(দুই)
আমেনা খালার বাসা মিরপুরের পাইক পাড়ায়। আমি বাসার ডোর বেল বাজানোর পর দরজা খুললেন একজন বয়স্ক লোক। রাশভারি চেহারা, মোটা গোপ কিন্তু দাড়ি নাই। জিজ্ঞেস করলেন
-কে আপনি?
- আমি কিশোর, ময়না ভাই আমাকে পাঠিয়েছে।
উনি বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুচকে বললেন
-ভিতরে আসো, কোথায় সেই গবেট? ফাজিলের ফাজিল!
আমি ড্রইং রুমের গিয়ে বসলাম, উনি বিড়বিড় করতে করতে ভিতরে চলে গেলেন। কিছুক্ষন পর আমেনা খালা আসলেন;
-কি ব্যাপার বলোতো বাবা। ময়না তোমাকে পাঠিয়েছে মানে কি? ওতো সবসময় নিজেই আসে।
- আসলে খবরটা যে কিভাবে বলি, ময়না ভাইকে গত বুধবার পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। আজ নয়দিন হলো। তিনি এখন কাশিমপুর কারাগারে।
-আশ্চর্য, বলো কি? তুমি নয়দিন পর আমার বাসায় আসলে, সাথে সাথে জানাওনি কেন?
-ময়না ভাই নিষেধ করেছিলো।
আমেনা খালা কিছু একটা ভেবে বল্লেন;
-রুস্তম উকিলের কাছে যেতে হবে। তুমি বসো আমি রেডি হয়ে আসি।
আমেনা খালা রুস্তম উকিলকে দিয়ে ময়না ভাইয়ের জামিন করালেন দুই দিনের মধ্যে। কোর্ট থেকে ময়না ভাই আর আমাকে নিয়ে সোজা বাসায় গেলেন।
আমি, ময়না ভাই আমেনা খালা আর খালু ভাত খেতে বসেছি, আমেনা খালা বললেন-
- ময়না, তোকে হাজতে হেবি মাইর দিছে তাই না?
- আরে না খালা, কি যে বলো!
- আচ্ছা শোন, কোটালিপাড়া থেকে শিংমাছ আনাইছিলাম, নতুন আলু দিয়ে ঝোল করেছি, ভালো করে খা, এতোদিন তোকে হাজতে কি না কি খাওয়াইছে। আহারে ‘মা’ মরা ছেলেটা আমার।
আমেনা খালা কাঁদছ.. !!
এমন সময় খালু মুখ খুল্লেন।
-দেখো ময়নাল, তুমি তোমার বজ্জাতি স্বভাবের চলা ফেরা বন্ধ না করলে এবাড়িতে আর আসবে না।
এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলছে-
-শোনো, এই ফাজিল ছেলের সাথে তুমি বেশি চলাফেরা করবা না। চিন্তা করে দেখো, আমি একটা মেয়ে দেখলাম ওর জন্য বিয়ের কথা-বার্তা পর্যন্ত ঠিক করলাম অথচ বিয়ের দুই দিন আগে গায়েব হয়ে গা ডাকা দিয়েছে। এক মাস পর ফিরে এসে বলে উনি বেনাপোল বর্ডারে গিয়েছিলো। ফাজিল কোথাকার।
-আহঃ ছেলেটা এতো বড় বিপদ থেকে বেরিয়ে আসছে, বাদ দাও না। আমেনা খালা বললেন।
এবার ময়না ভাই বললোঃ
- শোনো খালা আমি গত দুইদিন আগে রাতে জেলখানায় স্বপ্ন দেখলাম তুমি মারা গেছো, কিন্তু আমি জানি না, একমাস পরে তোমার বাসায় এসে দেখি খালু ভেউ ভেউ করে কাঁদছে, খালুর কান্না দেখে আমার কান্না না এসে হাসি পাচ্ছে !
এবার খালু খাওয়া থামিয়ে খালার দিকে তাকিয়ে বলছে-
-দেখলা কতো বড়ো মিথ্যুক, সব বানিয়ে বলছে, এমন বজ্জাত ছেলে আমি জীবনে দেখি নাই। মানুষের মৃত্যু নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করে। ফাজিল কোথাকার।
আমনে খালা বললো:
-ময়না তুই ঠিকই দেখেছিস, আমি মনে হয় বেশিদিন বাচবোনা রে। খালি 'করবি'কে নিয়ে চিন্তা হয়। ওর বিয়ে দিয়ে যেতে না পারলে আমি মরেও শান্তি পাবো না।
- 'করবি'কোথায় খালা ?
- কোথায় আর, নিজের রুমে বসে বসে সারাক্ষণ বই পড়তে থাকে, দেখ তুই যে হাজত খেটে এসেছিস একবারও এসেছে? বলি এতো বই পড়লে মানুষ পাগল হয়ে যায়। কে শোনে কার কথা।
করবি'র কথা ময়না ভাই আমাকে কোনদিন বলেনি.............।
(চলবে..................।)
ময়না ভাই (১ম)