somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বলে-বাড়িতে থাকো, শুনি-বাড়ি গিয়ে থাকো!

২৫ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চীন থেকে উৎপত্তি হয়ে তা আর চীনে নাই, সারা বিশ্বকে চিনে নিয়েছে করোনা। সংক্রামক এই রোকটি ইতোমধ্যে বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বর্তমানে মহামারি রূপ ধারণ করে একের পর এক দেশ, শহর, গ্রামে ছড়িয়ে গেছে। দেশে দেশে সরকারই শুধু নয় সব সরকারদের সংগঠন জাতিসংঘের কপালেও চিন্তার ভাজ পড়েছে এবং সকলকে সতর্ক করছে। আমাদের সরকারও নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে। যথা সময়ে নিয়েছে বা যথা সময়ে পদক্ষেপ নিতে পারেনি সেটা ভিন্ন বিতর্ক। এই বিতর্ক আছে এবং থাকবে যতদিন আমাদের মতের ভিন্নতা থাকবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। যার যার হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্যই এই ব্যবস্থা। সরকার বুঝাতে চেয়েছে এই সময় যার যার বাড়িতে সময় কাটাও, আর আমরা শুনলাম যার যার বাড়িতে (গ্রামের বাড়িতে) গিয়ে সময় কাটাও! যেমন কেউ বলেছিলো- ‘ঘুষ খাওয়া অন্যায় আর আমরা শুনি ঘুষ খাওয়া অন্য আয়!’ কী বিচিত্র আমাদের শ্রবণ শক্তি ও বুঝার ক্ষমতা!


করোনা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করোনা, এমন কেউ বলেনি! তাই উইকিপিডিয়া থেকে কিছু জানার চেষ্টা করলাম। উইকিপিডিয়া জানালো-করোনাভাইরাস (চীনা: 冠状病毒, ইংরেজি: Coronavirus) হলো একই শ্রেণীভুক্ত ভাইরাস যারা স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখি আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়। এই সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, অনেকসময় যা সাধারণ ঠাণ্ডাজ্বরের ন্যায় মনে হয় (এছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে, যেমন রাইনোভাইরাস), কিছু ক্ষেত্রে তা অন্যান্য মারাত্মক ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে, যেমন সার্স, মার্স এবং কোভিড-১৯। অন্যান্য প্রজাতিতে এই লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। যেমন মুরগির মধ্যে এটা উর্ধ্ব শ্বাসনালী সংক্রমণ ঘটায়, আবার গরু ও শূকরে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। মানবদেহে সৃষ্ট করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর মত কোনো ভ্যাক্সিন বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ আজও আবিষ্কৃত হয়নি।


