যা কইতেছিলাম, থার্টিফার্স্ট নাইট এ কি করি আমরা এইখানে মানে প্রবাসে। দেশে থাকতে বিদেশী থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের বিভিন্ন ছবি ভিডিও দেইখা ভাবতাম আহা কি আনন্দ বিদেশের আকাশে বাতাসে। খালি ফুর্তি আর ফুর্তি । লোকজন আতশবাজি ফুটায়, গলাগলি করে, নাচানাচি গানাগানি করে, পার্টি করে আর মদ খায় । আর তাই চিন্তা কইরাতো আমরা ও শুরু করছি লাফালাফি। যাক, যা শুরু করছিলাম.......
এই দুইটা ছবি হলো গিয়া টরেন্টোর নাথান ফিলিপস্ স্কোয়ারের। সবাই ওইখানেই জমায়েত হই সাধারনত। ওপেন স্টেজ প্রোগ্রাম, মিউজিক, আতশবাজি....... সবই আছে। তয় প্রত্থম প্রত্থম দুই তিন বছর হাজার হাজার লোকজনের ভীড় ঠেইলা ঠান্ডা উপেক্ষা কইরা গাদাগাদি লোকজনের মাঝে দাড়াঁয়ে আতশবাজি দেখতাম কিন্তু এখন ক্ষেমা দিসি। কারন বুড়া হইছি, কোমরে সয় না..... লোকজনের ভীড় ঠেইলা মাইনাস দশ ঠান্ডায় আতশবাজি দেখার চাইতে ঘরে শুইয়া মুভি দেখন ভালা । তার উপ্রে আমার মাইয়া আধা ঘন্টা না যাইতেই চেঁচায় মা ক্ষিদা লাগছে । তারপর কোটি কোটি লোকের পিছনে লাইনের দাঁড়ায়ে এক প্যাকেট পিজ্জা কেনার পর সমুদ্র পাড়ি দিয়া স্কোয়ারে আসার পর দেখা গেল সবই শেষ । তাই মাপ ও দোয়া চাহিয়া এখন আর ওইপথে পা দেই না।
কানাডায় থার্টিফার্স্ট নাইট কেন যেকোন পাবলিক অনুষ্ঠানেই বাস ও ট্রেন কর্তৃপক্ষ যাবতীয় রাইড ফ্রি করে দেয়। এবং পুলিশ সহ সকল সেচ্ছা সেবক সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায়। কোনভাবেই পাবলিকলি এ্যালকোহল এ্যালাউ করে না। প্রতি মোড়ে মোড়ে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার মদ খেয়ে গাড়ি চালায় কিনা তা পরীক্ষা করে। হাজার হাজার লোকের ভীড়ে আমরা বাস ট্রেনে চড়ি, গাদাগাদি লোকের মাঝে দাড়িঁয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করি কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ গায়ে ধাক্কা দেয়নি কিংবা ভিড়াভিড়িতে কেউ গায়ে হাত দেবার চেস্টা করেনি (না মানে আমিতো বুড়া আমার কথা বাদ দিলাম, অন্য ইয়ং মেয়েও আমার সাথে ছিল )।
মনে পড়ে সেই বাধঁনের কথা যারে বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়ায় থার্টিফার্স্ট নাইটে বন্ধুর সাথে ঘুরতে বের হবার অপরাধে ন্যাংটো কইরা ছাড়ছে পোলাপান। হাঁ, তারপরও এখানে কিছু অপ্রিতিকর ঘটনা হয়তো ঘটে কিন্তু সাথে সাথে ৯১১ এর পুলিশ হাজির হয়ে যায়। কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে এখানে কিছু করা মানে খবর আছে । যে যার মতো আনন্দ করে... কেউ নাচে কেউ কাঁদে কেউ লাফায় আর আমার মতো অধিকাংশই তামাশা দেখে। কিন্তু দেশে সমস্যা হইলো গিয়া আমি ফুর্তি করুম ভালো কথা কিন্তু আশেপাশে দশজনরে জ্বালাইয়া ফুর্তি করুম। মাইকে হিন্দি গান বাজায়ে, সারারাত নাচাকুদা.. হৈহুল্লোড়। এখনতো শুনি কি জানি সব ডিজে পার্টি জায়গায় জায়গায় ভাড়া করা হয়.... মদ নারী গাজা ইয়াবা ক্যাসিনো ছাড়া থার্টিফার্স্ট নাইট পার্টিই নাকি পানসে। আহ্ দেশেইতো দেখি লোকজন ভালো আছে কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
