বর্তমানে আপনি দেশের একজন অবিভাবক। আর অবিভাবকরা যা ইচ্ছে তাই বলতে পারে না। একজন অবিভাবকের অনেক ভেবেচিন্তে কথা বলতে হয়। আপনি বোধ হয় সেটা জানেন না। সেই শিক্ষা আপনি হয় তো পাননি।
অবিবেচক অবিভাবকের মতো আপনি বলেছেন “কোটা বাতিলের দাবিতে যারা ভাঙচুর করেছে তারা কখনোই চাকরি পাবে না”। আপনার এই কথা মূল্যহীন। পাগলের প্রলাপের মতো মনে হয়েছে আমাদের কাছে। তাই এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিলাম।
আপনি একজন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আপনি অধিষ্ঠিত। আপনার অনেক টাকা। আপনার চাকরির খুব একটা দরকার হয় না। আমাদের যে চাকরি খুব দরকার। তাই আমরা আন্দোলনে নামি। নামতে বাধ্য হই। নির্বাচনের সময় আপনি বলেছিলেন ‘’আমরা ক্ষমতায় গেলে ঘরে ঘরে চাকরি দেব’।
ঘরে ঘরে কি চাকরি দিয়েছেন? যদি ঘরে ঘরে চাকরি দিতেন আমাদের রাস্তায় নামতে হত না। আপনি ক্ষমতা গ্রহণ করার পর আমার পরিবারের কেউ তো চাকরি পায়নি। আমাদের পাশের পাঁচ-দশটা পরিবারেরও কেউ চাকরি পায়নি। আপাত দৃষ্টিতে আপনি আমাদের সাথে প্রতারণা করেছেন। তাই একজন প্রতারকের এসব হুমকিতে আমাদের গা একটুকুও কাঁপে না ।
আপনি আমাদেরকে হুমকি দেয়ার যোগ্যতা রাখেন না। আপনি আমাদের হুমকি না দিয়ে নিজেকে আগে সামলান। আর তিন মাস আছে আপনার ক্ষমতার মেয়াদ। এরপরে আপনিও সাধারণের কাতারে দাড়াতে বাধ্য। তখন তো ক্ষমতায় আসার জন্য আপনি আমাদের দ্বারে দ্বারে আসবেন ভোট ভিক্ষা করতে। তখন কি আপনি লজ্জিত হবেন না?
আসলে আপনাদের মতো রাজনীতিবিদের লজ্জা বলতে কিছু নেই। লজ্জার অনেক উপরে আপনাদের অবস্থান। তাই লজ্জা আপনাদের ছুঁতে পারে না ।
করুণার অপর নাম যেমন ভিক্ষা তেমনই কোটার অপর নাম ভিক্ষা। কোটার বিরোধিতা করা মানে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা না। এততুকু কমনসেন্স থাকা দরকার। আপনাদের মতো রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদার সব মানুষদের কথা শুনলে আমাদের খুব হাসি পায়। আমরা হাসিও। কিন্তু সেই হাসির শব্দ আপনার কানে পৌঁছানোর কথা না।
মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের সন্তানদের ভিক্ষাবৃত্তি করার জন্য এদেশ স্বাধীন করেন নি। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের জুলুম, অত্যাচার আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধারা। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের দিয়ে আপনারা বৈষম্যের নতুন সমীকরণ তৈরি করছেন। এই কি চেয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা?
ইতিমধ্যেই অনেক মুক্তিযোদ্ধা এই ভিক্ষাবৃত্তি কোটার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন। দেশের সুশীল সমাজ আর বুদ্ধিজীবীরাও কোটার বিপক্ষে মত দিয়েছেন। আপনারা নিজেদেরকেই বড় বুদ্ধিজীবী মনে করেন। তাই অন্য বুদ্ধিজীবীদের মতামতকে মূল্যায়ন করা আপনাদের বোধ হয় মানায় না।
পরীক্ষা মানেই তো মেধার লড়াই। এই লড়াইয়ে আসতে যে ভয় পায়, সে তো কাপুরুষ। আপনারা কেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের কাপুরুষের খাঁচায় বন্ধ করে রাখছেন?
নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা, উপজাতি কোটার মতো মুক্তিযোদ্ধা কোটা সীমিত আকারে থাকতে পারে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। বাড়ছে না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটা ধ্রুবকের মত ৩০ শতাংশে স্থির দাড়িয়ে। কিন্তু কেন? ক্ষমতায় এসে কি আপনারা মুক্তিযোদ্ধা প্রসব করেন?
কোটার প্রতি আপনার ভালোবাসা থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ আপনিও আপনার বাবার কোটায় রাজনীতিতে পা রাখতে পেরেছেন। অন্য বাবার সন্তান হলে আজ আর আপনার প্রধানমন্ত্রী হওয়া তো দূরের কথা, সে স্বপ্নও দেখতে পারতেন কিনা জানি না। তখন আপনিও কোটা বিরোধী হতেন।
আপনি কথা বললে সেটা আমাদের কানে আসে। আমরা বললে সেটা আপনাদের কানে পৌছায় না। আপনি বলেছেন, “কোটা প্রথা নিয়ে আন্দোলনের নামে যারা ভাঙচুর করছে তাদের ছবি সংগ্রহ করে রাখা হবে। ছবি দেখে পরীক্ষার সময় তাদের শনাক্ত করে ডিসকোয়ালিফাই করা হবে।”
সত্যিই হাস্যকর মন্তব্য। আপনি সম্মানিত ব্যক্তি,আপনার কথায় হাসা মানে আপনাকে আপমানিত করা। কিন্তু না হেসে কোনো উপায় নেই। হাসি তো থামিয়ে রাখা অসম্ভব। আমাদেরকে ডিসকোয়ালিফাই করার আগেই আগামি নির্বাচনে তরুণ সমাজ আপনাকে সোজা সাপটা ডিসকোয়ালিফাই করবে ।
লেখক: আহমদ আল হুসাইন
তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়