করোনাভাইরাস রাইবোভিরিয়া পর্বের নিদুভাইরাস বর্গের করোনাভিরিডি গোত্রের অর্থোকরোনাভিরিন্যা উপ-গোত্রের সদস্য। তারা পজিটিভ সেন্স একক সূত্রবিশিষ্ট আবরণীবদ্ধ বা এনভেলপড ভাইরাস। তাদের নিউক্লিওক্যাপসিড সর্পিলাকৃতির। এর জিনোমের আকার সাধারণত ২৭ থেকে ৩৪ কিলো বেস-পেয়ার (kilo base-pair) এর মধ্যে হয়ে থাকে যা এ ধরনের আরএনএ ভাইরাসের মধ্যে সর্ববৃহৎ। করোনাভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন করোনা থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ মুকুট। কারণ দ্বিমাত্রিক সঞ্চালন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটির ক্লাব-আকৃতির প্রোটিন স্পাইকের কারণে একে দেখতে অনেকটা মুকুট বা সৌর করোনার মত। ভাইরাসের উপরিভাগ প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে যা ভাইরাল স্পাইক পেপলোমার দ্বারা এর অঙ্গসংস্থান গঠন করে। এ প্রোটিন সংক্রমিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে। ভাইরাসটি ডাইমরফিজম রুপ প্রকাশ করে। ধারনা করা হয়, প্রাণীর দেহ থেকে এই ভাইরাস প্রথম মানবদেহে প্রবেশ করে।
করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯ (কোভিড-১৯) মানুষের একটি সংক্রামক ব্যাধি যা গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রীয় রোগলক্ষণসমষ্টি সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস ২ (সার্স-কোভ-২) নামক এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে হয়ে থাকে। এই ব্যাধিটি সর্বপ্রথম ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের প্রারম্ভে ব্যাধিটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং বৈশ্বিক মহামারীর রূপ ধারণ করে।[৯][১০] ব্যাধিটির সাধারণ উপসর্গ হিসেবে জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে মাংসপেশীর ব্যথা, বারবার থুতু সৃষ্টি এবং গলায় ব্যথা দেখা যেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলো নমনীয় আকারে দেখা যায়, কিন্তু কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে ফুসুফুস প্রদাহ (নিউমোনিয়া) এবং বিভিন্ন অঙ্গের বিকলতাও দেখা যায়। সংক্রমিত হবার পরে এই ব্যাধিতে মৃত্যুর হার গড়ে ৩.৪%, যেখানে ২০ বছরের নিচের রোগীদের মৃত্যুর হার ০.২% এবং ৮০ বছরের উর্ধ্বে রোগীদের প্রায় ১৫%। এই রোগ সাধারণত সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুকণা থেকে ছড়ায়। এছাড়া সংক্রমিত ব্যক্তির জীবাণু হাঁচি-কাশির কারণে বা জীবাণুযুক্ত হাত দিয়ে স্পর্শ করার কারণে পরিবেশের বিভিন্ন বস্তুর পৃষ্ঠতলে লেগে থাকলে এবং সেই ভাইরাসযুক্ত পৃষ্ঠতল অন্য কেউ হাত দিয়ে স্পর্শ করে নাকে-মুখে-চোখে হাত দিলে করোনাভাইরাস নাক-মুখ-চোখের শ্লেষ্মাঝিল্লী দিয়ে দেহে প্রবেশ করে। আক্রান্ত হওয়ার ২-১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়; গড়ে ৫ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়। সাধারণত নাক কিংবা গলার শ্লেষা পরীক্ষাগারে নিয়ে বিপরীত প্রতিলিপিকরণ পলিমার শৃঙ্খল বিক্রিয়ার (rRT-PCR) মাধ্যমে রোগনির্ণয় করা হয়। এছাড়াও স্বাস্থঝুঁকি, বক্ষের সিটি চিত্রগ্রহণের (সিটি স্ক্যানের) মাধ্যমে ফুসফুস প্রদাহের (নিউমোনিয়ার) উপস্থিতি এবং উপসর্গ থেকেও ব্যাধিটি নির্ণয় করা যায়।
যাহোক, করোনা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম। আসলে আমার লেখার মূল বিষয় এটা নয়, আমার লেখার বিষয় আমাদের কর্মকান্ড নিয়ে। করোনা যেহেতু নিজে নিজে চলতে পারে না, বাহক মারফত এটা ছড়ায় তাই বাহক চেইন ভেঙ্গে দেয়ার জন্য আমাদের করনীয় হচ্ছে একটু বিচ্ছিন্ন থাকা। ভীর এড়িয়ে চলা, কোন কিছু ধরলে বা না ধরলেও বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হাচি কাশি দিলে শিষ্টাচার মেনে দেয়া যাতে এটা একজন থেকে অন্য জনে না ছড়ায়। আমরা যদি অফিস আদালতে যাই সেক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে সংক্রমনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই সরকার চিন্তা করলো সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা দরকার। সরকার দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলো এবং বললো যার যার বাড়িতে থাকুন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হবেন না। ছুটির ঘেষেণা পেয়ে সাধারণ-অসাধারণ মানুষ ছুটলো যার যার গ্রামের বাড়িতে। পরিস্থিতি এমন হলো যেন ঈদের ছুটি পেয়েছে। যে যা পেয়েছে তাই দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলো। মহামারি দেখা দিলে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকেও বলা হয়েছে যে আক্রান্ত হবে সে ঐ এলাকা থেকে বের হবে না এবং ঐ এলাকায় কেউ ঢুকবেও না। এটাই মহামারি আটকে দেয়ার মূল মন্ত্র। প্রয়োজনে আক্রান্ত এলাকার সবাই মরে শেষ হয়ে যাবে তাতে অন্তত অন্য এলাকাগুলো বেঁচে যাবে। কিন্তু আমরা ছুটি পেয়ে কী করলাম, সবাই যার যার ব্যাগ গুছিয়ে রওয়ানা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। এতে কেউ কেউ থাকতে পারেন ভাইরাসবাহী, কেউ যাত্রা পথে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবেন। বাড়িতে এসে সেই ব্যক্তি তাহার পরিবার, আত্মীয়, স্বজনকে আক্রান্ত করবেন। আবার কেউ আছেন ভালো কিন্তু বাড়িতে আক্রান্তদের কাছে এসে নিজেও আক্রান্ত হবেন।


এমন পরিস্থিতি ঈদের সময় হলে অভিযোগের অন্ত থাকতো না। কেউ বলতো গাড়ি নেই কেন, কেউ বলতো ফেরি নেই কেন, কেউ বলতো ভাড়া বেশি নেয় অথচ সরকার নজর দেয় না! কিন্তু এখন সেই অভিযোগ নেই। সরকার যার যার বাসায় থাকতে বলেছে, নিজ উদ্যোগে বাড়ি যাচ্ছে তাইতো কোন অভিযোগ নেই। ফেরি ঘাটে, ফেরিতে, রেল স্টেশনে, রেলে হাজার হাজার মানুষ দেখে মনে হলো তারা গ্রামের কোনায় কোনায় ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্বটা নিজ নিজ কাধে নিয়ে নিয়েছেন। স্বজনদের প্রতি আমার কোন বিদ্ব্যেষ নেই। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বাইরে বের হয়ে সে পথিমধ্যে আক্রান্ত হতে পারে, আক্রান্ত হলে বাড়ি এসে অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে, বাড়িতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে নিজে আক্রান্ত হতে পারে। একারনেই তাদের প্রতি এতটা ক্ষোভ প্রকাশ করছি আর আক্ষেপ করছি, এদের খোদা কবে কান্ড জ্ঞান দিবে? এই আমরাই আবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মতো প্রধানমন্ত্রী চাই! আমাদের দরকার হিটলারের মতো রাষ্ট্রনায়ক।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৩৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×