সবার চিন্তাভাবনা একরকম হবে সেরকম কিন্তু না। আমার কাছে গত কয়েকদিন এর আন্দোলন ততটা কার্যকর মনে হয়না। আমার নিজস্ব কিছু যুক্তি উপস্থাপন করছি।
১: ভেবে দেখুন তো এই আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল কি? কি পেলাম এই আন্দোলনে? কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জনদুর্ভোগে পড়েছে, কিছু সম্পদের ক্ষতি হয়েছে, বহু মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হয়েছে। বহু যাত্রী ফ্লাইট মিস করেছে, ট্রেন ফেইল করেছে, এমনও হওয়া অসম্ভব নয়, এম্বুলেন্স দিয়ে আনার সময় কিছু রোগিও মারা গিয়েছে। অথচ যেই বদ এর জন্য আন্দোলন, সেই শাহজাহান খান কিন্তু ঠিকই এসি রুমে বসে টিভিতে এইসব দেখছে আর বিদ্রুপের হাসি হাসছে। অতীতে সে বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রমাণ করেছে , স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও এই পরিবহন মাফিয়ার কাছে অসহায়। কেও এই শাহজাহান এর একটি পশমও ছিরতে পারেনাই। যেখানে প্রধানমন্ত্রীই তার কাছে অসহায়, সেখানে আন্দোলন কি তার ভিত নড়াবার মতো ক্ষমতা রাখে?
২: আমি আজ খুব কাছ থেকে দেখেছি, আন্দোলনকারী স্কুলছাত্র কলেজছাত্রদের কিছু আচার আচরণ। রাস্তা ব্লক করার পরে কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের সাথেও তারা যে আচরণ করেছে সেটা দুঃখজনক। তাদের মুখের যেসব ভাষা কিংবা শরীরী ভাষা ছিলো, সেগুলো অন্তত একটা শিক্ষিত মানুষের ভাষা হতে পারেনা। স্কুল কলেজে পড়ে হয়তো অক্ষরজ্ঞান শিখেছে, কিন্তু নৈতিকতাতে আজ তারা ছিলো পুরোপুরি মুর্খ।
৩: পুলিশের ভুমিকা নিয়ে কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে যেটা দেখে অনেকেই পুলিশকে গালি দিচ্ছেন। কিছু অতি উৎসাহী এবং দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ পাওয়া পুলিশই এসব করেছে। তবে আমি আজ চাক্ষুষ প্রমাণ, উত্তরার জসীমউদ্দীন এ পুলিশ আজ যে পরিমান ধৈর্য ধরেছে, আমি যদি পুলিশের কোন কর্মকর্তা হতাম, তাহলে এতটা ধৈর্য ধরতামনা। আমি পুলিশের পক্ষে সাফাই গাইবোনা তবে বেচারাদের জন্য একটা ব্যপারে কষ্ট লাগে, বর্তমানে এদেশে সবচেয়ে গালি খাওয়া চাকরি হলো পুলিশের চাকরি। তারা যতই করুক, উপর থেকে সরকারের কিংবা সরকারি মদদপুস্ট পুলিশের বড় কর্তার হুকুম তালিমের চাপ, আর নিচ থেকে জনসাধারণের চাপ। এরপরই দিনশেষে গালি শুনেই ব্যারাকে ফিরতে হয়।
৪: শেখ হাসিনা নাকি একবার দুঃখ করে বলেছিলেন, "আমাকে ছাড়া আওয়ামীলীগ এর সকলকেই কেনা যায়"। এতে তারও তার দলের নেতাকর্মীদের ব্যপারে অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। সরকার গঠনের শুরুতেই যদি এইসব রাঘববোয়ালদের হাতে সবকিছু ছেড়ে না দিয়ে অপেক্ষাকৃত সৎ এবং মেধাবীদের কাছে ক্ষমতার সুষম বন্টন করতেন, তাহলে আজ ভারতের কাছে নিজ স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয়না। কিংবা পুলিশের লাঠির উপর ভর করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে হয়না। দেশের নির্বাচনব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে সীল মেরে টিকতে হয়না। শেখ হাসিনা আর কতদিন এভাবে পারবেন?
আন্দোলনকারীদের উচিৎ এমন কিছু করা যাতে অন্তত জনদুর্ভোগ না হয়। আন্দোলনের অনেক পথ আছে। প্রয়োজনে ছাত্রছাত্রীদের অবিভাবকেরা সচিবালয়ে গিয়ে মন্ত্রীকে মিডিয়ার সামনে সরাসরি চার্জ করুক। মন্ত্রী পর্যন্ত না পৌছাতে পারলে অন্তত সচিবালয়ের গেইটে অবস্থান করে তার গাড়ির সামনে দাড়িয়ে পড়ুক । এরকম আরও বহু পথ আছে যাতে তাদের ভিত কিছুটা হলেও নড়বড়ে হবে । তা না করে সবাই যদি জনগনকেই মারে, জনগন যাবে কই?