somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈশবের সেই শীত আর পদ্মা কিভাবে যেন হারিয়ে গেল।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি।
এই শীতে কি কারো খেজুরের রস খাওয়া হয়েছে?


আজকে অনেক দিন পর খেজুরের রস খেলাম। সেই সাথে খুব ছোট বেলার কথা মনে পড়লো, সেই শীত আর এখনকার শীতের মধ্যে কত পার্থক্যই না চলে এসেছে। যদিও জীবন থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে, তারপরেও সেই পুরানো দিনের কথা মনে করে সেখান থেকে কিছুটা হলেও সুখ পেতে চেষ্টা করি।

শৈশবের সেই শীত তো কবেই হারিয়ে গেছে এখন প্রকৃতির শীতও যেন হারাতে বসেছে। গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ করছি সেই হাড় কাঁপানো শীত বলতে যা বুঝায় সেই শীত এখন অনুপস্থিত। শীত আসছেও যেমন দেরীতে, যাচ্ছেও তাড়াতাড়ি। প্রতি বছর শীত আসলেও শীতের শৈশবের সেই সকালগুলো আর আসেনা। কোনদিন আর আসবেও না।

শীতের অনেক সকাল আগে খেজুরের রস আর মুড়ি দিয়ে শুরু করাতাম। আগে কত রকমের পিঠাই না বানানো হতো। যদিও রসের পিঠা, ভাপা পিঠা আর পাটিসাপটার প্রতি আসক্তিটা অন্য সবের চেয়ে একটু বেশিই ছিলো আমার। আমরা ভাই বোনেরা খড়ির চুলার পাশে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আগুন পোহাতাম আর পিঠা খেতাম। এখনও আমি সেই দিনগুলোকে চোখের সামনে নাচানাচি করতে দেখি।

সামনে যারা এই পৃথিবীতে আসছে বা নতুন প্রজন্মের কথা যদি বলি তারা এই সব কিছুর স্বাদ থেকে বলা যায় পুরোপুরি বঞ্চিত হতে যাচ্ছে। আমাদের সময়ের পিঠা গুলো এই সময়ের ফার্স্ট ফুড আর দামি সব খাবারের নামের নিচে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। আর সেই কারনেই কিনা জানিনা আমরা অনেক বাঙ্গালীরা বছরে একদিন পান্তা খেয়ে, আর পিঠা উৎসব পালন করে নিজেদের এক দিনের জন্য হলেও মনে করিয়ে দিই যে আমরা বাঙ্গালী।

আচ্ছা বলেন তো, আমরা সবাই বড় হয়ে কি হবো?

আমরা সবাই বড় হয়ে দাদা-দাদি, নানা-নানি হবো। তখন আমরা তাদেরকে আমাদের সময়ের গল্প বলে শুনাবো। যেমনটা আমরা শুনতাম আমাদের বাপ দাদাদের কাছ থেকে।
অবশ্য এটাও সত্য সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়। যে মানুষগুলো আমাদের পাশে বসিয়ে অনেক আদর করে এটা ওটা বানিয়ে খাওয়াতেন তাদের অনেকেই আজ আর জীবিত নাই। উনারাও বিদায় নিয়েছেন। সেই সাথে সেই আদর ভালোবাসা গুলোও যেন হারিয়ে গেছে।

(এটা সত্য মা খালাদের পর পিঠা বানানোর মত মানুষ আর কাউকেই দেখিনা। ফ্যামিলিতে যে দুচারটা ভাবি আছে ইনাদের কোনদিনও দেখলাম না পিঠা বানিয়ে বড় ভাইদেরকে খাওয়াতে।
আমার বউটাযে কেমন হবে সেটা নিয়ে একটু চিন্তাই আছি, কারন আমি কখনই চাইব না আমার বাচ্চা কাচ্চা এই সব পিঠার ফ্লেভার থেকে কখনও বঞ্চিত হোক)। ;) ;) ;)


খুব ছোট বেলাতে সাঁতার শিখেছি। গ্রামেই মানুষ হয়েছি, আর বাড়ির পাশেই ছিলো নদী। ছোটতে দুরন্তপনা এত বেশি ছিলো যে পাল্লা দিয়ে সবার সাথে নদী পার হতাম। ফিরতি পথে মাঝ নদীতে হাত-পা যখন অবশ হয়ে আসত তখন বড়ই ভয় পেয়ে যেতাম। সাথে সাথে ওপর ওয়ালাকে ডাকতাম আর বলতাম, "আল্লাহ আমাকে এই বারের মত তীরে পৌঁছিয়ে দাও। আমি কথা দিলাম এর পর আর কোন দিনও সাঁতার কেটে নদী পার হব না।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারপরেও, যতবারই আমি সাঁতার কাটতে যেয়ে বিপদে পড়েছি, প্রতিবারই আল্লাহকে আমি একই কথা বলতাম, তিনি প্রতিবারই কবুল করতেন।

এই পদ্মাকে নিয়ে কত গল্প ছিলো আমার। কোথায় যে হারিয়ে গেল এই পদ্মা, ভাবতে খুবই কষ্ট লাগে।

একবার পানি নিয়ে একটা চুক্তি হয়েছিলো ভারতে সাথে, কিন্তু সেটা কি "পানি" চুক্তি ছিল নাকি "চর" চুক্তি ছিল, সে ব্যাপারে আজও আমার সন্দেহ যায় না। আগে পুরা চর জুড়ে নদী ছিলো, এখন পুরা নদী জুড়ে চর হয়েছে। :( :(

এই পদ্মায় এক সময় জাল দিয়ে মাছ ধরেছি, নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, কখনওবা অন্য লোকের নৌকা চুপ করে খুলে নিয়ে তিন চারজন মিলে বের হয়ে যেতাম এদিক সেদিকে, জ্যোৎস্না রাতে অথবা গরমের সময় নদীর পাড়ে নৌকার উপর বসে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার করেছি।

আবার যদি পেতাম সেই দিনগুলো।






সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪০
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×