somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রতিক ভু রাজনৈতিক পরিবর্তন -বাংলাদেশ ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চীনকে সামলাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ হবার প্রয়াসটি এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাবখানা হ’ল ভারতকে সে দক্ষিণ এশিয়ার জমিদারি প্রদান করেছে এবং এই অঞ্চলে, যে কোন বিষয়ে ভারতের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত এবং তা কার্যকরী করা হবে যে কোন মূল্যে।

আমি একটু পেছনে তাকাবো।

১৯৭১ সাল। আমেরিকা চীনের সাথে বন্ধুত্বে আগ্রহী হয়ে উঠছে ক্রমশঃ। কারন তার আগের দশকে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী যেমন কোরিয় উপদ্বীপের যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ ইত্যাদি চীনকে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে অনেক দূরে সরিয়ে এনেছে। এটাই সময়, এটাই সুযোগ চীনের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নকে শিক্ষা দেয়ার।

পাকিস্তান তখন যুক্তরাষ্ট্র বলয়ে আবার তার অতি সু সম্পর্ক চীনের সাথে। যুক্তরাষ্ট্র পাকিদের লাগালো চীনের সাথে তাদের দুতিয়ালী করতে।

আমাদের দেশে এর মধ্যে শুরু হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধ। আমেরিকা অন্ধভাবে সমর্থন জানালো পাকিদেরকে।

ভারতে বাংলাদেশের এক কোটি স্মরনার্থী আশ্রয় নিল। ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নকে সংগে নিয়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ালো। ফলাফল দাঁড়ালো একটি নতুন দেশের জন্ম, পাকিস্তানের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক পরাজয়।

আশির দশকের শেষ প্রান্তে এসে এক সময় সোভিয়েত সাম্রাজ্য ও তাদের সরাসরি প্রভাব বলয়ে থাকা পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সরকারগুলোর পতন হ’ল একে একে। পৃথিবীর সামরিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেল। দ্বিমেরু বিশ্ব একমেরু বিশ্বে রূপান্তরিত হ’ল। পৃথিবীর মোড়ল হয়ে বসলো তখন আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র।

এর পরের ২৫ বছর পৃথিবী প্রত্যক্ষ করলো আমেরিকার চরম যথেচ্ছাচার। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ে ছিল মধ্যপ্রাচ্যের বেশীর ভাগ তেল সমৃদ্ধ দেশ। আমেরিকা তার সর্বগ্রাসী লোভের বশঃবর্তি হয়ে ইরাক, লিবিয়া দখল করলো।

তারা আফগানিস্তানের তালেবান সরকার হটিয়ে হামিদ কারজাইকে বসালো মসনদে। তারপর তারা শুরু করলো সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করতে। আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি আমেরিকা সৃষ্ট চরম মানবিক বিপর্যয় মধ্যপ্রাচ্যে।

এই সময়টুকুর মধ্যে আরো দু’টি ঘটনা আমেরিকাকে নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য করলো।

এক। বহুধা খন্ডিত সোভিয়েত ইউনিয়ন যা রাশান ফেডারেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, সে দেশটি অত্যন্ত সপ্রতিভ, মেধাবী , অর্থনৈতিক দিক দিয়ে প্রাজ্ঞ, বিচক্ষণ এবং কূটনৈতিক ও সামরিক চালে সিদ্ধ হস্ত পুতিনের নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ নেতৃত্বে ফিরে দাঁড়ায় এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়।

দুই। ওদিকে চীন তার অভুতপূর্ব অর্থনৈতিক সাফল্যে বলিয়ান হয়ে তার নিজের সামরিক শক্তি সংহত মনোনিবেশ করে।

রাশিয়াকে ঠেকাতে ন্যাটো ও পশ্চিম ইউরোপ আছে ভেবে আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়াতে তার মিত্র খোঁজা শুরু করে। পাকিস্তানকে অত্যন্ত বিশ্রিভাবে তালাক দিয়ে আমেরিকা গাঁটছড়া বাঁধে ভারতের সাথে।

