somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুপার হিরোর ধর্মভাব

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানুষের ইতিহাসে ‘বুদ্ধিবৃত্তি’র দীর্ঘ রূপান্তরের সর্বশেষ ধাপকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়, বলা হয় এ ধাপে এসে ‘অযৌক্তিক’ যে কোনো কিছু ত্যাগ করছে মানুষ। বুদ্ধিবৃত্তির এ রূপান্তর মিথ বা পুরানকে মিথ্যা,অদরকারি ও বাতিল ধার্য করে অগ্রাহ্য করেছে। অথচ অন্য অনেক ‘অদরকারি’ কিছুর মতো এ পুরান পুরোপুরি অদৃশ্য হয় নাই,বরং এর নানা রূপ মানুষের দুনিয়ায় রয়ে গেছে।

আধুনিক বুদ্ধিবৃত্তিতে অযৌক্তিক, কাজেই অদরকারি, ফলে অগ্রাহ্য থাকা এ পুরান হাজির আছে চলচ্চিত্রেও। এ আলোচনা খুবই সামান্য। বলা ভালো, এ পুরান কাহিনী আধুনিকতার মানদণ্ডে মূলত ‘ধর্মীয়’ আখ্যান। যেমন চলচ্চিত্রের ‘সুপার হিরো’।

হাতের কাছে সবশেষ উদাহরণ বলিউডের রা.ওয়ান। অনুভব সিনহা’র ২০১১’র এ চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে অনেকে হয়তো ভাবছিলেন এটা কি কল্প-বিজ্ঞান না মিথের (অ)যৌক্তিক কারিশমা! রা.ওয়ান এ চলচ্চিত্রের খলনায়ক। আর নায়ক? জি.ওয়ান। সে এক সুপার হিরো – অতিমানবীয় ক্ষমতার দাবিদার।

সুপার হিরোর ইতিহাস আরো পুরানা। হিটম্যান, সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান, আয়রনম্যান, কেট উইম্যান, হ্যারিপটার বা নিও- এরা সামনের সারির সুপার হিরো। আরো নানা কিসিমের এলেমদার চরিত্র এর মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এদের বেশিরভাগই কমিকস বইয়ের জনপ্রিয় চরিত্র,কিন্তু শেষ পর্যন্ত কমিকসে থামে নাই। চলচ্চিত্রের পর্দায় ঢুকে পড়েছে। সোজা কথায়, ছেলেমানুষী থেকে বড়মানুষীতে যুক্ত হয়েছে, ফলে একে যৌক্তিক দেখানোর নানা চেষ্টা আছে।

গল্প যাই হোক, ভেতরকার সঙ্গতি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সময় যেহেতু ‘ধর্মের’ নয়, কাজেই অতিমানবীয় শক্তির দোহাই পাড়া হচ্ছে প্রযুক্তির কাধে বন্দুক রেখে। এসব কিছু ব্যাটম্যান বা স্পাইডারম্যানের সর্বশেষ ইন্সটলেশনে আগের চেয়ে আরো বেশি করে ঘটেছে। বিশেষ করে ক্রিস্টোফার নোলানের ব্যাটম্যানের সাথে এই সিরিজের আগের পর্বগুলো মিলিয়ে দেখুন।

প্রযুক্তির সুপার হিরোর দুনিয়াব্যাপী সাফল্য হলিউডের করায়ত্বে ছিল এতোদিন। এখন বলিউড জানান দিচ্ছে তাদেরও সুপার হিরো আছে। কিন্তু যৌক্তিক হয়ে ওঠার প্রকল্পে বলিউডি সুপার হিরোকে আপাত ভূত-প্রেত কিসিমের মনে হলেও- ভেতরকার মশলায় হলিউড আর বলিউডের তফাত হলো পর্যালোচনা কেন্দ্রিক। দীপা মেহতা’র ইংরেজিভাষী চলচ্চিত্র ‘হলিউড বলিউডে’ (২০০২)বলা হয় ‘সেম উড ডিফরেন্ট ট্রি’। সে কথা ধরে বলা যায় সুপার হিরোর বৃক্ষ (ধর্ম/মিথ)একই হলেও একটাতে সুপার হিরো ধর্মের উদ্দীপনা নিয়ে সরাসরি হাজির,আর অন্যটিতে জাগতিক রূপে (সেকুলার) গ্রাহ্য। এর পেছনে দুটি জায়গার শিক্ষা-দীক্ষা,প্রযুক্তির ব্যবহার,ধর্ম, সমাজ,রাজনৈতিক পার্থক্যগুলো কাজ করে।

