somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাফর ইকবাল স্যারের সাথে কথোপকথনঃকিছু উপলব্ধি,কিছুটা হতাশাপূর্ন

১৯ শে মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১৫ মার্চ) দুপুরের খাওয়া সেরেই সিভিল বিল্ডীংয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। চিন্তা করলাম যাওয়ার আগেই ক্যাফে থেকে এককাপ চা খেয়ে যাই।ক্যাফেটেরিয়াতে ঢুকতেই স্যারকে দেখলাম কয়েকজনের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।স্যারের স্ত্রী ও কায়কোবাদ স্যারও ছিলেন।অপেক্ষা করছিলাম স্যারকে কখন একা পাব।সৌভাগ্যক্রমে পেয়েও গেলাম।কিন্তু আশে পাশে তার ভক্তকুল যেভাবে অটোগ্রাফ আর ছবি তোলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে তাতে স্যারকে একা পেতে আরো কিছুক্ষন সময় লেগে গেল।যখন একা পেলাম সালাম দিয়েই স্যারের সাথে কথোপকথন শুরু করলাম। কিছুক্ষন হেঁটে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে।কথাগুলো অনেকটা এরকম হয়েছে।

আমিঃস্যার,আপনার বিজ্ঞান বিষয়ক বই এবং উপন্যাস অনেক পড়েছি, খুব ভাল লাগে।স্যার আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন ছিল।

স্যারঃমৃদু হেসে বললেন, বলো।

আমিঃস্যার,১৬ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে আপনার একটা লেখা বের হয়েছিল।আপনি স্বাধীনতা,রাজাকার বিভিন্ন বিষয়ে বলতে গিয়ে আপনি হঠাৎ মেয়েদের বোরকা পড়ার বিষয়টা নিয়ে এসেছেন।জিনিসটা কিছুটা অপ্রাসংগিক হয়ে গেলনা?এজন্য ব্লগ ফেসবুকে দেখলাম অনেকে এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে।স্যার আপনি আসলে বিষয়টা এভাবে লিখলেন কেন যদি কিছুটা ব্যাখ্যা করতেন আপনার লেখার পাঠক হিসেবে খুশি হতাম।

স্যারঃদেখ,আমার যেটা ভাল মনে হয়েছে আমি লিখেছি, তোমার ভাল মনে নাহলে নিওনা।আর বোরকা নারীদেরকে দমিয়ে রাখার জন্য।এটা প্রগতিতে বাধা দেয়।
আমিঃ স্যার আপনি প্রথম আলোতে আপনার এক লেখা “ওদের নিয়ে কেন স্বপ্ন দেখবনা” তেও এরকম একটা কথা বলেছেন।(স্যারের ঐ লেখা নিয়ে লিখতে গিয়ে আমার এক নোটে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি।সে প্রশ্নটা স্যারকে সরসরি করলাম।আমি আমার নোট থেকে সরাসরি লেখাটা দিচ্ছি)

[স্যার বলেছেন-
[কক্সবাজারের পথে একবার হঠাৎ একটি মেয়ের সঙ্গে দেখা। মেয়েটি বলল, ‘স্যার, আমি আপনার ছাত্রী।’ আমি খুবই অপ্রস্তুত হলাম, নিজের ডিপার্টমেন্টের একটা ছাত্রীকে আমি চিনতে পারছি না। আমি এত বড় গবেট! ছাত্রীটি তখন নিজেই ব্যাখ্যা করল। বলল, ‘স্যার, আমি তো ডিপার্টমেন্টে বোরকা পরে যাই, তাই আপনি চিনতে পারছেন না।’ আমি তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। ক্লাসে যার শুধু এক জোড়া চোখ দেখেছি, তাকে আমি কেমন করে চিনব? কিন্তু গত ৫০ বছরে যে মেয়েদের একটি প্রজন্মকে ঘরের ভেতর আটকে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, সেই প্রজন্মকে নিয়ে আমরা কী স্বপ্ন দেখব?


