সত্তুর এর নির্বাচন আর আঠারোর এর নির্বাচন, মাঝখানে ফারাক ৪৮ বছর। অথচ আবেদন সেই একই কেবল প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
৭০ এর নির্বাচনে স্বাধীনতার লালিত স্বপ্নকে বাস্তব রূপদানে আওয়ামীলীগের জন্য জনগণের ম্যান্ডেট নেয়াটা ছিল ভীষণ জরুরী। তৎকালীন আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব জনসাধারণকে সেটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল। এ দেশের মানুষ তখন তাদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। আওয়ামীলীগ পেয়েছিল অভাবনীয় বিজয়। যে বিজয়ের পথ ধরে আওয়ামীলীগ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছিল। সেদিনের সেই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের কাণ্ডারি ছিলেন বঙ্গবন্ধু স্বয়ং। যে নির্বাচনে জয়লাভ তাকে শক্তি যুগিয়েছিল চূড়ান্ত বিজয়ের ডাক দেয়ার।
সত্তুরের সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এমনই এক ডিসেম্বর মাসে। সেবারও এ দেশের মানুষ দশ বছর পর একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিল। সেবারও আওয়ামীলীগের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মনে ভূমিধ্বস বিজয়ের স্বপ্ন ছিল। যদিও ফল হয়েছিল উল্টো।
মিল আরও আছে, সত্তুরের নির্বাচনে নৌকার কাণ্ডারি ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবারের নির্বাচনে নৌকার কাণ্ডারি তারই সুযোগ্য কন্যা।
সেদিন আওয়ামীলীগ এ দেশের মানুষকে দেখিয়েছিল রাজনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন। তার প্রায় অর্ধশতক পরে এসে বঙ্গবন্ধুর কন্যা আজ দেখাচ্ছেন অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন। যিনি ইতিমধ্যে দেশকে সে মুক্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন।
সত্তুরের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল মুসলিম লীগ। আর আজকের প্রেক্ষাপটেও আওয়ামীলীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত তোষনকারী দল বিএনপি। খুব একটা পার্থক্য নেই। শুধু কি তাই? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে আইএসআইয়ের এজেন্ট মেহমুদের যে কথোপকথন ফাঁস হয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, আজও আওয়ামিলীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নামধারী পাকিস্তানের স্থানীয় এজেন্ট মাত্র।
সত্তুরের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পরাজিত হলে বাংলাদেশের জন্ম হত না। এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পরাজিত হলে এ দেশের অর্থ নৈতিক মুক্তি মিলবে না।
পূর্বেই বলেছি সত্তুরে যেমন বঙ্গবন্ধুর জন্য একটি ভূমিধ্বস বিজয়ের প্রয়োজন ছিল আজ এই মুহূর্তেও চূড়ান্ত অর্থ নৈতিক মুক্তি এনে দিতে শেখ হাসিনার ঠিক তেমনি আরেকটি ভূমিধ্বস বিজয়ের প্রয়োজন।
এখন দেখার বিষয় সত্তুরের মত আঠারোর নির্বাচনেও এ দেশের মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হইয় কিনা। আগামী একত্রিশ তারিখ অব্ধি আমরা সেটা দেখার অপেক্ষাতেই থাকলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৩