ভুত-প্রেতের কাহিনীগুলোও প্রযুক্তির হাত ধরে নতুন আদলে হাজির হয়েছে। যেমন- টুইলাইট। এফডিসি’র বেদের মেয়ে জোসনার চেয়ে উন্নত কোনো চরিত্র না হলেও ভ্যাম্পায়ার মোটামুটি দুনিয়া মাতিয়েছে। এর উন্নত সংস্করণ ধরা যায় কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রগুলোকে। আধিভৌতিক কাহিনীর নিজস্ব যুক্তি থাকে, যা সহসা পর্যবেক্ষণের মানদণ্ডে নির্ধারিত নয়। যৌক্তিক আকারে দেখানো যায় না বলে পুরানো পালা-কেচ্ছা কাহিনীকে প্রান্তিক বা লোকায়ত বলা হচ্ছে। সেখানে বলা হচ্ছে কল্পবিজ্ঞানের যুক্তি ‘প্রকাশ্য’। স্টার ওয়ারসের পৌরাণিক মুখোশের ব্যবহার নিয়ে ডেভিড ক্যাম্পবেলের কিছু কথা কই। তার The Hero with a Thousand Faces এবং Power of Myth (বিল ময়ার্সকে দেয়া টিভি সাক্ষাৎকার সংকলন, অনুবাদ: খালেকুজ্জামান ইলিয়াস, ঐতিহ্য) বই দুটি উল্লেখযোগ্য।

দুনিয়ার যেকোনো বর্ণনা
র যেকোনো বর্ণনার শেষে কি আসে? উচিত-অনুচিত (Is- Ought)। দুনিয়া যেভাবেই চলুক সেখানে নামে-বেনামে শুভ ও অশুভের দ্বন্দ্ব মোটাদাগে হাজির থাকে। প্রায়ই অশুভকে শুভের অধীনস্থ না দেখিয়ে বিপরীত হিসেবে দেখানো হয়। এ যেন পারস্যের আহুরা মাজদা ও আহিরমন। সুপার হিরোর মাজেযা-মিরাকলকে এ যুক্তির মধ্যে ফেলা যায়। তার স্বাক্ষী কমিকস বইগুলো।

১৯৩৮ সালে সুপারম্যানের প্রথম কমিকস বইটি আসে। যা কমিকসকে একটা আস্ত শিল্পখাতে পরিণত করতে বড় ভূমিকা রাখে। প্রথম যুগের কমিকস প্রকাশকরা বলতেন মিরাকলের চাহিদার শেষ হয় নাই, তাই তাদের ব্যবসা হবে মিরাকল কেন্দ্রিক। সেখানে মিরাকল কি? সুপারম্যান বা অতিমানব সাধারণ মানুষের ত্রাণকর্তারূপে, সেভিয়র হিসেবে, মসীহ হিসেবে হাজির হয়। সে এমন শত্রুকে মোকাবেলা করে, যাকে মোকাবেলার হিম্মত ও শক্তি মানুষের ‘সাধারণ’ শক্তি ও বুদ্ধিতে নাই। এর পেছনকার সহজ মনস্তত্ত্ব যেটা, তা ‘ধর্মীয়’। মানুষ একজন ত্রাণকর্তার, একজন মসীহের অপেক্ষায় থাকে।

আধুনিকতার ঊষালগ্নে নবীর যুগ শেষ হয়েছে বলে ধার্য, কিন্তু অতিপ্রাকৃত ক্ষমতাধরের দরকার শেষ হয় নাই। এ ত্রাণকর্তার ধারণা মানুষের কাছে খুবই সহজ। মেসেনিক ধারণা প্রতিটি ধর্ম ও মিথের মরমে গাথা আছে। এমনকি যে দার্শনিক মনে করেন ‘ঈশ্বর মারা গেছেন’, তারও একজন ত্রাণকর্তার দরকার হয়।

