somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পলাশীর বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি

২৮ শে জুন, ২০১১ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৭৫৭ সালের ২৩ জুন উপমহাদেশের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য এক শিক্ষ্যণীয় ট্র্যাজেডির দিন। ইতিহাসের এই দিনটিকে স্মরণ করলে কোন দেশপ্রেমিক ক্ষমতার লোভে বিদেশি শক্তির সাথে হাত মিলানোর কথা চিন্তা করতে পারে না। ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে ঐদিন যারা পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ যুদ্ধ নাটক মঞ্চস্থ করে নবাব সিরাজদ্দৌলাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজের জন্মভূমিকে বিদেশি শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছিল তাদের পরিণতি ভাল হয়নি। এ ঘটনা থেকে এই শিক্ষাই পাওয়া যায় দেশ জাতির সাথে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করলে এ দুনিয়াতেই তাদের শাস্তি পেতে হয়। কয়েকজন বিশ্বাসঘাতকের পরিণতি তুলে ধরা হলো।

মীর জাফর আলী খান : এই বিশ্বাসঘাতকের স্বপ্ন ছিল সে বাংলা বিহার ঊড়িষ্যার নবাব হবে। এই ইচ্ছা পূরণ করতে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় মীর জাফর। তার এ ইচ্ছা পূরণ করতেই পলাশীর প্রান্তরে সে পঞ্চাশ হাজার সৈন্য নিয়ে পলাশীর প্রান্তরে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। লর্ড কাইভের তিন হাজার সদস্যের সেনাবাহিনীর কাছে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে পরাজিত হয় নবাব সিরাজুদ্দৌলার এ বিশাল বাহিনী। সুচতুর কাইভ যুদ্ধেও পর মীর জাফরকে সিংহাসনে বসায় কিন্তু ক্ষমতা রাখে নিজের হাতে। কিছুদিনপর তার ইংরেজ প্রভুরা এ বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বাস করতে পারে না। এ বিশ্বাসঘাতককে তারা ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। ইংরেজরা ভাবে যে ব্যক্তি সামান্য ক্ষমতার লোভে তার দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে তারা সাতসাগর তের নদীর ওপার থেকে এসে তাকে বিশ্বাস করবে কোন ভরসায়।

নবাবী চলে যাওয়ার পর সে দারুণ অর্থ কষ্টে পরে। মীর জাফর আলী খান কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়। রোগের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এক তান্ত্রিকের পরামর্শে হিন্দু দেবী মূর্তির পা ধুয়া পানি খাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। বেঈমান অবস্থায় মারা যায় এ বিশ্বাসঘাতক।

মীর কাসিম : পলাশীর আরেক বিশ্বাসঘাতক মীর কাসিম। ব্রিটিশদের তাঁবেদারী করে মীর জাফরের পর নবাব হতে পারলেও এক পর্যায়ে তাকেও আস্তাকুঁড়ে নিপে করে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি। মীর কাসিম আলী খান নবাব হওয়ার পর ইংরেজদের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারে। তার সাথে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। মীর কাসিমের সাথে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির যুদ্ধ হয় যা ইতিহাসে “বক্সারের যুদ্ধ” নামে পরিচিত। বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দিল্লী পালিয়ে যান মীর কাসিম। অর্থ কষ্টে পথে পথে ঘুরতে থাকেন। তার নাবালক দুই সন্তান দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে তার জন্য খাবার সংগ্রহ করতো। তারা এক সন্ধ্যায় ভিক্ষা করে ফিরার সময় ইংরেজ সৈনিকদের গুলিতে নিহত হয়। নাবালক কিশোর কিশোরীকে হত্যার দায় এড়াতে ইংরেজরা প্রচার করে অন্ধকারে বাঘ ভেবে ভুল করে তাদের গুলি করেছে সিপাহিরা। মীর কাসিম অর্থ কষ্টে অনাহারে দিল্লী জামে মসজিদের নিকট মৃত্যুবরণ করেন।

