somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেডিও ভূমি নিয়ে কুমার বিশ্বজিতের জালিয়াতি

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীতিমালায় নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে শেয়ার হন্তান্তর হয়েছে নতুন ছাড়পত্র পাওয়া একটি বেসরকারি এফএম রেডিও’র। মৃত্যুর মাত্র ছয় মাসের মাথায় আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা ডা. জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু’র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘রেডিও ভূমি এফএম ৯২.৮’ নিয়ে চরম জালিয়াতি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। সরকার থেকে ছাড়পত্র পাওয়া এই এফএম রেডিওটির অধিকাংশ শেয়ারের মালিক হওয়ার পরও, মরহুম জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাটকো ইন্টারন্যাশনাল’কে না জানিয়ে এবং মরহুম টিংকুর স্ত্রী (মৃত্যুর পর টিংকু’র যাবতীয় অস্থাবর-স্থাবর সম্পদের বর্তমান মালিক) মিসেস খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিনের সম্পূর্ণ অগোচরে, টিংকুর শেয়ারসহ রেডিও লাইসেন্সটি বিক্রি করা হয়েছে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। শুধু জালিয়াতিই নয়, এই ঘটনায় ‘বেসরকারী মালিকানায় এফএম বেতার কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১০’-এর শাস্তিযোগ্য লংঘন হয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে।


তথ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি’র বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ‘বেসরকারী মালিকানায় এফএম বেতার কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১০’ অনুযায়ী তথ্য মন্ত্রণালয়ের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, টেন্ডার শিডিউল কিনে এবং ব্যাংক-ড্রাফট জমা দেয়াসহ সম্পূর্ণ নিয়ম-কানুন মেনে জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর মালিকানাধীন ‘অ্যাটকো ইন্টারন্যাশনাল’ এবং সঙ্গীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎসহ পাঁচজনের মালিকানাধীন ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেড’ Ñএই দুই প্রতিষ্ঠান যৌথ উদ্যোগে বেসরকারি মালিকানায় একটি এফএম রেডিও স্থাপন ও পরিচালনার জন্য লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। এই আবেদনের সঙ্গে টিংকু ও বিশ্বজিৎ স্বাক্ষরিত ১৫০ টাকা স্ট্যাম্প কাগজে স্পষ্ট উল্লে¬খ ছিল, রেডিও’র ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক ‘অ্যাটকো ইন্টারন্যাশনাল’ এবং বাকি ৪৯ শতাংশের মালিক ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেড’। আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনায় এই রেডিওটির যাবতীয় পরিচালনার ক্ষমতাও ন্যস্ত রয়েছে কেবল ‘অ্যাটকো ইন্টারন্যাশনাল’-এর হাতে। প্রকল্প প্রস্তাবে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, এই দুই প্রতিষ্ঠানের কোনো পক্ষ অর্থলগ্নিতে অপারগ হলে বা অনিচ্ছা প্রকাশ করলে ‘বেসরকারী মালিকানায় এফএম বেতার কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১০’-এর ৩-ক ধারা অনুযায়ী অপর পক্ষকে শেয়ার হস্তান্তর করবে, কিন্তু দুই পক্ষের আলোচনা ছাড়া তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর আইনত গ্রাহ্য হবে না।’


সরকার যাচাই-বাছাই শেষে অন্য পাঁচটি এফএম রেডিও’র সঙ্গে এই রেডিওটিকেও লাইসেন্স দেয়। কিন্তু বিস্ময়করভাবে এই লাইসেন্স ইস্যু হয় কেবল গানচিল মিডিয়া লিমিটেডের নামে, যদিও তথ্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত লাইসেন্স প্রদানের পত্রে আবেদন হিসেবে ১৬-০৫-২০১০ তারিখে আবেদনকৃত পূর্বের যৌথ আবেদনপত্র ও প্রকল্প প্রস্তাবটির কথাই রেফারেন্স হিসেবে উল্লে¬খ করা হয়েছে। ওই আবেদনের সাথে জমা দেয়া ১০ লাখ টাকার ব্যাংক-ড্রাফট্টিও টিংকু’র মূল প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাটকো পারিশা গ্রুপ’ থেকে ইস্যুকৃত (মার্কেন্টাইল ব্যাংক ড্রাফট্ নং - ০৬২০৪৪৭ / তাং ১৬-০৫-২০১০)।


২ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে তথ্য মন্ত্রণালয় রেডিও পরিচালনার অনুমোদন দিয়ে পত্র জারি করে। এক্ষেত্রে ‘অ্যাটকো ইন্টারন্যাশনাল’-এর নাম বাদ দিয়ে কেবল ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেড’-এর নামে লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। যদিও, আবেদনপত্রের সাথে জমা দেয়া মূল প্রকল্প প্রস্তাব ও জমা দেয়া ব্যাংক ড্রাফট-এর মতো এই লাইসেন্সেও রেডিওটির অফিস হিসেবে জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর মালিকানাধীন ভবন ৯৩, কাজী নজরুল ইসলাম এভিন্যুউ Ñএই ঠিকানা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি থেকে তরঙ্গ বরাদ্দ পাওয়ার পর সেই তরঙ্গের জন্য নির্ধারিত দুই লাখ ১০০ টাকা ফ্রিকোয়েন্সি-ফিও টিংকু’র উদ্যোগেই শোধ করা হয় (মার্কেন্টাইল ব্যাংক ড্রাফট্ নং ০৮৮০৩১৬ / তাং- ১৯ ডিসেম্বর ২০১১)।
২৬ অক্টোবর ২০১১ তারিখে বিটিআরসি রেডিও ভূমি’র জন্য এফএম ৯২.৮০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়।

মস্তিষ্কে টিউমারজনিত দীর্ঘ রোগভোগের পর গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ডা. জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু মারা গেলে তার স্থাবর-অস্থাবর-সম্পত্তির মালিক হিসেবে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে রেখে যান এবং স্ত্রী পুরো সম্পদের দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

এদিকে, কুমার বিশ্বজিৎ নিজে রেডিও লাইসেন্সটি পুরোপুরি পেয়ে গেছেন এমন আচরণ দেখিয়ে তার নিজের প্রতিষ্ঠানের ৪৯ শতাংশ এবং টিংকু’র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ৫১ শতাংশ শেয়ারসহ শতভাগ শেয়ার বিক্রির ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করেন।

টিংকু মারা যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কুমার বিশ্বজিৎ স্বাক্ষরিত একটি আবেদন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর জমা দেয়া হয়। ওই আবেদনপত্রে ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেড’Ñএর পুরোনো ৫ জন পরিচালকের মধ্যে কুমার বিশ্বজিৎ ও জনৈক সাগুফতা মারিয়া’র নাম রেখে অন্য তিনজন পরিচালক মিসেস আফসানা আহমেদ, মিসেস নুসরাত খান ও সারমিন রহমানের নাম বাদ দেয়ার অনুরোধের পাশাপাশি নতুন ছয় জন পরিচালকের নাম প্রস্তাব করা হয়।

ওই আবেদনপত্র থেকে জানা যায় যে, ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেডের প্রস্তাবিত নতুন ছয় জন শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালক হলেন, আওয়ামী লীগ নেতা সুধাংশু শেখর হাওলাদারের পুত্র সুপান্থ শেখর হাওলাদার এবং তার তিন বন্ধু নিজামুল হক, মাফিনুর-ই আজিজ, মোঃ আশিব-ই-শাহ, মইনুল হোসেন ও কাফিনুর-ই-আজিজ। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মূলত এই ছয়জনের কাছে মরহুম জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু’র ৫১ শতাংশসহ রেডিও ভূমির অধিকাংশ বা পুরোপুরি শেয়ার বিক্রির অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই কুমার বিশ্বজিৎ তথ্য মন্ত্রণালয় বরাবর এই আবেদনটি করেছিলেন। ওই আবেদনপত্রের সঙ্গে ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেড’Ñএর মূল পাঁচ জন শেয়ারহোল্ডারের স্বাক্ষরসহ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখ অনুষ্ঠিত একটি বোর্ড মিটিং-এর প্রমাণপত্র সংযুক্ত ছিল-যা পরবর্তীতে জাল স্বাক্ষরযুক্ত একটি ভুয়া কাগজ হিসেবে অভিযুক্ত হয়।

