somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষকদের যৌন নির্যাতন

১৩ ই জুলাই, ২০১১ ভোর ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু হাছা কথা কই। আমাগোর শিক্ষকরা অনেক আগে থিকাই এইসব চালাইয়া আইতাছে।

ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমাগোর হাবীব স্যার। আমরা সকালে প্রাইভেট পড়তে যাইতাম উনার কাছে। উনি প্রায়ই আমাদের উনার খাড়া ধোন হাতাইতে দিতেন। বেশ লম্বা খাড়া ধোনখান আমরা অনেকেই হাতাইছি। উনার পিচ্চি পোলা আছিল এখখান। সে আইসা আমাগোরে কৈত, গতকাল রাইতে আব্বারে দেখলাম আম্মার পেটিকোট উঠাইয়া আম্মারে গুতাইতাছে। খুব খারাপ লাগতাছে আমার কথাগুলি পড়তে তাই না? খুবই অশালীন এবং কুরুচীপূর্ণ তাই না? কিন্তু এইটাই বাস্তবতা। তাও আজকের বাস্তবতা নয় ১৩/১৪ বছর আগের বাস্তবতা।

আমার ছোট বইনে যে স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ত সেই স্কুলের হেডমাষ্টারের আলুর দোষ আছিল। স্কুল শেষে বিকাল পাচটা থিকা প্রায় রাইত আটটা এমনকি নয়টা পর্যন্ত ছাত্রীরা তার কাছে পড়ত। বুড়া শিক্ষক মানুষ, সম্মানীত ব্যাক্তি। ছাত্রীরা তার মেয়ের থিকাও ছোট। তার মেয়ের বিয়া হৈয়া বাচ্চাকাচ্চা হৈয়া গেছে। সেই শিক্ষকও আলুর দোষ ছাড়াইতে পারল না। প্রায়ই পড়া ধরার নাম কৈরা মেয়েদের পিঠে মা মা বৈলা হাত বুলাইত। অভিবাবকরা তারে এতটাই বিশ্বাস করত যে বেশী রাত হৈলে কোন কোন ছাত্রীরে সে নিজে রিক্সায় কৈরা বাসা পর্যন্ত পৌছাইয়া দিয়া যাইত। ছাত্রীদের দিয়া উনি গা , হাত-পা টিপাইতেন। কিন্তু একদিন একটু বেশীই কৈরা ফালাইলেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হৈয়া ছাত্রীরা সবাই দলগতভাবে তার স্কুল বয়কট করল। কেউ আর তার স্কুলে পড়বে না। উনি আবার মাফ-টাফ চাইয়া মা ডাইকা ছাত্রীগোর পায়ে পর্যন্ত ধরলেন যাতে উনার স্কুল ছাইড়া কেউ না যায়।

ক্লাস সিক্সে কি সেভেনে পড়ি। আমাগোর সামনেই আমাগোর এক মাষ্টার এক ছাত্রীর কাছে যাইয়া তার বুকে আঙ্গুল দিয়া হালকা ভাবে টোকা মাইরা কৈতাছে "ক" পড়া বল। উনার চরিত্র আবার ফুলের মতন পবিত্র। স্কুলের ক্লাস নাইনের এক ছাত্রীরে উনার পছন্দ হৈছে। ঐ ছাত্রীর বাবার কাছে বিয়ার প্রস্তাব পাঠানোর পরে ছাত্রীর বাবা মুখের উপর বৈলা দিছেন, ঐ "খ"-লুইচ্ছার কাছে আমি আমার মেয়ে বিয়া দেব না। পরে ভাগাইয়া নিয়া বিয়া করছেন। উনি অবশ্য একবার মাইরও খাইছেন।

অনেকদিন ধৈরাই আমাগোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদের নানা ধরনের যৌন নির্যাতন চলে আসছে। একেবারে ধর্ষনে না গড়াইলে পত্রিকার খবর হয় না।

