছে। নীলাকে কেউ অত্যন্ত নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করেছে। নীলার পেটের অন্ত্র, নাড়িভুড়ি বের হয়ে এসে খুনির বীভৎস মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে। রক্তিম নিজেকে আর সামলে রাখতে পারে না। সেখানেই মুখভর্তি বমি করে দেয়। স্কুল দুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

দুদিন বন্ধে পড়াশোনার জন্য বাসা থেকে চাপ পেতে হয় নি রক্তিমকে। রক্তিমের পিতার মতে ছেলে খুবই খারাপ একটা শক পেয়েছে। শান্তাও রক্তিমকে মানসিক ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠেতে চেষ্টা করে। কিন্তু শান্তার স্কুল খোলা থাকায় পুরোটা সময় সেভাবে সময় দিতে পারেনা। প্রথম দিনটি রক্তিম খবরের কাগজ পড়েই কাটিয়ে দেয়। দ্বিতীয় দিনের বন্ধে শান্তার স্কুল অনিবার্য কারণবশত অর্ধবেলা পর ছুটি হয়ে যায়। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে রক্তিমের সাথে গল্প করার জন্য নীচে আসে।

- রক্তিম, এখন কেমন বোধ করছিস?

- মানে? কিরকম আবার বোধ করবো?

- ধাক্কাটা কি কাটিয়ে উঠতে পেরেছিস?

- (খানিক হেসে) ধাক্কা খেলে তো সেটা কাটাবো।

- অ্যা! মানে?

- মানে আমি স্বাভাবিকই আছি। কোনো ধাক্কা টাক্কা খাইনি। নীলার মৃত্যুতে খারাপ লেগেছিল, তবে সেটা অনেক আগেই কাটিয়ে উঠেছি। এতদিন খালি একটু ভাব নিচ্ছিলাম।

- পড়ায় ফাঁকি দেওয়ার ধান্দা?

- আসলে ঠিক সেটা না। আমি একটা জিনিস গভীরভাবে চিন্তা করছিলাম। তোরা যে দাবড়ানির উপর রাখিস তাতে মাথা পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হতে যায়। কিছুই চিন্তা করতে পারি না তখন।

এমন সময় বাড়ির চাকর এসে জানায় যে পুলিশ ইন্সপেক্টর এসেছে। রক্তিমের সাথে কথা বলতে চান। শান্তা আর রক্তিম প্রস্তুত হতে হতে ইন্সপেক্টর সাহেব চলে আসেন। রক্তিম সালাম দিয়ে ইন্সপেক্টরকে বসতে বলে।

- আসসালামু আলাইকুম আংকেল, বসুন।

- ওয়ালাইকুমুসসালাম। এখন কেমন আছো রক্তিম?

- জী আংকেল ভালো। রনির কি খবর?

- ভালো না। ধাক্কাটা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। পাঁচ মিনিট আগেই যার খেলা উপভোগ করলো, পাঁচ মিনিট পর তার মৃত্যুসংবাদ। বোঝই তো। বিষয়টি কতটা অপ্রত্যাশিত এবং মর্মান্তিক। যাই হোক, তোমার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

- হ্যাঁ, বলুন।

- একটু প্রাইভেট কথা।

- বুঝতে পেরেছি, জেরা করবেন। শান্তার সামনেই করতে পারে। আমাদের স্কুলের না হলেও নীলাকে চেনে।

- যেরকমটা তোমার ইচ্ছে।

- নীলার কাকা কাকী কি লাশ নিয়ে গেছে?

- হ্যাঁ, স্কুলের নামে মামলাও করেছে। তাড়াতাড়ি এই হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা না হলে তোমাদের এই স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

- নীলার কাকা কাকী বড্ড পাঁজী লোকতো। মামলা করে বসলো কোনো কারণ ছাড়াই। আচ্ছা, নীলার ময়না তদন্তের রিপোর্ট কি এসেছে?

- হ্যাঁ, ছুরিকাঘাতে মৃত্যু। কিডনি দুটোও উপড়ে ফেলা হয়েছে। খুনিকে প্রফেশনাল বলে মনে হয় না।

- নীলার পেটে কয়েটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে?

- ১৩৫ টা।

- পেটের কোন অংশে প্রথম আঘাতটা পড়ে।

- আসলে ক্রমাগত ছুরিকাঘাতে লাশের অবস্থা খুবই বীভৎস হয়ে গেছে। তুমিও দেখেছো। নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যায় না। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট দেখে কিছুটা আন্দাজ করা যায়। তলপেটে প্রথম আঘাতটা পড়ে। আঘাত করার পর খুনি ছুরিটিকে টুইস্ট করে। এরপরই মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরও খুনি আরও কয়েকবার আঘাত করে। কিডনি দুটো হাত দিয়ে টেনে বার করে ফেলা হয়েছে।

- আচ্ছা, এবার আপনি জিজ্ঞাসা করুন।

- অ্যাঁ, আমি, কী যেন বলবো? ও হ্যাঁ, নীলার ব্যাপারে ....

- দেখুন আংকেল, নীলার ব্যাপারে সবাই যা জানে আমি তার ব্যাতিক্রম জানি না। ও বড্ড চাপা স্বভাবের। আমি ওর ক্লোজ ছিলাম। বাট নিজের ব্যাপারে তেমন কিছু নীলা আমাকে বলেনি যেটা আপনার ইনভেস্টিগেশনে কাজে লাগবে।

- নীলার বাসা চেন?

