somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

পথিকরাজপুত্র
আমি মনোযোগী পাঠক। পড়তে ভালবাসি। পড়ে কোথাও কিছু একটা অসঙ্গতি আছে মনে হলে সেটা আলোচনা করি। ভাল লাগলেও আলোচনা করি, খারাপ লাগলেও আলোচনা করি। কেননা আমি বিশ্বাস করি, পাঠকই লেখক তৈরী করে।

সিদ্ধান্ত নিন, আপনি মা নাকি মাসি; মা হয়ে অন্যে দরদ দেখাচ্ছে না, মাসি হয়ে অাপনি দরদি হয়ে উঠছেন- এটি অস্বাভাবিক!

১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক বিদঘুটে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। যে পরিস্থিতি আদৌ সৃষ্টি হবারই কথা ছিল না। কথা ছিল সবাই সহনশীল হবে, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করবে। শ্রদ্ধা করবে সেইসব মানুষদের যারা মানুষ গড়ার কারিগর। বাস্তবতা ভীষণ উল্টো জিনিস। এক বিশ্রী বাঁদড়ের মত এই বাস্তবতা। উল্টো ঝুলে ভেংচি কাটা ছাড়া এটির বোধহয় আর কাজ নেই। প্রথম জীবনে, যখন পড়ালেখার পাঠ শেষ করব করব এমন সময়, তখন স্বপ্ন ছিল, ইচ্ছে ছিল শিক্ষকতা করব। এটিই এমন এক পেশা মনে হয়েছিল যেখানে মনের আনন্দে কাজ করা যায়। নিজের ভাবনা, ষ্পষ্ট আদর্শ প্রচার করা যায়। শিক্ষকতায় যুক্ত হয়েও ছিলাম। কিন্তু স্বপ্নভঙ্গ হতে বেশি দেরি হয়নি। বাঁধভাঙা উচ্ছাস আর আবেগ কয়েকমাসেই বন্দী হয়ে গেছিল মনের কোন কোণায় কে জানে!

শিক্ষকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে সবচেয়ে নিম্ন পেশা। শ্রদ্ধার, সম্মানের জায়গাটুকু হারিয়েছে অনেক আগেই। এর পেছনে যে মূল কারণ তা আর্থিক দীনতা আর ক্ষমতার দীনতা। একজন শিক্ষকের আয় রুজি কত তা একজন সভ্য মানুষের কাছে হাস্যকর ঠেকবে। আমার কথাই বলি। আমি অনিয়মিত শিক্ষক হিসেবে মাসে মাত্র সাড়ে ছয় হাজার টাকা বেতনে একটি স্কুলে ঢুকেছিলাম। আজ কর্পোরেট দুনিয়ায় কাজ করতে এসে আমি শিউরে উঠি। ওই বেতনে কী করা সম্ভব? বাড়ি ভাড়াটাও তো হয় না ওই টাকায়। অনেকেই বলবেন, টিউশনি আর কোচিং থেকে ভাল আয় আসে। এটা যারা নির্বোধ বা যাদের জানার পরিধি সীমিত তারাই বলে। গণিত, ইংরেজি আর হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষকরা কিছু টিউশনি করেন এটা ঠিক, বাকিরা? আর টিউশনিতে যে কত টাকা আসে, মাসের পর মাস টিউশনির বেতন যে পাওয়া হয় না, ছেলে-মেয়েরা কেউ কেউ কোচিংয়ের টাকা না দিয়েই পালায় এসব অন্য গল্প। মূলকথা, একজন শিক্ষক মাথা তুলে দাাঁড়াতে পারেন না, ওই বেতনের দীনতার কারণেই। কারণ আজকের সমাজ অর্থ মূল্যে মর্যাদা বিবেচনা করে। বাস্তব অভিজ্ঞতা বলি, আমার স্কুলে চাকরি হবার পর, মা এক দুই জায়গায় পাত্রীর খোঁজে কড়া নেড়েছিলেন। সেই সব জায়গায় জানতে চাওয়া হয়েছিল, ছেলে কি করে। মা গর্ব করে উত্তর দিতেন আমার ছেলে- শিক্ষক। মায়ের উত্তর শুনেই দরজা বন্ধ হয়ে যেত! কেউ কেউ উদাস গলায় বলত- ওঃ মাস্টার? না ভাই, মাস্টারের কাছে মেয়ে দিব না। মেয়েরে খাওয়াবে কি? হাত খরচ ও তো দিতে পারবে না!

মা একদিন রাগে-ক্ষোভে চাকরি বদলাতে চাপ দিলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে চাকরি বদলালাম। ঢুকলাম কর্পোরেট দুনিয়ায় অফিসার হয়ে। এবার আর মায়ের গিয়ে কড়া নাড়ার দরকার হয়নি কারো বাসায়, অন্যেরাই এসে আমার মায়ের দরজায় কড়া নেড়ে জানাত- ভাল পাত্রী আছে!