‘শুভ’ ও ‘অশুভে’র এ দ্বন্দ্বের দিক থেকে ধর্মীয় কাহিনীগুলোতে ঈশ্বরের শক্তির বিপরীতে অসুর শক্তির কথা আছে। যেমন ক্রাইস্টের বিপরীতে এন্টি ক্রাইস্ট। এভাবে চেতন-অচেতনে ধর্মভাব থাকে। কারণ, মানুষের কর্তাসত্ত্বার ধারণাটি অন্য অনেক কিছুর চেয়ে ধর্মীয় বয়ানে ব্যাখ্যা করা সহজ।

তার সঙ্গে আছে দুনিয়াকে ভারসাম্যপূর্ণ দেখানোর প্রবণতা, যে ভারসাম্য মাঝেমাঝে নানা ‘অশুভ শক্তি’র কারণে বিপদে পড়ে। তখন দুনিয়াকে তার ভারসাম্যে ফেরাতে সেভিয়রের, ত্রাণকর্তার, মসীহের দরকার। ঈসায়ী ধর্মে দুনিয়াকে পাপমুক্ত করতে যিশু আত্মদান করেছেন। আবার আসবেন বলে এরাদাও দিয়েছেন। একইসঙ্গে ঈসায়ী ও ইসলাম ধর্মে মাহাদীর ধারণা আছে। ইহুদী ধর্মেও আছে। ভারতীয় পুরাণে, হিন্দু ধর্মে স্বয়ং ঈশ্বর মনুষ্যরূপে দুনিয়াকে বাঁচাতে আসেন।

সুপার হিরোদের ধর্মভাবের চমৎকার ও চিত্তাকর্ষক উদাহরণ টানা যায় দি ম্যাট্রিক্স ট্রিলজি (ল্যারি ও এন্ডি ওয়াস্ককি,১৯৯৯) চলচ্চিত্র থেকে। এ চলচ্চিত্রের নায়ক কম্পিউটার প্রোগ্রামার নিও এক গোপন দল থেকে জানতে পারে দুনিয়ার মানুষ আসলে প্রোগ্রামিংয়ের জটিল জালে বাস করছে। এখান থেকে উদ্ধার করতে পারে একজন, দি ওয়ান। তারা দি ওয়ানকে খুঁজতে থাকে। এ দি ওয়ানের ফর্মুলা খৃস্টীয়। নিও’র ইংরেজি স্পেলিং উল্টো করুন। এছাড়া একবার মরে গিয়েও নিও যেভাবে বেঁচে ওঠে তার সঙ্গে ঈসার পুনরুত্থান তুলনা করা চলে।

এ চলচ্চিত্রে প্রতারক জুদাসও আছে। যে নিওকে ধরিয়ে দেয়। একইসঙ্গে ম্যাট্রিক্সের জগত আর বাস্তব জগতের তফাত কি খৃস্টান দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক সেন্ট অগাস্টিনের দুই শহরের মতো নয়! একটা অশুভ নিয়ন্ত্রিত জগত, অপরটি ত্রাণকর্তায় করুণায় লাভ করা শুভ জগত। Glenn Yeffeth ও David Gerrold এর Taking the Red Pill: Science, Philosophy and Religion in The Matrix এই বিষয়ে দারুণ একটা বই।

সুপারম্যান বা স্পাইডারম্যানের চরিত্রগুলো দেখেন, তাদের ক্ষমতাপ্রাপ্তির যে ব্যাখ্যা তা অপ্রকাশ্য, গায়েবি। তাকে বুদ্ধিবৃত্তির ব্যাখ্যার ছকে ফেলা যায় না। ক্ষমতাপ্রাপ্তির পর তারা প্রায়ই নবীদের মতো আচানক ভয় পেয়ে যান। এদের বেশির ভাগের বাবা-মা থাকে না। তারপরের ফর্মুলাগুলো চেনা। অশুভ শক্তির (এন্টি ক্রাইস্ট) আবির্ভাব ঘটে। সুপারম্যান একবার পৃথিবী ছেড়ে ক্রিপটন গ্রহে চলে গেলেও ফিরে আসতে বাধ্য হয়। উসিলা হিসেবে গস্পেলের বাণী বলে, ‘আমি প্রতিদিন মানুষের কান্না শুনতে পাই’। ২০০৮ সালে ব্যাটম্যান: দ্যা ডার্ক নাইট (ক্রিস্টোফার নোলান)মুক্তি পাওয়াকালে Gabriel McKee তার The Gospel According to Science Fiction বইয়ে বলেন, ‘There are inherent messianic qualities in the . . . concept of the superhero—an individual with exceptional abilities who sacrifices part of his or her life for the greater good.’