শান্তা কিছু একটা বলার চেষ্টা করে, "নীলার বাসা তো...." রাকিব নীলার কথার মাঝখানেই বলে ওঠে, "নীলার বাসা স্কুলের কোনো টিচারই জানেনা। আমরা কোন ক্ষেতের মূলা? "

- আচ্ছা, আমি তাহলে ওঠি।

- আংকেল, এই কেসের কি কোনো হোমট্যাস্ক আছে?

- আপাত দৃষ্টিতে কেসটা সরল নয়। কিন্তু এর মাল মসলা তোমার জানা। বাড়তি জানাটুকুও জেনে গেলে। চেষ্টা করে দেখতে পারো। তবে; পড়ালেখা বাদ দিয়ে নয়।

- আরেকটা জিনিস, পত্রিকার এই খবরটা একটু বুঝিয়ে বলবেন?

- কোনটা? লস এঞ্জেলেসে পেটের ভিতর থেকে ....ও, এটা একটা নতুন টেকনিক। পেট কেটে ওটার ভিতরে পকেটের মতো করে সেখানে ড্রাগস ভরে পাচার করা হয়। স্মাগলাররা আজকাল বেশ ধূর্ত হয়ে উঠেছে দেখছি।

- ঠিক বলেছেন।

ইন্সপেক্টর চলে যায়। এখানে একটা জিনিস পরিষ্কার করা দরকার। ইন্সপেক্টর মুহসিন ছোটোখাটো মার্ডার কেসের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করে রক্তিমকে সেগুলোর রহস্য সমাধানের সুযোগ করে দেন। এগুলো 'রহস্যের হোমটাস্ক ' নামে রক্তিম নাম দিয়েছে। কখনো কখনো ইন্সপেক্টর মুহসিন কোনো রহস্যের জট খুলতে খুলতে কনফিউজড হয়ে গেলে রক্তিমের সাথে বসে সেই ব্যাপারে আলোচনা করতেন এবং সেই আলোচনা একেবারেই বৃথা যেতো না। কয়েকবার রক্তিম ইন্সপেক্টরের সাথে সরেজমিনে তদন্ত করতেও বের হয়েছিলেন। রক্তিমের মস্তিষ্কের উপর ইন্সপেক্টর মুহসিনের বেশ ভরসা আছে। রক্তিমের এই হোমট্যাস্কের কথা শুধুমাত্র ইন্সপেক্টর মুহসিন আর শান্তা ব্যাতিত অন্য কেউ জানেনা। রক্তিম তার পিতৃচক্ষুর অন্তরালে এই হোমট্যাস্ক করতো। ইন্সপেক্টর চলে গেলে শান্তা আর রক্তিমের আলাপন শুরু হয়।

- ইন্সপেক্টর তোকে জেরা করলো নাকি তুই ইন্সপেক্টরকে সেটা ধরতে পারলাম না।

- (হেসে) আমিই করেছি।

- তুই কি এই কেসের হোমট্যাস্ক করবি না কি?

- না, প্র্যাকটিক্যালি কেসটা সলভ করবো।

- কি? মাথা ঠিক আছে?

- চল, নীলার বাসা থেকে ঘুরে আসা যাক।

- সন্ধ্যার পর সবে রাত্রি হলো। এখনই যাবি? আর ইন্সপেক্টরকে মিথ্যা কথা বলবার মানেটা কি?

- হ্যাঁ, এখনই যাবো। তুই থাকলে বাসা থেকে ঝামেলা হবেনা। আর, মুহসিন আংকেলকে মিথ্যা বলার কারণ আছে। খুব শীঘ্রই ওনাকে সত্যটা জানাবো।

অন্ধকারে দুজন বের হয়ে যায় ফতুল্লার উদ্দেশ্য। যেতে খুব একটা দেরী হয় না। মুটামুটি আধাঘন্টার মধ্যেই পৌছে যায়। ফতুল্লার ব্যানার্জি নার্সিং কেয়ারের অপর পাশেই নীলার বাসা। মূল সড়কের পাশে লাগালাগি অবস্থায়। শান্তা আর রক্তিম বাসায় গিয়ে কলিং বেল টেপে। নীলার কাকী দরজা খুলে।

- তোমরা? এসো ভিতরে এসো। আপনাদের শরীর এখন কেমন?

- হ্যাঁ, একটু ভালো। তবে কি জানো বাবা। নীলার কাকা খুব চিন্তায় পড়েছে। ছেলেমেয়েরা ওখানে একা পড়ে আছে। এই বাড়ি তো আর একা ফেলে রাখা যায় না। চাকরটাও হঠাৎ করে চলে গেলো। ভাবছি বাড়িটা বিক্রিই করে দেবো। তোমাদের পরিচিত কি কেউ নিবে? একটু দেখোতো বাবা।

- আচ্ছা, সেটা দেখা যাবে। আংকেলের তো মনে হয় ব্যাবসারও ক্ষতি হচ্ছে।

- হ্যাঁ? সেটাতো হচ্ছেই।

- কি ব্যাবসা আংকেলের? ফুড ফ্যাক্টরি।

- আপনারা মেবি ওরল্যান্ডে থাকেন?

- না।

- ও সরি, টেক্সাসে থাকেন নিশ্চয়ই। নীলা বলেছিলো।

- আরে না বাবা, আমরা ফ্লোরিডায় থাকি।

- আচ্ছা, আমরা তাহলে ওঠি আন্টি।

- ঠিক আছে, আর ব্যাপারটা কিন্তু মাথায় রেখো।

বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নীলার কাকার সাথে দেখা হয় রক্তিমের। কিন্তু কোনো কথা না বলেই বেরিয়ে আসে। পথিমধ্যে শান্তা আর রক্তিমের কথোপকথন শুরু হয়।

- রক্তিম, তোর মাথা কি দিন দিন খারাপ হচ্ছে নাকি। এইখানে এতো রাত্রে কেন আসলি?

