somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাছে থেকেও অনেক দূরে !! :( :(

০৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“কাছে থাকুন”___ জি হ্যাঁ, এই কথাটাকে আমরা সবাই গ্রামীনফোনের স্লোগান হিসেবেই জানি। তবে এই ছোট্ট একটা কথার কিন্তু বিরাট তাৎপর্য রয়েছে। কাছে থাকতে থাকতে মানুষ একে অপরের পরিচিত হয়, একে অপরকে চিনতে শিখে, জানতে শিখে, আপন হয়, আরও কাছে আসে। ;)
শুধু মানুষ কেন দুনিয়ার সকল জীব, জড় এর ক্ষেত্রে এই কথাটা খাটে। দীর্ঘদিন কোন কিছু আপনার কাছে থাকলে নিশ্চিত ভাবেই তার উপর আপনার একটা মায়া জন্মাবে। আর তা যদি হয় আরেকটা মানুষ তাহলে তো কথাই নেই। অনেক দিনের পরিচিত মানুষকে ছেড়ে যাওয়ার ব্যাথা যে যায় শুধু সেই বুঝে। /:)
যদিও অসভ্যতার চাদরে মোড়া এই আধুনিক সভ্যতার যুগে আমরা সবাই কমবেশি আত্মকেন্দ্রিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত, তবুও মানুষের সংগ ছাড়া আমাদের চলেনা। কারন আমরা যে সামাজিক জীব। আর তাই কাছে থাকাটা জরুরি। :P

হয়তবা বর্তমান যুগের আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের বাহ্যিক দূরত্বকে অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে, কিন্তু ভেতরের দূরত্ব? প্রযুক্তি কি আমাদের মনের ভেতরের দূরত্ব কমাতে পেরেছে? না, বরঞ্চ তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা একে অপরের অনেক কাছে থেকেও অনেক অনেক দূরে। /:)
একটা উদাহরন দেইঃ আমরা ফেসবুকে হাজার হাজার বন্ধু যোগারে আগ্রহী কিন্তু পাশের বাসার মানুষ এর সাথে পরিচয় নাই। পাশের বাসা বাদই দিলাম, শহরে তো একই বিল্ডিং এর এক তলার মানুষ আর এক তলার মানুষকে চিনে না। অথচ আমাদের ফেসবুক দূর দুরান্তের কত দেশের কত বন্ধু বান্ধব দিয়ে ভর্তি।
কি ভয়াবহ !!! :-*
একটু চিন্তা করুন। এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম তো নিজের পরিবারকেও ভালমত চিনবে না।

আমি সরাসরি প্রযুক্তি কে দোষ দিচ্ছিনা। দোষ আমাদের নিজেদের। আমরা প্রযুক্তির দাস হয়ে গেছি। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা আমাদেরকে আধাপাগল বানিয়ে দিয়েছে। মানলাম, প্রযুক্তি দূর দুরান্তে থাকা আপনজনের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারে, খোঁজ খবর জানাতে পারে; আপনি কথা বলছেন ঠিকই কিন্তু আপনি তার চোখে চোখ রাখতে পারছেন না, হয়তবা ভিডিও কলিং এর জন্য কিছুটা পারছেন, কিন্তু আপনি তার শরীরের ঘ্রান পাচ্ছেন না, আপনি তার হাত ধরতে পারছেন না, আপনি তার পাশে বসতে পারছেন না, সবচেয়ে বড় কথা আপনি তাকে অনুভব করতে পারছেন না।

মোবাইল ফোনের একটা খারাপ দিক আছে। তা হল কথা বলতে হলে টাকা খরচ করতে হয়। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই গরিব। সুতরাং, মোবাইল ফোনটা এক অর্থে বিলাসিতা। আপনি যখনই আপনার একজন চেনা মানুষকে কল দিবেন, আপনার মাথায় কাজ করবে যে এখন কিন্তু পকেট এর পয়সা খরচ হচ্ছে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি কথা শেষ করা যায়। আগে যখন মোবাইল ছিলনা, তখন আমরা আত্মীয়স্বজনের সাথে কথা বলতে চাইতাম, যদিও পারতাম না, তবে তাদেরকে অনুভব করতাম, মনের টান টা বেশি থাকত; আর এখন যদিও কথা বলার সুযোগ আছে, কিন্তু আমরা অবচেতন মনেই ভেবে বসি যে কি দরকার? কথা বলতে গেলেই তো টাকা খরচ হবে। এভাবে আমরা নিজের অজান্তেই মানসিকভাবে দূরে সরে যাই।
:|:|
আমি আমার ছোটবেলার সেই দিনগুলা খুব মিস করি। মিস করি সেই সময়গুলা যখন আমরা চাচাতো, মামাতো, খালাতো ভাই বোনেরা অনেকদিন পর একসাথে দেখা হলে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে যেতাম।
কত গল্প, কত হাসিঠাট্টা, কত আনন্দ!! কত মজার মজার খেলা খেলতাম সবাই একসাথে দলবেঁধে। লুকোচুরি, ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতাম আমরা। “গানের কলি” নামে আরেকটা খুব মজার খেলা ছিল আমাদের। ২ দলে ভাগ হয়ে এক দলের গাওয়া গানের শেষ অক্ষর দিয়ে আরেক দলকে গান গাইতে হত।

দাদুবাড়িতে বেড়াতে গেলে প্রতিদিন রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা সব ভাইবোন আঙিনায় বসতাম একসাথে। গল্পে গল্পে রাত ২টা ৩টা বেজে যেত। কারো চোখে ঘুম নেই। স্বপ্নের মত কাটত রাতগুলি। 8-| তখন কিন্তু এত মোবাইল ল্যাপটপের চল ছিলনা। কিন্তু এগুলা ছাড়াই আমরা ভাল ছিলাম। আমরা আনন্দ করতে জানতাম।
আর এখন? সবার হাতে মোবাইল আর ল্যাপটপ। সবাই একসাথে হলেও যে যার মত মোবাইল টিপছে আর না হলে ল্যাপিতে কাজ করছে। কেমন যেন একটা মরা মরা ভাব।আগের সেই মজাটা, সেই আনন্দ টা আর হয়না। আহা, সপ্নময় সেই মুহুর্তগুলি জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে কোন দূর অজানায়। :((
আমরা ভাইবোন বা বন্ধুবান্ধবরা এখন একসাথে দেখা হলে একে অন্যের মোবাইল এর ফাংশন নিয়ে কথা বলি। কম্পিউটারে কে কি গেমস খেলে তা নিয়ে কথা বলি। ফেসবুকে কে কয়টা প্রেম করেছে তা নিয়ে কথা বলি। একজনের যন্ত্র থেকে আরেকজনের যন্ত্রে গান, ভিডিও, সিনেমা দেয়া নেয়া করি। এটাই আমাদের জীবন, এটাই আমাদের আনন্দ। আমরা একে অন্যের সাথে মনখোলা গল্পে মেতে উঠিনা, একে অন্যের জীবনের অভিজ্ঞতা ভালমত শেয়ার করিনা, জীবনকে উপলব্ধি করিনা।

সত্যিই, আমরা একে অপরের কাছে থেকেও অনেক অনেক দূরে। /:)
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×