এ শেষ লাইনের সাথে এর আগের লাইনগুলোর মিল কতটুকু?এ শেষ লাইনটি পুরোপুরি অপ্রাসংগিক।সবচেয়ে বড় কথা এ প্যারাটি অসংলগ্ন এবং সাংঘর্ষিক।হিজাব পরা যে মেয়েটাকে তিনি চিনতে পারলেননা সে মেয়েটা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল।তাহলে কিভাবে তিনি শেষ লাইনে বলতে পারলেন মেয়েদের ঘরের ভেতরে আটকে রাখা হয়েছে?পর্দার কারনে মেয়েদের যদি ঘরের ভেতর আটকে রাখা হয় তাহলে এ মেয়েটি বিশ্ব বিদ্যালয়ে কেন?এরকম সাংঘর্ষিক,আত্মঘাতী কথা স্যার বলেছেন বলে আমার মনে হয়না।শুনেছি যারা বিখ্যাত হয় তাদের নামে অনেক লেখা চালিয়ে দেয়া হয়, যা আদৌ সে সকল বিখ্যাত ব্যক্তিদের লেখা না।আমি জানিনা এ লেখাটির ক্ষেত্রে সেরকম কিছু হয়েছে কিনা,যদি হয়ে থাকে আমি আনন্দিত হব।তবে সেটা সম্ভাবনা যে খুব একটা নেই, সেটা চিন্তা করে খুব খারাপ লাগছে]
স্যারকে বললাম স্যার আপনার এ লেখাটা কি সাংঘর্ষিক নয়?

]স্যারঃতোমার কাছে যদি সাংঘর্ষিক মনে হয় তাহলে নিওনা।আর যারা সাংঘর্ষিক বলছে তারা তোমার মত টুপি দাঁড়ি পাঞ্জাবীওয়ালা।তুমি মনে হয় তাবলীগ করো।না?দেখো কোরআনে কোথাও হিজাবের কথা বলা হয়নি।আমি তোমার চেয়ে কোরআন বেশি পড়েছি। কোরআনে নবীর স্ত্রীদেরকে পর্দা করার জন্য বলা হয়েছে।(স্যার সম্ভবতঃ সূরা আহযাবের ৩২,৩৩ নং আয়াত indicate করেছেন)

আমিঃস্যার, নবীর স্ত্রীরা হল উম্মুল মুমিমীন। বিশ্বাসীদের মা।হিজাবের উদ্দেশ্য আপনি যে আয়াত ইনডিকেট করছেন সেখানে বলা হয়েছে যেন মানুষের মনে খারাপ কোন কিছু না আসে। যেখানে মা দের হিজাবের জন্য বলা হয়েছে সেখানে তো অন্য মহিলাদের আরো বেশি হিজাব করা উচিৎ। আর আপনি যদি সূরা আহযাবের ৫৯ আয়াত পড়েন তাহলে সেখানে পাবেন সকল বিশ্বাসী মহিলাদেরই হিজাব করার কথা বলা হয়েছে।

[কিছু কথা যা স্যারকে সময়ের জন্য বলতে পারিনি।নবীর স্ত্রীদের জন্য যদি পর্দা ফরয হয় তাহলে অন্য মহিলাদের জন্য ফরজের উপর ফরজ।কারন মাদের সম্পর্কে কারো মনে খারাপ কিছু আসেনা কিন্তু অন্য কারো বিষয়ে আসতেই পারে।আর যদি নবীর স্ত্রীদের হিজাব করার বিষয়টা তাদের সম্মানের জন্য হয়ে থাকে তাহলে তো আপনি মেনেই নিচ্ছেন হিজাব সম্মানের নিদর্শন।অপমানের নয়।আর সূরা আহযাবে পরিষ্কারভাবে মুমিন মহিলাদের বলা হয়েছে। এসকল আয়াতের অর্থ ইবনে আব্বাস,ইবনে আবী হাতেম,ইবনে মারদুইয়া কেউ বুঝলেননা?ইবনে কাসীর এ সকল আয়াত নাবুঝেই এ বিশাল তাফসীর লিখে ফেললেন?ইবনে তাইমিয়ার জীবনেতে পড়েছি তিনি নাকি ১০০ তাফসীর পড়েছেন, তিনিও এসকল আয়াত ভুল বুঝলেন?তারা কেউই বুঝেননি আমাদের আজকের যুগে এসে শ্রদ্ধেয় জাফর স্যার বুঝলেন?তবে আমরা ইসলামে আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন নতুন মুফাসসির পেয়ে সৌভাগ্যমন্ডিত হলাম?মাশাল্লাহ!(?)]