- নীলার কাকাকাকী উভয়েই বেশ ধূর্ত মানুষ। কিন্তু বেশ বড় রকমের বোকামি করে ফেলেছেন।

- কি করে বুঝলি?

- শার্লক হোমসের পরমাতমা আমার কানে কানে বলে গেছেন।

- তাই নাকি?

- আচ্ছা, শান্তা ...ধর আমিও নীলার মতো মারা গেলাম। আমার জন্য কি তুই কাঁদবি?

- এইগুলি কি আবোল তাবোল বলছিস?

- নীলার আপন বলতে কেউ ছিলো না। আমার ক্ষেত্রে এইটা থাকা না থাকা সমান। আমার আব্বু আম্মু আমার কথা চিন্তা করে এক হতে পারে না। শুধুমাত্র একটা কাগজের জোরে। একটা কাগজের এতোটা শক্তি কিভাবে হয়?

- রক্তিম ..

- আচ্ছা, আমি মরলে আমার বাবা মাকে এক করার চেষ্টা করিস। তাদের আরেকটা ছেলে হবে। সে আমার ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করবে 'মা ওটা কে?'

শান্তা আর কোনো কথা বলে না। রক্তিমের হাতটা নিজের হাতের মধ্যে রেখে শক্ত করে ধরে রাখে। রক্তিম বেশ কিছুক্ষণের জন্য মৌন হয়ে যায়। বাসে ঢুলতে ঢুলতে এক সময় শান্তার কাধে মাথা রেখে ফেলে। অন্য সময় হলে হয়তো শান্তা ধাক্কা দিয়ে রক্তিমের মাথাটা ফেলে দিতো। কিন্তু তখন পরিস্থিতিটাই অন্যরকম ছিলো। বাস থেকে নেমে রূপগঞ্জের ৩০০ ফিট রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে দুইজন। এমন সময় হঠাৎ করে ধুপ করে শব্দ হয়। শান্তা দেখে রক্তিম উপুড় হয়ে পিঠে হাত দিয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। একজন মোটরসাইকেল আরোহী রক্তিমকে পিছন থেকে আঘাত করে চলে যাচ্ছে। শান্তা রক্তিমকে তোলার চেষ্টা করে। রক্তিম এতো আঘাতের মধ্যেও সচেতনতার পরিচয় দিলো। পিঠে হাত দিয়ে ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে শান্তাকে মোটরসাইকেলের নাম্বার নোট করতে বলে। কিন্তু শান্তা তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল। রক্তিম আকস্মাৎ একটা বড় ধরনের আঘাত পাওয়ায় সে বুঝে উঠতেই পারছিলো না কোন কাজটির প্রাধান্য অধিক। রক্তিম প্রাণপণে চেঁচিয়ে শান্তাকে মোটরসাইকেলের নাম্বার নোট করতে বলে। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই মোটরসাইকেল আরোহী পলায়নে সক্ষম হয়। রক্তিম তার পিতৃপ্রদত্ত ক্রোধের বশবর্তী হয়ে শান্তার গালে ঠাস করে একটা চড় মেরে দেয়। নানাবিধ অকথ্য বিশেষণে শান্তাকে বিশেষিত করে। সেরাত্রে দুইজন কোনোমতে পদব্রজে বাসায় পৌছাতে সক্ষম হয়। বাসায় যাওয়ার সাথে সাথেই শান্তা এক দৌড়ে তার ঘরে চলে যায়। রক্তিমকে তার বাবার জেরার সম্মুখিন হতে হয়। রক্তিম সাফাই দেয় যে ইন্সপেক্টর মুহসিনের সাথে নীলাদের বাসায় গিয়েছিল। ইন্সপেক্টর মুহসিনের কথা শুনে সেদিনের মতো রক্তিমকে ছেড়ে দেন আরিফুল সাহেব কিন্তু সতর্ক করে দেন ভবিষ্যতে সঙ্গে হাজী মুহাম্মদ মুহসিনই থাকুক বা রাজা রামমোহন রায়ই থাকুক না কেন, তাকে যেন অবহিত করা হয়।

পরেরদিন সকালে রক্তিমদের বাসার কাজের লোক রক্তিমের বেডরুমের দিকে যেতে থাকে। শুনতে পায় রক্তিম কারও সাথে ফোনে কথা বলছে।

"তুমি কি এখন ফ্লোরিডায় না? হ্যাঁ শোনো, তোমার তো সেখানকার ফুড ফ্যাক্টরির বিজনেসম্যানদের সাথে পরিচিতি আছে। একটু খোঁজ নাও তো। অজিত এবং রচনা সূর্যবংশী নামে কাওকে চিনো কি না? না না এতো তাড়াতাড়ি দরকার নেই। তুমি ধীরেসুস্থে দাও। আচ্ছা, রাখি তাহলে। ভালো থেকো।

- রক্তিম ভাই, আসুম?

- কে সামসু মিয়া, বলো।

- বড় সাব ভোরে সিলেট গেছে। কইয়া গেছে আইতে আইতে সাতদিন লাগবো।

- খরচাপাতি দিয়া গেছে নি?

- হ।

- ভালো।

- রক্তিম ভাই, আপনের পিঠের ব্যাথাটা অহন কেমুন?

- পিঠের ব্যাথা! ও হ্যাঁ কিছুটা ভালো। তুমি জানলে কিভাবে?

