somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্কুল এবং বন্ধুরা ২

২১ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল আমার ক্লাস সিক্স পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা লিখেছিলাম। তবে খেয়াল করে দেখলাম যে ক্লাস ফাইভ এ পড়ার সময়ের তেমন কোন কথাই আমার লেখায় আসেনি। পরে বুঝলাম যে, আমার ক্লাস ফাইভ এর কোন বন্ধুর নাম মনে নেই!!!
কেন মনে নেই তা পরে বুঝলাম। আমার যে দুজন ছোটবেলার বন্ধুর কথা আমি বলেছি শোভন এবং অপু, তাদের সাথে আমার এখনও যোগাযোগ আছে। কিন্তু আমার গ্রামের সেই বন্ধুগুলোর কারো সাথেই আমার আর যোগাযোর হয়নি। সেই একটি বছর তাদের সাথে কাটিয়ে এখন তাদের নাম মনে করতে পারছিনা। আমি নিজের কাছেই অনেক লজ্জিত। ক্লাস ফাইভ এর বছর আমার জন্য অনেক গুরুত্ত্বপূর্ণ একটি বছর ছিল। কারণ এর আগে আমি ছিলাম শহরের পুতুল পুতুল ছেলে। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতাম, পরিষ্কার কাপড় পরতাম, ভালো ছাত্র ইত্যাদি। কিন্তু ওই একটি বছর যে আমি কত পরিবর্তিত হয়েছিলাম তা বলে শেষ করা যাবে না। বন্ধুদের সহায়তায় সাইকেল চালানো শিখেছি, গাছে চড়েছি, বুনো ফল খেয়েছি, কত দূরে দূরে যে চলে গিয়েছি তা নিজেও জানি না। একেকদিন টিফিন এর সময় আমাদের অভিযান শুরু হত। এক-দেড় ঘন্টায় শেষ হত সেই অভিযান। আমি তাদের সাথে থাকতাম, তারা আমাকে নানান জিনিস চেনাত, কোনটা কি তা বুঝাত, আরো কত কি!!!
কয়েকটি মজার ঘটনা বলি। একবার এক বন্ধুর সাইকেল দিয়ে সাইকেল চালানো শিখছি, ওরা আমাকে পেছন থেকে ধরে রেখেছে, আমি প্যাডেল ঘুড়াচ্ছি। কিন্তু কখন যে ওরা সাইকেল পেছন থেকে ছেড়ে দিয়েছে আমি জানি না। হঠাৎ সামনে দেখি আমার ক্লাসের মেয়েরা এক্কা দোক্কা খেলছে। আমি ওদের কাছে পৌঁছে গেছি আর চিৎকার করছি "সাইকেল থামা, সাইকেল থামা"। কিন্তু আমার পেছনে তো কেউ নাই । কে থামাবে? আমি ব্রেক করতে পারিনা। দিলাম ক্লাসের এক মেয়ের গায়ে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা। ওই ব্যাচারী অনেক ব্যথা পেল। অনেক কান্নাকাটি করল। একমাত্র হেড-মাষ্টার এর নাতি দেখে ছাড় পেয়ে গেলাম। পরে সেই মেয়েকে এক পাতা নাপা কিনে দিয়েছিলাম।
