somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খত্‌না চক্র (ছোটগল্প)

০৬ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.

তনয় ইদানিং বাসায় একটা মানসিক টর্চারের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।তনয় এবার মাত্র ক্লাস টুতে উঠেছে।এত বাচ্চা একটা ছেলেকে যে এতটা টেনশনে রাখা যায় এটা তনয়ের ধারণাতেই ছিলনা।ঠিক এই মূহুর্তে তনয়ের খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু যা ইচ্ছে হয় সবসময়তো আর তা করা যায়না।তনয় অবশ্য অন্যদের হতে অনেক আলাদা।তনয়ের যখন খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে তখন ও চট্‌ করে বাথরুমে ঢুকে যায়,দরজা খুলে কল বন্ধ করে অনেক্ষণ কাঁদে।তারপর চোখমুখ ধুয়ে বের হয়ে আসে।

এবারের টর্চারের কারণে আসা যাক।তনয়ের "মুসলমানি" মানে "খত্‌না" করানোর জন্য বাসায় সবাই উঠে পরে লেগেছে।কানের কাছে দিনরাত ২৪ ঘন্টা শুধু একটাই শব্দ বারবার ঘুরছে "খত্‌না.......খত্‌না........খত্‌না"।অসহ্য।মেয়ে হয়ে জন্মালে অনেক ভাল হত।এ ধরণের ঝামেলায় পরতে হতনা।

শুধু বাবা-মা হলেও একটা কথা ছিল।কিন্তু বাইরে থেকে যারা আসছে তারাও তস্‌বি জপার মত "খত্‌না.......খত্‌না" করতেছে।আবার কেউ কেউ অনেক উপদেশ দিচ্ছে।সেদিন মঈন চাচা বলছিলেন,"আরে......খত্‌নাতো কোন ব্যাপারই না......শুধু একটুখানি চামড়া কেটে নিবে........তুইতো টেরও পাবিনা।"

আর এসব ঝামেলাও শেষ না।তনয়ের ছোট বোন তিন্নির যেন এ বিষয়টি নিয়ে ঈদ যাচ্ছে।বারবার লাফাতে লাফাতে বলছে,"ভাইয়া,তুই কিন্তু চামড়াটা সাথে করে নিয়ে আসবি।আমরা ওটা ফ্রিজে রেখে দিব।পরে যেই বাসায় আসবে তাদের ওইটা দেখাব।কি মজা হবে!!!"

২.

তনয়ের বাবা ইউনুস হালদার খাঁ অত্যন্ত বদরাগী মানুষ।তনয়কে অনেকটা জোর করেই সে নিয়ে আসে ক্লিনিকে।দু'জনে ক্লিনিকে দাঁড়িয়ে থাকে ডাক্তারের কলের অপেক্ষায়।তনয়ের মুখ কাল হয়ে আছে।খত্‌না হবে বলে নতুন লাল রঙের লুঙ্গি কেনা হয়েছে।তনয় সেই লুঙ্গি পরেই দাঁড়িয়ে আছে।আশেপাশের মানুষগুলো খুব খুশি খুশি ভঙ্গিতে ওর দিকে তাকাতে লাগল।চোখেমুখে "যা শালা....চিপা খা...." টাইপ হাসি।ক্লিনিকের বারান্দায় এত বাতাস আসার কথা না।কিন্তু কোথা হতে যেন অনেক বাতাস এসে লুঙ্গির ভেতর ঢুকে যাচ্ছে।আর তা সহজে বের হচ্ছে না।লুঙ্গির ভেতর ছোটখাট ঘুর্নিঝড়ের মত হচ্ছে।তনয় লুঙ্গি পরে অভ্যস্ত না,তাই হঠাৎ হঠাৎ গিট খুলে যেতে চাইছে।একবার চট্‌ করে লুঙ্গি খুলে গেল।পা বেয়ে নিচে পরেই তা থামল না।হঠাৎ বাতাসে কি যেন হল কিছুদূর উড়ে গিয়ে পরল ওটা।তনয় দৌঁড়ে লুঙ্গি তুলে পরে নিল।এর মধ্যে যা হবার হয়ে গেছে।একটা বাচ্চা মেয়ে যা দেখার দেখে নিয়েছে।বিকট চিৎকার করে সমস্ত ক্লিনিক মাথায় তুলছে।সবাইকে বলছে,"দেখ,এই ছেলেটার নাভির নিচ হতে একটা আংগুল নেমে এসেছে।"মেয়েটার কথায় সবাই খুব হাসতে লাগল।তনয়ের ইচ্ছে হল এক লাফে মেয়েটার কাছে গিয়ে ওর টুঁটি চিপে ধরে।কিন্তু কাজটা করার আগেই ওর ডাক পরল।ও মুখ আরও কাল করে ঢুকে গেল অপারেশন থিয়েটারে।

৩.

বিশাল বড় একটা টেবিলের মত কিসে যেন তনয়কে শোওয়ানো হল।মাথার উপর হাজার হাজার লাইট ছাড়া হল।একজন ডাক্তার হাসিমুখে এগিয়ে এসে বলল,"দেখি বাবু....লুঙ্গিটা খুলে ফেলত ...."।তনয় বুড়োর কথায় হতভম্ব হয়ে গেল।বলে কি এই বুড়ো??এত মানুষের সামনে লুঙ্গি খুলে ফেলব মানে কি!!!বুড়োর গালে ঠাস্‌ করে একটা চড় বসিয়ে দেওয়া দরকার।

তনয় কিছু বুঝার আগেই হুরমুড় করে অনেকগুলো এপ্রন পরা ডাক্তার,নার্স ঝাপিয়ে পরল ওর উপর।তনয়ের মনে হল এরা ডাক্তার না ডাকাত।তনয়ের মাথার ভেতর দপ্‌ দপ্‌ করতে লাগল।হঠাৎ ওর মস্তিস্ক হতে সমস্ত শরীরে মেসেজ আসল,"ওঠ তনয় ......ওঠ.....মাথাচাড়া দিয়ে ওঠ...এভাবে পরাস্ত হয়োনা।"তখনই তনয় অত্যন্ত দ্রুততার সাথে তার হাত-পা ছুড়তে লাগল।হঠাৎ ওর পা গিয়ে পরল ডাক্তারের নাকের উপর।সংগে সংগে নাক ফেটে গলগল করে রক্ত পরতে লাগল।হুড়োহুড়ি লেগে গেল রুমে।সবাই তনয়কে সরিয়ে ডাক্তারকে শোওয়ালো অপারেশন টেবিলে।তনয় তখন পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগল।আর মনে মনে বলল,"দেখ শালা,অন্যের লুঙ্গি খুলতে গেলে কি হয়।হি হি হি"

৪.

"আজকালকার পুলাপান একদম আস্ত শয়তান।সব কামে খালি ঘাপলা লাগায়।আমি কইকি তনয়রে ধইরা বাঁশ দিয়া চিপা দিয়াই কামটা সাইরা ফালাই।কি দরকার খামুখা আবার ক্লিনিকে নেওয়ার"-ড্রইং রুমে বসে বাড়িওয়ালা তনয়ের বাবাকে এসব বুদ্ধি দিচ্ছে।

তনয়ের বাবা বললেন,"না ,দেখি আজই আরেকবার ওকে নিয়ে যাব ক্লিনিকে"

"খামুখা!কি দরকার! বিট্‌লা পুলাপান....বাঁশের চিপা না খাইলে সোজা অইতোনা।"

