somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত ব্যক্তির প্রতি করণীয়

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্ষণস্থায়ী সুন্দর এ পৃথিবী হতে প্রত্যেক প্রাণী মহান আল্লাহর দেয়া নির্দ্ধারিত সময় শেষ হবার পর তাঁর নিকট ফিরে যাওয়াই হলো মৃত্যু। মৃত্যুর অনিবার্যতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ মৃত্যুর লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠার সাথে সাথে মৃত্যুকালীন এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়ের জন্য জীবিত ব্যক্তির কিছু দায়িত্ব পালন অপরিহার্য।
মৃত্যুকালীন কর্তব্য ঃ কারো মৃত্যুর লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠলে তাকে ডান কাতে কেবলামুখী শয়ন করানো উচিৎ, তা সক্ষম না হলে শুধু মুখটা কেবলার দিকে রাখতে হবে। এ সময় কলেমার তালকীন (উচ্চ স্বরে পড়তে থাকা) করতে হবে এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিতে হবে। পার্থিব জীবনের এমন কোন কাজ বা কথা বলা যাবে না যদ্বারা তার মন দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কারো মুখ দিয়ে অযাচিত কথা বের হয়ে পড়লে সে দিকে ভ্র“ক্ষেপ না করে কলেমার তালকীন অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা ঐ সময় শয়তান ঈমান নষ্ট করার জন্য মানুষের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। কলেমা একবার উচ্চারণ করলে অধিকবার পাঠ করানোর জন্য পীড়াপীড়ি করা যাবে না। তার পাশে সূরা ইয়াসীন পাঠ করা মুস্তাহাব। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মৃত্যুমুখী লোককে “লা ইলাহা ইল্লাহ পাঠ করাও এবং তার পাশে বসে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত কর।’
মৃত্যুর পর ঃ ব্যক্তির মৃত্যুর পর উপস্থিত লোকেরা ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন’ পাঠ করবে। লোবান বা আগর বাতি জ্বালিয়ে দেয়া যেতে পারে। অতঃপর তার চক্ষুদ্বয় ‘বিসমিল্লাহে ওয়া আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লাহ’ বলে কোমল হস্তে বন্ধ করে দিতে হবে। হাত পা সোজা করে দিতে হবে। চেহারা সঠিক অবস্থায় থাকার জন্য রুমাল বা কাপড় দ্বারা থুতনি বেঁধে দিতে হবে। দুই পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিও এ সময় পরস্পর বেঁধে দেয়া উচিৎ। মৃত দেহ মাটি কিংবা চারপায়া খাটিয়ার উপর রাখা যাবে। অতিরিক্ত কাপড় খুলে চাদর দ্বারা শরীর ঢেকে দেয়া মুস্তাহাব। পুরুষ কিংবা মহিলা যাদের উপর গোসল ফরয তাদের মৃত ব্যক্তির নিকট থাকা ঠিক নয়। গোসল ও কাফন-দাফন দ্রুত সেরে নেয়া উচিৎ, বিলম্ব করা ঠিক নয়। আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের দ্রুত সংবাদ দেয়া উচিৎ, যাতে তারা যথাসময়ে জানাযায় উপস্থিত হতে পারে। গোসল দেয়ার পূর্বে মৃতের নিকট কুরআন শরীফ পাঠ বৈধ নয়।