আমরা এখন বাংলাদেশের অবস্থা পর্যালোচনা করি।

একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং পাকিস্তানকে সফল ভাবে দ্বিখন্ডিত করে বাংলাদেশের জন্ম নেয়াটি ছিল ক্ষমতার দম্ভে মদমত্ত আমেরিকার মুখে সর্বজনসমক্ষে চপেটাঘাত। এই অপমান নিক্সন-কিসিঞ্জার তথা আমেরিকা কখনোই ঝজম করতে পারেনি।১৯৭৫ সালের বংগবন্ধু হত্যা এবং বাংলাদেশের ক্ষমতার পটের আমূল পরিবর্তন তারই ফসল।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল সত্যিকারের একটি জনযুদ্ধ যাতে এদেশের মুষ্টিমেয় কিছু পাকি দালাল ছাড়া সবাই অংশ গ্রহণ করেছিল। আর একথা অনস্বীকার্য যে এ যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ। বংগবন্ধু হত্যার পরবর্তি ২১ বছর বাংলাদেশ পরিচালিত হয় মূলত স্বাধীনতা বিরোধী মহলকে দিয়ে।

১৯৯৬ তে আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায় আসে। ২০০৯ সাল থেকে এই দলটি তার ক্ষমতা সংহত করার প্রয়াস পায়। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবার সময় দলটির বিরুদ্ধে কিছু গুরুত্ববহ অভিযোগ আসেঃ

১। ভারতবান্ধব এই সরকার ভারতের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্র নীতি অনুসরন করছে।
২। মানুষের মৌলিক অধিকার-বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে।
৩। দলীয় ও রাষ্ট্রিয় সন্তাসকে মদদ দিয়ে চলেছে।

এই অভিযোগের পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা/বিশ্লেষণ আমার এই লেখার জন্যে প্রাসংগিক নয় বলে আমি শুধুমাত্র এর উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হ’লাম।

২০০৯ থেকে ২০১৫ এবং ১৬ এর বেশ কিছু সময় আমরা অতি ক্ষোভের সাথে পর্যবেক্ষণ করলাম ভারতীয় আগ্রাসন। অনেকেই এটাকে ভাগ্য বলে মেনে নেয়া শুরু করলো। কিছু কিছু মহল এই আগ্রাসনকে মহমামন্ডিত করারও প্রয়াস পেলো।

আমরা ধরে নিলাম যে আমেরিকা ভারতকে এতদঞ্চলের মোড়ল নিয়োগ দিয়েছে এবং ভারত সেই মোড়লি করে যাচ্ছে।

কিন্তু এই ২০১৬ সালের শেষের দিকে আমরা প্রত্যক্ষ করলাম এক বিশাল চমক।

একদিন হঠাৎ আমরা হতবাক হয়ে দেখলাম চীনের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফর, বাংলাদেশকে চীনের ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ, চীন থেকে বাংলাদেশের দু'টি সাবমেরিন কেনা।

ভারত উদ্বিগ্ন হ’ল ।

পাঠালো একটি শক্তিশালী দল বাংলাদেশ সফরে গত ৩০শে নভেম্বর। সেই দলে ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকার, ভারতীয় কৌষ্ট গার্ডের প্রধান এবং সামরিক, বিমান ও নৌবাহিনীর তিন উপপ্রধান। সফরের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সাথে দৃশ্যতঃ একটি নিবিড় সামরিক চুক্তির জন্যে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তৈরি করা।
এই দল বাংলাদেশে এসে আলোচনায় বসেছিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সেনাপতি আব্দুল হামিদ, মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা মেইজর জেনারেল তারিক আহমেদ পি এস সি (অবসরপ্রাপ্ত) এর সাথে।

এই সফরের ফলস্রুতিতে বাংলাদেশ সরকার আগামী ১৭ তারিখে মাননীয়া প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যাওয়ার কর্মসূচি হাতে নেয়।

আজ সে সফর পরবর্তি সিন্ধান্ত না নেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।

ভারতের ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশ যে সখ্যতা তার চীর শত্রু চীনের সাথে তৈরি করছে তা থেকে বাংলাদেশকে বিরত করা। সফর স্থগিত করায় যে বার্তা আমরা পাচ্ছি তা হ’ল মাননীয়া প্রধান্মন্ত্রী ভারতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

একটি প্রবাদ আছে- “তোমার সব ডিম একটি ঝুড়িতে রেখো না।”

মাননীয়া প্রধান্মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে আমি একটি অনন্য দেশপ্রেম, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার নিদর্শন হিসেবে দেখছি।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৯
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×