somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি নাম দেবো?

০২ রা আগস্ট, ২০১০ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাসের সবচে সূদর্শন ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম-তোমার জন্ম কবে?উত্তর যা পেয়েছিলাম তাতে চোখ ছানাবড়া। মা গো পুরো তিন বছরের ছোট আমার চেয়ে! কেমনে ? রহস্য ভাঙলো ছেলেটি নিজেই-আসলে আমি ক্লাস এইটের পরই ও লেভেল দিয়েছি।
আলাপ চললো কিছুক্ষন । এরই মধ্যে তার ব্যাগ থেকে বেরিয়ে এলো ছোট্ট একটা কার্ড।
‘এ কি । ড্রাইভিং লাইসেন্স! বাট তুমি তো এখনও আঠারো হওনি’।অবাক হয়ে বললাম আমি।
-অ্যাকচুয়ালি আম নট সাপোজ টু গেট ইট। আমার বাবা ম্যানেজ করে দিয়েছে।
-যদি ধরা খাও?
-যারা ধরবে তারাও আমার বাবার ফ্রেন্ড।
এটা ২০০৫ সনের ঘটনা। যখন আমি কেবল ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।
এরই মধ্যে চলে গেছে ৫ টি বছর । আমি আছি আগের মতোই। তেমনি আছে ম্যানেজ করতে পটু বাবারা ও তাদের পূত্ররা।গত মাসের ১০ তারিখে সৌভাগ্য অথবা দূর্ভাগ্যক্রমে ঢুকতে হয়েছিল সড়ক দূর্ঘটনা বিষয়ক একটি সেমিনারে।সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম ঢাকা শহরের ৫০-৭০% ড্রাইভিং লাইসেন্স নাকি কোনো না কোনো ভাবে ‘ম্যানেজ করা’। সোজা বাংলায় ‘ভুয়া ’।স্বয়ং বিআরটিএর চেয়ারম্যানও এই তথ্যের সাথে একমত। তার বক্তব্য থেকে আরও জানা গেল ঢাকা শহরের ১০৯ টি সড়ক ত্র“টিপূর্ন। বলাই বাহুল্য সেগুলো নির্মানের পেছনে ছিল আমারই কিছু ‘দুঃসম্পর্কের জাত ভাই’ অর্থ্যাৎ সিভিল ইন্জিনিয়ার যাদের মেধা পুরোপুরি কাজে লেগেছে তাদের পকেটের চিকন স্বাস্থ্য মোটা করার ক্ষেত্রে।

অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক প্রফেসর শামসুল হক এর পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনটি দেখে ভয়ে-রাগে-দুঃখে পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমার মতে ওই একটি রিসার্চ দিয়েই পুরো একটি সেমিনার হতে পারতো। ট্রান্সপোর্টেশন আমার বিষয় নয়। কিন্ত তবুও গবেষনাটির সহজ ভাষার কারনে জলের মতো পরিস্কার হয়ে গেল এদেশে কেন জ্যামিতিক হারে সড়ক দূর্ঘটনা বাড়ছে। কিভাবে ভারত ও চীন থেকে সস্তা টায়ার আমদানি করে তার আয়ু বাড়ানোর জন্য রাবারের পরত দিয়ে তাকে করে তোলা হচ্ছে আরও বিপজ্জনক, কিভাবে ৮ প্লাই টায়ারের ক্যাপাসিটি কে কারিগরী করে ১২ প্লাই লিখে দেয়া হচ্ছে।ফলৃফল,টায়ার বার্স্ট করেই অধিকাংশ দূর্ঘটনা ঘটছে।
শামসুল হক স্যারের মতে ,একটি মালবাহি ট্রাক হওয়া উচিৎ ইউনিফর্ম অথ্যাৎ,দৈঘ্য,প্রস্থ,উচ্চতায় সমান,যাতে করে ট্রাকটি সবদিকে সমান ওজন বহন করতে পারে।আমাদের দেশে ট্রাকগুলো আমদানীর সময় ইউনিফর্ম থাকে ঠিকই কিন্ত,মালিকরা পরবর্তিতে বেশি মালামাল ধরাবার জন্য কিংবা বস্তা যাতে দড়ি ছিড়ে রাস্তায় পড়ে না যায় সেজন্য,কিংবা শ্রমিকদের ওঠানামার সুবিধার্থে ট্রাকগুলোকে কাঠের পাটাতন দিয়ে দৈঘ্যে,প্রস্থে বাড়িয়ে দেয়।এর ফলে ট্রাকটির বিভিন্ন অংশে ওজনের তারতম্য হওয়ায় ট্রাকটি হয়ে পড়ে বেশামাল এবং অন্যকোনো যানবাহনের সাথে ধাককা খেলে শক্ত পাটাতনগুলো কাজ করে ঠিক ছুরির ফলার মতো যা প্রানহানীর পরিমান আরও বাড়ায়।

প্রেজেনটেশনটিতে আমাদের প্রতিবেশী সবগুলো দেশের ট্রাকের ছবি দেখানো হয়। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম প্রতিটি ট্রাকেই শ্রমিকদের ওঠানামার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা আছে কিন্ত ট্রাকের ইউনিফর্মিটি নষ্ট করা হয়নি। তাহলে দাড়ালো কি?যত উজবুক কি আমরাই?

সেমিনারের অন্যতম আয়োজক ফুয়ারার পক্ষ থেকে সেদিন বক্তব্য রেখেছিলেন বিসিকের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান যিনি গত মার্চ মাসে সড়ক -দূর্ঘটনায় হারিয়েছিলেন তার আদরের দুই মেয়েকে। আজ সকালে পেপারটা খুলে চমকে উঠলাম্ । জনাব সিদ্দিকুর রহমানও চলে গেছেন তার মেয়েদের কাছে।এত তাড়াতাড়ি পিতা ও দুই কন্যার মিলন ঘটিয়ে দেবার জন্য গতকাল গোপালগন্জ যাবার পথে তার জিপটিকে ধাক্কা প্রদানকারী বাসচালকের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১০ রাত ১:৪৭
১১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×