somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুর মুখেও ভ্রাতৃত্ব... সোনালী দিনের ডায়েরী থেকে

২৬ শে জানুয়ারি, ২০০৮ ভোর ৫:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইয়ারমুক যুদ্ধের ময়দান।
বিশাল এ ময়দানের এক প্রান্তে ক্ষুদ্র মুসলিম সেনাদল আর অপর প্রান্তে রোমকদের বিশাল সৈন্যবাহিনী।
উভয় দলই ভয়াবহ এক যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। রোমক বাহিনী হঠাৎ মুসলমানদের উপর আক্রমণ করে বসল।
মুসলিম সেনাপতি হযরত সালামা। তিনি অত্যন্ত সাহসের সাথে রোমানদের তীব্র হামলা মোকাবিলা করলেন। কিন্তু শত্রুর তীরের অবিরাম আঘাতে তার গোটা দেহ হল জর্জরিত। তিনি ঘোড়ার পিঠ হতে মাটিতে গড়িয়ে পড়লেন। সালামার ঘোড়া যুদ্ধের ময়দানে ছুটাছুটি করছে দেখে দূর হতে ছুটে এলেন হুজাইফা। সালামাকে না দেখে তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন।
সালামার সন্ধানে এদিক-সেদিক ছুটছেন হুজাইফা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সালামার সন্ধান পাওয়া গেল। অবিরাম রক্তক্ষরণে সালামার দেহ প্রায় শীতল হয়ে পড়েছে। মৃতপ্রায় সালামার কণ্ঠও ক্ষীণ হয়ে এসেছে। তার শক্তিহীন দেহ হতে প্রাণ যেন বেরিয়ে যাবার উপক্রম হল। তারপরও খুব কষ্টে দু’ঠোট ফাঁক করে মুসলিম সৈন্যদের খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করলেন তিনি।
হুজাইফা জবাব দিলেন, আপনি শান্ত হউন।
আমাদের সেনারা রোমান আক্রমণ প্রতিহত করেছে। এবার প্রতিশোধ নেবার পালা।
একথা শুনে সালামার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এক অলৌকিক শক্তির জোরে হঠাৎ করে তিনি মাথা তুলে বসলেন। গায়ের শেষ শক্তিটুকু জড়ো করে সৈন্যদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললেন,
বন্ধুরা! অগ্রসর হও, সামনে এগিয়ে যাও।
সালামা আরো কিছু যেন বলতে চাইলেন। কিন্তু পারলেন না। কণ্ঠ তার থেমে গেল।
মুহূর্তেই তার শক্তিহীন দেহ গড়িয়ে পড়ল রক্তভেজা ইয়ারমুক ময়দানে।
সালামার অস্পষ্ট কণ্ঠে তার মুখ থেকে শুধু একটি শব্দ বেরুলো, ‘পানি।’
হুজাইফা তড়িঘড়ি খানিকটা পানি সংগ্রহ করে আনলেন। সালামা পানি পান করতে যাচ্ছিলেন।
এমন সময় দূর হতে ‘পানি’ ‘পানি’ শব্দ তার কানে ভেসে এল।
আহত সৈনিক হিশামের কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসছিল সেই শব্দ।
এই শব্দ শুনে সালামা আর পানি পান করতে পারলেন না। তিনি হুজাইফাকে ইশারা করে কাছে ডাকলেন এবং হাতের পানি হিশামকে দিয়ে দিতে বললেন।
হুজাইফা পানি নিয়ে অমনি দৌড়ে গেলেন হিশামের কাছে। তার মুখে পানি দিতে প্রস্তুতি নিলেন। এমন সময় অন্য আর একজনের কণ্ঠ ভেসে এল। তিনিও বলছেন, পানি-পানি।
হিশামের কানে এই শব্দ আসতেই তিনি হুজাইফাকে সেই পানি ফিরিয়ে দিলেন।
হুজাইফা বললেন, ওখানে দেখ। পানিটুকুন ঐ ভাইকে দিয়ে দাও।
হুজাইফা পানি নিয়ে ঐ ব্যক্তির নিকট যেতে না যেতেই সৈনিকটি শাহাদাত বরণ করল। তার মন ভরাক্রান্ত হল। তাই হুজাইফা পানি নিয়ে হিশামের নিকট ফিরে এলেন। কিন্তু হায়!
ততক্ষণে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন তিনিও।
তারপর তিনি ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে গেলেন সেনাপতি সালামার নিকট।
কিন্তু তিনিও ততক্ষণে এ দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে গেছেন।
সামান্য পানির পাত্রটি এখন হুজাইফার হাতে।
এতটুকুন পানি। অথচ তা পান করার মত এখন আর কেউ বেঁচে নেই। যাদের পানির প্রয়োজন ছিল তারা আরেক জনের পানির পিপাসা মেটাবার জন্য এতই পাগলপারা ছিল যে, অবশেষে কেউ আর সে পানি পান করতে পারল না। সবারই প্রাণ ছিল ওষ্ঠাগত। অসামান্য ভ্রাতৃত্ব ও প্রচণ্ড মমত্ববোধের কারণে সবাই একে অপরের জন্য পানি ফিরিয়ে দিয়েছে।
কি অপূর্ব এ ভ্রাতৃত্ব!
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×