somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইমেলাতে!!

২৯ শে জুন, ২০০৯ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বছরের বইমেলার কথা বলিতেছি। আমরা তিন বন্ধু- রেজা, মামুন আর আমি গিয়েছিলুম লাইব্রেরি-এর জন্য বই কিনিবার নিমিত্তে। তারিখ ছিল ২১শে ফেব্রুয়ারী।

“সাভার হইতে বাসযোগে শাহাবাগ গিয়া উপস্থিত হইলাম। অতঃপর বাংলা একাডেমির পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়া হাটিতে লাগিলাম। পথের দুই ধারের দৃশ্য দেখিয়াই অনায়াসে বুঝিতে পারা যায় যে অমর একুশে বইমেলা বাঙ্গালির সাহিত্য- সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্রে পরিনত হইয়াছে। বাঙ্গালির জন্য যে ইহা এক বিশাল উৎসব তাহাও বুঝিতে পারা যায়। হাটিতে হাটিতে টি, এস, সি-র সম্মুখে আসিয়া যাহা দেখিলাম তাহা বলিতে চাহিতেছি না। কারণ ঐ সুবিশাল লাইনে আপনাদের অনেকেও নিশ্চই দাড়াইয়া ছিলেন। লাইনখানা দেখিয়াই বুঝিতে পারিলাম যে আজ আর বইমেলা চত্বরে আমাদের চরণ পরিবে না। কিন্তু তাই বলিয়া ফিরিয়া চলিয়া যাইব, ইহাও মানিয়া নিতে পারিলাম না। যে করিয়াই হোক ঢুকিতে হইবে, কিন্তু সময় নষ্ট করা যাইবে না। আর তাই লাইনখানার পাশ ধরিয়া আমরা তিনজন হাটিতে লাগিলাম। সুযোগ পাইলেই মিশিয়া যাইব। হাটিতে হাটিতে বাংলা একাডেমির প্রধান ফটকের কাছকাছি আসিয়া পড়িয়াছি। কিন্তু সুবিধা করিতে পারিলাম না। কিছুক্ষণ দাড়াইয়া থাকিলাম। হঠাৎ করিয়া ফটকের কাছে কিছু একটা ঘটিল। পুলিশ মামারা ঘেও ঘেও শুরু করিয়া দিল। ফটকের নিকটবর্তী যাহারা লাইনে দাড়াইয়া ছিল তাহরা অস্থির হইয়া উঠিল এবং কি ঘটিয়াছে তাহা বুঝিবার জন্য ঐ দিকেই দৃষ্টি এবং মন নিয়োগ করিল। এই সুযোগ কাজে লাগাইয়া আমরা অনায়াসে মিশিয়া গেলুম লাইনের সাথে। অল্পকিছুণের মধ্যেই প্রবেশ করিলাম অমর একুশে বইমেলায়। ঢুকিয়াই বুঝিতে পারিলাম কেউ একজন আমাদিগকে ডাকিতেছে। ডাক শুনিয়াই টয়লেটখানা কোন দিকে খুঁজিতে লাগিলাম। কারণ স্বয়ং প্রকৃতিই আমাদিগকে ডাকিতেছে। টয়লেট চত্বরে গিয়া দেখি সেইখানেও মানব জটলা পাকাইয়া রহিয়াছে। যাহাদের ছোটমিয়া ডাক দিয়াছে তাহারা এথায়-সেথায় বসিয়াই কাজ সারিতেছে। কিন্তু যাহাদের বড়মিয়া ডাক দিয়াছে তাহারা মোটামুটি ধরনের লাইন করিয়া দাড়াইয়া রহিয়াছে। মামুন আর রেজা এথায়-সেথায়ই কর্ম সম্পাদন করিল। কিন্ত আমি দাড়াইয়া রইলাম লাইনের শেষ প্রান্তে, বড়মিয়ার সাথে আমার সুবিশেষ ভালো সম্পর্কের কারণে। ইহা বুঝিতে পারিলাম যে, এই লাইনে সময় বাচাইবার জন্য রাজনীতি করা যাইবে না। কিছু করিবার চেষ্টা করিলে পাবলিক পিটাইয়া আলু ভর্তা বানাইয়া ফেলিবে। সবাই খুবই ‘সিরিয়াস মুডে’ রহিয়াছে।

আমার নিকট দুইখানা মোবাইল ফোন। একখানায় সিটিসেল আর অন্যখানায় বাংলালিংক চালু রহিয়াছে। যেহেতু আমাকে ঐ ছোট্ট ঘরখানায় বিশেষভাবে বসিয়া বিশেষ কাজ সম্পন্ন করিতে হইবে তাই বুদ্ধি করিয়া বাংলালিংক ওয়ালা মোবাইল ফোন রাখিয়া অন্য মোবাইল ফোন এবং আমার মানিব্যাগ খানা রেজার হাতে তুলিয়া দিলাম। এবং উহাদের বই কিনা শুরু করিয়া দিতে বলিলাম। কথা হইল কর্ম শেষে ফোন এ কল করিয়া উহাদের অবস্থান জানিয়া নিব। প্রায় তিরিশ মিনিট দাড়াইয়া থাকিবার পর স্বর্গে যাইবার সুযোগ পাইলাম। আহা! বেজায় মজা!

কর্ম সারিয়া টয়লেট চত্বর ছাড়িলাম। পকেট হইতে মোবাইল ফোন বাহির করিলাম রেজা আর মামুনের অবস্থান জানিয়া নিবার নিমিত্তে। কিন্তু মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে তাকাইয়া আহাম্মক হইয়া গেলুম। ‘নো নেটওয়ার্ক’। এখন কি হইবে? আমার মানিব্যাগখানাও রেজার কাছে। পকেটে এক পয়সাও নাই। রেজা আর মামুনকে যদি খুঁজিয়া না পাই......... হাটিয়া হাটিয়া বাড়ি যাইতে হইবে যাহা আমার বাবার পক্ষেও অসম্ভব। সমগ্র বইমেলায় হাটিতে লাগিলাম। অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস, ওহাদের খুঁজিয়া পাইলাম না। অনেককেই মোবাইল এ কথা বলিতে দেখিলাম। কিন্তু কারও কাছে মোবইল চাইবার সাহস হইল না। ঢাকা শহর। এইখানে বিশ্বাস একদম মূল্যহীন। চিন্তায় চিন্তায় মস্তক গরম হইয়া যাইতে লাগিল। যদি হিসেব করিতে পারিতাম তাহা হইলে একদম নিশ্চিন্ত হইয়া বলিতে পারিতাম যে ঐ দিনই আমার কমপক্ষে দুইশত পঁচিশ খানা চুল পাকিয়া গিয়াছে।

প্রায় ঘন্টাখানেক পর বিধাতার কৃপায় উহাদের দেখা পইলাম।”
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×