somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্কুল এবং বন্ধুরা

২১ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাবছি আজ ছোটবেলার বন্ধুদের কথা একটু স্মরণ করি। আমার প্রথম স্কুল ছিল "ওয়েসিস কিন্ডার গার্টেন"। ক্লাস "নার্সারি" তে সেখানে ভর্তি হই। তখন আমার বন্ধু ছিল শোভন (শজারু), অপু। তখন থেকেই ক্লাসে আমার রোল এক। তাই টিচার স্টুডেন্ট সবার কাছেই একটু অন্য সমাদর পেতাম। একবার মনে আছে শোভন এক জোড়া কেড্‌স পড়ে ক্লাসে এল। ওই কেড্‌স এর দুই পা দুই রকম। এক পায়ে একটি মিউজিক বাজার যন্ত্র আছে, সুইচ টিপলে তা বাজে। ওই দিন ক্লাসে কিছুক্ষন পর পরই আমরা মিউজিক বাজাতে থাকলাম। অনেক মজা পেয়েছিলাম। পরে আম্মুকে বললাম আমাকেও অই রকম জুতা কিনে দিতে হবে। অনেক খুঁজে পেতে শেষ পর্যন্ত ওই রকম কেড্‌স কিনলাম কিন্তু তাতে মিউজিক ছিলনা, ছিল একটি কম্পাস। ওই জুতা পড়ে আমার সে কি গর্ব...ক্লাস ফোর পর্যন্ত ওই স্কুলে পড়েছি। এবং শেষ পর্যন্ত রোল এক নিয়েই স্কুল ছেড়েছি।
আমার দ্বিতীয় স্কুলের নাম "মুছাপুর দক্ষিন পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়"। ক্লাস ফাইভ এ সরকারি স্কুলে যাওয়ার কারণ ছিল সরকারি বৃত্তি দেয়া। কারণ তখন বেসরকারি স্কুল থেকে বৃত্তি দেয়া যেতনা। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আমার নানা। তাই সেখানেও অন্য রকম আদর পেয়েছি সব টিচারদের ক্লাস থেকে। ওই বছর বৃত্তি পরীক্ষায় আমি ১০ নম্বর এর একটি অঙ্ক ভুল করি। ভেবেছিলাম বৃত্তি পাবনা। অঙ্ক যে ভুল হয়েছে তা ভয়ে আব্বুকে বলিনি। শেষ পর্যন্ত সধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেলাম। পরে আক্ষেপ হল যদি অঙ্কটা না ভুল করতাম তাহলে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেতাম।
ক্লাস সিক্স এ ভর্তি হলাম "গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়"। হাই স্কুল নতুন আনন্দ। স্কুলের প্রথম ক্লাসেই আমার বন্ধু হল সাব্বির। ও ক্লাসের দরজায় দাড়িয়ে তেতুলের আচার খাচ্ছিল। আমাকেও শাধল। আমি খেলাম। তারপর থেকেই আমরা দুজন বন্ধু। খুব ভাল বন্ধু। প্রতিদিন আমরা সেই তেতুলের আচার খেতাম। পরে আর বন্ধু হল লিমন (আমরা ডাকতাম লেমন), হিমেল, রিফাত, আনিস এবং আরো অনেকে। প্রতিদিন বাসা থেকে দুই টাকা দিত। সেইটা দিয়ে চটপটি বা আচার বা আইস্ক্রিম খেতাম। তখন বস্তা আইসক্রিম নামে এক ধরনের সেকারিন পানি পাওয়া যেত। বস্তা শেপ এর। সেই আইসক্রীম অনেক খেয়েছি। তখন অনেক মজা লাগত। এখন হাসি পায়। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে সেই দিনে ফিরে যাই। ক্লাস সিক্স এর বছর ছিল আমার জীবনের একটা শ্রেষ্ঠ বছর। কিন্তু তখন সেটা বুঝি নি ঠিকমত। তখন মনে হত কেন বড় হই না। বড় হলে আরো মজা হত। আর এখন অঞ্জন দত্তের মত মনে হয় "তখন তো বুঝি নি বড় হওয়া বড়ই শক্ত, বয়সের সাথে সাথে কমে যায় চোখের জল"- আসলেই তাই। মনে হয় চোখের জল শুকিয়েই গেছে।
ক্লাস সিক্স এ আমার বন্ধু শজারু শোভন এর সাথে আবার দেখা হয় কোচিং সেন্টার এ। কোচিং এর ছাত্র আমরা মাত্র দুই জন। শোভন এর মাধ্যমেই আমার গল্পের বই পড়ার হাতেখড়ি। আমার প্রথম পড়া বই তিন গোয়েন্দা সিরিজ এর "নেকড়েমানব"। পড়ি আর শিহড়িত হই। শোভন এর কাছে আরো বই চাই। কিন্তু ওর কাছে বেশি বই ছিল না। তখন ও বলল যে ওর পরিচিত এক ছেলের কাছে অনেক বই আছে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেবে। এক বৃষ্টির দিনে আমরা সেই ছেলের বাসায় গেলাম। আর আমার সাথে পরিচয় হল আমার খুব কাছের এক বন্ধু "রাশেদ' এর সাথে। রাশেদ এর তখন বিশাল এক ওয়্যারড্রব এর এক ড্রয়্যার বই। প্রায় দুই-তিনশ বই হবে। দেখে তো আমার চোখ বড় বড়। ওই বইগুলা রাশেদ ওর বোনের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। কিন্তু রাশেদ এর কাছে সিরিজ এর নতুন বই এর কালেকশন তেমন নাই। আমি তখন কয়েকটা নতুন বই কিনেছি। তার একেকটা বই এর বিনিময়ে আমি রাশেদ এর কাছ থেকে ৮-১০টা করে বই নেই। রাশেদ এর কিচ্ছু করার ছিল না। এখন সেই কথাগুলো মনে পড়লে হাসি পায়। তখন রাশেদ এর সাথে আমার অনেক ঘনিষ্ঠতা হয়। রাশেদ এর বাসার নিয়মিত হই আমি। শুধু বই এর লোভে না। লোভ আরেকটা ছিল। তা হল রাশেদ এর টিভি গেম। তখন ওর বাসায় নিয়ম করে মারিয়ো খেলতাম। কখনো ও মারিয়ো আমি লুইজি, কখনো ও লুইজি আমি মারিয়ো। এর মধ্যে শজারু কোচিং ছেড়ে গেল। রাশেদ আমার সাথে সেই কোচিং এ ভর্তি হল। অনেক মজা হয়েছে তখন। রাশেদ তখন পড়ত "রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল" এ। তবে দুইজন দুই স্কুল এ থাকলেও বন্ধুত্ত্বে কোন সমস্যা হয়নি। সেবার ক্লাস সিক্স এও গরীবে নেওয়াজ স্কুলের ছেলেদের মধ্যে প্রথম হই। আর পুরো ছেলে মেয়ে মিলিয়ে চতুর্থ। কিন্তু গরীবে নেওয়াজ স্কুলে আর থাকা হয়নি। সেভেনে চলে যেতে হয় অন্য স্কুল এ। সে কাহিনী আরেকদিন লিখব। আপাতত আজ এই পর্যন্ত।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×