somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশি গল্প : চুলার ওপর টাকা (আফগানিস্তানের রূপকথা)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিদেশি গল্প : চুলার ওপর টাকা
(আফগানিস্তানের রূপকথা)

অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক ছিল কৃষক। খুবই সৎ আর আল্লাহভীরু লোক ছিল সে। কিন্তু কিছুতেই সে তার সংসারের অবস্থার উন্নতি করতে পারছিল না। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতো। প্রতিটা পয়সা হিসাব করে খরচ করতো। কিন্তু তুবও দেখা যেত, একটা পয়সাও সে জমাতে পারছে না। সারাজীবন পরিশ্রম করেও তার মনে হলো আগে যেমন ছিল তার অবস্থা, এখনো তেমন আছে। কোনই উন্নতি হয়নি।
একদিন ফজরের নামাজ পড়ার সময় কৃষকটি সিজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করতে লাগলো, 'দয়াময় করুণাময়, তুমিই পার আমার অবস্থা বদলাতে। তুমি আমাদের ধন-দৌলত দাও। তুমি ছাড়া এই দুনিয়ার কারো কাছে চাইলেও আমি কিছু পাব না। আমার রান্না ঘরের চুলার ওপর তুমি আমাকে ধন-দৌলত দাও।'
এই মুনাজাত করে সামান্য কিছু নাস্তা খেয়ে প্রতিদিনের মতো সেদিনও সে কাজ করতে মাঠে চলে গেল। এক মনে কাজ করছে সে। হঠাৎ একটা কাঁটা গাছে তার কাপড় জড়িয়ে কাপড়টা ছিঁড়ে গেল। রাগে-দুঃখে তার কান্না আসতে লাগলো। এমনিই সে গরিব মানুষ। তার ওপর জামাটি ছিঁড়ে যাওয়ায় কষ্ট হওয়াটা ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। সে কোদাল চালিয়ে কাঁটা গাছটি শেকড় সুদ্ধ উপড়ে ফেলতে লাগলো। হঠাৎ কোন কিছুর সাথে তার কোদাল লেগে ঝন ঝন শব্দ ভেসে উঠলো। চাষি দেখলো একটা তামার কলস। তার ঢাকনা খুলে সে অবাক হয়ে গেল। রূপার টাকায় কলস পুরো ভরা। খুশিতে তার চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলো।
কিন্তু কয়েক মিনিট পর তার মনে পড়লো সে টাকা চেয়েছিল রান্না ঘরের চুলার ওপর। কিন্তু তা পাওয়া গেল মাঠের জমির নিচে। সে বললো, আমি এই টাকা নেব না। আল্লাহ যদি আমাকে টাকা দিতেই চান, তবে চুলার ওপরই দিতে হবে।
এরপর সে বাড়ি চলে গেল। কলসভর্তি টাকা সেখানেই পড়ে রইলো। বাড়িতে গিয়ে সে তার স্ত্রীকে সব কথা খুলে বললো। সে তো এসব কথা শুনে রেগে আগুন। বলে কি? এমন বোকাও আছে আল্লাহর দুনিয়ায়! কিন্তু সেই একই কথা।
কৃষক রাতে যখন ঘুমিয়ে পড়লো, তখন তার স্ত্রী তার এক প্রতিবেশীকে সব কথা জানিয়ে বললো, ‘আমার স্বামী তো দুনিয়ার সবচেয়ে বোকা মানুষ। এক কাজ কর, তুমি গিয়ে টাকাগুলো নিয়ে এসো। তোমার অর্ধেক, আমার অর্ধেক।’
প্রতিবেশী তো মহাখুশি। সে তক্ষুনি কোদাল আর শাবল নিয়ে সেখানে চলে গেল। কলসটি খুঁজে পেতে কোন সমস্যা হলো না। তবে কলসে সত্যি সত্যি রূপার টাকা আছে কি না, জানতে সে ঢাকনাটা খুললো। কিন্তু চমকে উঠলো, ভয়ে তার রক্ত জমে যেতে লাগলো। কলসটা যে কালো কালো বিষাক্ত সাপে ভরা! ফোস ফোস করছে। আরেকটু হলে তাকে কামড় দিয়েই ফেলতো। সে বুদ্ধি করে কলসটার মুখ বন্ধ করলো। তারপর ভাবতে লাগলো, মহিলাটি তো তাকে মেরে ফেলছিল। সে তো আমার শত্রু। নইলে এভাবে লোভ দেখিয়ে কাউকে সাপে ভর্তি কলসের দিকে পাঠায়! আরেকটু হলেই তো আমি মারা পড়তাম। এর প্রতিশোধ আমি নেবই।
এসব কিছু ভেবে সে সাপে ভর্তি কলসটাকে নিয়ে চুপি চুপি সেই কৃষকের বাড়ি গেল। তারপর আরো চুপি চুপি কারো টের পাওয়ার আগেই সে সাপভর্তি কলসটি চুলার ওপর ঢেলে দিল। ভাবলো, মহিলাটা তো সকালে চুলার কাছে আসবেই রান্না করতে। তখন কোন না কোন সাপ তাকে কামড়াবেই।
সকালে সেই কৃষক যথারীতি ফজরের নামাজ পড়বে বলে ওযু করার জন্য রান্না ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে সে দেখলো চুলার ওপর কি যেন চকচক করছে। কাছে গিয়ে দেখলো, একি! এ যে সব রূপার টাকা! সে তক্ষুনি সিজদায় পড়ে গেল। বললো, 'সবই আল্লাহ তোমার দয়া! তোমার কাছে হাজার শোকর। তোমার কাছে চুলার ওপর টাকা চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে তাই দিয়েছো!'
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:২৮
১৯টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×