তনয়ের জন্য নীল রঙের লুঙ্গি কেনা হয়েছে।আগেরটার মধ্যে রক্ত লেগেছিল।সবাই প্রথমে ভেবেছিল তনয়ের "ইয়ে"-র রক্ত।কিন্তু আসল ব্যাপারটা তারা জানেনা।রক্ততো ছিল আসলে ডাক্তারের।হিহিহি।সেইদিন ডাক্তারের অবস্থা ভাবতেই ভাল লাগছে তনয়ের।তবে একটা ভুল হয়ে গেছে।ওইদিন আসলে ডাক্তারের নাকে না,জায়গা মত একটা পারফেক্ট কিক্‌ দেওয়া উচিত ছিল।শালা বুঝত্‌ কত ধানে কত চাল।

তবে আজ তনয়ের সেইদিনের চেয়েও বেশি ভয় লাগছে।সিড়ি বেয়ে ক্লিনিকে উঠার সময় সিড়িতে রক্তের ধারা ছিল।হয়তো কারোটা খত্‌না করানোর পর তাকে নিয়ে গেছে।"ইয়ে"-র রক্ত সিড়িতে পরেছে।রক্তের সরু ধারাটা দেখলেই বুক কেঁপে উঠছে তনয়ের।

ইতিমধ্যে ডাক্তারও চলে এসেছে।সর্বনাশ!!ঐ বুড়ো ডাক্তারইতো!!নাকে ব্যান্ডেজ বাঁধা।তবে মুখ ভর্তি হাসি।তনয়ের দিকে তাকিয়ে যেই চাহনি দিলে তার মানে দাঁড়ায় এরকম,"আয় পিচ্চি...অনেকদিন এক কোপে কোন বৃক্ষ কাটিনি....আজ কাটব।"

৫.

তনয়ের খত্‌না ভালমতই হয়েছে।তনয় যতটা ব্যথা পাবে বলে ভেবেছিল ততটা পায়নি।বাসায় আসার আগ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল।বাসায় আসার পর হতেই তিন্নি চিল্লাতে লাগল....."ব্যা...ব্যা....ভাইয়া....তুই পঁচা.....চামড়াটা কেন আনলি না তুই .....ব্যা...ব্যা....."
তবে এটাও মেইন সমস্যা না।এরচেয়েও বড় সমস্যা হল,যারাই বাসায় আসে সবাই যাবার সময় তনয়ের কাছে এসে বলে,"দেখি বাবা তোমার "ইয়ে"-টা ....কেমন খত্‌না হল...."অসহ্য ....অসহ্য...!!!

আছা, সব ছেলেদেরই কি এরকম সমস্যায় পরতে হয়ে??

৬.

বাবু ইদানিং বাসায় একটা মানসিক টর্চারের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।বাবু এবার মাত্র ক্লাস টুতে উঠেছে।এত বাচ্চা একটা ছেলেকে যে এতটা টেনশনে রাখা যায় এটা বাবুর ধারণাতেই ছিলনা।বাবু তার বাবা তনয় হালদার খাঁ কে সে অনেকবার বলেছে যে সে খত্‌না করবে না।বাবা প্রতিবার অনেক ভয়ংকর চোখে তাকিয়েছে।বাবু বুঝতে পারছে যে আর বলা যাবেনা।বললে হয়তো বাসাতেই ওর বাবা জন্মদিনের কেক কাটার ছুড়িটা দিয়েই খত্‌না করিয়ে দিবে।"এক ঢিলে দুই পাখি"-র কাজ করে কেকটা হয়তো রেকর্ডবুকে ঢুকে যাবে।প্রথম আলোর "বিলিভ ইট অর নট" -এ ছাপা হবে -"বাবু নামক একটি ছেলের জন্মদিনের কেক কাটার ছুড়ি দিয়েই খত্‌না করানো হয়েছে।"পাশে ছুড়ি হাতে ছেলের বাবার হাসি হাসি মুখ।

উফ্‌....বাবু এসব কি ভাবছে!!!আচ্ছা একসময়কি বাবুও কোন একদিন তার ছেলের খত্‌না করানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত হবে???এভাবেই কি চলতে থাকবে খত্‌না চক্র???
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১১:৪৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×