somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুইটা হাড় বজ্জাত

১১ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিপ্রতীপ
ক্লাস নাইনে পড়ি। প্রতি ক্লাসেই কিছু জঘণ্য পুলাপান থাকে। এটা সাধারণত সারা দেশের সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই প্রযোজ্য। স্বীকার করতে দ্বিধা নাই আমি নিজেও তাদের একজন। এই পুলাপানরা পারে না এমন কোন কাজ নাই। মামুলী সিগারেট খাওয়া থেকে পতিতাগমন সবই চলে। বিপ্রতীপ অতটা নয় তবে কমও নয়। ওর সিডির দোকানের ব্যবসা ছিল। সিডি ভাড়া দেওয়া হয় ওর দোকানে। বাংলা "মধু পূর্ণিমা" থেকে হিন্দি হয়ে পর্ণ, সবই আছে। বিপ্রতীপ সিগারেট খায় এবং বেশ ভালমতই খায়। একদম বয়ষ্কদের মতই নিয়মিত খায়। স্কুলের টিফিনের সময় স্কুলের পেছনের বাঁশঝাড়ে সিগারেট টানতে যায়। যাই হোক ঘটনা অন্য যায়গায়। বিপ্রতীপ ইদানিং প্রকাশ্যে সিগারেট টানা আরম্ভ করেছে। একদিন ও এক ইটের স্তুপের উপর বসে সুখটান দিচ্ছে, এমন সময় ওর চাচা সামনে পড়ে গেল। চাচা তো মহাক্ষেপা। বিপ্রতীপ বেশ ঠান্ডা মাথায় চাচাকে বোঝাল যে ও সাইন্সে পড়ে। সাইন্সের ছাত্রদের একটু আধটু সিগারেট টানতে হয়। কিছু করার নাই। এটা পড়াশোনার অংশ। বিপ্রতীপের পুরো পরিবারই অশিক্ষিত। ও সুযোগটা নিল। ওর চাচা আর কি করবে! কিছু বলতেও পারে না, কারণ পড়াশোনার ব্যাপার এর সাথে জড়িত। বিপ্রতীপ বেশ ভালই মজা মারল। এবং বিপ্রতীপ পড়ত ব্যাবসায় শিক্ষায়, বিজ্ঞানে নয়। ও যে আসলে কি পড়ত তা বোঝার সামর্থ্য ওর পরিবারের কারো ছিল না।

যোগজ
বাল্য বিবাহের শিকার একটি বালক। বার বছর হওয়ার আগেই সে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের সময় সে ছিল পঞ্চম শ্রেণীর এবং তার স্ত্রী ছিল তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তার স্ত্রীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেলেও সে স্কুলে পড়ত। এমনকি ভালভাবে পড়াশোনা করার জন্য তার পরিবার তাকে প্রাইভেটও পড়াত। আমরা তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। তার স্ত্রী তার পরিবারেই সাথেই এক বাড়ীতে বসবাস করত। তবে সে তার স্ত্রীর সাথে রাত কাটাত কিনা জিজ্ঞাসা করলে সে যদিও হ্যাঁ বোধক জবাব দিত, কিন্তু আমাদের এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। আমরা তাকে কয়েকবার প্রশ্ন করেছি সে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় কিনা। সে উত্তর দিত এ পর্যন্ত তিনবার মিলিত হয়েছে। অবশ্য মিলিত হওয়া নিয়ে আমাদের ধারণা তখনও যথেষ্ট ষ্পষ্ট ছিল না, অর্থাৎ মিলিত হওয়া বলতে আসলে কি বোঝায় তা নিয়ে আমরা যথেষ্ট সংশয়ে ছিলাম। আমরা ওকে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ জিজ্ঞাসা করলে ও এড়িয়ে যেত। এখন বুঝি আসলে আমাদের ধারণায় আসলেই বেশ কিছু সমস্যা ছিল। যাই হোক একবার সে বাসা থেকে বেশ কিছু টাকা নিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। কোন খোঁজ খবর নাই। তার পিতামাতা এবং আমাদের শিক্ষকরা বেশ চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লেও আমাদের এ নিয়ে কোন চিন্তা ছিল না। বরং আমরা আফসোস করতে লাগলাম এই ভেবে