- রাইতে ব্যাথার চোটে আপনি কাইতরাচ্ছিলেন। আমি দৌড়ে গিয়ে শান্তা আপাকি ডাকি নি আসলাম। উনি আসি আপনার পিঠে স্যাক দিলেন, সেবা শুশ্রূষা কত করলিন, তারপরে আপনি ঘুমুতি পাইরলেন।

- আচ্ছা, তুমি যাও। আর আজ আমি নাস্তা করবো না। বাইরে খেয়ে নিবো।

- জে আইচ্ছা। রক্তিম স্কুলের জন্য বেড়িয়ে যায়। স্কুল শেষে বাসায় আসার সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হেটে আসতে তার শক্তিতে আর কুলোয় না। শামসু মিয়াকে ফোন দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলে। আরিফুল সাহেব ঢাকার বাইরের ট্রিপে গাড়ি নিয়ে বের হন না সাধারণত। বাসায় আসার সময় ফতুল্লার বিখ্যাত "বড় মিয়ার চাপ " থেকে পার্সেল নিয়ে যায় বাসায়। রক্তিমের বাসায় পৌছাতে সাড়ে ছয়টা বাজে। শান্তা সেসময় তার নিজের ঘরে অধ্যয়নরত ছিলো। শামসু মিয়াকে ডাকতে থাকে রক্তিম।

- শামসু মিয়া, শামসু মিয়া...

- জে বলেন,

- তোমার শান্তা আপা কি স্কুল থেকে আসছে?

- জে, উনি নিজের ঘরে পড়তেছেন।

- আচ্ছা, এই খাবারগুলো টেবিলে সাজাও। আর চা বসাও দুই কাপ। তুমি আর ফজলুল ড্রাইভার খাইলে বসাইতে পারো। আর আজ রাত্রে ভাত চড়াইবা না। চারজনের জন্য খাবার বাইরে থেকে আনা হইছে।

- জে।

ফ্রেশ হয়ে রক্তিম উপরে শান্তার ঘরে চলে যায়। রক্তিমের বাসায় শান্তার আসা যাওয়াতে কোনো বাঁধা ছিলো না। শান্তার ক্ষেত্রেও একই নিয়মটি প্রযোজ্য। শান্তার পড়ার রুমে গিয়ে রক্তিম গলা কেশে এবং আরও অভিনব উপায়ে শান্তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। কিন্তু সমর্থ হয় না। অবশেষে শান্তার পাশে একটা চেয়ার নিয়ে বসে শান্তার বই বন্ধ করে দেয়। এরপর শান্তার ডানহাতটা নিজের দুটো হাতের মধ্যে বদ্ধ করে ফেলে।

- দেখ, তুই আমায় এতো শাসন করিস, অথচ আমার একটা অভিমান সহ্য করতে পারিস না। গতকাল যা হয়েছে রাগের মাথায় হয়ে গেছে। আই এম সরি।

শান্তা মৌন থাকে। রক্তিম এবার বলে, "দেখ আমার জীবনীশক্তি একেবারেই কম। মরে গেলে পরে আফসোস করবি।

শান্তা এবার শরীরের সমস্ত বলপ্রয়োগপূর্বক রক্তিমের গালে চড় মারে। কিন্তু শান্তাই নিজের হাতে ব্যাথা পায়। তারপর হুমকি দেয় যে দ্বিতীয়বার এরূপ অলুক্ষণে কথা উচ্চারণ করলে রক্তিমের কপালে শনি আছে।

- নীচে আয়, পার্সেল এনেছি। বড় মিয়ার চাপ।

- ওয়াও! তুই যা, আমি আসছি।

শান্তা নীচে নেমে আসলে দুইজনে "বড় মিয়ার চাপ" এর উৎপাদনসমূহ গলাধঃকরণ করতে থাকে। এই সময়ে শামসু মিয়া কিছু বলতে যায়।

- রক্তিম ভাই,

- বলো।

- আজকে একটা মাইয়া আপনের খোঁজ করছিলো।

- জানতাম। হ্যাঁ, কোনো বার্তা দিয়ে গেছে?

- হ, একখান চিরকুট দিয়া গেছে।

- দেখি।

চিরকুট খোলার পর রক্তিম সেটা পড়ে টেবিলের উপর রাখে। শান্তাও পড়ে নেয়। তাতে লেখা ছিলো, "সময় থাকতে সরে পড়ো।" রক্তিম এবার শামসু মিয়াকে শুধায়, "সে নিশ্চয়ই সারাদিন বাসার সামনে বাইক নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। নাম্বার নোট করেছিলে? "

- আপনে কেমনে জানলেন? হ হেতে অনেকক্ষণ দাড়াইয়া ছিলো। তয় বাইকের নম্বর দেখার কথা তহন মাথায় আসে নাই।

- ধুর, যেহেতু এইটা লক্ষ্য করেছ যে সারাদিন বাসার সামনে বাইক নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো, নাম্বারটা নোট করতে পারতে। বিপদ আপদের কথা তো বলা যায় না।

- রক্তিম ভাই, দেখেন তো এইটা চলে কি না?