কোম্পানির পরিচালক পরিবর্তনের এই বেআইনী কার্যক্রমের তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেড’Ñএর বাদ পড়া তিন পরিচালক মিসেস আফসানা আহমেদ, মিসেস নুসরাত খান ও সারমিন রহমান এবং তাদের সঙ্গে ফারজানা ইসলাম স্মৃতি নামে ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেড-এর অপর একজন পরিচালক-এই চার জন ১৩ মে ২০১২ তারিখে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও রেডিও বিষয়ক যুগ্মসচিব বরাবর একটি আবেদন করেন। আবেদনে পরিচালকের নাম পরিবর্তন বিষয়ে তাদের আপত্তির পাশাপাশি স্বাক্ষর জাল ও অনৈতিক উপায়ে রেডিও লাইসেন্স বিক্রি প্রচেষ্টার বিষয়গুলো উঠে আসে। ওই আবেদনে কুমার বিশ্বজিৎ-এর এই প্রচেষ্টাকে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার ও অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জনের প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করা হয়। আবেদনে আফসানা আহমেদ নিজেকে ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেড’Ñএর চেয়ারম্যান হিসেবে দাবি করেন এবং কুমার বিশ্বজিৎ-এর কোনো আবেদন গ্রহণ না করার জন্য মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। অবশ্য কিছুদিন পর গানচিল-এর পরিচালকরা তথ্য মন্ত্রণালয়কে আরেকটি চিঠি দেন, যাতে বলা হয় আগের চিঠিটি তাদের নিজেদের মধ্যকার একটি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ ছিল এবং এই সমস্যার সমাধান তারা নিজেদের মধ্যে সফলভাবে সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন।



সূত্র জানায়, ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেডের এই চার শেয়ারহোল্ডার বা পরিচালকের মধ্যে মিসেস আফসানা আহমেদ হলেন গীতিকার আসিফ ইকবালের স্ত্রী, মিসেস নুসরাত খান সঙ্গীতশিল্পী নকিব খানের স্ত্রী এবং সারমিন রহমান সঙ্গীতজ্ঞ রেজাউর রহমানের স্ত্রী। ফারজানা ইসলাম স্মৃতি নামে আরেক পরিচালকের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। আর কুমার বিশ্বজিৎ-এর আবেদনে উল্লি¬খিত অপর পরিচালক সাগুফতা মারিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ বিদেশ প্রবাসী এবং এই প্রতিষ্ঠানের সাথে তার কেবল নামে সম্পর্ক আছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। আর, কোনো বোর্ড মিটিং-এ উপস্থিত না থাকলেও প্রতিটি মিটিং-এর স্বাক্ষরপত্রে তার স্বাক্ষর কিভাবে থাকে, তা বিস্ময়কর।



এই ঘটনার কিছুদিন পরই চ্যানেল আই তথা ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডের কাছে রেডিও ভূমি’র প্রায় পুরোটা শেয়ারই বিক্রি করে দেন কুমার বিশ্বজিৎ তথা ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেড’। তথ্য মন্ত্রণালকে না জানিয়ে কোনো ধরনের শেয়ার হস্তান্তর ‘বেসরকারী মালিকানায় এফএম বেতার কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১০’-এর ৩-ক ধারা অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডের কাছে শেয়ার হস্তান্তর বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকেই কোনো আবেদন করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র। আবার মূল আবেদন ও প্রকল্প পরিকল্পনা গোপন রেখে কেবল লাইসেন্সের কপি দেখিয়ে শেয়ার বিক্রি করার ফলে রেডিও ভূমি’র অধিকাংশ শেয়ারের (৫১ শতাংশ) মালিক ও পরিচালনার একমাত্র ক্ষমতার অধিকারী মরহুম জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু’র প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাটকো ইন্টারন্যাশনাল’-এর বিষয়টি ইমপ্রেস বা চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষের অগোচরেই থেকে যায় এবং লাইসেন্স ও ফ্রিকোয়েন্সির মেয়াদ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ইমপ্রেস তাড়াহুড়া করে এফএম রেডিওটির পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু করে।



এমন অবস্থায় মরহুম জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর স্ত্রী এবং মৃত্যুর পর টিংকু’র যাবতীয় অস্থাবর-স্থাবর সম্পদের বর্তমান মালিক মিসেস খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিন গত ১ অক্টোবর ২০১২ বিষয়টি জানিয়ে তথ্য-সচিব ও বিটিআরসি বরাবর আবেদন করেন এবং মূল টেন্ডার শিডিউল ও প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক ‘অ্যাটকো ইন্টারন্যাশনাল’-এর নাম সংযুক্ত করে একটি পরিচ্ছন্ন লাইসেন্স প্রদানের অনুরোধ করেন। ওই আবেদনপত্রে মরহুম টিংকু’র স্ত্রী রেডিও ভূমি’র সার্বিক অবস্থা নিয়ে বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রেডিও ভূমির মূল মালিকানা ও পরিচালনার ক্ষমতা ‘অ্যাটকো ইন্টারন্যাশনাল’-এর হাতে বুঝিয়ে দেয়ারও অনুরোধ জানান।

মিসেস টিংকু উচ্চ ও নি¤œ আদালতে দু’টি পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ‘অ্যাটকো ইন্টারন্যাশনাল’-এর একজন কর্মকর্তা।

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে পুরো তথ্য মন্ত্রণালয় জুড়ে চরম তোলপাড় চলছে। কুমার বিশ্বজিৎ-এর মতো একজন স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পীর এমন প্রতারণায় বিস্মিত মন্ত্রণালয়ের অনেকেই। বাল্যকাল থেকে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট বন্ধু এবং সর্বদা টিংকু’র আশির্বাদপুষ্ট কুমার বিশ্বজিৎ, জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু’র মৃত্যুর পর তার শেয়ার নিয়ে যে জালিয়াতি করেছেন, তা অবাক করেছে অনেককেই। আর লাইসেন্স প্রদানের সময় কেবল কুমার বিশ্বজিৎ-এর প্রতিষ্ঠানের নামে লাইসেন্সটি ইস্যু করার ঘটনা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ প্রায় সব শীর্ষ কর্মকর্তা। তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, “মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি ছাড়া লাইসেন্স বা প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের শেয়ার হস্তান্তর ‘বেসরকারী মালিকানায় এফএম বেতার কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১০’-এর সুস্পষ্ট লংঘন। এর প্রমান পাওয়া গেলে লাইসেন্স বাতিলের মতো শাস্তি হতে পারে।” মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “এই লাইসেন্স নিয়ে কুমার বিশ্বজিৎ অন্তত চার বার চার ধরনের জালিয়াতি করেছেন, যা এখন তথ্যমন্ত্রী ও তথ্য-সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের সবার কাছেই স্পষ্ট।”



এদিকে, মিসে টিংকুর চিঠি পেয়ে এ্যাটকো ইন্টারন্যাশনালের শেয়ার সংক্রান্ত বিস্তারিত জানতে গানচিল মিডিয়ার প্রধান কুমার বিশ্বজিতকে চিঠি দিলেও এর কোন উত্তর দেননি বিশ্বজিত। গত ৪ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা গানচিল মিডিয়া লি: (রেডিও ভূমি) এফএম ৯২.৮ এর নামে ইস্যুকৃত লাইসেন্সটিতে যৌথভাবে প্রকল্প প্রস্তাব দাখিলকারী প্রতিষ্ঠান এটকো ইন্টারন্যাশনাল’র শেয়ারের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের বেতার-২ শাখা’র সহকারি সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে এটকো’র শেয়ার নিয়ে বিস্তারিত জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়। আর মিসেস টিংকু একই আবেদনের অনুলিপি বাংলাদেশ বিটিআরসি বরাবরও দিয়েছিলেন। চিঠি পেয়ে বিটিআরসি’রও টনক নড়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার একাধিক কর্মকর্তা। তবে বিটিআরসি এ ব্যপারে পদেেক্ষপ নিতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। উল্লেখ্য, তথ্য মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি বরাবর এই আবেদনে মিসেস টিংকু ৫১ শতাংশ শেয়ার থাকার পরও তার অগোচরে কিভাবে রেডিও ভূমি এফএম ৯২.৮ প্রচার হচ্ছে তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং মন্ত্রণালয়ের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছেন।



অন্যদিকে, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড মন্ত্রণালয় কিংবা বিটিআরসিকে অবগত না করেই রেডিও ভূমি এফএম ৯২.৮ এর টেস্ট ট্রান্সমিশন চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েক ঘণ্টার টেস্ট ট্রান্সমিশনে রেডিও ভূমিকে চ্যানেল আই-এর নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত করতেই চ্যানেল আই-এ প্রচারিত যন্ত্রসঙ্গীতগুলো হুবহু এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর, ফেইসবুকে রেডিও ভূমির নামে খোলা ফ্যান-পেইজটি দেখেও ইমপ্রেস’র সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। যেখানে অফিসের ঠিকানা হিসেবে ‘৪০ শহীদ তাজউদ্দিন স্মরণী’ ঠিকানায় অবস্থিত চ্যানেল আই কার্যালয়ের ঠিকানাই দেয়া আছে।



সম্প্রচার নীতিমালা অনুযায়ী, বিটিআরসি থেকে ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ নেয়ার সময় ট্রান্সমিটার স্থাপনের স্থান ও টাওয়ার স্থাপনের স্থান উল্লে¬খ করতে হয় এবং এই দুই স্থানের কোনটির ঠিকানা পরিবর্তন করা হলেই তা বিটিআরসি কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। অন্যথায় সম্প্রচার অবৈধ বলে গণ্য হয় এবং অভিযোগ পেলে বিটিআরসি ট্রান্সমিটার জব্দ ও ফ্রিকোয়েন্সি বাতিলসহ প্রচার বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। রেডিও ভূমি’র তরঙ্গ বা র্ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দের সময় ঠিকানা দেয়া হয়েছিলো জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু’র কাওরান বাজার অফিস, আর এখন সম্প্রচার চলছে চ্যানেল আই ভবন থেকে-যা সম্পূর্ণ বেআইনি।



তথ্য মন্ত্রণালয়ের অগোচরে এবং ৫১ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারকে বাদ দিয়ে লাইসেন্স কিনে সম্প্রচারে গেলেও বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে ইমপ্রেস তথা চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ। এই সমস্যার সমাধানের আগে বিশেষ কোনো যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রমও স্থগিত রেখেছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চ্যানেল আই-এর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, কুমার বিশ্বজিতের মতো একজস গুণী শিল্পীর কাছ থেকে এমন মিথ্যাচারে পুরো চ্যানেল আই পরিবার বিব্রত। তবে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য কুমার বিশ্বজিৎকেই এখন ভূমিকা নিতে হবে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।



এই বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘বেসরকারী মালিকানায় এফএম বেতার কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা-২০১০’এর ৩-ক ধারা অনুযায়ী এফএম রেডিওর শেয়ার হস্তান্তর বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা এবং তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তা অনুমোদিত হওয়ার আগে মুল মালিক ব্যতীত অন্য কেউ তা পরিচালনার ক্ষমতা রাখে না। সেক্ষেত্রে, ইমপ্রেস যদি এ ধরনের কাজ করে এবং তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তথ্য মন্ত্রণালয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।’ ইমপ্রেস’র কাছে শেয়ার হস্তান্তর বিষয়ে গানচিল বা ইমপ্রেস’র পক্ষ থেকে এখনও কোন আবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েনি বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।



