তারাবীহ নামাজের ঘটনাঃ একদা রমযানে নবীজী (সাঃ) এশার পরে বিশেষ কিছু নামাজ পড়লেন। পরের দিন আবার পড়লেন। এদিন অনেক সাহাবীরা মসজিদে জড় জয়ে নবীর সাথে এই সালাত আদায় করলেন। পরেরদিন আরো বহু সংখ্যক সাহাবী (রাঃ) নবীর সাথে এই নামাজ আদায় করলেন। কিন্তু তারপরে নবীজী এই নামাজ পড়তে মসজিদে এলেন না। সাহাবীরা এসে যে যার মত পড়ে চলে গেলেন।
নবীজী কেন এই নামাযে ছেদ ঘটালেন? দয়ার নবী ফরয হবার আশঙ্কা করেছিলেন। এই দীর্ঘ নামাজ ফরয হয়ে গেলে উম্মতের জন্য কষ্টকর হতে পারে, এই আশঙ্কায় নবীজী আপাতত এই নামাজ আর পড়লেন না। তবে এই বিশেষ নামাজ যে অতি বরকতময়, তার লক্ষন রেখে গেলেন।
আবু বক্বর রাঃ এর খেলাফত আমলঃ খলিফাতুর রাসুল আবু বক্বর রাঃ তার সংখিপ্ত খেলাফতকালে অনেক জটিল বিষয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ইরতাদেদর ঘটনা, ভন্ড নবীদের প্রতিহত, সিরিয়া ও ইরাক অভিযান ইত্যাদি সমাপ্ত করতে না করতেই খলিফা ইহকাল ত্যাগ করেন। এ জন্য, শরীয়তের বিভিন্ন মাছায়েলে শৃংখলা বিধানে পর্যাপ্ত সময় পান নাই।
হযরত ওমর রাঃ আমলঃ আমীরুল মুমিনিন ওমর রাঃ এর সুদীর্ঘ খেলাফতকালে শরীয়তের অনেক অস্পষ্ট বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়সালা করে যান। এ কাজে তিনি বিশিষ্ট সকল সাহাবীদের ডেকে মতামত নিয়ে কোরান, হাদীস ও ইজমার ভিত্তিতে করতেন। এরকম একটা বিষয় হল রমযানের তারাবীহ নামাজ। যেহেতু নবীজীর আমলে বিষয়টি স্পষ্ট ছিল না, তাই সকল বিশেষজ্ঞ সাহাবীদের নিয়ে তারাবীহ নামাজের রাকাত ও পদ্ধতি নির্ধারন করে দেন। তা হল, ২০ রাকাত, জামাতে হাফেযের পেছনে মসজিদে পড়া ও কোরান খতম দেওয়া।
সাহাবীদের চালু করা রীতি কি বেদাতঃ নবী (সাঃ) ও সাহাবীদের থেকে প্রমানিত কোন কাজ বেদাত হয় না, বরং তা শরীয়তের দলিল হিসেবে গন্য। যেহেতু, তারাবীহ নামাজ নবীর জমানায় অস্পষ্ট ছিল, তাই সাহাবীগন এটাকে বিন্যস্ত ও শৃংখলাবদ্ধ করেছেন মাত্র। তাই ২০ রাকাত তারাবীহ নামাজ শরয়ী দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এর বিপরীত মত গ্রহনযোগ্য না। আর সাহাবীগণের কাজ হাদিসের মর্যাদা পায়।
২০ রাকাত, নাকি ৮ রাকাতঃ তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের পার্থক্যঃ
নবীজী সারাজীবন, রমযান ও রমযানের বাইরে, শেষ রাত্রিতে একটা নামায পড়তেন। এই নামায কোরান ও হাদীসের পরিভাষা অনুযায়ী ‘তাহাজ্জুদ’ বা ‘ কিয়ামুল লাইল’ নামায হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ও সুপরিচিত। এই নামায নবীজী ৮ বা ১২ রাকাত পড়তেন।
অন্যদিকে, তারাবীহ নামাজ শুধু রমযানেই পড়েছেন। রমযানের বাইরে তারাবীহ প্রযোজ্য নয়। এই বিষয়টা সাহাবীরা (রাঃ) পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন ও সেভাবেই তারাবীহ নামাজ নির্ধারন করেছেন।
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের হাদীস-কে গুলিয়ে ফেলাঃ অন্যদিকে, বর্তমানের কোন কোন আলেম (আহলে হাদীস ফেরকার) তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের হাদীস-কে গুলিয়ে ফেলেছেন। তারা তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ এর মধ্যে পার্থক্য করতে না পেরে তাহাজ্জুদ/কিয়ামুল লাইলের হাদিস-কে তারাবীহ এর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। এটা তাদের বিরাট জ্ঞানগত দুর্বলতা বা দুরভিসন্ধি কিছু একটা হবে।
প্রকৃত পক্ষে, দুটি নামাজ সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তাহাজ্জুদ/কিয়ামুল লাইল রমযানে বা রমযানের বাইরে সারা বছর পড়া হয়, এটা ৮ বা ১২ রাকাত হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, তারাবীহ শুধুই রমযানের বিশেষ নামাজ, এটা সর্ব-সম্মতভাবে ২০ রাকাত।
শুদ্ধতার প্রচার জরুরীঃ তারাবীহ নামাজ সুন্নাত। কেউ অপারগ হলে না-ও পড়তে পারে। তবে জেনেশুনে বা না-বুঝে এটাকে ৮ রাকাত বলে প্রচার করা ঠিক নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৩৯