(বাস্তব গল্পটা বলার আগে দুটো কথা বলতে চাইছি। সামুতে আমি শামীম সুজায়েত নামে ২০১২ থেকে লিখছি। মাস কয়েক আগে এখানে ঢুকতে গিয়ে দেখলাম পাসওয়ার্ড রিসেট করতে বলছে। কিন্তু আমি যে ইমেইল দিয়ে একাউন্ট খুলে ছিলাম, সেটা অফিসিয়াল আইডি। নিরাপত্তা জনিত কারণে বাইরের মেইল প্রবেশ কিছু দিন হলো ব্লক করে দেয়া হয়েছে। ইমেইল আইডি চেঞ্জ করার অনুরোধ জানিয়ে গেলো পাঁচ মাস ধরে এডমিনকে অনুরোধ করে আসছি। তারা রেসপন্স করেছেন; কিন্তু কাজ হয়নি। সেখানে আমার প্রচুর লেখা ড্রাফট অবস্থায় রয়েছে। আমি এখনও আশা করি এডমিন আমার বিষয়টি বিবেচনা করবে। যাইহোক; প্রিয় প্লাটফর্মের বাইরে থাকার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নতুন একটি একাউন্ট খুলে নিচের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। অন্তত আমার নিজের ক্ষেত্রে যে ভুলটা হয়েছে, তা যেন আর কেউ না করেন - সেটি চিন্তা করে লিখলাম।)
একটি সম্ভাব্য বিপদ এবং একজন অপরিচিতা
এমনটি হয়নি কখনও। কিংবা দু একবার হয়ে থাকলেও নিজেকে সামলে নিতে পেরেছি পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায়।
স্বভাবগত ভাবে আমি সাবধানী মানুষ। কিছুটা সচেতন। বিশেষ করে পথেঘাটে। কিন্তু আমার সেই সচেতনতা, সাবধাণতা, সতর্কতা যেন ফানুসের মত উড়ে গেলো আশ্বিনের হিমেল হাওয়ায়। শরতের শুভ্রতায়।
অফিস শেষে নিত্যদিনের নিয়মে রিক্সায় চেপে বসেছি। বিকেলের এক পশলা বৃষ্টিতে কিছুটা হলেও যেন বাতাসে ফিরে পেয়েছি নির্মলতা।
রিক্সায় যেতে যেতে চোখে মুখে লেপ্টে যাওয়া বাতাসের স্নিগ্ধতায় যেন জুড়িয়ে যাচ্ছিল প্রাণ। কাকরাইল থেকে ফকিরারপুল মোড় পর্যন্ত পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই চোখের পাপড়ি গুচ্ছ একে অপরের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল। তবে গাড়ির হর্ন, রিক্সার টুং টাং শব্দ, মানুষের কোলাহল হালকা হালকা কানে বাজছিল বিরতি দিয়ে দিয়ে।
ফের যখন রিক্সাটা চলতে শুরু করলো, টের পাচ্ছিলাম; দ্রুত গতিতে প্যাডেল মারতে শুরু করেছে রিক্সাওয়ালা। আমার ভেতরে বেসামাল একটা ভাব থাকলেও পড়ে যাওয়ার ভয়ে রিক্সার হুড চেপে রেখে ছিলাম। টের পাচ্ছিলাম রাজারবাগ পর্যন্ত দীর্ঘ জ্যাম এড়াতে রিক্সা চালক ছেলেটি উল্টো পথে টানতে শুরু করেছে। চোখের পাতা সামান্য ফাসা করে দেখলাম আরো কিছু রিক্সা একই ভাবে আগেই যেতে শুরু করে দিয়েছে।
ঘুমঘুম চোখে খেয়াল করলাম আমার থেকে অল্প কিছু দূরে থাকা একটি রিক্সা থেকে এক তরুণী বারবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে। সেদিকে দৃষ্টি স্থির হয়ে থাকলো আমার কিছু সময়। মেয়েটির মাথায় ওড়না প্যাচানো, কালো রঙের জামা, মুখে মাস্ক।
কি যেন বলতে চাইছে!
আমাকে? কি জানি!
সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অজান্তেই ফের বুজে গেলো চোখ।
ব্যস্ত সড়কে চলন্ত রিক্সায় এভাবে ঘুমিয়ে পড়া কেবল নির্বুদ্ধিতার পরিচয় নয়, নিজের জীবনকে শতভাগ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার সামিল। কিন্তু কেনো এমনটি হলো? ঘুমের কাছে কেনো ঝুঁকিপূর্ণ পরাজয় ঘটলো আমার!
বাসায় একটি ফার্নিচার আনার চিন্তা করে আগের রাতে বউ পোলা মিলে আমরা ঘরের মাপজোক, আলাপ আলোচনা, জল্পনা কল্পনা করতে করতে রাত দেড়টা বাজিয়ে ফেলেছিলাম। ঘুমাতে ঘুমাতে ৩ টা। বিছানায় শুয়ে আমি এপাশ ওপাশ করতে করতে শেষ পর্যন্ত ভোর চারটায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে হলো। সকাল ৯ টায় ডেকে দিলো কল্পনা।
যাইহোক; রাজারবাগ মোড় পার হবার পরই হঠাৎ একটা ঝাঁকুনিতে আমি উল্টে পড়ে যেতে যেতে কোন রকম নিজেকে সামলে নিলাম। তিন-চার মিনিট ধরে চলতে থাকা গভীর ঘুমটা আমার ভেঙে গেলো। কিছু সময়ের জন্য চোখের পাতা খোলা থাকলেও
শাহাজাহানপুর পেরিয়ে ফ্লাইওভারের কাছাকাছি আসতেই রিক্সাটা ফের যখন জ্যামে দাঁড়িয়ে পড়লো, আমি আবার চোখ বন্ধ করলাম। এবং খিলগাঁও রেলগেট পর্যন্ত পুরোটা পথ এক প্রকার ঘুমিয়ে ছিলাম। কিছুই টের পাই নি। কেবল থেকে থেকে ডানে বায়ে আমার মাথা কাত হয়ে রিক্সার হুডের বাইরে চলে যাচ্ছিল। আবার নড়েচড়ে বসতে না বসতেই ঘুমিয়ে যাচ্ছিলাম।
খিলগাঁও রেল ক্রসিং এর জন্য বেশ কিছু সময় সবকিছু সেখানে থমকে ছিল। এই সুযোগে ঘুমটা আমার মাঘ মাসের শীতের মত জেঁকে বসেছিল। কিন্তু ঘুমের মধ্যে টের পেলাম রিক্সার হুড ধরে কে যেন নাড়া দিয়ে যাচ্ছে অনাবরত। চোখ মেলে তাকালাম। সেই মেয়েটি। একজন অপরিচিতা। এক দশক
আমার দিকে তাকিয়ে থেকে সে বললো, "এভাবে রিক্সায় ঘুমাচ্ছেন কেনো ! সেই ফকিরাপুল থেকে আমি আপনাকে খেয়াল করতে করতে আসছি। হাত নেড়ে রিক্সাওয়ালাকে কতবার বোঝাতে চেয়েছি। আপনাকেও ইশারা দিয়েছি। কেউ খেয়াল করেননি। পরে আমার রিক্সাওয়ালাকে বললাম ভাই আস্তে চালান। আপনি কতবার যে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন জানেন!"