রক্তিম দেখে বাড়ির সামনে শামসু মিয়া একটা সেলফী তুলেছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাইকআরোহীর পিছিনের অংশ দেখা যাচ্ছে। রক্তিম আনন্দে লাফিয়ে উঠে। শামসু মিয়ার কাজের প্রশংসা করে।

- ভেরী গুড শামসু মিয়া। আগামী মাস থেকে তোমার বেতন ৫০০ টাকা বাড়াইয়া দিলাম। একি ইন্সপেক্টর আংকেল যে, বসুন বসুন। আমাদের সাথে একটু খাওয়া দাওয়া করুন।

- না, না তোমরা খাও। দুটো খবর আছে। একটা নতুন, একটা পুরাতন। নীলাদের বাসার চাকর মারা গেছে। তিনশো ফিটের ধার ঘেষে যে কাশফুলগুলো আছে, সেখানেই তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। এবারও ছুরিকাঘাতে মৃত্যু। তবে, লাসের অবস্থা নীলার লাশের মতো বীভৎস নয়। বুক আর পেটের সন্ধিস্থলে যে একটা ফাঁপা জায়গা সেখানে স্ট্যাব করা হয়েছে। আর তোমার ইনফরমেশন এসে গেছে। যা অনুমান করেছিলে ১০০% সঠিক। পরশু পাখি উড়াল দিবে।

- বলেন কি? যা ভেবেছিলাম সঠিক! যাই হোক পাখি উড়াল দেবার আগেই খাবলা মেরে ধরতে হবে। আর এই নিন। এ বাইকের মালিককে খুঁজে আদর সোহাগ করুন। সেই সবকিছু উগলে দিবে। কাল স্কুল বন্ধ। সন্ধ্যায় আমরা সবাই মেইনস্পটে যাবো। সময় খুব বেশী নেই আমাদের হাতে।

- তোমরাও যাবে?

- খুনি আপনার কথায় কেন কনভিন্সড হবে?

- তাও ঠিক। কিন্তু এরকম একটা রিস্কি জায়গায় ...

- একদিনেরই তো কথা।

- আচ্ছা, সেকথাই রইলো।

ইন্সপেক্টর চলে গেলে শান্তা রক্তিমকে বলে, "এই তুই কি করতে যাচ্ছিস? "

- এই অধ্যায়ের যবনিকা টানতে যাচ্ছি।

- মানে কি? নীলার হত্যাকারীকে ধরতে পেরেছিস?

- হ্যাঁ।

- খুনি কে?

- বেসরকারি গোয়েন্দা দেবেন্দ্রবিজয় রায়।
- আবার ফাযলামো!

- দেখ, আমি কথা দিচ্ছি। এ সমস্যার সমাধান হয়ে গেলেই তুই যা বলবি আমি তাই করবো। যেভাবে বলবি সেভাবেই করবো। খালি কালকের দিনটা আমায় সময় দে। প্লিজ।

- আচ্ছা, শুধুমাত্র কালকের দিন।

পরেরদিন দুজন বাসায় থাকে। শান্তা নীলার হত্যাকারীর নাম জানার জন্য যতই রক্তিমকে অনুনয় বিনয় করতে থাকে, রক্তিম ততই "পুলিশ সিক্রেট " বলে বিষয়টি চাপার চেষ্টা করে। শেষ বিকেলে ইন্সপেক্টর রক্তিমদের বাসায় আসে।

- সবকিছু রেডি আংকেল?

- একদম!

- চলুন তাহলে, দেরী করা যাবে না। এখনই বেড়িয়ে পড়া যাক। আয় শান্তা।

সবাই ইন্সপেক্টরের পুলিশ জীপে উঠে পড়ে। শান্তার মনে কৌতুহল জাগে মেইনস্পট কি হতে পারে? হঠাৎ গাড়ি থামে। শান্তা নেমে দেখে নীলাদের বাসার সামনে। ঘড়িতে সাড়ে ছটা। রক্তিম কলিং বেল টিপে। নীলার কাকা দরজা খুললেন। ইন্সপেক্টর সাহেব দরজার আড়ালে রইলেন।

- একি তোমরা! এ সময়ে। এখন কাজ আছে পড়ে আসো।

দরজা লাগিয়ে দেওয়ার উপক্রম করতেই রক্তিম বাঁধা দেয়। তারপর বলে, "আপনার প্রাণটা দেহে থাকলে তো কাজ করবেন, ভাবছেন আমেরিকায় গিয়ে নিজের প্রাণটা বাঁচাতে পারবেন?

নীলার কাকা পকেট থেকে একটা রিভালবার বের করে রক্তিমের দিকে তাক করে। রক্তিম অনড় অবস্থাতেই থাকে। রক্তিমের মধ্যে ভয় না দেখে নীলার কাকা পিস্তলটি চালিয়ে দেয়। শান্তা রক্তিমের হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ওকে সরিয়ে নিয়ে আসে। হঠাৎ করেই দরজার পিছন থেকে ইন্সপেক্টর সাহেব লাফ দিয়ে এসে চোখের পলকে নীলার কাকাকে ধরাশায়ী করে ফেলে। হাতগুলো পিছনমুখী করে হাতকড়া পড়িয়ে মুহসিন সাহেব ওয়্যারলেস বের করলেন। এরপর কমান্ড দিলেন, "ফোর্স ....কাউন্টার এট্যাক!" এরপর দ্রুতগতিতে রক্তিম আর শান্তকে একটি কন্সটেবলের সাথে পুলিশ গাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। আধাঘন্টা পর ইন্সপেক্টর সাহেব এলেন। তাকে দেখে রক্তিম জিজ্ঞাসা করলো, "হোয়াট ইজ সিচুয়েশন আংকেল? "

- নো ওয়ান ইজ স্কিপড। অল আর কাউন্টার্ড।

- নীলার কাকা কাকী?

