somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোযা

০৩ রা আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আত্মসংযম আর আত্মশুদ্ধির কষ্টিপাথরে নিজেকে যাচাই করার ও বিশুদ্ধ করার সুবর্ণ সব সুযোগে ভরা মাস রমজান ৷ বেহেশতি সৌরভ ও খোদা প্রেমের ফুলেল জলসার এই মাস মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্যে সবচেয়ে বড়...আত্মসংযম আর আত্মশুদ্ধির কষ্টিপাথরে নিজেকে যাচাই করার ও বিশুদ্ধ করার সুবর্ণ সব সুযোগে ভরা মাস রমজান ৷ বেহেশতি সৌরভ ও খোদা প্রেমের ফুলেল জলসার এই মাস মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্যে সবচেয়ে বড় রহমতের উৎসব ৷


মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী (রহঃ) যেমনটি বলেছেন, সত্যের সুগন্ধি শীতল সমীর এ সময় নিয়ে আসে ঐশী পাঠ অপূর্ব এ উপহার থেকে সন্তর্পনে যতো পারো করে যাও লুটপাট। রহমতের সমীরণ এসে আবার চলে যায় যাকে ইচ্ছে তাকে সে প্রাণবায়ু দিয়ে যায় আবার এসেছে আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ প্রস্তুতি নাও হে গোলাম,করো অবগাহন। হিজরী পঞ্জিকার বারোটি মাসের মধ্যে নবম মাসের নাম রমযান।


নবীজি বলেছেন,রজব মাস হচ্ছে আল্লাহর মাস, শাবান মাস হচ্ছে আমার মাস আর রমজান মাস হচ্ছে আমার উম্মতের মাস। এ মাসটিকে উম্মতের মাস হিসেবে ঘোষণা করলেও আল্লাহর কাছে এ মাসটির মর্যাদা অসামান্য । মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আস সাওমু লি, অ-আনা আজযি বিহী' অর্থাৎ ‘রোযা আমারই জন্য এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান দেবো।' পরকালে তিনি কী পুরস্কার দেবেন তার কিছুটা ইঙ্গিত নবী করিম (সাঃ) আমাদের দিয়েছেন। রাসূলে খোদা বলেছেন, "রমযান এমন একটি মাস যে মাসে আল্লাহ তোমাদের জন্যে রোযা রাখাকে ফরজ করে দিয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় রোযা রাখবে, তার জন্যে রোযার সেই দিনটি হবে এমন যেন সবেমাত্র সে মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে, অর্থাৎ রোযাদার তার সকল গুণাহ থেকে মুক্তি পেয়ে নিষ্পাপ শিশুটির মতো হয়ে যাবে।" রাসূল (সাঃ) আরও বলেছেন, "তুমি যদি চাও তোমার বুকের ভেতরের অশান্তি কমে যাক তাহলে রমযানের রোযা এবং প্রতিমাসে তিনটি করে রোযা রাখো।" অন্য এক হাদিসে আছে, রাসুলেখোদা বলেছেন, "রোযা রেখে অটুট স্বাস্থ্যের অধিকারী হও।" এর মানে হচ্ছে, রোযা রাখলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে। কোন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় না। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ)ও বলেছেন, "প্রতিমাসে তিনটি রোযা এবং রমযান মাসের রোযা বুকের ভেতরকার জটিলতা এবং পেরেশানীগুলো দূর করে দেয়।"


রোযা থাকা অবস্থায় কমপক্ষে ১৫ ঘন্টা যাবতীয় খানাপিনা বন্ধ থাকে। এ সময় পাকস্থলী, অন্ত্রনালী, যকৃত, হৃদপিন্ডসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়। তখন এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিজেদের পুনর্গঠনে নিয়োজিত হতে পারে। অন্যদিকে দেহে যেসব চর্বি জমে শরীরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেগুলো রোযার সময় দেহের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য ছুটে যায়। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী তার "সুপিরিয়র নিউট্রিশন" গ্রন্থে ডা. শেলটন বলেছেন, উপবাসকালে শরীরের মধ্যকার প্রোটিন, চর্বি, শর্করা জাতীয় পদার্থগুলো স্বয়ং পাচিত হয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলোর পুষ্টি বিধান হয়। সত্যি বলতে কী, দেহ এবং আত্মার ওপরে প্রভাব সৃষ্টিকারী এই রোযার উপকারীতা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বহু আগেই প্রমাণ করেছে।


