somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কষ্টের রং

১৫ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
কাল সন্ধ্যায় সাইট থেকে ফোরম্যান ফোন দিয়ে বললো, “স্যার, সকালে হঠাৎ করে হাবিবের বুকে ব্যাথা শুরু হলে আজ সে কাজে যায়নি। বিকালে ক্যাম্পে ফিরে এসে শুনি ম্যানেজার ওর ইউনিফর্ম আর টুলস ক্লোজ করে নিয়েছে ম্যানেজার। কিছুত বুঝতে পারছি না”

সকালে অসুস্থ হয়েছে আর আমাকে এখন জানাচ্ছ? তোমাদের কি কোন দায়িত্ব জ্ঞান নেই? আচ্ছা আমি দেখছি কি হয়েছে। সাথেসাথে ডাক্তারকে ফোন দিয়ে জানলাম ওর হার্টের সমস্যা, মরুভূমিতে রাখা যাবে না। কাল ভোরেই ওকে হেড অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বুঝতে পারলাম আর কিছুই করার নেই, এই সব ব্যাপারে ডাক্তারের রিপোর্টই চুড়ান্ত।

শেষ চেষ্টা হিসাবে ক্লাইন্টের কান্ট্রি-ম্যানেজারকে ফোন দিলাম। উনি ফোন ধরেই বললেন, “ইসলাম, ভালো হয়েছে তুমি ফোন দিয়েছ, আমিই তোমাকে কিছুক্ষণ পরে ফোন দিতাম। তোমাদের একজন টেকনিসিয়ানের হার্টের প্রবলেম দেখা দিয়েছে, ওকে তোমাদের হেড অফিসে ফেরত পাঠাচ্ছি।”

বললাম, “স্যার, রোজার প্রথম দিন, গ্যাস্টিকের সমস্যাও হতে পারে। আর কয়েকটা দিন দেখলে হতো না?”

আমার কিছুই করার নেই, ডক্টর হেজ কনফার্ম দেট ইট ওয়াজ নট ফ্রম গ্যাস প্রবলেম। আই ক্যান্ট টেক এনি রিস্ক। ইফ সামথিং বেড হ্যাপেন্ড টু হিম ইন দ্যা ডেসার্ট, হু উইল টেক দ্যা রেসপনসিবিলিটি? স্যরি, আই কেন্ট হেল্প ইঊ।

কিছুক্ষণ পর হাবিব ফোন দিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো, “স্যার, ক্যাম্প বস আমার ইউনিফর্ম নিয়ে নিয়েছে, আর বলছে আমাকে নাকি কালকে ফেরত পাঠিয়ে দিবে। বিশ্বাস করেন স্যার আমার কিচ্ছু হয়নি। সকালে একটু বুকে ব্যাথা হয়েছিলো, ডাক্তারের সামনে গ্যাস্টিকের টেবলেট খেয়েছি সাথেসাথে ব্যাথা সেরে গেছে। আপনারাই আমার বাপ-মা, এখানে আমার থাকার জায়গাটাও নাই, এখন যদি চাকরিটা চলে যায় আমি কৈ যাবো”

মনটা খারাপ হয়ে গেলো, বললাম তুমি চিন্তা কর না। কালকে অফিসে এসে সরাসরি আমার সাথে দেখা করবে। তোমাকে হেড অফিসেই কোন কাজে লাগিয়ে দেব। কতটুকু কি করতে পারবো জানি না, কিন্তু তাকে কেন যেন একটু ভরসা দিতে ইচ্ছা করলো। কাল আবার ডাক্তারি চেকআপ করে যদি দেখা যায় সত্যি সত্যি হার্টের বড় সমস্যা আছে তাহলে তাকে দেশে পাঠানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই। গরীব মানুষগুলোর এইসব বড়লোকি অসুখ যে কেন হয়?

২.
হঠাৎ করে সরকারের একটি রুল জারির কারনে গত মাসে আমাদের একটি অয়েল রীগ বন্ধ হয়ে যায়। এই রীগটা প্রায় আড়াই বছর চলেছিলো। হঠাৎ করে এই রীগের প্রায় ৪০/৪৫ জন এক্সপার্ট ও টেকনিশিয়ানের চাকুরি চলে যায়। বেশিভাগই লোকাল, কিছু ইজিপসিয়ান আর কয়েকজন ফিলিপিনি। এই মাসে শুরুতেই ওদের বিদায় করে দেওয়া হয়। কি যে হৃদয়বিদারক দৃশ্য! লোকগুলোর চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না, সে কী নিদারুন কষ্টের ছায়া! একেএকে যখন তারা চলে গেলো শুধু মনে মনে বললাম, “আল্লাহ, ওদের ভালো রেখ”

৩.
পাকিস্তানে বন্যার হাজারের উপর লোক মারা গেছে, আরও হাজার হাজার লোক মৃত্যুর মুখোমুখি। একই সময়ে চীনের ভূমিধ্বস, এখানেও হাজারের উপর মানুষ মৃত, কত হাজার যে নিঁখোজ আল্লায় জানে। রাতে পরিবারের সবার সাথে বসে খবর দেখছিলাম। পাকিস্তানের বন্যার দৃশ্য দেখাচ্ছিলো, কিছু লোক পানির মধ্যদিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পরিবার পরিজন নিয়ে। দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেলো, মানুষ কতই না কষ্টে আছে!

চীনের ভূমিধ্বসের উদ্ধারকাজ দেখাচ্ছিলো। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে কতগুলো এস্কাভেটর দিয়ে মাটি সরাচ্ছিলো, পাশদিয়ে হেটে যাচ্ছে অসংখ্যা অসহায় মানুষ।

হঠাৎ আব্বু বললো, একটা জিনিস খেয়াল করেছ! দুনিয়ার তাবৎ শোষিত/নির্যাতিত/অসহায় মানুষগুলোর চেহারা এক!

চমকে উঠলাম! তাই তো! চীনাদের সবার চেহারাই আমার কাছে এক রকম লাগে, কিন্তু তারপরেও এদের মধ্যে অন্যরকম একটা মিল দেখতে পেলাম। কী বাংলাদেশি হাবিব, কী পাকিস্তানি, কী চীনা, কী ইজিপসিয়ান বা ফিলিপিনি! সবার কষ্টের একই রং!
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×