somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়ি নির্মান করছেন? কন্সট্রাকশন কাজের খুটিনাটি সম্পর্কে জেনে নিন

০৫ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কন্সট্রাকশন কাজ করতে গেলে খুবই পরিচিত কিছু বিষয় একেবারে অপরিচিত হিসেবে সামনে দাড়িয়ে যায়। আমরা আমাদের একটি ধারাবাহিক ১৫ পর্বের লেখা লিখতে যাচ্ছি যেখানে আমরা নিয়মিত ভাবে কন্সট্রাকশন সম্পর্কিত বিভিন্ন মালামাল সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বিষদ আলোচনা থাকবে। কারন যারা নিজেরা বাড়ির কাজ করতে যান তাদের এই মালামাল সম্পর্কিত বিষদ জ্ঞান না থাকার দরুন প্রায়শই ব্যাপক ভাবে ঠকতে হয় এবং অতিরিক্ত খরচ করতে হয়।

আমাদের আজকে বিষয় হচ্ছে রড। ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষায় একে রিইফোর্সমেন্ট বলা হয়। সোজা ভাষায় অনেেকে এটিকে বিল্ডিং এর হাড় বা বোন বলে থাকেন। আসুন জানি রড সম্পর্কিত কিছু খুটিনাটি বিষয়াদি

১) রড


আমাদের দেশে যে রড গুলো পাওয়া যায় এগুলোকে টেকনিক্যাল ভাষায় বলা হয়ে থাকে কার্বন স্টিল। সহজ ইংরেজিতে এটাকে Rebar বলা হয়। রড ব্যাবহার করা হয় মুলত বিল্ডিং এর উৎপন্ন টেনশন স্ট্রেস সুরক্ষা করার জন্য। এবং এই স্ট্রেস বের করার জন্য সুন্দর কিছু ক্যালকুলেশন আছে যা সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা বের করে থাকেন। এই সেই অনুসারে রড এর পরিমান নির্ধারন করে থাকেন। তাই ভবন নির্মান করার পুর্বে আপনার বিল্ডিং এর ঠিক কতটুকুন রড লাগবে সেটার পরিমান বের করার দায়িত্ব মিস্ত্রিকে না দিয়ে একজন ভালো ইঞ্জিনিয়ারকে দিন।

রড কেনার আগে স্পেসিফিকলি ঠিক কত মিলির কত টন রড লাগবে তার হিসেব করে নিন। মনে রাখবেন একেবারে ব্লাইন্ড মানে অন্ধের মতন রড কেনা শুরু করবেন না। এটা একটা মস্ত বড় ভুল। পুরো বাড়িটি নির্মান করতে বা যতটুকন নির্মান করবেন ঠিক ততটুকুন রড এর সঠিক এস্টিমেট করিয়ে নিন ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে। কেন করবেন? কারন এতে ওয়েস্টেজ কম হবে। কখনোই মিস্ত্রিকে জিজ্ঞেস করবেন না যে আপনার কতটুকুন রড লাগবে। তারা আন্দাজে একটু বেশি করে বলে ফেলে। এটা আপনার টোটাল বাজেটের উপরে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।


রড কেনার সময় জেনে নিন কোন মিলিমিটিার ডায়ার রড ঠিক কত টন লাগবে। সাধারন ৫ থেকে ৬ তলা পর্যন্ত ১০ মিলি, ১২ মিলি, ১৬ মিলি এবং সর্বোচ্চ ২০ মিলিমিটার রড লাগে। এছারা ২২ মিলি, ২৫ মিলি হয়ে ৫০ মিলি রড পর্যন্ত আছে। সাধারনত ৪০ গ্রেড, ৬০ গ্রেড এবং ৭৫ গ্রেড এর রড পাওয়া যায়। এছারা আছে ৫০০ওয়াট, এক্সট্রিম সহ আরো কিছু স্পেসিফিকেশন। যদি আপনার বাড়িটি ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা ডিজাইন করে থাকেন তবে তিনিই বলে দেবেন ঠিক কোন গ্রেডের রড ব্যাবহার করতে হবে। মিস্ত্রিরা সাধারন ৪০ গ্রেড এবং ৬০ গ্রেড এর বেশি নিতে চায় না কারন এর বেশি রডগুলো হার্ডনেস একটু বেশি এবং তাদের কাজ করতে অসুবিধে হয়। তবে টিক কোন রডটি আপনার বাড়ির জন্য উপযুক্ত তার সিদ্ধান্ত একজন ইঞ্জিনিয়ারই দিতে পারবেন।