এদিকে জুন মাসের মধ্যে এক লাখ টাকা নবায়ন ফি দিয়ে ভূমি রেডিওর লাইসেন্স নবায়নের জন্য তারিখ নির্ধারিত তারিখ ছিল। তিন মাস দেরী করে সেপ্টেম্বরে কুমার বিশ্বজিৎ স্বাক্ষরিত আবেদনের মাধ্যমে গানচিল ১০ হাজার টাকা লেইট-ফি সহ মোট এক লাখ ১০ হাজার টাকা নবায়নের জন্য জমা দেয়। কিন্তু মিসেস টিংকু’র আবেদনের কারণে তথ্য মন্ত্রণালয় ওই নবায়ন র্ফি গ্রহণ করেনি এবং সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই লাইসেন্স নবায়ন ফি গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মোতাবেক, বর্তমানে লাইসেন্স স্থগিত আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদেও মতে, বর্তমানে যে সম্প্রচার চলছে, তা অবৈধ।



রেডিও ভূমি এফএম ৯২.৮ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা বিষয়ে জানতে চাইলে মরহুম জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু’র স্ত্রী খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিন বলেন, “কেবল বাণিজ্য নয়, টিংকু’র শেষ শখ ছিল এই এফএম রেডিওটি। কিন্তু কুমার বিশ্বজিতের প্রতারণায় আমি হতভম্ব।”

অনৈতিক উপায়ে শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে ‘গানচিল মিডিয়া লিমিটেড’Ñএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুমার বিশ্বজিৎকে প্রশ্ন করা হলে শুরুতে তিনি রেডিও ভূমি’র সঙ্গে ‘অফিসিয়ালি’ আছেন বললেও পরে আবার তা অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, টিংকু’র স্ত্রী’র সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে এবং সমাধানও হয়েছে। তবে কবে, কখন সমাধান হয়েছে -এই প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। রেডিও ভূমি’র সঙ্গে মরহুম জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু’র মালিকানাধীন ‘অ্যাটকো ইন্টারন্যাশনাল’-এর ৫১ শতাংশ শেয়ার এখন কি অবস্থায় আছে জানতে চাইলে কিছুক্ষণ আগে বলা রেডিও ভূমি’র সঙ্গে ‘অফিসিয়ালি’ থাকার কথা স্বীকার করলেও এবার পুরোপুরি এই রেডিও এমনকি গানচিল-এর সঙ্গে থাকার কথাও অস্বীকার করেন কুমার বিশ্বজিৎ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি আর গানচিলের সঙ্গেই নেই। এখন যারা আছেন আপনারা তাদের সঙ্গে কথা বলুন।” গানচিলের বর্তমান এমডি আফসানা আহমেদ এবং রেডিও ভূমি বিষয়ে তিনিই সব বলতে পারবেন বলে জানান কুমার বিশ্বজিৎ।



তবে, গানচিল মিডিয়া লিমিটেড-এ কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, তথ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে কুমার বিশ্বজিৎ অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এটকো ইন্টারন্যাশনাল-এর ৫১ শতাংশ শেয়ার বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়কে ব্যাখ্যা দিতে চাইলে এটকো’র মালিকপক্ষের সম্মতি তার পক্ষে ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়, আবার এটকো’র শেয়ারের বিষয়টি অজ্ঞাত রেখে ইমপ্রেস’র কাছে রেডিও ভূমি’র শেয়ার হস্তান্তর করায় কুমার বিশ্বজিৎ চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষকেও তার পাশে পাচ্ছেন না।


অন্যদিকে, ঘটনাটি জানার পর থেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মিডিয়া সংশ্লিষ্টরা। একজন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কিভাবে তার নিজের ছেলেবেলার ঘনিষ্ট একজন বন্ধুর সংগে এই ধরনের প্রতারণা এবং জালিয়াতি করতে পারেন, সেই প্রশ্নই তুলেছেন। ধাক্কা লেগেছে তথ্য মন্ত্রণালয়েও। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বিষয়টি জানার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। প্রয়োজনে বিষয়টির সঙ্গে বিটিআরসি’কে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও ওই সূত্র জানায়।

সুত্রঃ Click This Link
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×