শেষ পর্যন্ত ১৮৯৪ সালের ১ লা নভেম্বর, জার তৃতীয় আলেকজান্ডার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন । এবং ছাব্বিশ বছরের নিকোলাস পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়ে বসলেন ।
কাজিন আলেক্সান্দার ('সান্দ্রো') এসে দেখলেন নিকি, বাবার ঘরের পাশের করিডরে অত্যন্ত বিষন্ন মুখে দাঁড়িয়ে আছেন । 'সান্দ্রো' বললেন নিকোলাস । 'আমার, আলিক্সের, মা'র গোটা রাশিয়ার কী হবে? আমি কখনো সম্রাট হতে চাইনি । আমি দেশ চালানোর কিছুই জানি না ।'
লিভাদিয়াতে শেষ সন্মান জানানোর জন্য যখন নৌবাহিনীর কামান গুলো তোপধ্বনি করছিল আর লিভাদিয়া প্রাসাদের জানালাগুলো সব কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল শোক প্রকাশের জন্য তখনই প্রাসাদের উপাসানলয়ে, নিকোলাই আলেক্সান্দরোভিচ রোমানভ, জার দ্বিতীয় নিকোলাস হিসেবে শপথ নিলেন ।
তারপরেই একই জায়গায় প্রিন্সেস আলিক্স, তাঁর জন্মগত লুথারান বিশ্বাস করে অর্থোডক্স ধর্ম গ্রহন করলেন আনুষ্ঠানিকভাবে । ধর্মান্তরণের সাথে সাথেই তাঁর নাম পাল্টে তিনি নাম রাখলেন, 'আলেক্সান্দ্রা ফিউদরভনা' । আমরা এরপর থেকে আলিক্সকে জারিৎসা আলেক্সান্দ্রা/ আলেকজান্ড্রা নামেই উল্লেখ করব ।
তার কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্ত পরিবার তৃতীয় আলেকজান্ডারের কফিন বহন করে, ট্রেনে করে সেইন্ট পিটার্সবুর্গের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন ।
১৭০৩ সালে জার পিটার রাজধানী সেইন্ট পিটার্সবুর্গে (রুশে-"সাংক্ত পেতের্সবুর্গ") সরিয়ে নেয়ার আগে রাশিয়ার আদি রাজধানী ছিল মস্কোতেই । পিটার ভেবেছিলেন, শুধু ভেবেছিলেন কেন বলেও ছিলেন প্রকাশ্যভাবে, মস্কোর মত একটা পশ্চাদপদ, প্রাচীন শহরে রাজধানী থাকলে রাশিয়াতে পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রবেশ করতে পারবে না সহজে ।
তারপরেও মস্কো ছিল তখন দ্বিতীয় রাজধানী, এবং বেশ কিছু দপ্তর তখনও মস্কোতে রাখা ছিল । আর জারেরা তখনও মস্কোর নদীর তীরে ক্রেমলিন চৌহদ্দির মধ্যে তাঁদের অনেকগুলো প্রাসাদ রেখে দিয়েছিলেন । বিয়ে, অভিষেক, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মত গুরুত্বপুর্ন সব ব্যাপারে তাঁরা প্রায়ই মস্কোতে আসতেন । এ ছাড়াও বছরে বেশ কয়েকমাস এসে তাঁরা মস্কোতে কাটিয়ে যেতেন যেন পুরনো রাজধানীর সাথে তাঁদের যোগসুত্র ছিন্ন না হয় ।
'ক্রেমলিন' বলতে অবশ্য আমাদের মনে মস্কো ক্রেমলিনের কথাই ভেসে ওঠে । আসলে প্রত্যেক বড় শহরেই তখন একটা করে 'ক্রেমলিন' ছিল । ক্রেমলিন মানে আসলে দুর্গ-প্রাচীর ঘেরা একটা জায়গা, ইংরেজিতে যাকে বলে 'সিটাডেল' । তবে সমস্ত ক্রেমলিনের মধ্যে মস্কো ক্রেমলিন ছিল সবচেয়ে বিখ্যাত ও বড় ।
কেননা এটা ছিল সম্রাটদের থাকার জায়গা ও সাম্রাজ্যের প্রাণ কেন্দ্র । একাদশ শতাব্দীতে প্রিন্স ইভান দোলগোরুকি (যদিও কথাটা ঐতিহাসিকভাবে সত্যি নয় প্রিন্স দোলগোরুকিকে অনেক সময় মস্কোর প্রতিষ্ঠাতাও বলা হয় ) এটার গোড়া পত্তন করেন বলা চলে । তখন ওক-গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল প্রাচীরটা ।
১৩৩০ এর দিকে যখন কিয়েভ থেকে মস্কোতে রাজধানী সরে আসে তখন বাইরের প্রাচীর পাকা করা হয়, ভিতরে ছিল, কয়েকটা গির্জা, প্রাসাদ, ব্যারাক, আস্তাবল এমনকী একটা মঠ পর্যন্ত । ১৪৪০ এর দিকে ইতালি থেকে কারিগর যেমন পিয়েত্রো আন্তোনিও সোলারি আর মার্কো রুফোকে আনিয়ে জার তৃতীয় ইভান প্রথম বড়সড় একটা প্রাসাদ বানান ।
শোনা যায় বিদেশীদের হাতে দালান কোঠা বানানো হলেও জাররা তাদের 'বিধর্মী ক্যাথোলিক' বলে খুব ঘৃণা করতেন । স্থপতিরা তাঁদের সাথে হাত মেলালে, পাশে রাখা জগ থেকে পানি ঢেলে, সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে, তোয়ালে দিয়ে তারপরে বলে দিতেন কীভাবে কী সব দালানকোঠা বানাতে হবে না হবে!
