somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের কিছু প্রশ্নের উত্তর। উত্তর নং: ১।

১৬ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ নং প্রশ্নটি ছিল:
মুসলমান পুরুষদের একাধিক বিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে কেন?

পৃথিবীতে কোরআনই একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যেখানে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র একটি বিয়েই করা উচিত। বাকী সকল ধর্মগ্রন্থে (রামায়ন, গীতা, বাইবেল...) ইচ্ছেমত বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে, পুরোহিতরা মিলে একবিবাহ নিয়ম চালু করেন। কিন্তু তাদের ধর্মগ্রন্থতে এব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই।

যেমন: হিন্দুধর্মগ্রন্থ অনুসারে, রামের পিতা দশরথের একাধিক স্ত্রী ছিল, কৃষ্ণার একাধিক স্ত্রী ছিল।
ইহুদী ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, আব্রাহামের তিন ও সোলেমনের শতাধিক স্ত্রী ছিল।
১৯৫০ সালেও ইহুদীদের মধ্যে বহুবিবাহের প্রথা চালু ছিল। তারপর ইহুদী নেতারা এই প্রথা বন্ধ করেন।

মজার ব্যপার হল, ১৯৭৫ সালের সমীক্ষায় দেখা যায়, মুসলমানদের চেয়ে হিন্দুদের মধ্যে বহুবিবাহের প্রচলন বেশি। (১৯৫১-১৯৬১) সালে হিন্দুদের মধ্যে ৫.০৬% ও মুসলমানদের মধ্যে ৪.৩১% বহুবিবাহ করেছিল। অথচ ভারতীয় আইনে মুসলমানদের জন্য বহুবিবাহের অনুমতি থাকলেও হিন্দুদের জন্য অনুমতি নেই। পূর্বে অবশ্যই এই নিয়মও ছিল না। ১৯৫৪ সালে হিন্দু বিবাহ আইনে একবিবাহ প্রথা চালু হয়।

কোরআনে বলা হয়েছে:
"মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও, দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। তবে যদি আশঙ্কা হয় যে, তাদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরন করতে পারবে না তবে শুধুমাত্র একটি।" আল কোরআন (৪:৩)।
কোরআন অবতীর্ণ হবার পূর্বে বহুবিবাহের কোন সীমা ছিল না। লোকেরা শতাধিক বিবাহ করত। ইসলাম এই প্রথায় সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। দুই , তিন কিংবা চারটি পর্যন্ত, যদি ন্যায় বিচার করতে পার।
কোরআনে বলা হয়েছে:
"তোমরা চাইলেও নারীদের মাঝে ন্যায়বিচার করতে পারবে না...।" আল কোরআন (৪:১২৯)।

ইসলামে বহুবিবাহ নিয়ম নয় বরং নিয়মের ব্যতিক্রম মাত্র। অনেকেই মনে করেন, ইসলামে একাধিক বিয়ে বাধ্যতামূলক, আসলে তা নয়।
ইসলামি শরীয়ত অনুসারে অনুমতি ও নিষেধের প্রকারভেদ:
১. 'ফরজ' : বাধ্যতামূলক।
২. 'মুস্তাহাব' : উৎসাহিত করা হচ্ছে।
৩. 'মুবাহ' : অনুমতি রয়েছে।
৪. 'মাকরুহ' : নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
৫. 'হারাম' : সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

একাধিক বিয়ে হল 'মুবাহ'। অর্থ্যা, বহুবিবাহের অনুমতি রয়েছে তবে উৎসাহিত করা হয়নি।

বৈজ্ঞানিক কারন:

সাধারনত নারীশিশু ও পুরুষশিশু সমান অনুপাতে জন্মায়। তবে নারীশিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি বিধায়, তুলনামূলক নারীশিশু বেশি বাচেঁ। এছাড়াও যুদ্ধ-বিগ্রহে, নারীর তুলনায় পুরুষের মৃত্যুর হার বেশি। দুর্ঘটনা ও রোগে, পুরুষদের মৃত্যুর হার বেশি। এটা স্বীকৃত যে, পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশিদিন বাচে। এসব কারনে, যেকোন নির্দিষ্ট সময়ে জরিপ করলে দেখা যায়, বিপত্নীকদের চেয়ে বিধবার সংখ্যা বেশি।

তবে আমাদের উপমহাদেশে নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি। কারন, নবজাত শিশুটি নারী শিশু জানামাত্র সেটিকে ধ্বংস করা হয়। এভাবে, এই উপমহাদেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক ভ্রূণ ধ্বংস হয়। যদি এই পাপাচার বন্ধ করা হয় তাহলে আমাদের উপমহাদেশেও নারীরা সংখ্যায় বেশি হবে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী,
যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষদের চেয়ে নারীর সংখ্যা ৭৮০০০০০ বেশি,
যুক্তরাজ্যে ৪০০০০০০ বেশি,
জার্মানীতে ৫০০০০০০ বেশি,
রাশিয়াতে ৯০০০০০০ বেশি

এর মানে দাড়াল, যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ৭৮ লক্ষ বেশি। শুধুমাত্র নিউইয়র্কে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ১০ লক্ষ বেশি। নিউইয়র্কে মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ নারী। যুক্তরাষ্ট্রে ২ কোটি ৫০ লক্ষ পুরুষ সমকামী (নারীদের বিয়ে করতে উৎসাহী নয়)। কাজেই, যদি একজন পুরুষ একজন নারীকে বিয়ে করে তাহলে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ৩ কোটি নারী সঙ্গীহীন থেকে যাবে। একইভাবে যুক্তরাজ্যে ৪০ লক্ষাধিক, জার্মানীতে ৫০ লক্ষাধিক, রাশিয়ায় ৯০ লক্ষাধিক নারী সঙ্গীহীন থাকবে। ধরা যাক, আমার বোন যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গীহীন অবস্থায় আছে অথবা ধরুন আপনার বোন যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গীহীন রয়েছে। তাহলে, তার সামনে ২টি পথ খোলা আছে।
১. বিবাহিত কোন পুরুষকে সঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে হবে।
২. 'জনগণের সম্পত্তি (public property) হতে হবে।

পাশ্চাত্যে এমন বহু পুরুষ আছে যারা বিবাহ ব্যতিরেকে একাধিক নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তখন সেই নারীদের রক্ষিতা বলা হয়। এটা ঠিক যে, অধিকাংশ নারীই স্বামীকে শুধু নিজের বলেই প্রত্যাশা করেন। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে এই ক্ষুদ্র প্রত্যাশা ত্যাগ করা শ্রেয়। নিশ্চয়ই কোন নারী তার বোনকে রক্ষিতা হিসেবে দেখতে চাইবে না। ইসলাম নারীদের পূর্ণ মর্যাদা নিশ্চিত করার স্বার্থে পুরুষদের একাধিক বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে। এছাড়াও আরও বেশ কিছু কারন রয়েছে যার দরুন ইসলামে পুরুষদের একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে তবে মুলত নারীদের সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করাই মূল উদ্দেশ্য। ধন্যবাদ।
১০৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×