আফসোস, পছন্দের পেশা আমাকে ছাড়তে হয়েছে। কেননা আর্থিক মর্যাদা এবং পদ মর্যাদায় শিক্ষক অনেক নিচে। একজন শিক্ষকের মূল্য এই দেশে নেই। আরেকটা বিষয় ছিল, ক্ষমতার ব্যাপার। একজন শিক্ষকের কোন ক্ষমতাই নেই। তার কাউকে বদলি করার ক্ষমতা নেই, নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা নেই, প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নেই, কোন সিস্টেম বদলে ফেলার ক্ষমতা নেই। যার পেটে ভাত জুটতেই কষ্ট হয়, তাকেই বা পাত্তা দেবে কে? তার ক্ষমতার হিসেব করতেও বা যাবে কে? এছাড়াও আরো ব্যাপার স্যাপার আছে- একজন শিক্ষক মিথ্যা বলতে পারবে না, পথে-ঘাটে সাধারণের মত গলার রগ ফুলিয়ে ঝগড়া করতে পারবে না, বাড়িওয়ালার ‍মুখের ওপর বলতে পারবে না বাড়তি ভাড়া দেব না, ভিক্ষুককে ও ফিরিয়ে দিতে পারবে না, ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকের উপরে কথা বলতে পারবে না.... এমনকি একজন শিক্ষকের বউ-ছেলে-মেয়েদেরও ওই ব্যাপারগুলো আপ্রাণ ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

একজন শিক্ষকের অন্যায় দেখলে সাথে সাথেই তাকে চাকরিচ্যুত করা যাবে, অথচ একজন সরকারি দুর্নীতিবাজ কমকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার আগে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণ করার আগে নানারকম জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তো কেন কেউ শিক্ষকতা করবে? এই অবস্থা যদি না বদলায় তবে দেশ শিক্ষকশূন্য হতে খুব বেশি দেরি হবে না।

দেশ জুড়ে আজ কয়েকদিন যে বিষয়টা নিয়ে তোলপাড় চলছে, তা হল একজন প্রধান শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করানো হয়েছে। তাতো করা হবেই, উনি যে একজন শিক্ষক? যদি তিনি একজন আমলা হতেন? তবে সবাই ভালই জানেন, কিচ্ছুটি হত না। এখন যদি কোন শিক্ষক যদি অন্যায় করেন তাহলে কি তিনি শাস্তি পাবেন না? অবশ্যই পাবেন। তবে অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক পথে আইন মেনে।

এবার আসি আমার শিরোনাম নিয়ে, যারা শিরোনামটি পড়েছেন তারা এতক্ষণ নিশ্চয়ই ভ্রু কুঁচকে রেখেছিলেন, বক্তব্যের সাথে তো শিরোনামের কোন মিলই নাই। পুরাই ফালতু ব্লগার এই লোক! আমি এতক্ষণ যা বলেছি তা আমার নিজস্ব ক্ষোভ এবং দেখা বিষয় আশয়। এবার আমি শিক্ষকদের ক্ষোভ নিয়ে সামান্য কয়েকটি কথা বলতে চাই।

একজন শিক্ষককে অপমান করা হয়েছে, একদম নির্দিষ্ট করে বললে একজন প্রধান শিক্ষককে অপমান করা হয়েছে। মজার ব্যাপার, তার গোত্রীয় শিক্ষকরা প্রতিবাদ করেন নি। কেন একটা প্রতিবাদ কি হতে পারত না যে, দেশের সমস্ত প্রধান শিক্ষক এই ঘটনার প্রতিবাদে অন্তত একদিনের জন্যে হলেও কর্মবিরতিতে যাবেন? স্কুল শিক্ষক সমিতির কি রাস্তায় নেমে আসা উচিত ছিল না? ফেসবুকে তরুণরা নিজেরা নিজেদের কান ধরে ছবি আপলোড করে প্রতিবাদ করছে। তাও ভাল, প্রতিবাদ তো করছে। মাধ্যমিক ও নিম্ন-মাধ্যমিক পর্যায়ের কোন শিক্ষক কি প্রতিবাদ করেছেন? আমার মনে হয় না। আমার জানা মতে প্রতিবাদ করেছে- বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। কিন্তু উল্লেখ্য শিক্ষকের সমগোত্রীয় শিক্ষকরা আন্দোলন বা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের কোন চিহ্নই আমি দেখিনি। ফলশ্রুতিতে উপরোক্ত শিরোনাম আমার মাথায় ঘুরঘুর করতে শুরু করে। মায়ের যদি দরদ না থাকে তবে মাসির দরদে কি হবে? নাকি তারা ভাবছেন, তাদের হয়ে অন্যরা আন্দোলন-প্রতিবাদ-মিছিল ইত্যাদি করে দেবে? এটা অস্বাভাবিক না, এখন প্রত্যেকেই ভাবে তার হয়ে কেউ নিশ্চয় প্রতিবাদ করবে। এটা অস্বাভাবিক ভাবনা।

হাস্যকর এই ধ্যান-ধারণা থেকে শিক্ষকদের বেরিয়ে আসা উচিত। তাদের অধিকার রক্ষার আন্দোলন তাদেরকেই করতে হবে। তারা শুধু বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে মাঠে নামবেন এটা দৃষ্টিকটু। সম্মান রক্ষার্থে নিজেদেরই মাঠে নামা উচিত। নইলে অন্য কোন দিন যে কোন স্কুল শিক্ষকের পালা আসতে পারে। তখন, যদি সমাজ-দেশ-সিষ্টেমকে দোষারোপ করেন তারা, কোন লাভ হবে না। কারণ, সময়ে তারা নিজেরাই প্রতিবাদ করেন নি। দ্বিধা করেছেন, ভয় পেয়েছেন বা প্রকাশ্যে এরুপ শাস্তিদানকে সাপোর্ট করেছেন।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:১৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×