বাংলাদেশের বরেণ্য চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের ৬২তম জন্মদিন উপলক্ষে এবার ৬ই ডিসেম্বর তারেক মাসুদকে সম্মান জানাবেন সার্চ ইঞ্জিন গুগল । তারেক মাসুদকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানিয়ে বানানো হবে গুগল ডুডল। আর এটি দেখবে পাবেন সারা বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা।তাছাড়াও জন্মদিন উপলক্ষে চলচ্চিত্র কথা নামে একটি বই প্রকাশ করা হবে। বইটিতে থাকবে তারেক মাসুদের বক্তৃতা, সাক্ষাৎকার, চলচ্চিত্র নিয়ে তার স্বপ্ন এবং সমাজে তার চলচ্চিত্রের প্রভাব ইত্যাদি। যৌথভাবে বইটি প্রকাশ করছেন তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এবং কথা প্রকাশ।তারেক মাসুদ ১৯৫৭ সালে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ এবং বাবার নাম মশিউর রহমান মাসুদ। ভাঙ্গা ঈদগা মাদ্রাসায় প্রথম পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে মৌলানা পাস করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসা শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধের পর তিনি সাধারণ শিক্ষার জগতে প্রবেশ করেন।
গুগল ডুডুলে এই ছবিটি ক্লিক করুন
ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ছয় মাস পড়াশোনার পর বদলি হয়ে নটর ডেম কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু সেসময়ে তাকে বেশিরভাগই তৎকালীন ঢাকা আর্ট কলেজে বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ কাটাতে দেখা যেত। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই লেখক শিবির, বাম আন্দোলন এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন। চলচ্চিত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পরিচয় হয় মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, শামীম আখতারের সাথে। দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন ।
তার পরিচালিত প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ১৯৮৫ সালে, 'সোনার বেড়ি' এবং সর্বশেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র রানওয়ে যা মুক্তি পায় ২০১০ সালে। চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১৩ সালে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান/প্যাসিফিক/আমেরিকান ইন্সটিটিউট এবং দক্ষিণ এশিয়া সলিডারিটি ইনিশিয়েটিভ তার চলচ্চিত্রের প্রথম উত্তর আমেরিকান 'ফিরে দেখা' অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
কাগজের ফুল’ নামক চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের লোকেশন চিত্রায়ন করার জন্য তারেক মাসুদ তার সহকর্মীদের নিয়ে পাবনার ইছামতী নদীর তীরে যান। লোকেশন নির্বাচন শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে তারেক মাসুদ তার গাড়িবহর নিয়ে রওনা দেন। পথে ঘিওরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তারেক মাসুদের সঙ্গে ছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক, সম্প্রচার কিংবদন্তি, টেলিভিশন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর।তিনিও একই দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের সাথে মারা যান। ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর সহ আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৩