আমাদের পরিবারে ইভ টিজিংয়ের শিকার মেয়েটার বাবা-মা বখাটেরে কিছু বলতে না পাইরা অক্ষমতা ঢাকতে উল্টা নির্দোষ মেয়েটারে বকাঝকা করে। মেয়েরাও এইসব যৌন নির্যাতন পরিবারের কাছে বলতে সংকোচ বোধ করে। রক্ষণশীল পরিবার ব্যাবস্থায় মেয়েরা বাবা-মায়ের কাছে এইধরণের যৌনহয়রানীমূলক বিষয়ে অভিযোগ করতে লজ্জাবোধ করে। শাড়ী-চুড়ি-স্নো-আলতা মার্কা সামাজিক অবস্থানে মেয়েরা যদি আরও আগে থেকে মুখ খুলতে, অভিযোগ করতে শিখত তাহলে আজকের এই জঘণ্য অবস্থা দাড়াইত না। ১৫ বছর আগের সেই বুকে হাত দেওয়া আজকে যৌনাঙ্গ পর্যন্ত গড়িয়েছে। এই সাহস একদিনে হয় নাই। দীর্ঘদিনের বিনা বাধায় চলতে থাকা যৌন নির্যাতন আস্তে আস্তে আজকে প্রকট রুপ ধারণ করেছে। ১৫ বছর আগের সেই যৌন নির্যাতন আজকে ধর্ষনে এসে দাড়িয়েছে। এগুলো মূলত সেই লুকোছাপা করারই ফল।

আমাদের মেয়েদের কথা বলতে দিতে হবে। তারা যাতে এই আত্মঘাতী সংকোচ ছাড়িয়ে নিজের সমস্যার কথা বলতে শিখে সেই ব্যাবস্থা করতে হবে। ঘা দিন দিন চেপে রাখলে, লুকিয়ে রাখলে পরে তা বড় হয়ে পুরো একটা হাত বা পা কেটে ফেলে দেওয়ার মত অবস্থার সৃষ্টি করে। আমরা ঘা বড় করতে দিয়েছি, আজকে হাত কাটছি। শুরুর দিকেই ঘা দেখালে যথাযথ চিকিতসা করে সুস্থ করা যেত। মেয়েরা যেন যে কোন ব্যাপারে, যে কোন যৌন হয়রানীমূলক আচরনে সরাসরি কথা বলে, অভিযোগ করে সেই মানসিক শক্তিটুকু তাদের অর্জন করা দরকার। সেদিনে সেই "খ"-মাষ্টার "ক"-এর বুকে হাত দেওয়া মাত্র যদি "ক"-সরাসরি বলে উঠত, "স্যার আপনি আমার বুকে হাত দিচ্ছেন কেন?", সেদিন যদি আমরা একপাল নপুংশকের দল আমাদের সহপাঠীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতাম, হেডস্যারের কাছে বিচার দিতাম, অভিবাবকদের কাছে বিচার দিতাম তাহলে হয়তো আজকের এইসব ধর্ষন ঘটত না। কিন্তু আমরা ভয় পেতাম, সংকোচ বোধ করতাম, যৌনতা মানেই এ ব্যাপারে মুখ সুতা দিয়ে সেলাই করে বন্ধ করে রাখতে হবে, বাবা-মাকে এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না এই ছিল আমাদের মানসিকতা। আমাদের হাবীব মাষ্টার যে একজন শিশুযৌননির্যাতনকারী ছিলেন সে ব্যাপারে সন্দেহ নাই। হয়তো কোনদিন তার নাম পত্রিকায় দেখতে পারি, শিক্ষক কর্তৃক তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী ধর্ষিত। সেইদিন বাবা-মারে বলতে পারি নাই যে হাবীব স্যার আমাদের হাত দিয়া উনার নুনু হাতায়। হয়তো আছিলাম পুংটা, তাই ব্যাপারটা চাইপা গেছি। কিন্তু একটা ছাত্রীর ক্ষেত্রে এইধরণের ঘটনা ঘটলে সেইখানে পুংটা ভাবার কোন অবকাশ নাই। আবার কোন ছাত্র যদি স্যারের দ্বারা ধর্ষিত হয় তাহলে হয়তো এইটা কোনদিন সেই ছাত্র তার বাবা মারেও বলবে না, পত্রিকাতে আসা তো দুরের কথা। আজকে যদি হাবীব স্যার ধর্ষকের খাতায় নাম লিখায় তবে তাতে কিছু দায় আমার এবং আমার বাবা-মারও থাকবে।

আমাদের কথা বলা শিখা দরকার। অভিযোগ করা শিখা দরকার। আমাদের বাবা-মায়ের উচিত এইসব বালছাল রক্ষনশীলতা ছাইড়া পুলাপানের সাথে সহজ হওয়া। পুলাপান যাতে এইসব লুকাইয়া না রাইখা এইসব সমস্যা ছোট থাকতে থাকতেই নির্মূল করে যাতে আর কোনদিন এইসব সমস্যা বড় হৈয়া ধর্ষনে পরিণত না হয় সেইদিকে আমাদের আলোকপাত করা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৩৮
৪৬টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×