সপ্তদশ শতকের আগে রাশিয়াতে যাঁরা এতোকাল শাসন করে এসেছেন তাঁরা সকলেই 'রুরিকিড' বংশের রাজপুরুষ । তাঁরা মনে করতেন তাঁদের পুর্বপুরুষ হচ্ছেন ভাইকিং রুরিক, যিনি খুব সম্ভবত স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে ৮৫০ এর দশকের কোনো এক সময় এসেছিলেন তাঁর ভাইকিং সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ।
উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়া লুট করা, কিন্তু রাজত্ব গেড়ে বসেন তিনি । রুরিকের সাথের ভাইকিংরা ধীরে ধীরে স্থানীয় স্লাভদের সাথে মিশে জন্ম দিল নতুন জাতি 'রুস' এর । 'রুস' বলতে অবশ্য পুরো দেশটাকেও বোঝাতো । অনেক ঐতিহাসিক আবার এসব মানতে রাজী নন । রুরিক-ফুরিক সব মাতাল ও মূর্খ ভাইকিংদের গাল গপ্প!
সে যাইহোক, রুরিকিডরা প্রায় সাতশো বছর রাজত্ব করেছে । এই বংশের সবচেয় উল্লেখযোগ্যদের একজন ছিলেন জার চতুর্থ ইভান বা 'ইভান গ্রোজনি' বা ইভান দ্যা টেরিবল/ 'ভয়ংকর ইভান' (যদিও 'ইভান গ্রোজনি' র আসল তর্জমা 'ইভান দ্যা গ্রেট' ই হবে) ।
এরকম ভয়ংকর রক্তপিপাসু, নিষ্ঠুর, প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং খামখেয়ালী শাসক পৃথিবীতে খুব বেশি আসেন নি । তারপরেও অনেক রুশের কাছে ইভান গ্রোজনি জাতীয় বীর । জার পিটার নাহয় দেশকে আধুনিক করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ভয়ংকর ইভান না থাকলে দেশটাকে এতো বড় চেহারা দিতো কে!?!
কিন্তু ১৫৮৪ সালে ইভানের মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র প্রথম ফিওদর বেশীদিন চালাতে পারেন নি । ১৫৯৮ সালে নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে রাশিয়াতে রুরিক রাজবংশের শেষ বাতিটি নিভে যায় । এবং কয়েক বছর ফিওদরের ভগ্নীপতি বোরিস গোদুনভ দেশ চালান এবং তাঁর মৃত্যুর পরেই রাশিয়াতে গৃহযু্দ্ধ বেধে যায় । ১৬০৫-১৬১৩ এই সময়টাকে রুশরা বলে 'দুর্যোগের সময়' (টাইম অভ ট্রাবল--'স্মুতনোয়ে ভ্রেমিয়া') । তারপরে সমস্ত অভিজাতরা মিখাইল রোমানভকে হাতে পায়ে ধরে সিংহাসনে বসান ১৬১৩ সালে । এরপরে যাঁরা ছিলেন (আমাদের নিকি তক) পর্যন্ত সকলেই রোমানভ জার ।
আবার ১৮৯৪ সালে ফেরা যাক । তৃতীয় আলেকজান্ডারের কফিন নিয়ে ট্রেন এসে মস্কোতে থামল । লাশ রাখা হয়েছিল ক্রেমলিনে, সেখানে শহরের সবগুলো গির্জাতে প্রার্থনা চলল । তারপরে সেইন্ট পিটার্সবুর্গ । খোলা গাড়িতে করে কফিনটা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, পিছনে পরিবারের সবাই ।
সবার পিছনে আলিক্স/আলেকজান্ড্রা । কারন তখনো নিকির সাথে বিয়ে হয় নি তাঁর । আলেকজান্ড্রাকে দেখে প্রৌঢ়া মহিলারা সব বুকে ক্রুশ আঁকল । হবু শ্বশুরের কফিনের পিছন পিছন মেয়েটা রাজধানীতে এসেছে । এ মেয়ে যে অপয়া তাতে কারো কোনো সন্দেহ আছে !?!
আলোচিত ব্লগ
জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।
সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর
বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছবির গল্প, গল্পের ছবি
সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!
কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন