somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই রিভিউ: ১৯৭১ - হুমায়ূন আহমেদ

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোট্ট একটি গ্রাম নীলগঞ্জ। ময়মনসিংহ-ভৈরব লাইনের একটি স্টেশন নান্দাইল রোড। দশ মাইল উত্তরে গেলে রুলাইল বাজার। বর্ষাকালে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। আরও মাইল ত্রিশেক উত্তরে মধুবন বাজার। শীতকালে গরুর গাড়ি চলে। বর্ষায় হাঁটতে হয়। পুবদিকে সাত-আট মাইল গেলে মধুবনের জঙ্গলা মাঠ। তার ‘পেছনে নীলগঞ্জ গ্রাম। দরিদ্র শ্রীহীন ত্রিশ-চল্লিশ ঘরের একটি বিচ্ছিন্ন জনপদ।’ নীলগঞ্জের জলাভূমির দিকটায় একদল কৈবর্ত থাকে। গ্রামের সঙ্গে তাদের খুব একটা যোগ নেই। হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাসোম রচনা ১৯৭১-এর ঘটনা এই নীলগঞ্জের।

এ রকম দুর্গম ও প্রায় বিচ্ছিন্ন একটা জনপদে একদল মিলিটারি এসে স্কুলঘর দখল করে বসেছে। উপন্যাসে কোনো যুদ্ধের ঘটনা নেই। পাকিস্তানি সৈনিকদের কমান্ডার এজাজ আহমেদের সঙ্গে ফুলপ্যান্ট এবং নীল রঙের হাফশার্ট পরা রফিক নামে এক যুবককে দেখা যায়। তার মাধ্যমেই মেজর এজাজ লোকজন ডেকে জেরা করছেন আর শাস্তি দিচ্ছেন। এজাজের ধারণা, জঙ্গলের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা লুকিয়ে আছে, সৈনিকও থাকতে পারে।

গ্রামের মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখব আপাত দৃষ্টিতে তাদের আত্মসম্মানবোধ নেই। তারা ভীরু। মেজর এজাজ যে রকম মনে করেন, ‘কুকুরেরও আত্মসম্মানবোধ থাকে, এদের তাও নেই।’ গল্পটি আমাদের শেষ পর্যন্ত এমন এক জায়গায় নিয়ে যাবে, যেখানে দেখব চাইলেই যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া যায় না। জীবন হয়ে ওঠে তুচ্ছ।

কৈবর্ত মনাকে আগের একটা খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে তার ১১ বছরের ভাইকেসহ প্রকাশ্যে গুলি করে মারা হলো
পাকিস্তানি মেজর এজাজের নির্দেশে। এটা করেছেন একটা ‘নিষ্ঠুরতার নমুনা’ হিসেবে। মেজর বলেন, ‘মানুষকে ভয় পাইয়ে দেবার একটা আলাদা আনন্দ আছে।’ এই বিকৃত-মস্তিষ্ক লোকটি আবার এই নৃশংসতাকে বৈধতা দিতে চায় এভাবে

—‘আমরা একটা যুদ্ধের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছি।
সারভাইভালের প্রশ্ন। এ সময়ে অন্যায় কিছু
হবেই।’ পৃথিবীতে মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের নৃশংসতা ও অপকীর্তিকে এভাবে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টাই শুধু চলে না, তাকে শ্রেয়তর এবং মহত্তর করার চেষ্টা চলে সবসময়।

কিন্তু মনা ভয় পায় না। ভাইকেও অভয় দেয়, আমাকে শক্ত কইরা ধর। আজিজ মাস্টারকে যখন উলঙ্গ করে গ্রামের ঘোরাবার নির্দেশ দিলেন মেজর এজাজ, আজিজ মাস্টার বললেন, ‘মেজর সাহেব, আমি মরবার জন্য প্রস্তুত আছি।’ অসহায় সফরউল্লাহও অবশেষে তার স্ত্রী ও বোনের চরম অপমান ও নিপীড়নের প্রতিশোধ নিতে এক সুবেদার ও এক রাজাকারের খোঁজে মাঠে নেমে পড়েছে। উপন্যাসের শুরুতে এদের এই ভূমিকা কল্পনাও করা যায়নি।