মদ গান্জা নারী পর্টি এইখানেও হয় (তার উপ্রে আবার গান্জা এখানে বৈধ)। কিন্তু কাউরে জ্বালায়ে নয়। একটু শব্দ হইবো তো সোজা পুলিশ কল। কেউ এরকম পার্টি দিলে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকে যেন প্রতিবেশীকে ডিস্টার্ব না করা হয়। ক্রিসমাস আর নিউ ইয়া ইভ মিলে এখানের সবচেয়ে বড় বন্ধ। বন্ধের আগে অফিসে অফিসে চলে ক্রিসমাস ডিনার আর গিফট্ আদান প্রদানের আনন্দ (আমার অফিস আমারে ক্রিসমাস লাঞ্চের পর এক প্যাকেট মিস্টি আর ১০০ ডলারের গিফট্ ভাউচার দিসে )। স্কুলের বাচ্চারাও স্কুল বন্ধের আগে ক্রিসমাস ক্যারল গেয়ে অনুষ্ঠান করে। একজন আরেকজনকে কার্ড ও গিফ্ট্ দেয়। টিচারদেরকে ও এ সময় বাচ্চারা গিফট দেয়। আনন্দ মুখর পরিবেশ। অনেক চ্যারিটি আছে যারা বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন খেলনা নিয়ে শপিং মল বা লোকজনের গেদারিং এ বসে বাচ্চাদেরকে খেলনা দেয়। প্রতিটি বড় বড় নামী দামী দোকানে থাকে ছাড়ের কম্পিটিশান। আমাদের মতো না যে ঈদ মানেই জিনিসের দাম ১০০ গুন । বরং উল্টো এখানে, যেকোন উৎসব মানেই দাম কমিয়ে দেয়া। আলোকসজ্জায় শপিং মল সহ বাড়িঘরগুলো দেখার মজাই আলাদা।
ভার্সিটি জীবনে ছিলাম রোকেয়া হলে। সে এক এলাহি কান্ড হতো থার্টিফার্স্ট নাইটে। সারা ভার্সিটির হলের পোলাপানগুলা ভীড় জমাইতো হলের গেইট এর সামনে নতুবা এক্সটেনশান বিল্ডিং এর কোনায়। কারন ওইটাই একমাত্র জায়গা ছিল যেটা দেয়াল ঘেষা। আর ওই কর্নারের রুমে যারা ছিল তারাতো তখন ভিআইপি । সবাই ভীড় করতো লাইট নিভায়ে(যাতে চেহারা দেখা না যায় ) ওই কোনায় পোলাপাইনের নাচাকুদা দেখার জন্য। যাহোক ফ্রিতে আমরা তখন পোলাপানের নাচ গান কৈাতুক সবই শুনতাম ও দেখতাম । সেই রাইতেই মনে হয় পোলাপাইনের প্রতিভা বিকোশিত হইতো রোকেয়া আর সামসুন্নাহার হলের আশেপাশে......... আহারে আমাগোরে বিনদুনের লাইগা এই শীতের রাইতে পোলাপাইন কতই না কষ্ট করতো... ।
সকলে ভালো থাকেন নতুন বছরে। আর মারামারি কাটাকাটি বাদ দিয়া ফেইসবুকে দেশ ও জাতি উদ্ধারে আগায়ে না আইসা সত্যিকারের উদ্ধারের চিন্তা করি। এবার আসেন কোলাকুলি করি, সব চিন্তা বাদ , হ্যাপি নিউ ইয়ার।
উপরের প্রথম দুইটা ছবি গুগল মামার আর বাকিগুলা আমার তোলা.............
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৫:০৪