somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সামছা আকিদা জাহান
কতগুলি প্রশ্ন আমাকে ছেলেবেলা থেকেই চিন্তান্বিত করেছে, এগুলোর উত্তর আমি বহু জায়গায় খুঁজেছি, কিন্তু বৎসর বৎসর চলে যায় মেলেনি উত্তর

স্বপ্ন--দুস্বপ্ন এবং মুক্তির আনন্দ---

২৭ শে অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


----------------বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুনতে পাচ্ছি বাবা ডাকছে। মামনি, মা-আ-আ মনি--ই--ই। ইচ্ছে করেই জবাব দিছি না। এই তো বাবা করিডোর ধরে হেঁটে আসছে । এক্ষুনি আমার ঘরের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকবে। আমি তারই প্রতিক্ষায়।

কিন্তু কোন শব্দই তো শুনতে পাচ্ছি না। হঠাৎ কপালে বাবার হাতের স্পর্শ। বাবার ভারি গরম হাত। আমি হাসি মুখে একরাশ আনন্দ নিয়ে আমার হাতটা কপালে নিয়ে গেলাম, বাবার হাত ধরবো বলে। কপালে আমার নিজের হাতের স্পর্শেই চমকে তাকালাম। গভীর রাত। এক বুক কষ্ট নিয়ে ঘড়ি দেখলাম, রাত দুটো। কোথাও কেউ জেগে নেই। এত বাস্তব স্বপ্ন হয়??? নিজের উপরেই রাগ হল। কেন যে বাবাকে ধরতে গেলাম? তা না হলে বাবাকে আরও কিছুক্ষন কাছে পেতাম। বাবাকে মনে করে দু‘চোখ ভরে গেল পানিতে। বাবা তো কখনই আসবে না। এখনও আমার কপালটায় গরম এক স্পর্শের অনুভুতি বিরাজ করছে। সারাটা রাত চলে গেল আর ঘুম এলো না।
------------------------------------------------------------
-------------------------------------------------------------------------------
-----------মোবাইল ফোন মাথার কাছে বাজছে, আমি ফোন ধরলাম, ‘হ্যালো’ বলবার সাথে সাথে অপরপ্রান্ত থেকে আমাকে কে যেন বললেন --কখন থেকে ল্যান্ড ফোন বেজে যাচ্ছে ফোন ধরছ না কেন?-- সত্যিই সত্যিই তো ল্যান্ড ফোন বাজছে। খুব বিরক্ত হলাম, বাসায় এত মানুষ, কেউ ফোন ধরছে না কেন? মোবাইলটা বিছানায় রেখে ল্যান্ড ফোনের কাছে গেলাম। কি তীব্র স্বরে ওটা বেজে চলছে?! --আমার সমস্ত অনুভূতি বলছে ‘বাবার ঘরে ল্যান্ড ফোন বাজছে’। ফোনএর রিসিভার তুললাম । কানে এসে লাগলো সুস্পষ্ট ডায়াল টোন। ফোন রেখে বিছানার দিকে যাচ্ছি, আমার কানে কানে কে যেন বলল--যেয়ো না আবার ও ফোন আসবে। আমি ফোনের পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। ফোন বাজে না। কতক্ষন জানি না । বিছানা থেকে ও ডাকলো --- এই ওখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? শোবে না? বললাম ---ফোন আসবে?
--কে বললো?
-- এতক্ষন ফোন বাজলো কেউতো ধরলে না লাইন কেটে গেছে । আবার রিং হবে।
--কে বললো ফোন বেজেছে?
--আমি শুনেছি। --মোবাইলে কল করে বললো ল্যান্ড ফোনে রিং হচ্ছে ।
--মোবাইল ??? তোমার মোবাইল না নিচে রেখে এসেছ । চার্জে দেয়া আছে।
তাই তো, সম্বিত ফিরে পেলাম। এখন বাজে রাত তিনটা। কিছুই বুঝলাম না। আমি আমার ঘরে আমার ল্যান্ড ফোনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি হতভম্বের মত। এটা কি হল??---------

এই হল শুরু। এরপর প্রায় প্রতিটি রাত কেটে যেতে লাগলো বিভিন্ন ধরনের স্বপ্ন জনিত হ্যালুসিনেসনে। এক পর্যায়ে এসে মনে হল, আমি কি পাগল হয়ে যাব নাকি ধীরে ধীরে?

স্বপ্নগুলি পরিবর্তিত হতে থাকল। কখনও আনন্দ নিয়ে কখনও বেদনা নিয়ে আসতো। তবে যাই আসতো তা আমার সাথে দীর্ঘক্ষন থাকতো এবং সারা রাতের ঘুম নষ্ট করে দিয়ে যেতো।

এরপর স্বপ্নের তৃতীয় পর্ব। আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে দুর্ঘটনার স্বপ্নগুলি দেখতে শুরু করি। আমি যেন দুর্ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত থাকি। সেখানে আমি অনেক কেই নিষেধ করি কিন্তু তারা আমার কথা শুনে না। তারা যেয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয় অথচ আমার কিছুই হয় না। তাদের আর্তচিৎকার আমি নির্বিকার চিত্তে শুনি। তাদের ক্ষত বিক্ষত দেহ আমাকে মোটেই বিচলিত করে না।