মিলিটারির উপস্থিতিতে খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখাল না মীর আলি। আজ নিজাম হলো আনন্দিত। একজন অন্ধ, অন্যজন পাগল। নিজাম যে পাগল, রফিক তা কীভাবে বুঝল? মেজরের এ প্রশ্নে রফিকের উত্তর,
‘ও মিলিটারি আসায় অত্যন্ত খুশি
হয়েছে।’

মিলিটারি আসায় যে লোক খুশি, সে পাগল নয় তো কি। মিলিটারি নয় বরং ঝড় খুবই আতঙ্কিত করেছে অন্ধ মীর আলিকে। এই অন্ধ ও পাগল দুই চরিত্র নীলগঞ্জের এই দুর্যোগের মধ্যে দুই ব্যতিক্রম। আর ব্যতিক্রম কুকুর, গিরগিটি, শেয়াল।

‘নিম্নশ্রেণীর প্রাণীরা অনেক কিছু বুঝতে পারে। তারা টের পায়।’

গল্পটা এক পাকিস্তানি মেজর ও এক বাংলাদেশি গ্রামের গল্প। কিন্তু এক সূক্ষ্ম পথে গল্পটি একজন পাকিস্তানি সৈনিক ও এক বাঙালি যুবকের গল্প হয়ে উঠেছে। এই যুবক রফিক, শুরু থেকেই তাকে পাকিস্তানি মেজরকে সহায়তা করতে দেখি কিন্তু তার জীবনদৃষ্টি পাকিস্তানি মেজরের সম্পূর্ণ উল্টো। বাঙালিদের আত্মসম্মানবোধ নিয়ে মেজর রসিকতা করেন। তিনি যোদ্ধাদের
খবর বের করার জন্য নৃশংসতার চূড়ান্ত করেন। তার কথা শুনতে রফিক বাধ্য। কিন্তু নির্দেশ মানার এবং মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে দুজনের মধ্যে আগাগোড়া একটা সূক্ষ্ম সীমারেখা টেনে
রেখেছেন লেখক কৃতিত্বের সঙ্গে।


উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদের স্বভাবসুলভ কিছু মজা আছে। মানুষের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কিছু আচরণ, প্রবণতা নিয়ে তিনি মজা করেন। কিন্তু সবকিছুর ভেতর দিয়ে প্রায় দুর্গম নিস্তরঙ্গ একটি গ্রামে অল্পকিছু সময়ের মধ্যে যে ঘটনাগুলো ঘটে, তাতে দেখা যায় যুদ্ধকালের রুদ্ধশ্বাস পরিবেশ আর মানুষের ঘুরে দাঁড়ানো, মুত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানোর মতো সাহসী হয়ে ওঠা।

[উপরের রিভিউটি আমারবই ডট কম থেকে সংগৃহীত। ]
.
বইটি থেকে ভালো লাগার কয়েকটি উক্তি দিলাম,
[
১। "মৃত্যু একটি ভয়াবহ ব্যাপার। মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে
কে কি করবে তা আগে থেকে বলা যায় না।"

২। "মানুষকে ভয় পাইয়ে দেবার মাঝে একটা আলাদা
আনন্দ আছে।"

৩। "বিশেষ বিশেষ পরিবেশে খুব সাধারণ কথাও
অসাধারণ মনে হয়।"

৪। "কোন কোন সময় মানুষের ইন্দ্রিয় অস্বাভাবিক
তীক্ষ্ণ হয়ে যায়।"



বই: ১৯৭১
লেখক: হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশক: আফসার ব্রাদার্স
মূল্য: ১২% ছাড়ের পর রকমারিতে ১১০ টাকা।


বইটির পিডিএফ ডাওনলোড লিংক: Click This Link

রিভিউ আমি নিজেই লিখতাম। হুমায়ূন আহমেদ এর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক আরেকটি উপন্যাস "অনীল বাগচীর একদিন" পড়া শুরু করেছি। বিজয়ের মাস এসেছে। তাই এই মাসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই পড়ছি। আরো কয়েকটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই পড়ব ইনশাআল্লাহ।

আপনারা মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত ভালো কিছু বই সাজেস্ট করবেন অনুগ্রহ করে।

শাহরিয়ার ইমন ভাইয়ের উপদেশে হুমায়ূন আহমেদ এর "আকাশ জোড়া মেঘ" পড়েছিলাম। ভাল লেগেছে খুব। শাহরিয়ার ইমন ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০০
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×