somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহজ ভাষায় ইসলামের উত্তরাধিকার আইন

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সম্পত্তির উত্তরাধিকার বন্টন সম্পর্কে ইসলামের নিয়ম কি – তা নিয়ে সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে প্রায়ই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, আর কমন কিছু প্রশ্ন আছে যা প্রায় সবার মনেই ঘুরপাক খায়। উত্তরাধিকার সম্পর্কে একদম প্রাথমিক কিছু জ্ঞান এই লেখায় শেয়ার করলাম।

ইসলামে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদকে “মিরাস” বা “তারেকা” বলে। যারা “মিরাস” এর মাধ্যমে সম্পদ পায় তারা “ওয়ারিস”। যে নিয়মের মাধ্যমে এই বন্টন করা হয় তাকে বলে “ফারায়েয”। সংজ্ঞা অনুসারে, শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তিরই “মিরাস” হতে পারে, জীবিত ব্যক্তির “মিরাস” হয় না।

একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার সম্পত্তি বন্টন করার আগে আরো কিছু খরচ দেখতে হয়। এই খরচগুলো মিটানোর পরেই কেবল ওয়ারিসদের মধ্যে সম্পত্তির বন্টন হয়। এই খরচগুলো হল:
- কেউ যদি মৃত ব্যক্তিটির দাফন-কাফন এর খরচ দিতে রাজি না থাকে তাহলে ঐ মৃত ব্যক্তির সম্পদ থেকেই ঐ খরচ দিতে হবে
- ঐ ব্যক্তির কাছ থেকে যদি কেউ টাকা পেয়ে থাকে তবে সেই দেনা আগে মেটাতে হবে
- ঐ ব্যক্তির উপর যদি কোন শার’ই খরচ ফরজ হয়ে থাকে (যেমন – যাকাত, কাফফারা) যা সে দিয়ে যেতে পারেনি সেটা দিয়ে দিতে হবে
- ঐ ব্যক্তি যদি ওসিয়ত করে যেয়ে থাকে তাহলে সেই ওসিয়তের পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে

একজন ব্যক্তি তার মিরাসের সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ ওসিয়ত (দান) করতে পারবে। এই ওসিয়ত সে যে কাউকে করতে পারবে, তবে সাধারণত: মসজিদ, মাদ্রাসা বা অন্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ওসিয়ত করা হয়। ওসিয়তের পর বাকী যে সম্পদ থাকবে তা ওয়ারিসদের মধ্যে বন্টন হবে।

ওয়ারিসরা দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। ১ – রাহেম বা বংশের কারণে আত্মীয় ও, ২ – বৈবাহিক সম্পর্কীয় আত্মীয়।

আবার ২ শ্রেণির মানুষ আছে যারা সম্পর্কের কারণে ওয়ারিস হওয়া সত্ত্বেও সম্পদের ভাগ পাবে না। এরা হলো – ১) মৃত ব্যক্তির ধর্ম আর ওয়ারিসের ধর্ম যদি ভিন্ন হয়, ২) ওয়ারিস যে ব্যক্তির সম্পদ পাওয়ার কথা তাকে যদি সে হত্যা করে।

পুরুষদের মধ্যে যারা ওয়ারিস হতে পারবে তারা হলো – স্বামী, ছেলে, ছেলের ছেলে, বাবা, দাদা, আপন ভাই, সৎ ভাই, চাচা, চাচাত ভাই, মুক্তিকৃত দাস।

নারীদের মধ্যে যারা ওয়ারিস হতে পারবে তারা হলো – স্ত্রী, মেয়ে, ছেলের মেয়ে, মা, দাদী, আপন বোন, সৎ বোন, মুক্তিকৃত দাসী।

মিরাস বন্টনের বহু জটিল নিয়ম-কানুন আছে। কিন্তু, সুখের কথা হল বেশীরভাগ মানুষের জন্য প্রাসঙ্গিক নিয়ম মাত্র ৩টি। এগুলো হলো –

১) ছেলে সন্তানেরা মেয়ে সন্তানের দ্বিগুণ পরিমাণ সম্পদ পাবে।

২) সন্তানহীন দম্পতির ক্ষেত্রে স্বামী মারা গেলে স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবে। বাকী সম্পদ ভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে অন্য ওয়ারিসদের মধ্যে চলে যাবে। অন্যদিকে, সন্তানওয়ালা দম্পতির ক্ষেত্রে স্বামী মারা গেলে স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তির এক-অষ্টমাংশ পাবে। বাকি সম্পদ সন্তানদের মধ্যে ভাগ হবে।