স্যারঃওখানে কি বলা হয়েছে?
আমিঃওখানে স্যার নবীর স্ত্রী,কন্যা এবং মুমিন মহিলাদের বাইরে যাওয়ার সময় “জিলবাব” পরার জন্য বলা হয়েছে।

স্যারঃজিলবাব কি?
আমিঃস্যার জিলবাব (বড় চাদর) পুরো শরীরকে ঢেকে রাখে যা তখন আরবে পরা হত।

স্যারঃইসলাম কি শুধু আরবের জন্য এসেছে?(এখানে স্যার আলোচনা নতুন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন কেন বুঝলামনা)
আমিঃএটা মানে তো আপনি এটা বুঝতে পারেননা। ইসলাম পুরো মানবজাতির জন্য এসেছে।

[একটা কৌতুক বলি।ধরুন কেউ বলল, আমার বাবা আমাকে মারা যাওয়ার সময় বলেছে “কথা দে তুই আর কখনো সিগারেট খাবিনা”
সে বলল খাবনা।
তাই সে জীবনে আর কখনো সিগারেট খেলনা ।বিড়ি খাওয়া শুরু করল।বাবার সিগারেট বলার অর্থ অনুধাবন নাকরলে এ অবস্থা ছাড়া আর কিইবা হতে পারে।কুরআনে জিলবাব বলার কারন যদি শুধু জিলবাব আরবের পোশাক শুধু আরবদের জন্য বলা হয়েছে এরকম চিন্তা করা কুরানের অর্থ অনুধাবন নাকরার পরিচায়কই মনে হয়।কারন এ আয়াতের শেষেই এর কারন বলা হয়েছে]

স্যারঃতুমি কি মনে কর,এতগুলো মহিলা শ্রমিক হিজাব নাকরে কাজ করছে তারা জাহান্নামে যাবে?
আমিঃসেটার ভারডিক্ট তো আমি দিতে পারবনা। আলোচনা সাপেক্ষ বিষয়।আর মেয়েদের এভাবে বাইরে কাজ করতে হচ্ছে কেন?সেটাও বুঝা দরকার।

স্যার টয়লেটে চলে গেলেন যাওয়ার আগে বলে গেলেন

“দেখ, তোমরা যারা অন্ধবিশ্বাস নিয়ে আছ, তাদের বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধ চিরকাল চলবে”

আমি টয়লেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি।স্যার এক মিনিটের মাঝেই ফিরে এলেন
আমিঃস্যার, আপনি আমাকে ভুল বুঝবেননা।আমি আসলে জানার আগ্রহে আপনাকে প্রশ্ন করছি।
স্যারঃনা ঠিক আছে।আমি মুক্তভাবে চিন্তা করি। তুমি আমাকে আমার চিন্তাধারা থেকে পরিবর্তন করতে পারবে?
আমিঃসেটা আমি চাচ্ছিওনা।

স্যারঃতোমরা তো আলোচনায় যেতে রাজিনা।
আমিঃস্যার আমিও মুক্তভাবে চিন্তা করতে পছন্দ করি।আর ইসলাম আলোচনায় উৎসাহ দেয়া আপনি সূরা নাহলের ১২৫ নং আয়াত পড়লে বুঝতে পারবেন ইসলাম আলোচনা কথা বলে।যুক্তির কথা বলে।
স্যারঃদেখ,ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাস। তোমাকে যা বলছে, তা অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে হবে।
আমিঃস্যার, যে কোন জিনিস অন্ধভাবে বিশ্বাসে আমি পক্ষপাতি না।
স্যারঃতোমরা আল্লাহ বিশ্বাস করো,রাসুল বিশ্বাস করো এগুলো কি তোমরা যুক্তি দিয়ে বিশ্বাস করো?
আমিঃস্যার আপনি কি বিশ্বাস করেননা?
স্যারঃআমি কি বিশ্বাস করি,নাকরি সে বিষয়ে তুমি আমাকে প্রশ্ন করছ কেন?
আমিঃস্যার বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ আপনাকে মুসলমান হিসেবে জানে।আপনি বারবার “তোমরা” “তোমরা” করছেন।
স্যারঃআমার সময় নেই ।সেমিনার শুরু হয়ে গেছে.........
আমিঃওকে স্যার।থ্যাংক ইউ......

[আজ ১৬ ই মার্চ আবার স্যারের সাথে সৌভাগ্যক্রমে দেখা হয়ে গেল।আমাদের অডিটোরিয়ামের সামনে বসে কিছু বিষয়ে কথাও হল। ইসলাম ও কোরআন সম্বন্ধে তার দৃষ্টিভঙ্গি আরো ভালভাবে বুঝতে পারলাম। অন্য কোনদিন সেটা শেয়ার করার ইচ্ছা রইল।তবে পাবলিকের জন্য আলোচনাগুলো জমাতে পারিনাই।একটু পরপর একগ্রুপ এসে স্যার, আপনার অটোগ্রাফ।স্যার, আপনার সাথে একটা ছবি তুলব............]

collected:MuZahid Rasel (collected)
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×