কান্নাকাটি করা ঃ মৃতের জন্য উচ্চ স্বরে কান্না করা যাবে না। ধৈর্য অবলম্বনের মাধ্যমে নিজেকে সংযত রাখতে হবে এবং মৃত ব্যক্তির পরকালীন জীবনের প্রতিটি স্তর যাতে সহজ হয় তার জন্য দু’আ করতে হবে। উচ্চ স্বরে কান্নাকাটির জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ হতে শাস্তি রয়েছে বিধায় মহানবী (সা.) তা নিষেধ করেছেন।
গোসল দান ঃ সর্বাপেক্ষা অধিক নিকটবর্তী আত্মীয়ের গোসল দেওয়া উত্তম। মৃতকে কাঠের উপর শুইয়ে কাপড়গুলো খুলে নাভি হতে হাটু পর্যন্ত একটি চাদর দ্বারা ঢেকে দিতে হবে। গোসলদাতা হাত মোজা বা অন্য কোন কাপড় দুই হাতে পরে নিবে। মৃতকে প্রথমে কুলি এবং নাকে পানি দেয়া ব্যতীত অযু করাতে হবে। হালকা গরম পানিতে সম্ভব হলে কিছু বরৈ পাতা দিয়ে মৃত দেহকে ৩ বার ধৌত করানো উচিত। শেষ বারের গোসলে কর্পুর মিশ্রিত পানি ব্যবহার করা উত্তম। গোসলের পর মৃতের সর্বাঙ্গ শুকনা কাপড় দ্বারা মুছে দিতে হবে। কাফনের উপর মৃত দেহ রাখার সময় স্ত্রী লোকের মাথায় এবং পুরুষের মাথায় ও দাড়িতে আতর এবং কপাল, নাক, উভয় হাতের তালু , উভয় হাটু ও পায়ে কর্পুর লাগানো যেতে পারে। কাফনে আতর লাগানো এবং কানে তুলা দেয়া ঠিক নয়। চুল আচরানো, নখ ও চুল কাটা ঠিক নয়। স্ত্রী স্বামীকে গোসল দিতে এবং কাফন পরাতে পারবে। কিন্তু মৃত স্ত্রীকে স্বামী স্পর্শ করতে ও হাত লাগাতে পারবে না। কিন্তু দেখা বা কাপড়ের উপর দিয়ে হাত লাগানো যেতে পারে।
কাফন ঃ পুরুষের জন্য তিনখানা (যথা-ইযার, কোর্তা ও চাদর) এবং স্ত্রী লোকের জন্য পাঁচখানা (যথা- চাদর, কোর্তা, ইযার, ছেরবন্দ ও সিনাবন্দ) কাপড় দেওয়া সুন্নত। পুরুষের ইযার ও চাদর মাথা হতে পা পর্যন্ত এবং কোর্তা আস্তিন ও কল্লি ব্যতীত কাঁধ হতে পা পর্যন্ত হওয়া উচিৎ। মহিলার কোর্তা কাঁধ হতে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত সিনাবন্দ সিনা হতে নাভি বা হাটু পর্যন্ত, ছেরবন্দ তিন হাত দৈর্ঘ্য হবে, যার দ্বারা মাথার চুল বাঁধতে হয়। ইযার মাথা হতে পা পর্যন্তু এবং চাদর মাথা হতে পা পর্যন্ত হওয়া আবশ্যক। কাফনের জন্য সাদা রংয়ের সাধারণ কাপড় ব্যবহার করা উচিৎ। মহানবী (সা.) বলেছেন, “কাফনের জন্য অতি দামী কাপড় ব্যবহার করো না, কারণ তা সত্বর নষ্ট হয়ে যায়।” কাফন পরাবার পূর্বে তাতে তিনবার কিংবা পাঁচবার লোবান বা আগর বাতির ধুনি দেওয়া উচিৎ।
জানাযার নামায ঃ মৃত ব্যক্তির জন্য দু’আর উদ্দেশ্যে ফরযে কেফায়া জানাযার নামায আদায় করা হয়। মৃতের অলী হবার যোগ্য ব্যক্তি ইমামতির উপযুক্ত। অতঃপর যারা তাকে অনুমতি দেয়। জানাযার নামায আদায়ের জন্য ওয়াক্তের শর্ত নেই। জানাযার জামাত ছুটে যাবার আশংকা থাকলে তায়াম্মুম করে নামায পড়া যেতে পারে। নাপাক মুক্ত জুতা পায়ে নামায পড়া যায়। তবে খুলে নিয়ে জুতার উপর নামায পড়া উত্তম। কাফির বা মুরতাদ ব্যক্তির জানাযা বৈধ নয়। অনুরূপ ভাবে বিদ্রোহী মুসলমান বাদশাহ, ডাকাত যদি বিদ্রোহ কিংবা ডাকাতি অবস্থায় মারা যায়,তাদের জানাযা পড়া যাবে না। পিতা মাতার হন্তারক সন্তান যদি সাজা স্বরূপ মারা যায় তবে শাসনের উদ্দেশ্যে তার জানাযা পড়া যাবে না। ইচ্ছাপূর্বক আত্মহত্যাকারীর জানাযায় শীর্ষস্থানীয় আলেমদের উপস্থিতি বাঞ্চনীয় নয়। জানাযার পর পুনরায় মুনাজাত করার প্রয়োজন নেই।
জানাযা বহনের নিয়ম ঃ মৃত ব্যক্তিকে যথাশীঘ্র কবর স্থানে নিয়ে যাওয়া উচিত। জানাযা বহনকারীদের অযু থাকা বাঞ্চনীয়। জানাযার সাথে পায়ে চলা উত্তম, যানবাহনেও চলা যায়। বিনা প্রয়োজনে জানাযার আগে চলা এবং উচ্চ স্বরে দু’আ কালাম পড়া মাকরুহ।
দাফন করা ঃ কবরে লাশ রাখার সময় ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লাহ’ বলতে হবে। মাইয়্যেতকে ডান কাতে ক্বেবলামুখী করে শয়ন করিয়ে কাফনের বন্ধন খুলে দিতে হবে। কবরের উপরিভাগে বাঁশ বা কাঠ দ্বারা ঢাকার পর পরিমাণ মত চাটাই দিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে। উপস্থিত লোকেরা তিন মুষ্ঠি মাটি কবরে রাখবে। প্রথম মুষ্ঠি রাখার সময় বলবে ‘মিনহা খলাকনাকুম’, দ্বিতীয় মুষ্ঠির সময়ে বলবে ‘ওয়া ফীহা নুয়িদুকুম’, তৃতীয় মুষ্ঠির সময় বলতে হবে ‘ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা’। দাফনের পর মাথার দিকে সূরা বাকারার প্রথম তিন আয়াত এবং পায়ের দিকে দাড়িয়ে শেষের তিন আয়াত পাঠ করা মুস্তাহাব। মাটি দেয়ার পর কবরে পানি ছিটিয়ে দেওয়া, কোন তাজা ডাল পুতে দেওয়া মুস্তাহাব। সব শেষে তার রুহের মাগফিরাত কামনা কওে দু’আ করা সুন্নাত। কবর অনেক উঁচু করা, চুনা সুরকী দিয়ে পাকা করা বা লেপা মাকরুহ তাহরীমী। সৌন্দর্যের জন্য কবরের উপর গম্বুজ বা পাকা ঘর বানানো হারাম।
সমবেদনা প্রকাশ ঃ মৃত লোকের ওয়ারিসগণকে সমবেদনা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে তাদের গৃহে যাওয়া, খাদ্য প্রেরণ করা, ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দেওয়া সুন্নাত।
ছওয়াব বখশানো ঃ অভাবী লোকদের সাহায্য সহযোগিতা, সদকায়ে জারিয়ার কোন কাজ যেমন-মাদ্রাসা, মসজিদ নির্মাণ বা আর্থিক সহযোগিতা কিংবা কোন জনহিতকর কার্য সম্পাদন অথবা ওয়াকফ করা, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, নফল ইবাদাত প্রভৃতির মাধ্যমে প্রাপ্ত ছাওয়াব মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বখশানো যায়। মহানবী (সা.)-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! আমার মা মারা গেছেন। এখন তাঁর জন্য আমি কী করব? মহানবী (সা.) বললেন, ‘তোমার মা-এর জন্য দু’আ কর এবং তাঁর আত্মীয় স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার কর, তার ওয়াদাকৃত অসিয়ত থাকলে পূরণ কর, দেনা থাকলে পরিশোধ কর।’ মৃত্যুর তিনদিন পর ও চল্লিশ দিনের দিন আমাদের সমাজে আনন্দভোজের মতো করে মানুষকে যে খাওয়ানো হয় তা সম্পূর্ণ বেদায়াত। এতে মৃত ব্যক্তির কোন উপকার হয়না।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে মৃত ব্যক্তিদের জন্য ইসলামের বিধান অনুযায়ী দু’আ করার তাওফীক দিক। আমীন।




১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×