আরেকবার এক বন্ধু এসে বলল "বান্দরশলা চিনিস?" আমি বলি "না"। পরে সে আমাকে বান্দরশলা এনে দেয়। বলে এইগুলা কারো গায়ে দিবি আর ওরা চুলকাতে চুলকাতে পাগল হয়ে যাবে। তখন ক্লাসে দুইটা ভাগ। ছেলেরা এক দল। মেয়েরা এক দল। আসলে ওই বন্ধু চাচ্ছিল আমাকে দিয়ে মেয়েগুলাকে একটু শায়েস্তা করতে। কারণ তারা যদি ধরা খায় তাহলে হেব্বি পিটুনি আছে। আর আমি ধরা খাইলে কোন সমস্যা নাই। আমি তখন তো অত বুঝি নাই। ওদের কথা মত মেয়েদের পাশে গিয়ে কাগজ খুলে দিলাম ফুঃ। আর তার কিছুক্ষন পর দেখি জাদু শুরু হয়েছে। সব মেয়েরা চুলকানো শুরু করেছে। তবে বান্দরশলা তো মালিক মানে না, তাই কিছু উড়ে এসে আমাদের গায়েও আশ্রয় নিয়েছিল। তাই চুলকানির জাদু আমাদেরো ছাড় দেয়নি। সেইদিন চুলকানির জ্বালায় আমাদের ক্লাস করা হয়নি। তবে আনন্দের বিষয় ছিল কেউই ধরা খায়নি।
সেই বান্দরশলা নিয়ে কত কাহিনী...ক্লাসে একটাই হিন্দু ছেলে ছিল আমরা তাকে বান্দরশলা দিয়ে কালেমা পড়িয়েছিলাম। আমরা ভাবলাম কি পূণ্যের কাজ করে ফেলেছি। তখন শুনেছিলাম কেউ যদি অন্য ধর্মের কাউকে মুসলিম বানায় তাহলে বেহেশতে যাবে। আমরা তো ভাবলাম আমাদের বেহেশত নিশ্চিত। হাহাহা...
সেই ক্লাসের এখন দুইটা মেয়ের নাম শুধু মনে আছে। একজন হল খালেদা (বেগম খালেদা জিয়ার সাথে মিল থাকায়), আর আরেক জন হালিমা (যে এখন আমার মামী)। এছাড়া আর কারো নামই আমার মনে নাই। আমার ক্লাস ফাইভ এর সকল বন্ধুদের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি। হয়তো তোদের সাথে কখনো দেখা হবে না। তবে তোরা সবসময় ভালো থাকিস।
ক্লাস সিক্সের একটা ঘটনা ভুলে গিয়েছিলাম। একবার ৩-৪টা তেলাপোকা ধরে একটা ব্রাউন পেপারে মুড়িয়ে ক্লাসে নিয়ে গেছি। ক্লাসে ছিল আনিস নামের বিশাল এক ছাত্র। তখন মনে হত "আলিফ লায়লার" দৈত্য। যাই হোক আনিসকে বললাম যে ওর জন্য গিফট এনেছি। ও তো খুশি হয়ে গিফট খুলল। আর তখন সব তেলাপোকা আনিস এর গা বেয়ে উঠতে লাগল। আর তার সে কি চিৎকার!! আমাদের তো হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গিয়েছিল।
আরেকবার ক্লাসের সব ছেলেদের মাথায় কি এক ভূত চাপল। হাতের চামড়া চুষতে থাকলে রক্ত জমাট বেধে জায়গাটা লাল হয়ে যায়। আমরা হঠাৎ এক খেলা শুরু করলাম যে কে কার চেয়ে বেশি লাল করতে পারে। যেই বলা সেই কাজ নিজেই নিজের হাতের চামড়া চুষছি আর দেখছি কতটা লাল হয়েছে। আমাদের এক ম্যাডাম ছিল নাম নীলিমা। তিনি এসে আমাদের এই অবস্থা দেখে তো রেগে কাঁই। ক্লাসের সব ছেলেদেরকে একচেটিয়া মার দিলেন। পুরো বছরে ম্যাডাম এর হাতে একবারি মার খেয়েছি তাও সেই দুষ্টামির জন্য। ম্যাডাম আমাকে অনেক আদর করতেন। আমি ক্লাস সেভেনে স্কুল ছেড়ে যাওয়ার পর ম্যাডাম নাকি কয়েকবার এসে আমাকে খুঁজেছিলেন। পরে ম্যাডাম সেই স্কুল ছেড়ে বিদেশ চলে যান। আমার সাথে ম্যাডাম এর আর দেখা হয়নি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×