৩) সন্তানহীন দম্পতির ক্ষেত্রে স্ত্রী মারা গেলে স্বামী তার স্ত্রীর সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। বাকী সম্পদ ভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে অন্য ওয়ারিসদের মধ্যে চলে যাবে। অন্যদিকে, সন্তানওয়ালা দম্পতির ক্ষেত্রে স্ত্রী মারা গেলে স্বামী তার স্ত্রীর সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবে। বাকি সম্পদ সন্তানদের মধ্যে ভাগ হবে।

ছেলেদের বেশী সম্পদ দেয়ার যুক্তি হলো – ইসলামি আইন অনুসারে একজন ছেলেকে তার পরিবারের ভরণ-পোষনের দায়িত্ব নিতে হয়, কিন্তু মেয়েদের সে দায়িত্ব নেয়ার কথা না। আবার, ছেলেকে বাবার সম্পত্তির দেখাশুনার দায়িত্বও পালন করতে হয়, যা মেয়েদের পালন করার কথা না । কিন্তু সত্য হলো যে বর্তমান সময়ের বাস্তবতা ভিন্ন। বর্তমানে বহু পরিবারেই মেয়েরা ছেলেদের সাথে সমান তালে আয়-রোজগার করে, মা-বাবার সম্পদের দেখ-ভাল করে। আবার, এমন পরিস্থিতিও হতে পারে যখন ছেলে সন্তান আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ায় তার যতটা না সম্পদের দরকার, মেয়ে সন্তান আর্থিক ভাবে অসচ্ছল হওয়ায় তার আরো বেশী সম্পদের দরকার। এরকম ক্ষেত্রে কি কিছু করার আছে? আল্লাহ্‌ ছেলে ও মেয়ে সন্তানের জন্য সম্পদের যে পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন তার বাইরে যেয়ে কি সম্পদ বন্টন করা যায়? উত্তর – হ্যাঁ, করা যায়। তবে, এক্ষেত্রে যেটা বন্টন করা হবে সেটাকে “মিরাস” নয় “হেবা” (উপহার) বলা হয়।

“হেবা” হলো সেই সম্পদ যা একজন মানুষ জীবিত থাকতেই বন্টন এর হিসাব নির্ধারণ করে দেয় । মা/বাবা তার সম্পদ সন্তানদের মধ্যে “হেবা”-র মাধ্যমে তার ইচ্ছেমত বন্টন করতে পারবেন। কিন্তু, “হেবা” করার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে – কিছুতেই যেন কোন সন্তানের উপর যুলুম করার উদ্দেশ্যে বা তাকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে “হেবা” করা না হয়। “হেবা”র উদ্দেশ্য হতে হবে ঐ পরিবারের বিশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী সম্পদের সুষম বন্টন – যাতে মা/বাবার মৃত্যুর পর ভাই-বোনদের মধ্যে ঝগড়া-ঝাঁটি না হয়।

ইসলামের বেশীরভাগ বিধানই কুরআনে শুধু হুকুম করা হয়েছে, আর কিভাবে তা পালন করতে হবে তার বিস্তারিত বলা আছে হাদিসে। এক্ষেত্রে, উত্তরাধিকার আইন অনেকটাই ব্যতিক্রম। সূরা নিসার ১১, ১২ ও ১৭৬ – মাত্র এই তিনটি আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ উত্তরাধিকার আইন বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। এই তিনটি আয়াতের অর্থ পড়ুন, তাফসীর পড়ুন – ইসলামের উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাবেন ইনশা আল্লাহ্‌।

(লেখাটি আমি লিখেছি শেইখ আব্দুর রাকিবের “মীরাছ – উত্তরাধিকারের বিধান” লেকচার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। এখানে আমি মিরাস ও হেবা সম্পর্কে খুব সাধারণ একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি, কোনভাবেই এগুলোকে “ফাইনাল ওয়ার্ডস” হিসাবে ধরে নিবেন না। আপনার স্পেইসিফিক কেইসে কি হবে তা জানার জন্য একজন অভিজ্ঞ মুফতি বা আইনজীবির পরামর্শ নিন।)

লেখকের ব্লগ: http://adnanfaisal.wordpress.com
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৩৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×