যে, "আহ! আমরাও যদি এভাবে উধাও হয়ে যেতে পারতাম!" আমাদের ভেতর কিছুটা ঈর্ষাও দেখা দিল। কিছুদিন চলে গেল। যোগজের বাবা মা অনেক সন্ধান করেও কোন কূল কিনারা করতে পারলেন না। এর মধ্যে যোগজ একদিন ফিরে আসল। সে শুধু ফিরেই আসল না, সাথে করে নিয়ে আসল এক রোমাঞ্চকর কল্পকাহিনী। যোগজ মনের দুঃখে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল। মনের দুঃখের কারণ হিসেবে সে বাবা মার বকাবকিকে দাঁড় করাল। পরে সে নাকি ঘুরতে ঘুরতে এক পাচারকারী দলের খপ্পরে পড়েছিল। পাচারকারীরা তাকে আটকে রেখেছিল। তার উপর নির্যাতন চালিয়েছিল। এর প্রমাণস্বরুপ সে তার হাতে আগুনের ছ্যাকা খাওয়া দাগ দেখাল। পরে তাকে নাকি বাক্সে করে একটা পিকআপ ভ্যানে নিয়ে যাবার সময় সে বাক্স ভেঙ্গে বের হয়ে আসে। তারপর চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দেয় রাস্তায়। এতে সে ডান হাতে বেশ চোট পায় তবে কোথাও ছিলে যায় নি। ডান হাতে চোট পাওয়ার কারনে তাকে বেশ কয়েকদিন বাড়ির কাজের "হাতের লেখা" অংশ অথবা অন্যান্য লেখার কাজ করতে হয় নি। তার কথা সবাই বিশ্বাস করেছিল। কারণ তার ছ্যাকা খাওয়ার দাগটা বেশ বড় ছিল। ঐটা দিয়েই সে বাজিমাত করে নেয়। তার সাথের টাকা পয়সা সব পাচারকারীরা রেখে দিয়েছে। তাই তার সাথে কোন টাকা পয়সাও নাই। কপর্দকশূণ্য বীর বালক যোগজ যে পাচারকারীদের খপ্পর থেকে এভাবে বীরের মত বের হয়ে এসেছে তাতেই আমরা সবাই খুশী। সে বীরের মত কিছুদিন কাটাল। কিন্তু হাজার হলেও আমরা বালকেরা বন্ধু মানুষ। আমরা কিছুদিনের মধ্যেই তার আসল কাহিনী জানলাম। তার ছ্যাকা খাওয়ার আসল কারণও জানলাম। তার টাকার রাজকীয় ব্যাবহারও বিভিন্ন সময় দেখতে পেলাম। যোগজ এতদিন কোথায় ছিল তাও জানলাম। আসলে সে তার এক দূরসম্পর্কের নানীর বাড়ি, টাঙ্গাইলে চলে গিয়েছিল। তার এই নানী একা থাকত। বুড়ির খোঁজ খবর কেউ রাখত না। যোগজ বুড়ির কাছে যেয়ে বাড়িতে সবাই তার উপর কেমন অত্যাচার করে সেটা জানাল। সে একটা শাড়ীও নিয়ে গিয়েছিল নানীর জন্য। এবং শাড়ী দিয়ে নানীকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করিয়েছিল যেন তার আত্মগোপনের কথা কাউকে সে না জানায়। সে যে বাকী জীবন তার নানীর সাথেই, নানীর দেখাশুনা করে কাটিয়ে দিয়ে চায় তাও জানিয়েছিল। অবহেলিত বৃদ্ধা আপ্লুত হয়েছিলেন অবহেলিত বালকের কথায়। আর হাতের ছ্যাকার দাগ হয়েছিল ডিম সিদ্ধ করতে যেয়ে গরম পানি পড়ে। ততদিনে বেশ অনেক দিন পার হয়ে গিয়েছে। সময়ের সাথে অনেক ক্ষতেই নিরাময়ক প্রলেপ পড়ে। পরবর্তীতে তার আসল কাহিনী প্রকাশ হয়ে পড়লেও কেউ তাকে মারধোর করে নাই। বরং কৌতুহলের সাথে আমাদের শিক্ষক তার উধাও হবার বিভিন্ন বিবরণ, ছ্যাকা খাওয়ার দাগের ইতিবৃত্ত নিয়ে হাসি হাসি মুখে প্রশ্ন করছিলেন এবং আসল ঘটনা জেনে তৃপ্তিবোধ করছিলেন। যোগজ তার উধাও হবার সময়ের টাকা দিয়ে একটা ভিডিও গেমসের মেশিন কিনেছিল। একশ-একশ বিশ টাকায় তখন যে প্লাষ্টিকের, পেন্সিল ব্যাটারী চালিত মেশিনগুলো পাওয়া যেত, সেই মেশিন। আমরা ওর মেশিনভাগ্যকে হিংসা করতাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:২৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×