- রচনা সূর্যবংশী আগেই মারা গেছে। অজিত ওকে মেরে ফেলেছিলো আগেই। রচনা ছাড়া আরও কয়েকজনের ডেথবডি পাওয়া গেছে। সকলেরই পেট চিড়ে ফেলা হচ্ছিল। মনে হচ্ছে পেট কেটে ড্রাগস বের করে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো।

- সবাই একই চক্রের সদস্য। যারা একটু আগে এনকাউন্টার্ড হলো, ওদের পেট কাটলেও ড্রাগস দেখতে পাবেন। যাক, স্বীকারোক্তির জন্য কাকাটা আছে তো!

- উহু, ব্যাটা দাঁতের কোণায় সায়ানাইড লুকিয়ে রেখেছিলো।

- আচ্ছা, এবার শেষ অঙ্কের প্রস্তুতি নেওয়া যাক। আয় শান্তা, শেষ অঙ্কে তোকে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করতে হবে।

রাত দশটা। রক্তিম আর শান্তা অজিত -রচনার খাটে শুয়ে আছে। রক্তিমের থিওরি অনুযায়ী খুনি আজ রাত্রেই অজিত আর রচনাকে খুন করতে আসবে। ইন্সপেক্টর খাটের কোণায় লুকিয়ে আছে। শান্তার আর ধৈর্য্য মানছে না। রক্তিমকে জিজ্ঞাসা করলো, "আর কতক্ষণ, এগারোটা বাঁচে যে। "

- বাজুক। শিকার কখন আসবে তার ইয়ত্তা নেই। এক্ষুনি এসে পড়তে পারে। আবার রাত তিনটায়ও আসতে পারে।

- ঠিকমতো পড়বি বলে জ দিয়েছিস না। পড়তে বসিস একবার তখন দেখাবো।

- আচ্ছা, আমি যদি আজকে মরে যাই, তাহলে মজা কীভাবে বোঝাবি?

- শান্তা কিছু একটা বলতে গেলে রক্তিম শান্তার হাত চেপে ধরে। শান্তা চেপে যায়। বুঝে গেছে শিকার চলে এসেছে। এখন কথা বললে শিকার ভড়কে যাবে। হঠাৎ করে মনে হলো কেউ বিছানার উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। এরপরই ঘরের বাতিগুলো জ্বলে উঠলো। রক্তিম ঘাতককে অভ্যর্থনা জানালো।

- তুমি যাকে মারতে এসেছিলে, তিনি ইতিমধ্যে জগতের মায় ত্যাগ করেছেন। তোমার কাছে বর্তমানে আত্মসমর্পণ ব্যাতিত অন্য কোনো রাস্তা নেই.....নীলা।

নীলা চমকে ওঠে। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয়। এরপর নিজের মার্শাল আর্টের বিদ্যা রক্তিমের উপর প্রয়োগের প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু রক্তিম সবাইকে অবাক করে দিয়ে মার্শাল আর্টের বিদ্যা নীলা অপেক্ষা অধিক সুনিপুণ হস্তে প্রয়োগ করে নীলাকে প্রতিহত করে এবং নীলার হাতে হাতকড়া লাগায়।

- আচ্ছা রক্তিম, আদালতে কি আমাকে দোষী প্রমাণ করতে পারবে?

- আলাবৎ পারবো। পারতেই হবে। আমাদের স্কুলকে বাঁচাতে প্রমাণ করতে হবেই।

- কিন্তু মামলার বাদীতো বেঁচে নেই। এই মামলা চালিয়ে নেওয়ার মতোও তো মনে হয় না কেউ আছে।

- তোমার কাকাকাকী নিজেরা বাদী হননি তাদের উকিল বাদী হয়েছিলো এবং সেই উকিল একটা উকিল সংগঠনের কর্ণধার। সেই সংগঠনের পক্ষ থেকেই মামলা করা হয়েছে। ভদ্রলোক বিলক্ষণ চালাক। এই সুযোগে নিজের সংগঠন প্রোমট করছেন।

- রক্তিম, আমাকে আধাঘন্টার জন্য একা থাকতে দাও প্লিজ।

- ঠিক আছে। টেক ইউর টাইম।

ওরা বের হয়ে আসলে ইন্সপেক্টর সাহেব প্রশ্ন করলেন, "কজটা কি ঠিক হলো? "

রক্তিম উত্তর দিলো, "আর কোনো উপায় নেই। নীলার ডেথ সার্টিফিকেটের এগিনেস্টে চ্যালেঞ্জ করে ওকে অর্জিনাল নীলা প্রমাণ করা যাবেনা,ওর অপরাধও প্রমাণ করা যাবেনা। ডি এন এ টেস্ট ও পসিবল না। এখন আশা শুধুমাত্র একটাই। ও নিজে থেকে সব স্বীকার করবে। "

আধঘণ্টা পর রুমে গিয়ে দেখা গেলো নীলা খাটে সোজা হয়ে শুয়ে আছে। ইন্সপেক্টর হাতের নাড়ী টিপে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লেন। মুখে অস্পষ্ট একটা শব্দ শোনা গেলো, "আফিম ওভারডোজ"। খাটের পাশে রাখা ডেস্কে একটা কাগজ আবিষ্কার করে রক্তিম। তাতে লেখা ছিলো, "রক্তিম, তুমি আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু। তোমার শ্রমকে বৃথা যেতে দেই কিভাবে? জরিনা আর নৃত্যকালীর খুনের সমস্ত জবানবন্দি আমি আগেই লিখে রেখেছিলাম। সেগুলো উকিল আংকেলের কাছে রাখা আছে। আমার পরিকল্পনা সব আগে থেকেই তৈরী করা ছিলো। বিদায় বন্ধু ভালো থেকো। অসুর বধের পালা শেষ। মা দুর্গাকে বিদায় নিতে হবে। জানি একটু বেশী বলে ফেললাম। তারপর আমাকে যদি কখনো স্মরণ করো, অসুরবিনাশিনী হিসেবেই স্মরন করো। "

দিনটি ছিলো শুক্রবার। সকালে রক্তিমের বাসায় প্রিন্সিপাল আব্দুর রাজ্জাক এবং ইন্সপেক্টর মুহসিন রক্তিমের বাসায় আসলেন। স্কুলের উপর করা মামলাটির নিষ্পত্তি হয়েছেন। সেই সাথে আরেকটি খবর। বার্ষিক পরিক্ষায় রক্তিম প্রথম হয়েছে। দুইটি সুসংবাদ দিতে আসলেন। আরিফুল সাহেব বাসায় ছিলেন না। এই দিনটি বেছেই প্রিন্সিপাল এবং ইন্সপেক্টর আসলেন। ঘটনার আদ্যোপান্ত শুনতে। নাস্তার পর রক্তিম ঘটনার বিবরণী ব্যাক্ত করতে লাগলো।

- শুরু থেকে বলছি, কিছু বাদ গেলে বলবেন। এটা হয়তো জানেন স্কুলে যার লাশ পাওয়া যায় তার নাম নৃত্যকালী। জাতে বিহারী। ফ্লোরিডার বিখ্যাত ড্রাগস স্মাগলারদের মধ্যে অন্যতম সফল স্মাগলার স্টিফেন ওরফে অজিত সূর্যবংশীর অ্যাসিসট্যান্ট। ফ্লোরিডায় স্টিফেনের আস্তানায় পুলিশের রেড পড়ার পর ওদের চক্রের সব সদস্যরা একে অপরের পেট কেটে পকেট করে ড্রাগ ভরে এক একজন এক এক জায়গায় চলে যায়।
স্টিফেন ভাবলেন বাংলাদেশে ব্যাবসা করা যেতে পারে। ওনার পরিকল্পনা ছিলো হুঙ্গা, ফ্লাক্কার মতো ভয়ঙ্কর ড্রাগসগুলোর সাথে এ দেশকে পরিচিত করিয়ে দেওয়া। দেশে আসার পর শান্তা কোনোভাবে তাদের এই ব্যাবসা সম্বন্ধে জেনে যায় কিন্তু চুপ থাকে। সম্ভবত ঝোপ বুঝে কোপ মারার তালে ছিলো। এদিকে অজিত সাহেব নতুন চাল চালালেন। জরিনাকে চাকর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে নীলার ভিতরে আফিমের নেশা ঢুকিয়ে দেয়। আফিমের নেশায় বুদ হয়ে নীলা অজিতের বিপরীতে যেতে পারে না। কিন্তু নীলা বিবেকবান মানুষ। নিজের অপরাধবোধ থেকে একদিন কাকার বিরোধীতা করে বসে। কাকা ভাবলেন নীলাকে সরিয়ে দিবেন। কিন্তু তার মাথায় অন্য বুদ্ধি খেলে গেলো। নৃত্যকালীর চেহারা প্লাস্টিক সার্জারী করে তাকে স্কুলে পাঠিয়ে দেয়। উদ্দেশ্য ছিলো নৃত্যকালী স্কুলের বাচ্চাদের মাঝে ড্রাগের নেশা ছড়িয়ে দিবে। আর এদিকে বাড়িতে আটকে রেখে নীলাকে নির্যাতন করতে থাকে যেন সম্পত্তি অজিতের নামে লিখে দেন। এদিকে এক মাস পড়েই নীলা কোনোভাবে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে কলেজের ওয়াশরুমে লুকিয়ে থাকে। তার বিশ্বাস ছিলো নৃত্যকালী আসবে। সে আসলো। নীলা তাকে বোঝালো। সে বুঝলো না। নীলাকে মারতে লাগলো। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নৃত্যকালী নীলার গলা শক্ত করে চেপে ধরে। সেলফ ডিফেন্সে নৃত্যকালীর পিঠে গুজে থাকা ডেগারটি বের করে তার পেটে বসিয়ে দেয়। এরপর রাগে ক্রোধে নীলা ডেগারটিকে টুইস্ট করে। নৃত্যকালী যাবার পরেও ওকে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে নীলা। এতে করে তার পেটের পকেটটি বের হয়ে আসে। নীলা টেনে হিচড়ে সেই পকেটটি বের করে আনে। পকেটটা নৃত্যকালীর কীডনীর সাথে বিশেষভাবে সংযুক্ত ছিলো। ইমিগ্রেশনে যাতে ঝামেলায় না পড়তে হয় সেজন্যই এরূপ ব্যাবস্থা। এরপর নীলা সংকল্প করে এই অসুরদের সকলকেই সে বধ করবে। এই কাজে তাকে সাহায্য করে তার উকিল আফজালুল খান সিনহা। নীলার আপনজন বলতে উনিই। সবাইকে খুন করে তার একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিখে রাখে। ওর পরিকল্পনা ছিলো সেদিন অজিত আর রচনা সূর্যবংশীকে মেরে নিজে সুইসাইড করবে। কিন্তু সেটা সম্ভব ছিলো না। কারণ অজিতের সব সাঙ্গুপাঙ্গু সেখানে উপস্থিত ছিলো। বাকিটুকু আপনারা জানেন।

প্রিন্সিপাল প্রশ্ন করেন, "ও যে নৃত্যকালী সেটা জানলে কি করে? "

- নৃত্যকালী মারা যাবার এক মাস আগে থেকেই ওর স্বভাব কিছুটা আজব ধরনের হয়ে গিয়েছিল সেটা সবাই দেখেছে। ওকে দেখতে কিছুটা অস্বাভাবিক লম্বা দেখাতো। বাস্তবে নীলার উচ্চতা এতোটা না। এগুলোর কোনটাই আমাকে নাড়া দিতো না যদি না হত্যাকাণ্ডের দিন কিছু জিনিস প্রত্যক্ষ করতাম। আমরা জামি শান্তা শুচিবায়ুগ্রস্থ। স্পেশাল দরখাস্ত দিয়ে নিজের জন্য আলাদা ওয়াশরুম সে তৈরী করিয়ে নিয়েছে। অথচ মৃত্যুকালে সে ছিলো অন্য ওয়াশরুমে। আর সকালে দেখা হওয়ার সময় তার পায়ে নিকের বুট দেখেছিলাম। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগে ওর সাথে যখন বিতর্ক হয় তখন আবার পড়নে এডিডাসের বুট। আবার লাশের পায়ে সেই সকালের নিক বুট। এখান থেকেই সন্দেহ যে লাশ নীলার নয়। কিন্তু সেটা কার লাশ সেটা তখনও অনুমান করতে পারেনি। লাশ যে নৃত্যকালীর সেটা সবকিছুর শেষে রিভিল্ড হয়েছে। কেন জানি মনে হলো নীলার কাকার বাসায় এর সমাধান হতে পারে। কাকার বাসায় গিয়ে যখন শুনলাম ওনারা ফ্লোরিডায় থাকে, তখনই আমার টনক নড়লো। মা এখন ফ্লোরিডায় আছেন। ওনার একজন রুগী আছেন। ফুড ফ্যাক্টরির বিজনেসে আছেন। আমেরিকার উচুসারির ফুড ফ্যাক্টরির বিজনেসম্যানদের সাতে পরিচিতি আছে। মার কাছ থেকে খোঁজ নিলাম। কিন্তু ফলাফল নেগেটিভ আসলো। এরপর ইন্সপেক্টর আংকেলকে দিয়ে খোঁজ করালাম। ওনার এক বন্ধু ফ্লোরিডার পুলিশে চাকরি করে। সেখান থেকে জানা গেলো ভদ্রলোক এবং তার সহধর্মিণী উভয়েই সেখানে মোস্ট ওয়ান্টেড।

প্রিন্সিপাল আবার প্রশ্ন করলেন, "ড্রাগস স্মাগলিংয়ের সাথে যে এই হত্যাকাণ্ডের সংশ্লিষ্টতা আছে সেটা জানলে কি করে?

- সেটা নৃত্যকালীর লাশের অবস্থা থেকে। কোনো মানুষের পেট চিড়ে নাড়িভুড়ি উপড়ে কারও বিশেষ কোনো লাভ হয় না।
স্বয়ং নরসিংহ অবাতারও অসুরের বুক চিড়েছিলেন। উদর নয়। ওইটা আলাদা কথা বেশিরভাগ মানুষ মনে করে অন্যটাকেই। বুক চিড়লেও মাঝে মাঝে নাড়িভুড়ি বের হয়ে আসে। সে যাক, ও নিয়ে অন্যদিন তর্ক হবে। মোট কথা পেট চিড়লে অবশ্যই সেখান থেকে কিছু বের করে ফেলার উদ্দেশ্য ছিলো। কিন্তু সেটা কি? কিডনি? উপড়ে ফেলা কিডনি ব্যাবহার বা বিক্রির উপযুক্ত না। তখন হঠাৎ খবরের কাগজে দেখলাম ড্রাগস স্মাগলিংয়ের নতুন পদ্ধতি। তখনই সন্দেহ হলো।

শান্তা বলে ওঠে, "ওই দিন বাইকধারী কে ছিলো? "

- সে আর কেউ না। নীলা। আমি এসব কিছুর মধ্যে জড়িয়ে যাচ্ছি, এটা সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলো। তাই, আমাকে ভয় পাইয়ে দিতেই এইসব করে। বাইকটা আফাজালুল খান সিনহা সাহেবের।

সবাই কিছুক্ষণ মৌন থাকে। প্রিন্সিপাল একটি চেক বের করে সেটা রক্তিমকে দিয়ে বললেন যে, "বাবা, তোমাকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেবার সাধ্য আমাদের নেই। একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর হিসেবে তোমার যে অ্যামাউন্ট যুক্তিসঙ্গত মনে হয় সেটা চেকে বসিয়ে নাও। "

রক্তিম বলে, "আমি বার্ষিক পরিক্ষায় প্রথম হয়েছি। এই আমার পারিশ্রমিক। আপনি যদি পারিশ্রমিক দিতে চান তো আমার পরামর্শ সে টাকা আমাকে না দিয়ে এলাকায় একটা রিহ্যাব গড়ে তোলুন। আমি চাইনা নীলার মতো আর কেউ বিদায় নিক। সবাই মাদককে জয় করবে। নীলা অসুর বধ করেছে। কিন্তু অসুর এই ধরার সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মাদক অসুর অপেক্ষা ভয়ংকর। মাদককে জয় করে তরুণসমাজ অসুরকে জয় করবে। তবেই নীলার মতো অসংখ্য মেয়েদের আত্মত্যাগ স্বার্থক হবে।

রক্তিমের চোখ ঠিকরে যেন আগুন বের হচ্ছে। ঘরে অবস্থানরত বাকি তিনটি প্রাণী যেন স্পষ্ট দেখতে পেলো।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×