somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিরোধ ও সংলাপঃ চাচা-ভাতিজির কাল্পনিক কথোপকথন

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা কথা আগেই বলে রাখা ভালো। কথপোকথন অবাস্তব ঘটনা অবলম্বনে রচিত। বাস্তবের সাথে মিল পেলে আমি কিন্তু দায়ী নই। একদা এক দেশে ছিলো এক বিজ্ঞ চাচা ও এক জাদরেল ভাতিজি। চাচা ছিলো বিধান প্রণেতা। দীর্ঘদিন ভাতিজির বাবার সাথে লড়াই সংগ্রাম, রাজনীতি করেছে চাচা। একসাথে পথ চলে গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করেছে। বাবার মৃত্যুর পরও আষ্টেপিষ্টে ছিলেন একসাথেই। হঠাৎ কিযে হয়ে গেলো, চাচা চলে গেলেন স্রোতের বিপরীতে। আর স্রোতের বিপরীতে যাওয়া মানে তো বুঝেনই। ভাসতে ভাসতে অনেক দূরে চলে গেলেন চাচা। চাচার কাছে মনে হলো সংকট চলছে তাই আলোচনা, সংলাপ প্রয়োজন। অতঃপর চাচা ভাতিজিকে চিঠি দিলেন আলোচনায় বসার জন্য। ভাতিজিও সাথে সাথে তাতে সাড়া দিয়ে চিঠি পাঠালেন স্বগত জানিয়ে। চিঠিতে লিখে দিলেন ‘বিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত।’ পত্র বাহককে বলে দিলেন চাচা কি খাবে জেনে আসতে। অতঃপর চাচা তার দলবল নিয়ে চলে আসলেন আলোচনায়, সংলাপে।

প্রথমেই শুরু করলেন চাচা। বললেন, তুমিতো জানোই কি কথা বলতে বসেছি আমি দলবল নিয়ে। সামনে নির্বাচন। আমাদের কিছু দাবী আছে। বেশি দাবী করবো না। মাত্র সাতটা দাবী নিয়েই আলোচনা করতে চাই।

আমাদের প্রথম দাবী হলো-অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে তোমাকে পদ থেকে সড়ে দাড়াতে হবে, সংসদ বাতিল, সকলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন একং সাবেক নেত্রীসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

ভাতিজি উত্তর দিলেন-চাচা আপনিতো জানেন। বিধানের বাইরে আমি কিছুই করবো না। আর বিধানের প্রতি আপনারও শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত এবং আছে বলেই আমি জানি। আপনি যাদের ফুসলানিতে এসেছেন আমি তাদের মনবাঞ্চা পূর্ন করতেতো বসিনি। সংসদ বাতিল, নির্দলীয় সরকার গঠন, চুরির দায়ে জেলে যাওয়া ব্যক্তিকে তো ছাড়া বিধান সম্মত হবে না! আর মামলা বিচার না হতে বা তদন্ত না হতেতো বুঝার উপায় নাই সত্য না মিথ্যা কাকা?

আমাদের দ্বিতীয় দাবি হলো-গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

ভাতিজি উত্তর দিলেন-কাকাযে কি বলেন! গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি কোথায় পাবেন? যার মুক্তির আব্দার করছেন সেই নেত্রীই একদিন বলেছিলেন-‘একমাত্র পাগল ও শিশু ছাড়া কোন মানুষের পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়।’ তাহলে আপনিই বলেন কাকে দেব। যাকেই দায়িত্ব দেবো তাকেই আপনাদের কাছে মনে হবে হয় পাগল নয় শিশু। আর গঠন, পূনর্গঠন, বাক্স না মেশিন সে সবইতো বিধান মতে। আমার হাত কোথায় বলেন কাকা?

আমাদের তৃতীয় আব্দার হলো-বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

ভাতিজি উত্তর দিলেন-এতদিন যাবত কাজ করছি, আমি কি বুঝিনা কি করা ঠিক আর কি করা ঠিক নয়? সব স্বাধীনতাই দেয়া আছে। শুধু অপপ্রচার, হানাহানি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির স্বাধীনতা আমি দিতে পারি না, ওটা বিধানেও নাই কাকা।

আমাদের চতুর্থ দাবী হলো-কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল ‘কালো আইন’ বাতিল করতে হবে।

ভাতিজি উত্তর দিলেন-হয়রানিমূলক মামলা হলে আমি রাখি না। কাকার কি মনে নাই, আমার লোকজনের বিরুদ্ধে যেসব হয়রানি মূলক মামলা করেছিলো স্বাধীনতার সত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে, আমি দায়িত্ব নিয়ে সব মামলা থেকে জনগণকে মুক্তি দিয়েছি। আর কালো আইন যদি হয়ে থাকে তা বাতিল করার বিষয়ে আমি খুব সিরিয়াস। বাবার খুনিদের বাঁচাতে কালো আইন হয়েছিলো, তা বাতিল করেছি না কাকা?

আমাদের পঞ্চম দাবীর কথা এবার বলি-নির্বাচনের ১০ দিন পূর্ব থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।

ভাতিজি উত্তর দিলেন-কাকা, আমি নির্বাচন কমিশনের উপর পূর্ণ আস্থাশীল। কমিশন যদি মনে করে দরকার তবে করবে। আমি এতে বাধা দিব কেন। কি করা দরকার আর কি করা দরকার নাই তাতো ঐ বিধানেই বলা আছে। আপনি ওনিয়ে চিন্তা করবেন না কাকা।

প্রশ্নতো মা শেষ করেই ফেলেছি। এবার আমাদের ষষ্ঠ দাবীর কথা বলি-নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পুলিং বুথ, ভোট গণনাস্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশের ওপর কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনকালীন গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।

ভাতিজি উত্তর দিলেন-কাকা, গত নির্বাচনেও পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। তারা ভালো রিপোর্টই দিয়েছিলো। তারপরওতো আপনাদের পছন্দ হয়নি। আর দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমিতো না করিনি, কিন্তু ডেকে ডেকে আনতেতো পারবো না কাকা। আর গণমাধ্যম কর্মীরাতো স্বাধীন ভাবেই কাজ করছে। তবে সব বিধানের বাইরে কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেয়া কি ঠিক হবে। আপনি বিধান রচয়িতা, আপনিই বলুন!

আমাদের শেষ প্রশ্নটা করেই ফেলি। সাত হলো লাকী নাম্বার। সপ্তম দাবী হলো-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোনো ধরনের নতুন মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

ভাতিজি উত্তর দিলেন-কাকা, নতুন করে বিশৃঙ্খলা করলে কি করতে হবে তাতো বললেন না! আমি আপনার এই বিধানবহির্ভূত কথা রেখে কি আউল কাইজ্জা বাধামু? মামলা চলবে মামলার গতিতে। বিচার আচারের উপর আমি কোন নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না! আপনিও বিধানের বাইরে কিছু করতে চাওয়ার মানুষ নয়। তাই সব কিছু হবে বিধানের মধ্যে থেকে। আর কারো আব্দারেতো হঠাৎ করে বিধান বদলানো যায় না। বিধান বদলাতে সময় লাগে, সেই সময়ও কিন্তু হাতে নাই। ভবিষ্যতে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা যাবে। এখন আসেন খাওয়া দাওয়া করি।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×