পশ্চিমের সুপার হিরোর কাহিনীর প্রাণপাখি এভাবেই ‘ধর্মীয়’। কিন্তু আধুনিকতার বাতি জ্বালানির (এনলাইটমেন্ট) পর এরা আর খোলামেলা নয়। দর্শনের মধ্যে জ্ঞানের যে রূপান্তর ঘটেছে, গ্রিক আর রোমান পুরাণ যেভাবে নিত্যতার থেকে ‘অপর’ দুনিয়ায়, পরকালে আশ্রয় নিয়েছে, এমন রূপান্তর ঘটেছে আধুনিক নিত্যজীবনের প্রায় সবদিকেই।

ধর্ম আর রাজনৈতিক পার্থক্যটুকু আধুনিক জীবন-যাপনের মধ্যে স্পষ্ট। কিন্তু পশ্চিমা জ্ঞানকাণ্ড ধর্ম বাদ দিয়ে গড়ে ওঠে নাই। বরং এর নির্যাসটুকু ভালোভাবেই ব্যবহার করেছে। সুপার হিরোর পেছনেও ধর্মীয় ও আদিম ভয় কাজ করেছে। যে ভয়ের বয়ানে বলা হয়, মানুষ স্বভাবত পাপী- তাকে ‘উদ্ধার’ করার দরকার আছে, এ দরকারে গায়েবি শক্তির ত্রাণকর্তার অপরিহার্যতা আছে। সে দিক থেকে সুপার হিরোতে মানসিক প্রশান্তি আর বৈজ্ঞানিক বোধবুদ্ধির ভালো প্রয়োগ ঘটে। তলিয়ে দেখলে ঈসায়ী ফর্মুলা সাফসাফ মেলে।

কিন্তু বলিউডের সাম্প্রতিক কাজ রা.ওয়ান বা কৃশ দেখে মনে হয় না ইনডিয়া এখনো সে জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে। তারা সুপার হিরোর সেকুলার ভাব তৈয়ার করতে পারে নাই। স্পষ্টত তার পেছনে ইনডিয়ার বাজার, ভোক্তার রুচি এবং জাতিকেন্দ্রিক সমচেতনা কাজ করে।

সত্যজিত রায়ের প্রফেসর শঙ্কু যেমন বিজ্ঞানী, তেমনি আরেক ইনডিয়ান আছেন দুনিয়ায়। তিনি নিমো। ফরাসি লেখক জুলভার্নের ‘টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’র ক্যাপ্টেন নিমো। যাকে ‘লিগ অব এক্সটা অর্ডিনারি জেন্টলম্যান’ কমিকস বইয়ে আরো অনেক বিখ্যাত চরিত্রের সাথে পাওয়া যায়। একই নামের চলচ্চিত্রে (স্টিফেন নরিংটন, ২০০৩) নিমোকে কালী পুজারীরূপে দেখানো হয়, যা জুলভার্নের উপন্যাসে ছিল না। এ চরিত্রে ছিলেন নাসির উদ্দিন শাহ। ঠিক ইনডিয়ায় চলচ্চিত্রে তাদের জীবনযাত্রা অনেক লিবারেল দেখালে ধর্ম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে না।সেই ভক্তি শ্রদ্ধা তাদের সুপার হিরোতে ভালোয় কাজে লেগেছে।

যেমন দ্রোন (গোল্ডি বেহি, ২০১০) বা কৃশের মতো চরিত্রগুলো মনে হবে ধর্মহীন সুপার হিরোর সন্ধান দেয় না। ধর্ম বা মিথের ওপর আক্ষরিক অর্থে জোর দেয়। এমনকি তামিল এন্ধারান (হিন্দি রোবট,শংকর ২০০৯) চলচ্চিত্রে দেখা যায় রোবট চিট্টি দুষ্টের দমনে বিষ্ণুর রূপ ধরেছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে ধর্ম সংগীত বাজছে। টেলিভিশন সুপারহিরো শক্তিমানের ওপর আছে ভারতের সাত দেবতার আশীর্বাদ। ইনডিয়ায় জনপ্রিয় হওয়া এনিমেশন চলচ্চিত্র ‘মাই ফ্রেন্ড গনেশা’র কয়েকটা সিকুয়েল আছে। এছাড়া রামায়ন, শ্রীকৃষ্ণ, লব-কুশ, অর্জুন এতে জনপ্রিয়। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গণেশ। আগে থেকেই ইনডিয়ার টিভি দর্শকদের কাছে এসব আখ্যানের জনপ্রিয়তা প্রচুর।

রাকেশ রোশনের ‘কোই মিল গ্যায়া’র (২০০৩) নায়ক রোহিত – এর সিকুয়েল (২০০৬) ‘কৃশ’ চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায়ও ছিলেন ঋত্বিক রোশন। রোহিতের বাবা একজন বিজ্ঞানী। যিনি এলিয়েনদের সঙ্গে যোগাযোগের যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এ যন্ত্র ‘ওম’ শব্দটি মহাশূন্যে ছড়িয়ে দেয়। ‘কোই মিল গ্যায়া’র রোহিতের ছেলে কৃশ। এই কৃশকে বলা যায় হিন্দি চলচ্চিত্রের সবচেয়ে আবেদনময় সুপার হিরো।প্রথম চলচ্চিত্রে দেখা যায় কৃশের বাবা রোহিত আজন্ম বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। কিন্তু সুর্যের আলোখেকো ‘জাদু’ নামের এলিয়েন তাকে বুদ্ধিমান করে তোলে। এ যেন দেবতার আশীর্বাদ। এমনকি শরীরবৃত্তিয় নানা পরিবর্তন ঘটে। সে প্রেমেও পড়ে! এ ধরণের (অপ)বিজ্ঞানের প্রয়োগ রা.ওয়ানেও আছে। সে ক্ষমতা কৃশের মধ্যে বংশানুক্রমিকভাবে প্রকাশিত হয়। কী করে ‘জাদু’ রোহিতকে বুদ্ধিমান ও শক্তিমান করে তোলে তার কোনো ব্যাখ্যা নাই।এটা জাদু বা মিরাকলও বটে।

কৃশে দেখা যায় রোহিত ভবিষ্যত দেখার যন্ত্র আবিষ্কার করছেন। কিন্তু লগ্নিকারীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় তাকে আটকে রাখে । এরমধ্যে আশ্চর্য প্রতিভা নিয়ে জন্ম কৃশের। রোহিতকে আটকে রাখা শত্রুর ভয়ে দাদী কৃশকে নিয়ে অনেক দূরে পালিয়ে যান। অনেকদিন পর কৃশ যখন বাবাকে উদ্ধার করে, ততদিনে খলনায়কটি ভবিষ্যত দেখার যন্ত্রের মধ্যে দেখে ‘কৃশ’ তার মাথায় পিস্তল ধরে আছে। দেখুন শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সঙ্গে মেলানো যায় কি না। কৃশকে নিয়ে দাদীর পালিয়ে বেড়ান, অপর দিকে তার বাবা বন্দী খলনায়কের হাতে। পুরাণে শ্রীকৃষ্ণের আখ্যানে কংস আগেই তার ভবিষ্যত জেনে যাচ্ছে।আর কৃশ নামটা কোত্থেকে আসছে? অনুমান সহজ।

শ্রীকৃষ্ণের জন্ম বৃত্তান্ত, ‘কৃষ্ণ যাদব-রাজধানী মথুরার রাজপরিবারের বসুদেব ও দেবকীর আট নম্বর ছেলে। কংস তাদের বাবা উগ্রসেনকে বন্দী করে সিংহাসনে বসেন। এক দৈববাণীতে তিনি জানেন যে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতে তার মরণ। এ শুনে তিনি দেবকী ও বসুদেবকে কারারুদ্ধ করেন এবং তাদের প্রথম ছয় ছেলেকে হত্যা করেন। দেবকী তার সপ্তম গর্ভ রোহিণীকে দিলে বলরামের জন্ম হয়। এরপরই কৃষ্ণের জন্ম।

কৃষ্ণের জীবন বিপন্ন জেনে জন্মরাত্রেই দৈবসহায়তায় কারাগার থেকে পালিয়ে বসুদেব তাকে গোকুলে তার পালক মাতাপিতা যশোদা ও নন্দের কাছে রেখে আসেন। কৃষ্ণ ছাড়া বসুদেবের আরও দুই সন্তানের প্রাণরক্ষা হয়েছিল।

এবার দেখা যাক শাহরুখ খানের প্রকল্প। এর আগে ২০০৮ সালের তার উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ছিল ‘মাই নেম ইজ খান’। সে চলচ্চিত্রের মতো ধর্মীয় বহৃত্ববাদের শাহরুখকে নিয়ে স্টার ওয়ান নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রে দেখা যায় তার বাড়িতে নামাজ-কালামের পাশাপাশি পুজা-অর্চণা হচ্ছে। রা.ওয়ানও সে ধারা থেকে বাদ থাকেনি। একইসঙ্গে হিন্দু ধর্ম আর ঈসায়ী ধর্মের মাখামাখি।রা.ওয়ান মানে রাবণ। রাবণ বধের উৎসব এ চলচ্চিত্রে।

মাথা কাটলেও যেমন রাবণের মাথা আবার গজায় রা.ওয়ানের একই অবস্থা। তাকে মারতে হলে ত্রাণকর্তার জন্য আত্মোৎসর্গ দরকার। মানে শুভ শক্তি জি.ওয়ানকেও (গুড ওয়ান) মরতে হবে। মানবজাতিকে মুক্ত করতে জি.ওয়ান নিজেকে কুরবানি দেন। এখানেই শেষ নয়। শেষে দেখা যায় জি.ওয়ান পুনর্জন্মে ফিরে আসছেন। এখন বলা হচ্ছে এ সুপার হিরোকে নতুন মুভিতে দেখা যাবে।

রাষ্ট্র ইনডিয়া সেকুলার। চলচ্চিত্র-টিভি আর রিয়েলিটি শো তা নয়। সমাজ থেকে পুরাণ বা ধর্ম হারায়নি।

বাংলাদেশে সেকুলারিজম মানে প্রায়ই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বা ধর্মহীনতা বলে উল্লেখ করা হয়। অথচ জ্ঞানতত্ত্বের সেকুলার এবং রাজনীতির সেকুলারিজমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইউরোপের যে আধুনিকতায়, সেখানে সংজ্ঞার দিক থেকে এটা শুধুমাত্র জাগতিকতাকেই নির্দেশ করে। আধুনিক রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রে বা বিশ্ব পুঁজির মধ্যে সেকুলারিজমের দোহাই মানে ধর্মহীনতা নয়। বরং বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির মধ্যে সমচেতনা তৈরি করা ও বাণিজ্য লাভালাভির দিকটা গুরুত্বপূর্ণ।

ধর্ম এখানে ধর্ম বলেই বিকোয় না, বরং পুঁজি নিজেই অন্য সবকিছুর মতো ধর্মকে বেচাবিক্রির উপযোগী করে তোলে। শুভ-অশুভের এ বাণিজ্য নানাভাবেই ঘটছে। এখানে আদিম ভয় নানা উৎপাদনে বাঁচে। একইসঙ্গে অর্থনৈতিক পরাশক্তির দিক থেকে সুপারহিরো অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে কোনো নির্দিষ্ট দেশের স্বার্থই সংরক্ষণ করে।

যেমন সুপারম্যান আমেরিকার কালচারাল আইকন। শুধু মিথিক বা ধর্মীয় জিনিস বলে কাছাকাছি সময়ে এটা অগ্রহণযোগ্য হবে, এমন মনে হয় না। বরং সুপার হিরোকে (অন্তত ২০১২ সালে কিছু মুভি আসছে) আমরা আরো নানাভাবে দেখবো। সুপার হিরোরা আরো অনেকদিন শাসন করবেন রূপালী পর্দার জগত।

> লেখাটি বার্তাটুয়েন্টিফোর.নেট-এ প্রকাশিত।
> আমার লেখার খাতা ইচ্ছেশূন্য মানুষ
৯টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×