এবার আসুন রড কেনার আগে রডের কিছু স্পেসিফিক্যাশন সম্পর্কে জানি। বাজারে বিভিন্ন কম্পানির বিভিন্ন ধরনের রড পাওয়া যায়।
বিএসআরএম, কেএসআরএম, আরএসআরএম এবং একেএস। এই কম্পানিগুলো এখন বর্তমানে একেবারে টপে রয়েছে। এছারা বুয়েট এর অত্যাধুনিক ল্যাবে এই কম্পানিগুলো রডের রিপোর্ট সবচেয়ে ভালো। রড কেনার আগে জেনেনিবেন সবগুলো কম্পানির রডের দাম। কারন বাংলাদেশে ডলারের দামের মতন রডরে দাম ক্ষনে ক্ষনে আপ ডাউন করে। আজ যদি একটা থাকে তবে কাল আবার অন্যটা হয়। আর রড কেনার সময় খেয়াল করুন রডের কম্পানি এবং লোকাল ডিলারের দামের ব্যাবধান কতটুকুন।


বিএসআরএম(বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিল লিমিটেড):- এই কম্পানিটি বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রড ম্যানুফ্যাকচার করে। চট্টগ্রামের বেশকয়েকটি স্থানে তাদের সুবিশাল সব ফ্যাক্টরি রয়েছে। এর মধ্যে ভাটিয়ারির ফ্যাক্টরিটি দক্ষিনএশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধুনিক ফ্যাক্টরি। মানের দিকদিয়ে এরা অনন্য। এই কম্পানিটির রড বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রয় হয়। এটা মুলত এদের বাজারে ডিমান্ড বেশি থাকার কারনে হয়। ঢাকায় এই কম্পানির উত্তরা জসিমউদ্দিন এবং পল্টনে দুইটি অফিস রয়েছে, এছারা সোনারগাওতে ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ের পাশে রয়েছে সুবিশাল গোডাউন। এদের রড কেনার আগে কম্পানির দাম দেখে নেবেন কারন বাজারে কৃত্তিম সংকট সৃস্টি করে মাঝে মধ্যে দাম বাড়ানোর ঘটনা ঘটে।


কেএসআরএম (কবির স্টিল রি-রোলিং মিল লিমিটেড):- মোটামুটি দ্বিতিয় পজিশনে আছে এই কম্পানিটি। এদের রডের কোয়ালিটি বিএসআরএম এর প্রায় সমান। তবে দামে এরা অনেকটা কম। দেখা যায় টন প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মতন কম থাকে বিএসআরএম থেকে। কেনার আগে কম্পানির মুল দাম জেনে নেবেন। অনেক লোকাল দোকানদার বিএসআরএম এবং কেএসআরএম একই দামে বিক্রিকরে থাকনে। কিন্তু বাস্তবে এই কম্পানির রডের দাম বেশ কম থাকে। এবং এরা মানের দিকথেকেও অনেক ভালো।

আরএসআরএম( রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিল লিমেটেড):- এই কম্পানিটির নাম শুনলেই অনেকেই কিছুটা চোক বাকিয়ে তাকান। তবে আসরে এই কম্পানিটি সত্যিকার অর্থেই অসাধারন কোয়ালিটির রড বানায়। তবে এদের মার্কেটিং কিছুটা ঘাটতি থাকার দরুন অতটা পরিচিত হয়নি। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে এদের নিজস্ব শিপব্রেকিং ইয়ার্ড আছে যার মানে হচ্ছে এদের স্ক্রাপ গুরো একেবারে সলিড হয়ে থাকে। তাছারা এদের কোয়ালিটি অনুসারে দাম অনেক সাশ্রয়ি। বাজারে এত সুন্দর কোয়ালিটির রড এত কম দামের একমাত্র এই কম্পাটিই দিয়ে থাকে।