আল্লাহ যেহেতু আমাদের জন্যে এই বিধানটি দিয়েছেন, ফলে এতে যে অবশ্যই কল্যাণ নিহিত থাকবে-তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশই নেই। রোযা বা উপবাসের মধ্যে শারীরিক কী কী কল্যাণ রয়েছে সে সম্পর্কে আরও কয়েকজন চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতামত জানা যাক : নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ঔষুধ ও শল্য চিকিৎসার প্রখ্যাত ডাঃ অ্যালেকসিস বলেছেন, উপবাসের মাধ্যমে লিভার রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয় ফলে ত্বকের নিচে সঞ্চিত চর্বি, পেশীর প্রোটিন, গ্রন্থিসমূহ এবং লিভারে কোষসমূহ আন্দোলিত হয়। আভ্যন্তরীণ দেহ যন্ত্রগুলোর সংরক্ষণ এবং হ্নদপিণ্ডের নিরাপত্তার জন্য অন্য দেহাংশগুলোর বিক্রিয়া বন্ধ রাখে। খাদ্যাভাব কিংবা আরাম-আয়েশের জন্য মানুষের শরীরের যে ক্ষতি হয়, রোজা তা পূরণ করে দেয়।" ডাঃ আইজাক জেনিংস বলেছেন, " যারা আলস্য ও গোড়ামীর কারণে এবং অতিভোজনের কারণে নিজেদের সংরক্ষিত জীবনী শক্তিকে ভারাক্রান্ত করে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়, রোযা তাদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করে।" বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী নাষ্টবারনার বলেন, "ফুসফুসের কাশি, কঠিন কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কয়েকদিনের রোযার কারণেই নিরাময় হয়।" ডাক্তার দেওয়ান এ,কে,এম, আব্দুর রহীম বলেছেন, "রোযাব্রত পালনের কারণে মস্তিস্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র সর্বাধিক উজ্জীবিত হয়। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ডা. আব্রাহাম জে হেনরি রোযা সম্পর্কে বলেছেন, "রোযা হলো পরমহিতৈষী ওষুধ বিশেষ। কারণ রোযা পালনের ফলে বাতরোগ, বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে মানুষ কম আক্রান্ত হয়।" পাকিস্তানের প্রখ্যাত প্রবীণ চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ হোসেনও একই ধরনের কথা বলেছেন। তারমতে, "যারা নিয়মিত রোজা পালনে অভ্যস্ত সাধারণত তারা বাতরোগ, বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত কম হন।" চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. ক্লাইভ বলেন, "রোযার বিধান স্বাস্থ্যসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত । সেহেতু ভারত, জাপান, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ নাইজেরিয়াতে অন্যসব এলাকার তূলনায় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় রোগ ব্যাধি অনেক কম দেখা যায়।" এভাবে বিশ্বের অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানী রোযার উপকারিতা বর্ণনা করেছেন।


গবেষণায় দেখা গেছে, রোযাদার ব্যক্তি ধুমপান না করার কারণে ফুসফুস রোগমুক্ত থাকে। পেপটিক আলসারের রোগীরা রোযা রাখলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্যও রোযা উপকারী। ডাক্তারদের মতে, রোযার ফলে মস্তিষ্কের সেরিবেলাম ও লিমরিক সিস্টেমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ার কারণে মনের অশান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর হয়-যা উচ্চ রক্তচাপের জন্য মঙ্গলজনক। বহুমূত্র রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে রোযা খুব উপকারী। ডাক্তারী পরীক্ষায় দেখা গেছে, একাধারে ১৫ দিন রোযা রাখলে বহুমূত্র রোগের অত্যন্ত উপকার হয়। রোযা চর্মরোগের জন্যও খুবই উপকারি। পুষ্টির সঙ্গে চর্মরোগের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। তাই চর্ম রোগের কিংবা ত্বকের উপর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় রোযা খুবই কার্যকর পদ্ধতি। কিডনী সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা রোযা রাখলে এ সমস্যা আরো বেড়ে যাবে ভেবে রোযা রাখতে চান না। অথচ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোযা রাখলে কিডনীতে সঞ্চিত পাথর কণা ও চুন দূরীভূত হয়। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, সারা বছর অতিভোজ, অখাদ্য, কুখাদ্য, ভেজাল খাদ্য খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে যে জৈব বিষ জমা হয় তা দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এক মাস রোজা পালনের ফলে তা সহজেই দূরীভূত হয়ে যায়।


কোরআন, হাদিস এবং আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে বলা যায়, রোযা হচ্ছে মুসলমানদের জন্য এক বিরাট রহমত এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনন্য নেয়ামত স্বরূপ। রোযার গুরুত্ব সম্পর্কে হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (রহঃ) বলেছেন, "রোযা শ্রেষ্ঠ পুণ্যের কাজ। কেননা রোযা সুপ্রবৃত্তিকে সবল এবং কুপ্রবৃত্তিকে দুর্বল করে দেয়। আত্মার পরিচ্ছন্নতা এবং প্রবৃত্তিকে দমন করে রাখার জন্য রোযার ন্যায় কার্যকর অস্ত্র আর কিছুই নেই।" পরিশেষে কবি ফজলে খোদার ভাষায় বলতে চাই- হে রমজান,হে রমজান! দাও স্বস্তি দাও শান্তি ধরণীকে করো মনোরম, তোমারে হেরিয়া বিশ্ব-বিবেক সংযম হোক দুর্দম ৷

[Collected]
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×