ঘসেটি বেগম: ঘষেটি বেগম ছিলেন নবাব সিরাজুদ্দৌলার আপন খালা। তার স্বপ্ন ছিল পিতা আলীবর্দী খাঁর ইন্তেকালের পর তিনি হবেন হবেন বাংলার প্রথম মহিলা নবাব। এই ইচ্ছা পূরণের জন্য তিনিও হাত মেলান ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে। প্রাসাদের সকল গোপনীয় তথ্য ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পাচার করতেন এই উচ্চভিলাষী বিশ্বাসঘাতক নবাব নন্দিনী। পলাশী’র যুদ্ধের পর মীরজাফরপুত্র মীরন বুঝতে পারে তার পিতার নবাব হবার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ঘষেটি বেগম। তাই মীরন চক্রান্ত করে ধলেশ্বরী নদীতে নৌকা ডুবিয়ে ঘসেটি বেগম’কে হত্যা করে।

মীর মীরন : মীর জাফরের পুত্র মীরন। সে পলাশীর যুদ্ধের আরেক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারী। তার নির্দেশেই মোহাম্মাদী বেগ নির্মমভাবে নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে হত্যা করে। মীরনের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে।

জগৎ শেঠ : কাশিমবাজার কুঠির ষড়যন্ত্রের প্রধানতম নায়ক এই জগৎ শেঠ। এই কুঠিরে বসেই আঁকা হয় পলাশী ষড়যন্ত্রে নীলনকশা। দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রেও ফল তাকে হাড়ে হাড়ে ভোগ করতে হয়। পলাশীর যুদ্ধের পর ষড়যন্ত্রকারীরা মেতে উঠে স্বার্থের দ্বন্দ্বে। মীর কাসিমের নির্দেশে বিহারের মুঙ্গের দুর্গ থেকে বস্তা বন্দী করে তাকে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়। নবাবী আমলের এ ধনকুবরের আরো সম্পদের লোভে ইংরেজদের পক্ষ নিয়েছিলেন। তার পাপের শাস্তি তাকে পেতে হয় পানিতে ডুবে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুর স্বাদ পাওয়ার মাধ্যমে।

উমিচাঁদ: কাশিমবাজার ষড়যন্ত্রের আরেক নায়ক উমিচাঁদ। দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে যোগ দিয়েছিল। সেই ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিই তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনে। কোম্পানি উমিচাঁদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। কপর্দকহীন নিঃস্ব অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নন্দকুমার: আরেক বিশ্বাসঘাতক নন্দকুমারকেও উমিচাঁদের পরিণতি বরণ করতে হয়। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

লর্ড কাইভ : বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির দোর্দণ্ড প্রতাপশালী প্রধান ছিলেন লর্ড কাইভ। সে পলাশীর যুদ্ধের আগে একটি স্বাধীন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশটির স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হরণের প্রধান খলনায়ক। তার লুটেরা বাহিনী যুদ্ধপরবর্তী সময়ে হত্যা, ধর্ষণ, সম্পদ-লুটতরাজসহ বিবিধ অপকর্মে লিপ্ত হয়। নবাব পরিবারের সাথে তার নিষ্ঠুর আচরণে আজো কেপে উঠে যে কেনো বিবেকবান মানুষের হৃদয়। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, এই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী লুটেরার শেষ জীবন কাটে অর্থকষ্টে। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ মিডিয়ায় হত্যা, ধর্ষণ, সম্পদ-লুটতরাজ ও কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ হউস-অব-কমন্স’এর সদস্যরাও তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। অব্যাহত প্রতিবাদের মুখে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে হউস-অব-লর্ডস। দীর্ঘদিন এই তদন্ত কমিটির শুনানিতে তাকে অংশ নিতে হয় এবং আনীত অভিযোগ মোকাবিলায় আইনী খরচ মেটাতে লুটকৃত বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকার তার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। শেষ জীবনে সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন কাইভ এবং তার পরিবারের সদস্যরাও তাকে ত্যাগ করে চলে যায়। কাইভ হতদরিদ্র অবস্থায় চরম হতাশায় আত্মহত্যা করে।
-হারুন ইবনে শাহাদাত-এর লেখা থেকে
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×