একেএস( আবুল খায়ের স্টিল):- রড এর জগতে এরা বেশ নতুন হলেও মানে দিক দিয়ে বেশ বালো। এদের অত্যাধুনিক ফ্যাক্টরি রড এর কোয়লিটি ধরে রাখার চেস্টা করে। তাছারা বাজারে এই কম্পনির রড এর সরবরাহ ভালো থাকে তাই দামে সাশ্রয়ি হয়ে থাকে। যদি আপনি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সাপ্লাই চান তবে এই কম্পানি আপনার আশাহত করবে না।

এছারাও বাজারে আনোয়ার স্টিল, বন্দর স্টিল, বায়জিদ স্টিল, চাকদা স্টিল সহ বেশ কিছু কম্পানি আছে। রড কেনার পরে ডেলিভারি নেয়ার সময় আপনার প্রজেক্টর এর রাস্তার সাইজ দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন সোজা রড নেবেন নাকি ভাজ করা রড নেবেন। সোজা রড নিলে সেগুলো সোজা করার জন্য মিস্ত্রিদের আলাদা সময় নস্ট করতে হবে না কাজ দ্রত হবে। আর ভাজ করা রড নিলে সেগুলো সোজা করতে আলাদা ভাবে সময় নস্ট হয় এবং অনেক সময় মিস্ত্রিরা সঠিক ভাবে ভাজ না করেই রড কেটে ফেলে। তবে সোজা রড এর গাড়ি হয় অনেক বড় যা ছোট রাস্তায় প্রবেশ করে না।

এছারা ছোটখাট দুর্ঘটনা এরানোর জন্য রড ডেলিভারি দেয়ার সময় রডের মাথায় ক্যাপ আছেকিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। ক্যাপ অনেক সময় হাত পা কেটে ছিরে যাওয়া থেকে রক্ষা করে এবং আনলোডিং এর সময় এবং কাজের সময় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে। রডের ওজন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।

১০মিলি :- প্রতি ফিটে ওজন ০.১৮৭ কেজি
১২ মিলি:- প্রতিট ফিটে ওজন ০.২৭ কেজি
১৬ মিলি:- প্রতি ফিটে ওজন ০.৪৮ কেজি
২০ মিলি:- প্রতি ফিটে ওজন ০.৭৫ কেজি
২২ মিলি:- প্রতি ফিটে ওজন ০.৯০ কেজি

এখন আপনার কত বান্ডিল রড আসলো এবং প্রতিটি রড এর লেন্থ আছে কত ফিট তা জানলে আপনি খুবই সহজে রডের ওজন বের করে ফেলতে পারবেন। রড সম্পর্কে এতদসংশ্লিস্ট আরো বিস্তারিত জানতে কল করতে পারে
Engr. Boshor Siddiqe , Cell:- 01763851107, 01768096136


পরবর্তি পর্বগুলো আরো ১৪ টি আইটেম থাকছে। তাই আমাদের এই সিরিজের সাথেই থাকুন নিয়মিত এবং জেনে নিন নির্মান জগতের খুটিনাটি সম্পর্কে।

২) সিমেন্ট
৩) লোকাল বালু
৪) লাল বালু/সিলেট বালু
৫) ইটের খোয়া/পাথর এর বোল্ডার ভাঙ্গা
৬) এক নম্বর ইট
৭) টাইলস
৮) প্লাম্বিং বা স্যানিটারি সম্পর্কিত সকল মালামাল
৯) ইলেকট্রিক সংশ্লিষ্ট মালামাল
১০) জানালার থাই এবং গ্লাস
১১) কাঠের দরজা এবং চৌকাঠ
১২) জানালার গ্রিল
১৩) সকল প্রকারের রঙের মালামাল
১৪) সিড়ি এবং ছাদের সকল প্রকার রেইলিং
১৫) বাথরুমের ফিটিংস এবং ফিক্সার
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:১৫
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×