এবারে আমার স্বপ্নে আসতে শুরু করলো ভয়ংকর দর্শন সব প্রেতাত্মারা। তারা আমার সাথে প্রথম প্রথম লুকোচুরি খেলতো। আমি খুব ভয় পেতাম। পরে কি কারনে যেন তারা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। হয়ত আমি ভয় পেতাম তা তাদের পছন্দ নয়। আমি দৌড়াতাম। ওদের হাত থেকে পালাতে চাইতাম। কিন্তু পারতাম না । তারা আমাকে ধরে ফেলতো।

স্বপ্নের এই পর্যায় এতই ভয়াবহ ছিল যে আমি যেদিন একা বাসায় থাকি সেদিন সারারাত জেগে জেগে ইন্টানেটে ঘুরাঘুরি করতাম। এক মুহুর্তের জন্যও বিছানায় যেতাম না।


সিদ্ধান্ত নিলাম কোন এক মনোচিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবো। কিন্তু যেতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমি কি সত্যিই বিনা কারনে পাগল হয়ে যাব।
একজন কলিগ এক ফকিরের কথা বলেছিল। এখানেই থাকে, খুব কামেল লোক। ডাক্তারের কাছে যাবার আগে তার কাছে একবার যাই। গেলাম ও ।( সেই অভিজ্ঞতা আর একদিন বলবো। )

আমার ছোট বোন বললো মেডিটেশন করতে। এক ছুটির দুপুরে বিছানায় শুয়ে আছি। মনে মনে ভাবলাম আমি এই স্বপ্নের হাত থেকে মুক্তি চাই। আমি পাগল হতে চাই না।
সারা দিন মনে মনে জপলাম, "আমি যা দেখি তা আমার অবচেতন মনের কল্পনা। আমি আর এই সব স্বপ্ন দেখবো না। কিছুতেই না।" রাতে প্রচন্ড মানসিক শক্তি নিয়ে ঘুমাতে গেলাম। মনে মনে বললাম-- আজ কিছুতেই ভয় পার না । যাই দেখি তা স্বপ্ন, বাস্তব নয়। অল্প সময়ের মধ্যেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

ঘুমের মাঝেই আমার হঠাৎ মনে হল আমার পাশে কে যেন শুয়ে আছে। আমি চট করে মাথা ঘুরালাম। দেখি এক পোড়া লাশ। আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া লাশ সাদা দাঁত দেখা যাচ্ছে। এরই মাঝে আমার মনে হল --এ স্বপ্ন এ বাস্তব নয়। আমি ভয় পাব না। কিছুতেই না। আমি হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখি দেখবো এখানে কিছুই নেই। এই ভেবে আমি লাশের ঘাড়ে হাত রাখলাম। স্বপ্ন নয় এ বাস্তব। এটা একটা সত্যি কারের লাশ। প্রতি রাতে আমি পালাই আজ আর তা করলাম না । আমি প্রানপন শক্তি দিয়ে লাশের ঘাড় চেপে ধরে চিৎকার করে চললাম। লাশ আমাকে জোড়ে জোড়ে ঝাঁকি দিচ্ছে আর বলছে কি কি সব কিন্তু আমি প্রানপন চিৎকার করেই চলছি আর লাশ কে জোড়ে ধরে রেখেছি। আমার চিৎকারে পাশের ঘর থেকে বাচ্চারা ছুটে চলে এল। কাজের লোকজন সব আমার বিছানার চারপাশে। ঘরের লাইট জ্বলে উঠতেই দেখি আমি আমার বরের হাত শক্ত করে চেপে ধরে প্রানপনে চিৎকার করে চলেছি। আমার সম্বিত ফিরে আসতে আজ একটু দেরিই হল।

ব্লগার বন্ধুরা আমি এখন দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্ত। এই মুক্তির আনন্দ আমার কাছে রাজ্য জয়ের চেয়ে অনেক বড়।

এবারে সমাধান বলি। এই সমাধান আমি নিজেই বের করেছি। আমার এই দুঃস্বপ্নের কারন দুইটি ঔষধ। এ্যলার্জি জনিত কারনে আমার চোখ প্রচন্ড চুলকাতো । তাই আমাকে ডাক্তার প্রথমে দিয়েছিলেন ফ্যাক্স ১২০ প্রতি রাতে একটি করে এক মাস খেতে। এই ঔষধ চার/পাঁচ দিন খাবার পর থেকেই এই স্বপ্নের শুরু। এক মাস পরে অবস্থার উন্নতি না হবার কারনে ডাক্তার দিলেন লরেটিন ফাস্ট। সেটা দিন ১৫ খাবার পরে ডাক্তার আমাকে আবারও বদলিয়ে দিলেন টেল ফার্স্ট। শেষের ভয়াবহ স্বপ্নের কারন এই টেলফার্স্ট। আমি নিজেই হঠাৎ দিলাম ঔষধ বন্ধ করে । স্বপ্নেরাও উধাও। ডাক্তারকে যখন জিজ্ঞাসা করলাম --আমার স্বপ্নের সাথে ঔষধের কোন যোগাযোগ আছে কি না? উনি বললেন --হ্যাঁ অনেকের সমস্যা হয়। আপনার তো হয় নি। :| কাকে যে বকা দিব বুঝলাম না। X(( নিজেকে নাকি ডাক্তারকে? /:)
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×