ছবি - wikipedia.org
দেশ বরেন্য, প্রখ্যাত ও শক্তিমান অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান আর নেই। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি,সকাল ৯টা ০৬ মিনিটে সূত্রাপুরের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন)।
আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান (সংক্ষেপে এটিএম শামসুজ্জামান হিসেবে অধিক পরিচিত) জন্ম ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে। গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর জেলার ভোলাকোটের বড়বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছিলেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিলেন আরেক অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে। তারপর জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। তার পিতা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মাতা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।
ছবি-daily-sun.com
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। রক্তে অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ায় গত বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছিলো। কিন্তু হাসপাতালে থাকতে না চাওয়ায় শুক্রবার বিকেলে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। এর আগেও একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। গেলো বছরের ৩০ এপ্রিল তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিলো এবং মৃত্যু ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১।মৃত্যকালে এ টি এম শামসুজ্জামানের বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ভাই রতন জামান জানান, শনিবার বাদ জোহর এটিএম শামসুজ্জামানের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নারিন্দার পীর সাহেব তার গোসলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। এরপর বাদ আসর জুরাইন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
ছবি - bdnews24.com
তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশী শক্তিমান অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার।অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ছয় বার। তার মাঝে -দায়ী কে ? (১৯৮৭) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, ম্যাডাম ফুলি (১৯৯৯), চুড়িওয়ালা (২০০১) ও মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা বিভাগে,এবং চোরাবালি (২০১২) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে পুরস্কৃত হন। এছাড়া, ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সময় তিনি আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন।শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।
চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু - এটিএম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর "বিষকন্যা" চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে ।
কাহিনী,চিত্রনাট্য ও পরিচালনা - প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য।এ ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক।এছাড়াও খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তদের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর ২০০৯ সালে প্রথম পরিচালনা করেন শাবনূর-রিয়াজ জুটির এবাদত নামের ছবিটি।মৃত্যু পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন।
কৌতুক চরিত্র -অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে এবং চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন কৌতুক অভিনেতা হিসেবে।। জলছবি, যাদুর বাঁশি, রামের সুমতি, ম্যাডাম ফুলি, চুড়িওয়ালা, মন বসে না পড়ার টেবিলে চলচ্চিত্রে তাকে কৌতুক চরিত্রে দেখা যায়।
খল চরিত্র - ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের নয়নমণি চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনা আসেন তিনি এবং এ ছবিই তার অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ।এছাড়াও লাঠিয়াল,অশিক্ষিত, গোলাপী এখন ট্রেনে, পদ্মা মেঘনা যমুনা, স্বপ্নের নায়ক এসব ছবিতে তিনি খল চরিত্রে অভিনয় করেন ।
প্রধান চরিত্র - ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত "দায়ী কে?"চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
পার্শ্ব-চরিত্র - তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রে পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনয় করেন।তিনি রেদওয়ান রনি পরিচালিত চোরাবালিতে অভিনয় করেন ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এছাড়াও অনন্ত প্রেম, দোলনা, অচেনা, মোল্লা বাড়ির বউ, হাজার বছর ধরে, চোরাবালি এসব চলচ্চিত্রেও পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনয় করেন।
ছবি -youtube.com
টিভি নাটক - এটিএম শামসুজ্জামানের অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন।অভিনয় জীবনের শুরুতে ষাটের দশকে টিভি নাটকে অংশগ্রহন ছিল তার। তার উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকসমূহ হল ,রঙের মানুষ,ভবের হাট,ঘর কুটুম,বউ চুরি, নোয়াশাল (২০১৪), শতবর্ষে দাদাজান (২০১৫) ,ছলে বলে কৌশলে,ভালোবাসা কারে কয় ইত্যাদি।তাছাড়া জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান হানিফ সংকেতের ইত্যাদিতেও তিনি ছিলেন নিয়মিত মুখ।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে তার অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।”
আমরা সবাই উনার রুহের মাগফেরাত কামনা করি ।মহান আল্লাহপাক উনার বিদেহী আত্মাকে শান্তি দিন এবং উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন।
তথ্যসূত্র ও সহযোগীতায় - দৈনিক ইত্তেফাক,উইকিপিডিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:০২