প্রথম যখন বিদেশে যাবার ঘোষনা দিলাম তখন আত্বীয় অনাত্বীয় সবাই সে দেশ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য উপাত্ত্ দিতে লাগলো। আমাদের বাসার এ্যাসিসটেন্ট যে জীবনে প্লেনের চাকা দেখে দেখে নাই সেও আমারে সমানে উপদেশ দিতে লাগলো। সাথে কি খাবো, কি পড়বো, ওয়েদার, রাস্তাঘাট, হোটেল সবই সকল জ্ঞানী+গুগুল থেকে একের পর এক তথ্য উপাত্ত্ সংগ্রহ করতে লাগলাম। কিন্তু কেউই ভুলেও বাথরুম সংক্রান্ত কোন তথ্য দেইনি বা এ সম্পর্কে কেউই কোন উচ্চবাচ্চ্য করেনি। তাই সবচেয়ে কম গুড়ুত্বপূর্ন বিষয় যে এমন গুড়ুত্বপূর্ন তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম বাংলাদেশ এয়ারপোর্টের বাউন্ডারী পার হবার পর। কারন এয়ারপোর্টের বাউন্ডারী এর পর কোন বাথরুমে ইউজের জন্য পানি নামক বস্তু নেই।
দেশের বাইরের বাথরুমে পানি থাকে না জানি কিন্তু সে বিষয় এর সাথে অভ্যস্থ হবার জন্য দেশে কখনই চিন্তা করতে হয়নি। তাই এই বিষয়ের সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে প্লেনে। তাই প্রথম পরিচয় এবং এর যাবতীয় মোলাকাত মোটেও সুখকর বিষয় নয়। বিশেষ করে কেউ যদি এ্যামিরাটস্ এর বিমানে প্রথম প্লেন জার্নি করে তাহলে তার কপালে খারাপিই আছে বলতে হয়। কারন এ্যামিরাটস্ এ সাধারনত আমাদের শ্রমিকভাইরা জার্নি করেন। তাই উনাদের জন্য এ অভ্যস্থতা একটু কঠিনই বৈকি। এবং উক্ত বিমানের যাবতীয় সেবক এবং সেবাদানকারিনীরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ চোখ বন্ধ করিয়া ঢাকা টু দুবাই রুটে সেবা দান করেন!!!! তাই বাথরুমের অবস্থা ভয়াবহ, একবার গেলে সেখানে দ্বিতীয়বার যাবার কথা কেউ ভুলেও চিন্তা করবে না। তারউপর খাবার নিয়ে চিল্লাপাল্লা, পথে খাবার ফেলে দেয়া বা বারংবার বেল টিপিবার পর ও এয়ার হোস্টেসদের পাত্তা না দেয়া.....। সে এক হুলুস্থল কান্ড, না দেখলে কেউ বুঝতে পাবে না সেখানে কি চলে। যাহোক সে গল্প আরেকদিন।
যাক যা বলছিলাম, হোটেলের বাথরুমে পানি থাকবে না সেটা জেনেই যাত্রা করেছি কিন্তু ইউরোপের মতো জায়গায় মাঝারি বা বলা যায় সস্তা মানের হোটেলের বাথরুমের সাইজ দেখে হার্টফেল করার অবস্থা হতে হয়। যারা বিশাল দেহী তাদের জন্য মায়া হয়। কারন সে বাথরুম এমনই ছোট যে কোনরকমে বসা যায় কিন্তু নড়াচড়া করার কোন উপায় নেই। খুব অবাক লাগে হোটেলের চারপাশে অসংখ্য খালি জায়গা কিন্তু বাথরুমের ব্যাপারে এতোটা কৃপনতা কেন তাদের। আমরা দেশে অনেকটা বাথরুম বিলাশিতা করি। কারন দুই বেডরুমের বাসায় ২/৩ টা বাথরুম। এমন কি বাসার এ্যাসিসটেন্টদের এর জন্য সার্ভেন্ট বাথরুম এর ব্যবস্থা আছে। যাদের বাথরুম নিয়ে বিলাশিতা আছে বা দেশে যারা মনে করেন বাথরুমই সঙ্গীত প্রেকটিস করার স্থান বা বলা যায় যাবতীয় চিন্তা ভাবনা করার স্থান অথবা অফিসের পাজেল মেলানোর স্থান কিংবা গল্পের বই পড়ার উপযুক্ত স্থান .... তাদের জন্য উপদেশ ...... দেশের বাইরে এসে বাথরুম সংক্রান্ত ধাক্কা খাবেন এইটা নিশ্চিত।
আরো আছে, আমরা অফিস আদালতে দেখি সব বসদের প্রতি রুমে রুমে বাথরুম। এবং সাধারনের জন্য গণবাথরুম। কিন্তু দেশের বাইরে এসে টের পেলাম বাথরুম নিয়ে কোন বেধাবেধ নেই। সকলের তরে সকলে আমরা.....সকলের জন্য একই গণবাথরুম। অফিসার বলিয়া একা একা চুপি চুপি বাথরুম সংক্রান্ত কাজ সারিবেন তাহা হইবে না, সকলেই জানিবে স্যার মহোদয় এখন বাথরুম যাইতেছেন!!!!
তারপর আরো কথা আছে, পানি নাই বাথরুমে ভালোকথা কিন্তু যে টিস্যু রাখা হয় সেটা যদি খবরের কাগজ হয় তাহলেতো আরেক দফা খবর আছে। জেনেভায় ইউনোর অফিসের বাথরুম ইউজের পর সেখানের সাপোর্ট এ্যাসিসটেন্টরে বল্লাম, আপুরে আরেকটু নরম টিস্যু কি রাখা যায় না টয়লেটে?? সে বললো. এটা পরিবেশ বান্ধব টিস্যু, ন্যাচারাল ইনগ্রিডিয়েন্ট দিয়ে তৈরী তাই একটু রাফ। কইলাম বাপধন, টিস্যুতো খাবার না, এতো ন্যাচারাল ইনগ্রিডিয়েন্ট নিয়া চিন্তার কি আছে?? সে মনে হয় একটু দু:খ পাইলো। সে পরিবেশ বান্ধব ও ন্যাচারাল ইনগ্রিডিয়েন্ট নিয়ে নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিলো। এইবেলা মাপ করে দেন.... মনে মনে বলে পালালাম। আমার কি, আমিতো ২/৩ দিন ছিলাম আর ওরাতো দিনের পর দিন এইটা দিয়া কাজ সারে। তাদের পাছার ছাল বাকলের ইন্স্যুরেন্স তারাই করবে
এর চেয়ে বেশী আর নাই বলি.........
জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৮:৩৬